মার্চ ২৫, ২০২১ ১৬:৩০ Asia/Dhaka

গত আসরে আমরা কথা বলার চেষ্টা করেছি ইরানের ক্রোকারিজ তৈজসপত্র বিশেষ করে ইরানে চীনামাটির বাসন শিল্পের বিভিন্ন দিক নিয়ে।

ইরানে চীনা মাটির তৈরি শিল্পের প্রথম কারখানাটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এক শ পঁয়ত্রিশ বছর আগে। সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যের মধ্যে 'জাররিন' নামের এই কারখানাটি সবচেয়ে বড়ো এবং বিশ্বের সবচেয়ে আধুনিক কারখানাগুলোর একটি। এ কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ইরানের চীনা মাটির পণ্য সামগ্রি রপ্তানি করতে সক্ষম হয়েছে ইরান। যেসব দেশে এসব পণ্য যায় তার মধ্যে রয়েছে জার্মানি, স্পেন, ইতালি, ফ্রান্স, ব্রিটেন, সইডেন, হল্যান্ড, তুরস্ক, রাশিয়া, কানাডা, সৌদিআরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত এভং ভারতসহ বিশটিরও বেশি দেশ। তৈজস শিল্প নিয়ে বলার আরও অনেক কিছু থাকলেও আজ আর এ নিয়ে কথা নয়। আজকের আসরে আমরা গাড়ি শিল্পে ইরানের ব্যাপক অগ্রগতি নিয়ে কথা বলার চেষ্টা করবো।

বিশ্ব বাণিজ্যে গুরুত্বপূর্ণ যতগুলো শিল্প রয়েছে তাদের মধ্যে গাড়ি নির্মাণ শিল্প অন্যতম। যে-কোনো দেশের উন্নয়নের একটি সূচক হিসেবে ধরা যায় গাড়ি নির্মাণ শিল্পকে। এই শিল্পটি অপর অন্তত ষাটটি শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হবার কারণে গাড়ি শিল্পটি লোকোমোটিভ শিল্প হিসেবেও পরিচিত। গাড়ি নির্মাণের ক্ষেত্রে শিল্প জগতের বিচিত্র টেকনোলজির একটা কমপ্লেক্সের মতো প্রয়োজন পড়ে। এই কমপ্লেক্সের ভেতর থাকতে হয় স্টিল, প্লাস্টিক, কেমিক্যাল, টেক্সটাইল, কাঁচ, ইলেক্ট্রোমেকানিক্স, বিদ্যুৎ, ইলেকট্রনিক্স ইত্যাদি। এসবের পাশাপাশি পরিকল্পনা, পরিচালনা ও অর্থনীতিরও প্রয়োজন পড়ে সমানভাবে। ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে বিশ্বে পঁচানব্বুই মিলিয়ন মানে সাড়ে নয় কোটি গাড়ি তৈরি হয়েছিল। এগুলোর মধ্য থেকে সাত কোটি গাড়ি ছিল যাত্রীবাহী আর বাদবাকি গাড়িগুলো ছিল বাণিজ্যিক কাজের জন্য। বিশাল পরিমাণের এইসব গাড়ির বেশিরভাগই নির্মাণ করেছে তিনটি দেশ: চীন, আমেরিকা এবং জাপান।

ইরানে গাড়ি শিল্পের ইতিহাসের সূচনা হয় ফোর্ড কোম্পানির একটি গাড়ি ইরানে প্রবেশের মধ্য দিয়ে। এই গাড়িটি বিংশ শতাব্দির শুরুতে বেলজিয়াম থেকে কেনা হয়েছিল। কিন্তু গাড়িটি অনেক বেশি ধোঁয়া ছাড়তো বলে ওই গাড়িটিকে সবাই 'ধোঁয়ার গাড়ি' বলেই জানতো। এরপর ধীরে ধীরে যখন শহরমুখি মানুষের সংখ্যা বাড়তে থাকে তখন থেকে বিশেষ করে উনিশ শ বিশ সালের দিকে ইরানে গাড়ি প্রবেশের সংখ্যা বাড়তে শুরু করে। সে সময়কার গাড়িগুলোর বেশিরভাগই ছিল ব্রিটেন অথবা আমেরিকার তৈরি। ষাটের দশকের শুরুর দিকে ইরানে গাড়ি নির্মাণ শিল্পে ব্যাপক পরিবর্তন ও উন্নয়ন ঘটে। বিদেশি বিভিন্ন গাড়ি নির্মাণ কোম্পানির সহযোগিতায় ইরানে প্রথম প্রথম যন্ত্রাংশকে জোড়া দেওয়া মানে অ্যাসেম্বলিং করার কাজ করা হয়েছিল। এ কাজের জন্য আলাদা কোম্পানিও গড়ে উঠেছিল সে সময়। ইসলামি বিপ্লব বিজয়ের আগে অন্তত নয়টি কোম্পানি গাড়ি নির্মাণ শিল্পে এগিয়ে এসেছিল।

ইরানে বিপ্লব বিজয়ের আগে অন্তত নয়টি গাড়ি নির্মাণ কোম্পানি গড়ে উঠেছিল। এগুলো হলো ইরান খোদরো, পার্স খোদরো, সাইফা, জামিয়াদ, ইরান কভেহ, মোরাত্তাব খোদরো, লে-ল্যান্ড মোটর বা শাহাব খোদরো, খবার, বাহমান বা মাজদা ইত্যাদি। এইসব কোম্পানি গাড়ি নির্মাণ কারখানায় যাত্রীবাহী গাড়ি যেমন তৈরি হতো তেমনি ট্রাক বা মালামাল পরিবহণের গাড়ি, মিনিবাস, যাত্রীবাহী বাস, মোটর এবং পিক-আপ ভ্যানও তৈরি করা হত। জাপান, ইতালি, ব্রিটেন এবং জার্মানির নামকরা কোম্পানিগুলোর সঙ্গে সহযোগিতার ভিত্তিতে ইরানে তৈরি হতো এইসব গাড়ি। তবে ইসলামি বিপ্লব বিজয়ের পর ইরানে গাড়ি নির্মাণ শিল্পে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসে।

অ্যাসেম্বলিংয়ের পর্যায় অতিক্রম করে ইরান নিজস্ব পরিকল্পনা ও ডিজাইনে গাড়ি তৈরি করার পর্যায়ে উন্নীত হয়। বিপ্লবের পরই ইরানের গাড়ি নির্মাণ শিল্পকে জাতীয়করণ করা হয়। ইরানের ওপর ইরাকের চাপিয়ে যুদ্ধের ফলে যেসব সমস্যা দেখা দিয়েছিল গাড়ি নির্মাণ শিল্পের ওপর সেইসব সমস্যার মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। বলা চলে এই শিল্পটি একেবারে দেউলিয়া হয়ে পড়ার মতো অবস্থানে চলে গিয়েছিল। ওই যুদ্ধের সমাপ্তির সাথে সাথে গাড়ি আমদানির পাশাপাশি গাড়ি নির্মাণ, প্রতিস্থাপন কৌশলসহ মোটর শিল্পের বিকাশ;  স্বয়ংচালিত শিল্পে স্বনির্ভরতা অর্জনের নীতি গ্রহণ করা হয়। সেইসঙ্গে গাড়ির গুণগত মান সুরক্ষা, জ্বালানী খরচের পরিমাণ, দূষণ হ্রাস এবং যুক্তিসঙ্গত দামের বিষয়টিও বিবেচনায় আনা হয়েছিল। গাড়ি শিল্পের বাজারটি যেহেতু প্রতিযোগিতামূলক সে জন্য নিজেদের তৈরি গাড়ি রপ্তানি করার সুযোগগুলোকেও কাজে লাগানোর চিন্তা করে এই শিল্পের নীতি নির্ধারকরা।

গাড়ি নির্মাণ শিল্পে ইরানের ক্রমঅগ্রসরতার কথা বলছিলাম আমরা। ইরাকের চাপিয়ে যুদ্ধের সময় গাড়ি নির্মাণ শিল্পে ধস নেমে আসার পর ইরান পুনরায় ঘুরে দাঁড়াবার চেষ্টা করে এবং সফল হয়। কেবল সংস্থাপন বা অ্যাসেম্বলিংই ণয় বরং নিজেরাই গাড়ি নির্মাণের কাজ পুনরায় শুরু করে দেয়। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই ইরানের গাড়ি তৈরির পরিমাণ অন্তত দশগুণ বেড়ে যায়। প্রায় চল্লিশটির মতো মডেলের যাত্রীবাহী গাড়ি তৈরি করে ইরান এবং ত্রিশটির মতো বাণিজ্যিক মডেলের গাড়ি তৈরি করে। ইরানের তৈরি এসব গাড়ি রপ্তানিও শুরু হয় বিভিন্ন দেশে। যেসব দেশে রপ্তানি হয় তার মধ্যে রয়েছে এশিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ। ভেনিজুয়েলা, কিউবায়ও রপ্তানি হয় ইরানের তৈরি বিভিন্ন মডেলের গাড়ি। বিগত পণর বছরে ইরানে দুই কোটিরও বেশি গাড়ি বিক্রি হয়েছে যার শতকরা নব্বুই ভাগেরও বেশি ইরানের নিজস্ব।#

পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/ মো:আবু সাঈদ/ ২৫

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ