এপ্রিল ০৪, ২০২১ ১৭:৩০ Asia/Dhaka

গত আসরে আমরা বলেছিলাম কীশে বহু প্রজাতির জীব-জন্তুর নিরাপদ বসবাস রয়েছে। সবচেয়ে বেশি যে প্রাণীটি এখানে চোখে পড়বে তা হলো ইরানি হরিণ।

কিশ দ্বীপের আশেপাশের জলে বিভিন্ন ধরণের খাবারের মাছ এবং সুন্দর এবং বিচিত্র বর্ণময় অ্যাকুরিয়ামের মাছ, প্রবাল, ঝিনুক, ডলফিন, কচ্ছপ ইত্যাদি পাওয়া যায়। দ্বীপের এইসব স্মৃতি সৌন্দর্য একদিকে যেমন অনন্য প্রাকৃতিক আকর্ষণ তেমনি পর্যটকরাও এগুলো দেখে আনন্দ বোধ করেন। পর্যটকদের আকর্ষণ করার মতো আরও বহু বিষয় রয়েছে এই দ্বীপে। চলুন তাহলে চমৎকার এই প্রবাল দ্বীপের আরও কিছু দর্শনীয় স্থানের সঙ্গে পরিচিত হওয়া যাক।

আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে গত আসরে আমরা ইরানের প্রবাল দ্বীপ কিশের উপকূলীয় বনাঞ্চল, এখানকার বিচিত্র গাছ-গাছালি, জন্তু-জানোয়ার দেখার সুযোগ পেয়েছি। বিশেষ করে এখানকার ইরানি হরিণ এবং আশেপাশের উপকূলের জলে বিভিন্ন ধরণের খাবারের মাছ, সুন্দর ও বিচিত্র বর্ণময় অ্যাকুরিয়ামের মাছ, প্রবাল, ঝিনুক, ডলফিন, কচ্ছপ ইত্যাদি লক্ষ্য করেছি আমরা। হারিরেহ শহর কিশ দ্বীপের অন্যতম মূল্যবান ও ঐতিহাসিক আকর্ষণ। প্রায় আটশো বছরের পুরনো এই শহরটি। প্রাচীন এই শহরটি তাই পর্যটকদের কাছে ইতিহাস এবং সভ্যতার দিক থেকে সমৃদ্ধ হবার কারণে পর্যটকদের কাছে বেশ জনপ্রিয়। কিশ দ্বীপের উত্তর উপকূলের একেবারে কেন্দ্রে অবস্থিত আনুমানিক তিন বর্গকিলোমিটার অঞ্চলজুড়ে বিস্তৃত এই হারিরে শহর প্রাচীন বহু ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ।

যেসব পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন এখানে পাওয়া গেছে সেসব প্রমাণ করে হারিরে শহরটি একসময় এই অঞ্চলের একটি বিশাল এবং সমৃদ্ধ শহর ছিল এবং বিশাল এক জনগোষ্ঠীর বাসস্থান এখানে ছিল। এই শহরের নিদর্শনগুলোর মধ্য থেকে যেটুকু অবশিষ্ট রয়েছে তা নগরের স্থাপত্যশৈলীর সমৃদ্ধির কথা মনে করিয়ে দেয়। তবে দু:খজন্ক ব্যাপার হলো তোরণ, ছাদ কিংবা সিলিং এর যেসব অংশবিশেষ পাওয়া গেছে সেগুলোর খুব কমই অক্ষত রয়েছে। কেবল পাথরের খিলান আকারের নিদর্শনগুলোর কিছু কিছু পুরোপুরি ধ্বংসের হাত থেকে সুরক্ষিত আছে। বন্দরের এক্সটেনশন ভবনগুলো এবং সেখানকার অফিসগুলো যেগুলো এই হারিরেহ শহরে নির্মাণ করা হয়েছিল সেগুলোর কিছু কিছু দেখতে পাওয়া যায়।

হারিরেহ শহরের ধ্বংসাবশেষ এবং স্থাপত্য নিদর্শনের ঐতিহ্য নিয়ে। হরিরেহ শহরটি বিভিন্ন অংশ বা বিভাগ নিয়ে গঠিত। এই বিভাগগুলির মধ্যে আমরা বাথ কমপ্লেক্স মানে গণ হাম্মামখানা, ওয়ার্কশপ বিভাগ এবং শিল্প বিভাগ, অভিজাত বাড়ি, ঐতিহাসিক মসজিদ, কাঁচ শিল্পের ওয়ার্কশপ এবং পানি সরবরাহ ব্যবস্থার প্রাচীন ক্যানেলের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। খুব কম পর্যটকই আছেন যাঁরা কিশ দ্বীপ ভ্রমণে গিয়ে এই প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শনগুলো না দেখে ফেরেন। যাই হোক এবার এই হারিরেহ শহর ছেড়ে আরেকটি শহরের দিকে যাবার চেষ্টা করবো। এই শহরটিও বেশ প্রাচীন। নাম হলো করিজ শহর। এই শহরটি দেখার প্রতিও পর্যটকদের ব্যাপক আকর্ষণ লক্ষ্য করা যায়।

করিজ শহরটির বিশেষত্ব হলো এটি বেশ প্রাচীন মানে আড়াই হাজার বছরের পুরোণো একটি শহর। এই শহরেরও পানি সরবরাহ ব্যবস্থার প্রাচীন ক্যানেলের কথা উল্লেখযোগ্য। আসলে কিশের পানি সরবরাহ ব্যবস্থা মানে ক্যানেলের প্রচলন হয়েছে আড়াই হাজার বছর আগে। পারস্য উপসাগরের পানি লবণাক্ত কিন্তু এই ক্যানেলের মাধ্যমে সরবরাহকৃত পানি মিষ্টি। যার ফলে যারাই এখানে বসবাস করে তাদের জন্য এই ক্যানেলের পানি সরবরাহ ব্যবস্থা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে মজার ব্যাপার হলো দশ হাজার বর্গমিটার আয়তনের এই শহরটি এখন মাটির নীচের একটি বিস্ময়কর শহরে পরিণত হয়েছে। 'করিজ শহর' কিশের সবচেয়ে আকর্ষণীয় নিদর্শনের একটি। সারা বছর জুড়েই দেশি বিদেশি অসংখ্য পর্যটক এই শহরটি পরিদর্শন করতে আসে।

করিজ শহরের কথা। আড়াই হাজার বছরের পুরোণো এই শহরটি মাটির ষোলো মিটার নীচে অবস্থিত। এই শহরের কাঠামোটি গড়ে উঠেছে কিশ এবং ইরানি ঐতিহ্যবাহী শিল্পশৈলীর সংমিশ্রণে। এখানকার ঘরগুলোর ছাদ আট মিটার উঁচু এবং এর বেশিরভাগ ছাদই জীবাশ্ম, ঝিনুক এবং প্রবাল দিয়ে পূর্ণ বলা হয়ে থাকে যে বিশ্বের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ কিশের মাঝে মানের হৃদয়ের মধ্যখানে এই করিজ শহরের অবস্থান। এখানে একটি যাদুঘর গড়ে তোলা হয়েছে। ওই যাদুঘরে প্রবাল, জীবাশ্ম, ঝিনুক ইত্যাদিসহ এখানকার ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলোর দেখার সুযোগ রয়েছে। একটা মজার ব্যাপার হলো কিশ দ্বীপের আবহাওয়া সাধারণত গরম। তবে এই বিস্ময়কর শহর করিজের আবহাওয়া সবসময়ই উপভোগ্য রকমের ঠাণ্ডা। গ্রীষ্মের প্রচণ্ড গরমের সময়ও আবহাওয়া গরম হয় না।

অদ্ভুত রকমের এই আবহাওয়া সারা বছর জুড়েই অভিন্ন থাকে। তেমন কোনো পরিবর্তন আসে না। এ কারণে গরমের সময়ও পর্যটকরা, রসিক ভ্রামণিকরা এই কিশ দ্বীপে বেড়াতে আসে। উপভোগ করে এখানকার বিচিত্র প্রাকৃতিক বিস্ময়। পরবর্তী আসরে ইনশাআল্লাহ আরও কিছু কথা বলার চেষ্টা করবো।#

পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/মো.আবুসাঈদ/ ০৪

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ