এপ্রিল ২৬, ২০২১ ১৫:১৪ Asia/Dhaka

শ্রোতা/পাঠক! ২৬ এপ্রিল রোববারের কথাবার্তার আসরে স্বাগত জানাচ্ছি আমি গাজী আবদুর রশীদ। আশা করছি আপনারা প্রত্যেকে ভালো আছেন। আসরের শুরুতে ঢাকা ও কোলকাতার গুরুত্বপূর্ণ বাংলা দৈনিকগুলোর বিশেষ বিশেষ খবরের শিরোনাম তুলে ধরছি। এরপর গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি খবরের বিশ্লেষণে যাবো। বিশ্লেষণ করবেন সহকর্মী সিরাজুল ইসলাম।

বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ খবরের শিরোনাম:

  • সময়মতো উদ্যোগ নিলে এখন এত কিছু বন্ধ করতে হতো না’ -প্রথম আলো
  • এক বছরেও বাড়েনি আইসিইউ সক্ষমতা-কার্যকর হয়নি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশও-ইত্তেফাক-ইত্তেফাক
  • আসছে ‘মহামারি উত্তরণের’ বাজেট -কালের কণ্ঠ
  • রাজধানীতে একের পর এক অগ্নিকাণ্ড মামলা হয় তদন্ত এগোয় না, নজির নেই সাজার -যুগান্তর
  • টিকা কর্মসূচিতে হোঁচটআজ থেকে প্রথম ডোজ বন্ধ, দ্বিতীয় ডোজেও ঘাটতি ১৪ লাখের বেশি -সমকাল
  • বেনাপোল বন্দর দিয়ে ১০ দিনে ৩৮০১ জনের প্রবেশ-এসেছেন করোনা পজিটিভ রোগীও-মানবজমিন
  • ডেঙ্গু নিয়ে আবারও শঙ্কা মশার উৎপাতে নাজেহাল নগরবাসী -বাংলাদেশ প্রতিদিন

এবার ভারতের কয়েকটি খবরের শিরোনাম:

  • করোনা রুখতে কড়া দাওয়াই, এবার এলাকাভিত্তিক লকডাউনের ইঙ্গিত কেন্দ্রের -সংবাদ প্রতিদিন
  • ভোটবঙ্গে ভয় ধরাচ্ছে করোনা!‌ কোভিড পজিটিভ বিজেপি নেত্রী পার্নো মিত্র -আজকাল
  • এতিদিনে অক্সিজেনের কথা মনে পড়ল মোদির?-গণশক্তি

শ্রোতাবন্ধুরা! শিরোনামের পর এবার দু’টি বিষয়ের বিশ্লেষণে যাব। 

কথাবার্তার বিশ্লেষণের বিষয়:

১. স্বাস্থ্য খাতের গবেষণায় বরাদ্দ দেয়া ১০০ কোটি টাকা পড়েই থাকল..এমন একটি খবর দিয়েছে দৈনিক প্রথম আলো। কী বলবেন আপনি?

২. ‘পাশ্চাত্য সময়ক্ষেপণ করতে চাইলে ইরান আলোচনা থেকে বেরিয়ে আসবে’- তেহরানের এই হুমকির কারণ কী?

বিশ্লেষণের বাইরে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি খবর

প্রথম ডোজ দেয়া বন্ধ, অনিশ্চয়তায় টিকা কার্যক্রম-মানবজমিন/ইত্তেফাক

করোনার টিকার প্রথম ডোজ দেয়ার কর্মসূচি আজ থেকে বন্ধ। টিকার স্বল্পতার কারণেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ইতিমধ্যে প্রাপ্ত টিকা থেকে গতকাল পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৮১ লাখ ডোজ টিকা প্রয়োগ করা হয়েছে। হাতে আছে মাত্র সাড়ে ২০ লাখ ডোজ। ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ টিকা আসার কথা ছিল। চুক্তি অনুযায়ী, গত তিন মাসে এসেছে মাত্র ৭০ লাখ ডোজ। ভারত থেকে মার্চ মাসে কোনো টিকা আসেনি। এ হিসাবে মার্চ পর্যন্তই ৮০ লাখ ডোজ টিকা কম পেয়েছে বাংলাদেশ।আর এপ্রিলের টিকা আসবে কিনা তা এখনো নিশ্চিত নয়।

এরমধ্যে শনিবার ভারতীয় হাইকমিশনের তরফ থেকে ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে এক চিঠিতে বলা হয়, তাদের পক্ষে টিকা সরবরাহ করা সম্ভব নয়। চিঠিতে দুটি কারণ উল্লেখ করা হয়। বলা হয়, ভারতেই টিকার চাহিদা বেশি। তাছাড়া, কাঁচামাল সংকটে উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। এই অবস্থায় ভারতের পক্ষে টিকা সরবরাহ করা সম্ভব নয়। ভারতের এই সিদ্ধান্ত জানার পরই দেশে টিকার প্রথম ডোজ কর্মসূচি বন্ধ করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এক বছরেও বাড়েনি আইসিইউ সক্ষমতা কার্যকর হয়নি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশও-ইত্তেফাক

চিকিৎসাসেবায় আইসিইউ যে একটি অতীব জরুরি বিভাগ, করোনা মহামারি সেটি আমাদের সবাইকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে আইসিইউর সংকট প্রকট। দেশের ৪২টি জেলা সদর হাসপাতালে আইসিইউ নেই। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আইসিইউ তো দূরের কথা, হাইফ্লো অক্সিজেন সরবরাহেরও কোনো ব্যবস্থা নেই।

আইসিইউর অভাবে সময়মতো চিকিৎসা না পেয়ে অনেক রোগী মারা যাচ্ছে। উপজেলা পর্যায়ে একজন রোগীর আইসিইউর প্রয়োজন হলে তাকে পাঠানো হচ্ছে বিভাগীয় হাসপাতাল কিংবা রাজধানীতে। এতে রোগী সঙ্গে সঙ্গে আইসিইউ সাপোর্ট পাচ্ছে না। আর আইসিইউ রোগীকে আইসিইউ ব্যবস্থাপনায় চিকিৎসাসেবা দিতেই হবে। জেলা-উপজেলা পর্যায়ের অনেক রোগী আইসিইউ সাপোর্ট পাওয়ার জন্য বিভাগীয় হাসপাতাল কিংবা রাজধানীর হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে।

৩৬ জেলায় আইসিইউ নেই

করোনা মহামারি শুরু হওয়ার পর অনেক দেশ আইসিইউ সক্ষমতা বাড়াতে পারলেও এক বছরেরও বেশি সময় পেলেও দেশে বাড়েনি আইসিইউ সক্ষমতা। এক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা কার্যকর করা হয়নি। প্রধানমন্ত্রী গত বছরের জুনে একনেকের বৈঠকে সারা দেশে সব জেলা সদর হাসপাতালে আইসিইউ চালুর নির্দেশ দিয়েছিলেন। একই সঙ্গে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে হাইফ্লো অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত করার নির্দেশনা দিয়েছিলেন। কিন্তু এক বছরেরও বেশি সময় অতিবাহিত হলেও ৪২ জেলা সদর হাসপাতালে কেন আইসিইউ স্থাপন করা হয়নি, উপজেলা সদর হাসপাতালে কেন অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়নি, তার কোনো সদুত্তর দিতে পারছেন না স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুযায়ী কিংবা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত হাসপাতালে আগত রোগীদের মধ্যে ৫ থেকে ১০ ভাগের আইসিইউর প্রয়োজন হয়। এ কারণে ১০০ বেডের হাসপাতালের জন্য ৫ থেকে ১০ বেডের আইসিইউ থাকা অত্যাবশ্যকীয়। আর ৫০ বেডের হাসপাতাল হলে ৩ থেকে ৫ শয্যার আইসিইউ থাকতেই হবে। অর্থাত্ হাপসাতালে আইসিইউ থাকা বাধ্যতামূলক। কিন্তু দেশের অনেক সরকারি হাসপাতালে আইসিইউ নেই। দু-একটি নামিদামি বেসরকারি হাসপাতাল ছাড়া অধিকাংশ বেসরকারি হাসপাতালেও আইসিইউ নেই। আবার কিছু হাসপাতালে থাকলেও কাজ করে না। রোগীকে জিম্মি করে অর্থ আদায় করে অনেক বেসরকারি হাপসাতাল।

সময়মতো উদ্যোগ নিলে এখন এত কিছু বন্ধ করতে হতো না’-প্রথম আলো

বাংলাদেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সময়োচিত পদক্ষেপ নেওয়া হলে এখন এভাবে বিধিনিষেধ আরোপ করতে হতো না বলে মনে করেন সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ বে-নজির আহমেদ।

তাঁর মতে, গত বছর মার্চে দেশে করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি, বরং অবনতি হয়েছে।

আজ রোববার ‘করোনা মহামারি ও করণীয়’ শিরোনামে এক ওয়েবিনারে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপগুলো নিয়ে অভিমত দেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। বাম গণতান্ত্রিক জোট এই ওয়েবিনারের আয়োজন করে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক বে–নজির আহমেদ বলেন, গত বছর দীর্ঘদিন লকডাউন ছিল দেশে। তবু করোনার সংক্রমণ কমানো যায়নি। মানুষ অনেক ক্ষতির শিকার হয়েছে, কিন্তু লাভবান হয়নি।

 তিনি বলেন, ‘গেল এক বছরে দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থার সামান্য উন্নতি হয়নি, বরং কমেছে। আইসোলেশন, কোয়ারেন্টিন প্রথম দিকে যতটা মানা হচ্ছিল, এখন তা মানা হচ্ছে না। পরিস্থিতি যেমন চলছে তাতে করোনার সংক্রমণ আবার বাড়ার সম্ভাবনা আছে। সময়মতো উদ্যোগ নেওয়া হলে এত দিন এত কিছু বন্ধ রাখতে হতো না।’

বেনাপোল বন্দর দিয়ে ১০ দিনে ৩৮০১ জনের প্রবেশ-এসেছেন করোনা পজিটিভ রোগীও-মানবজমিন

বেনাপোল আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট দিয়ে গত ১৫ই এপ্রিল থেকে ২৪শে এপ্রিল পর্যন্ত অন্তত ১২ জন করোনা আক্রান্ত যাত্রী ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। তাদের পুলিশ তত্ত্বাবধানে যশোর  জেনারেল হাসপাতাল করোনা ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে। গত ৯ দিনে চিকিৎসার জন্য ভারতে গিয়ে দেশে ফিরেছেন ৩ হাজার ৮০১ জন বাংলাদেশি। করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট থাকা সত্ত্বেও দেশে ফিরে আসা যাত্রীদের বেনাপোল ইমিগ্রেশনের স্বাস্থ্য বিভাগে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে ১২ জন যাত্রীর দেহে করোনা পজেটিভ শনাক্ত হয়েছে। ফলে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন দুই দেশের মধ্যে যাতায়াতকারী পাসপোর্টধারী যাত্রীরা।

ভারত ভ্রমণের ক্ষেত্রে গত বছরের জুলাইয়ের পর ইস্যুকৃত নতুন ভিসা আর ৭২ ঘণ্টার মধ্যে আরটিপিসিআর  থেকে করোনা পরীক্ষার নেগেটিভ সনদ লাগছে। এ পথে যারা যাতায়াত করছেন তাদের ৯৫ শতাংশ মেডিকেল ভিসায়। ৫ শতাংশ বিজনেস, স্টুডেন্ট আর কূটনৈতিক ভিসায় যাতায়াত করছে।

সীমান্ত বন্ধ ঘোষণা

ভারতে করোনাভাইরাসের অতি সংক্রামক ধরন শনাক্ত ও তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় দুই সপ্তাহের জন্য দেশটির সঙ্গে স্থলসীমান্ত বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। আজ সোমবার থেকে এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন। গতকাল তিনি বলেন, ভারতে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় নাগরিকদের রক্ষায় সেখান থেকে আপাতত লোক আসা বন্ধ করা হচ্ছে। এটা দুই সপ্তাহের জন্য কার্যকর হবে। মহামারি নিয়ন্ত্রণে কঠোর লকডাউনের কারণে ভারতের সঙ্গে আকাশপথে চলাচল আগে থেকেই বন্ধ আছে। এখন স্থলপথেও যাত্রী আসা বন্ধ হলো। তবে স্থলবন্দর দিয়ে পণ্য পরিবহন চলবে বলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন। স্থলসীমান্ত চালু থাকায় গত ৯ দিনে প্রায় চার হাজার মানুষ ভারত থেকে বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে দেশে প্রবেশ করেছে।

করোনার তৃতীয় ঢেউ আরো ভয়াবহ হতে পারে: স্বাস্থ্যমন্ত্রী-ইত্তেফাক

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, করোনার প্রথম ঢেউ আমরা যথেষ্ট দক্ষতার সাথে সামলে নিয়েছিলাম। ফেব্রুয়ারিতে দেশে করোনায় মৃত্যু কমে যাওয়ার পর সবাই ভেবেছিল করোনা দেশ থেকে চলে গেছে। স্বাস্থ্যবিধি মানতে মানুষ অনীহা দেখাচ্ছিল। এসব কারণেই দেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ চলছে।

রাজধানীতে একের পর এক অগ্নিকাণ্ড মামলা হয় তদন্ত এগোয় না, নজির নেই সাজার-যুগান্তর

অন্তত নয়টি বড় অগ্নিকাণ্ডে কোনো মামলাই হয়নি * অগ্নিকাণ্ডের পর দায়ীদের শনাক্ত করা গেলেও থাকছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।বৃদ্ধ বাবা নাসির উদ্দিনের একমাত্র অবলম্বন ছিলেন অসি উদ্দিন (২২)। মূলত নাসির উদ্দিনের ব্যবসা দেখাশোনা করতেন ছেলেই। কিন্তু ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে মারা যান অসি। ছেলেকে হারিয়ে পুরোপুরি অসহায় হয়ে পড়েন নাসির উদ্দিন। ছেলে হারানোর যন্ত্রণা তিনি ভুলতে পারছেন না। চুড়িহাট্টার ওই আগুনে মারা যাওয়া দুই ভাই রানা ও রাজুর বাবা সাহেব উদ্দিনেরও একই হাল। পদে পদে দুই সন্তান হারানোর কথা তাকে মনে করিয়ে দিচ্ছেন। ওই আগুনে ৭১ জনের মৃত্যু হয়। ভয়াবহ ওই আগুনের ঘা না শুকাতেই শুক্রবার ভোররাতে পুরান ঢাকার আরমানিটোলার মুসা ম্যানশনে রাসায়নিকের গুদামে অগ্নিকাণ্ডে চারজনের মৃত্যু এবং ২০ জন গুরুতর আহত হন। এ অগ্নিদুর্ঘটনার পর দায়িত্বহীনতায় বিষয়টি ফের আলোচনায় আসে। এসব দুর্ঘটনা পর্যালোচনায় দেখা যায়, অগ্নিকাণ্ডে জানমালের ব্যাপক ক্ষতি ও দোষীদের চিহ্নিত করা গেলেও দায়ী ব্যক্তিরা সব সময়ই ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছেন। মামলা হচ্ছে, তদন্তও চলছে, কিন্তু চার্জশিট আর দেওয়া হচ্ছে না। ক্ষেত্রবিশেষে চার্জশিট দেওয়া হলেও আটকে যাচ্ছে সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে গিয়ে। সবচেয়ে অবাক করা কাণ্ড হচ্ছে রাজধানীর অন্তত বড় নয়টি অগ্নিকাণ্ডে ঘটনায় কোনো মামলাই হয়নি। সাজার নজিরও নেই।

হিসাবে দেখা গেছে, গত ১১ বছরে ভয়াবহতার দিক থেকে চারটি বড় অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। এর মধ্যে ২০১০ সালের ৩ জুন পুরান ঢাকার নিমতলীতে কেমিক্যালের গুদামে ভয়াবহ আগুনে শিশুসহ ১২৫ জনের মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনায় কোনো মামলাই হয়নি। দায়ীরা সবাই রয়ে গেছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। আরও তিনটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় মামলা হলেও দুটির তদন্ত এখনও পর্যন্ত শেষ হয়নি। এছাড়া একটি মামলার তদন্ত কার্যক্রম শেষ করে চার্জশিট দেওয়া হলেও সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে কচ্ছপগতিতে। তদন্তাধীন দুটি মামলায় এজাহারভুক্ত পাঁচ আসামিই জামিনে আছেন। বিচারাধীন মামলার ১৩ আসামির পাঁচজনই পলাতক ও বাকিরা জামিনে। তদন্তসংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগামী এক মাসের মধ্যে ওই দুটি মামলার চার্জশিট দেওয়া হবে। জানতে চাইলে ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক সহ-সভাপতি আবু বকর ফরহাদ যুগান্তরকে বলেন, অধিকাংশ ক্ষেত্রে মামলা না হওয়া দুঃখজনক। আইনের মাধ্যমেই মানুষ যে কোনো কিছুর সঠিক প্রতিকার পেতে পারেন। মামলা হলে তদন্ত কর্মকর্তা সংশ্লিষ্টদের সম্পৃক্ততা খতিয়ে দেখে চার্জশিটে অন্তর্ভুক্ত করবেন। এসব মামলায় অপরাধীদের যথাযথ সাজার নজির সৃষ্টি করতে হবে। তাহলে অপরাধীরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হবে। একইসঙ্গে দুর্ঘটনার শঙ্কাও হ্রাস পাবে।

এফআর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ড : ২০১৯ সালের ২৮ মার্চ রাজধানীর বনানীতে এফআর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডে ঘটনাস্থলেই ২৫ জন ও পরে হাসপাতালে আরও একজন মারা যান। এছাড়া পরে চিকিৎসাধীন ফায়ারম্যান সোহেলও মৃত্যুবরণ করেন। আর আহত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে আরও ৭৩ জন চিকিৎসা নেন। এ ঘটনায় বনানী পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই মিল্টন দত্ত মামলা করেন। মামলায় রূপায়ন গ্রুপের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী খান ওরফে মুকুলসহ তিনজনের নাম উল্লেখ করে আরও অজ্ঞাতনামাদের আসামি করা হয়। মামলার পরপরই আসামি বিএনপি নেতা তাজভিরুল ইসলাম ও ভবনের জমির মালিক আসামি প্রকৌশলী এসএমএইচআই ফারুককে গ্রেফতার করে পুলিশ। ওই বছর ৮ এপ্রিল তাদের গ্রেফতার করে পুলিশ। দুজনই জামিনে মুক্ত। লিয়াকত আলী খানও মুক্ত। অন্তত ৩২ বার আদালতের কাছে সময় নেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদন দাখিল করা হয়নি। ডিবি পুলিশের উপকমিশনার মশিউর রহমান যুগান্তরকে বলেন, তদন্ত প্রায় শেষ পর্যায়ে। শিগগিরই চার্জশিট দেওয়া হবে।

চুড়িহাট্টায় অগ্নিকাণ্ড : ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি চকবাজারের চুড়িহাট্টায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ৭১ জনের মৃত্যু হয়। স্থানীয় এক ব্যক্তি চকবাজার থানায় মামলা করেন। রাস্তার একটি প্রাইভেটকারের গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়ে পাশের বিদ্যুতের ট্রান্সমিটারে আগুন লাগে। সেখান থেকে নন্দকুমার দত্ত রোড চুড়িহাট্টা বিল্ডিংয়ের সামনে সিলিন্ডার ভর্তি দাঁড়িয়ে থাকা পিকআপে আগুন লাগে। পিকআপের সিলিন্ডারগুলো বিস্ফোরিত হয়ে বাড়ির নিচতলা ও রাজমহল হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টের মধ্যে আগুন লাগে। আসামিদের বাড়িতে কেমিক্যাল মজুদ থাকায় আগুন ছড়িয়ে ৬৭ জন ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করেন। মামলার এজাহারে ওই দুই আসামির নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ১০-১২ জনকে আসামি করা হয়েছে। ওয়াহেদ ম্যানশনের মালিকের দুই ছেলে হাসান ও সোহেল বেশি ভাড়ায় আশায় দাহ্য পদার্থ ক্রয়-বিক্রয়কারীদের কাছে ভাড়া দেন। মামলার পরই দুই আসামি উচ্চ আদালত থেকে জামিন নেন। ২০১৯ সালের ২ এপ্রিল নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করলে তাদের জামিন নাকচ করে কারাগারে পাঠানো হয়। তবে তারা এখন জামিনে মুক্ত। ইতোমধ্যেই আদালতে অন্তত ৩৬টি ধার্য তারিখ পার হলেও প্রতিবেদন দাখিল হয়নি। জানতে চাইলে চকবাজারের ওসি মওদুত হাওলাদার যুগান্তরকে বলেন, তদন্ত প্রায় শেষ পর্যায়ে। শিগগিরই চার্জশিট দেওয়া হবে। এ বিষয়ে সিনিয়র অফিসারদের সঙ্গে আলোচনা চলছে। সব মিলিয়ে আদালতে চার্জশিট দিতে আর মাসখানেক সময় লাগতে পারে।

তাজরিন ফ্যাশনে অগ্নিকাণ্ড : ২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরের তাজরিন ফ্যাশন কারখানায় ভয়াবহ আগুনে অন্তত ১১২ জন নিহত ও দুই শতাধিক শ্রমিক আহত হন। পরদিন আশুলিয়া থানার করা মামলায় তাজরিনের এমডি দেলোয়ার হোসেন ও চেয়ারম্যান মাহমুদা আক্তার মিতাসহ ১৩ জনকে আসামি করা হয়। আসামিদের বিরুদ্ধে ‘অপরাধজনক নরহত্যা’ ও ‘অবহেলার কারণে মৃত্যু’র অভিযোগ আনা হয়। ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মামলা বিচারাধীন এ মামলার ১৩ আসামি পাঁচজন পলাতক ও বাকিরা জামিনে।

যেসব ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে মামলাও হয়নি : ১৯৯০ সালের ১৭ ডিসেম্বর মিরপুরের সারেকা গার্মেন্টে অগ্নিকাণ্ডে ২৭ জন পুড়ে মারা যান। ১৯৯৫ সালে ঢাকার ইব্রাহিমপুরের লুসাকা অ্যাপারেলসে অগ্নিকাণ্ডে ১০ কর্মী প্রাণ হারান। ১৯৯৬ সালে ঢাকার তাহিদুল ফ্যাশনে ১৪ জন এবং সিনটেক্স লিমিটেডের কারখানায় ১৪ জন পুড়ে মারা যান। ১৯৯৭ সালে মিরপুরের তামান্না গার্মেন্টে ২৭ জন এবং মিরপুর-১ নম্বরের মাজার রোডের রহমান অ্যান্ড রহমান অ্যাপারেলসে আগুনে ২২ শ্রমিক মারা যান। ২০০০ সালের ২৫ নভেম্বর নরসিংদীর চৌধুরী নিটওয়্যার লিমিটেডে আগুনে ৫৩ শ্রমিকের প্রাণহানি ঘটে। ২০০০ সালে বনানীর চেয়ারম্যানবাড়িতে গ্লোব নিটিং ফ্যাশন লিমিটেডে ১২ শ্রমিক অগ্নিকাণ্ডে মৃত্যুবরণ করেন। ২০০১ সালে মিরপুরের মিকো সোয়েটার লিমিটেডে আগুন গুজবে পদদলিত হয়ে ২৪ শ্রমিক মারা যান। ২০০৫ সালে নারায়ণগঞ্জের গোদনাইলে সান নিটিং গার্মেন্টে আগুনে ২০ শ্রমিক মারা যান। ২০১০ সালের ৩ জুন পুরান ঢাকার নিমতলীতে কেমিক্যালের গুদামে ভয়াবহ আগুনে শিশুসহ ১২৫ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। এসব ঘটনার কোনোটিতে মামলা হয়নি। দায়ীরা সবাই রয়ে গেছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।

হেফাজতের কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা-মানবজমিন/ইত্তেফাক/সমকাল

অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কমিটিকে বিলুপ্ত ঘোষণা দিয়েছেন সংগঠনের আমীর আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী। ২৫শে এপ্রিল (রোববার) রাত ১১টার দিকে আল-জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসায় আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী ভিডিও বার্তার মাধ্যমে এমনটি জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, বর্তমানে দেশের পরিস্থিতির কারণে হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় কমিটির কিছু গুরুত্বপূর্ণ সদস্যদের সাথে পরামর্শক্রমে হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। এবং আগামী কিছুদিনের মধ্যে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হবে।

তবে দৈনিকগুলো লিখেছে,হেফাজতে ইসলামের আমীর আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীর সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্তের ঘোষণার কয়েক ঘন্টা পরেই নতুন কমিটি গঠন করেছে তারা। রোববার মধ্যরাতে হেফাজতে ইসলামের ফেসবুক পেজে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

আসছে ‘মহামারি উত্তরণের’ বাজেট-কালের কণ্ঠ

করোনাভাইরাস মহামারি আগামী অর্থবছরের বাজেটের হিসাব-নিকাশের অনেক কিছুতেই ‘প্রথম’ যোগ করছে। অর্থাৎ প্রথমবারের মতো সরকার অনেক কিছুতে উচ্চাভিলাষী লক্ষ্যমাত্রা থেকে সরে আসছে। বাস্তবতা মাথায় রেখে আগামী অর্থবছরের বাজেটে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আয়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হচ্ছে না। প্রথমবারের মতো মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির উচ্চাভিলাষী লক্ষ্যমাত্রা বাদ দিয়ে বাস্তবের কাছাকাছি রাখা হচ্ছে। বরাবরই বাজেটের আকারকে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে বড় করার চেষ্টা থাকে। এবার তা থেকেও সরে আসছে সরকার। বরং আগামী বাজেটে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে করোনা মহামারিকে। এই সংকট উত্তরণের বিষয়টি মাথায় রেখেই গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে স্বাস্থ্য সুরক্ষা তথা চিকিৎসা, দেশি শিল্প, গ্রামীণ অবকাঠামো এবং কর্মসংস্থানে। তবে এত কিছু করার কারণে এবার বাজেট ঘাটতি প্রথমবারের মতো দুই লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

kalerkanthoসূত্র মতে, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলা করে নতুন অর্থবছরে অর্থনীতিকে আগের অবস্থানে ফিরিয়ে আনতে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল গতকাল রবিবার বাজেট ব্যবস্থাপনা কমিটি এবং আর্থিক, মুদ্রা ও মুদ্রা বিনিময় হার সংক্রান্ত কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিলের বৈঠক করেন। বৈঠকে বাজেটের হিসাব-নিকাশে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়েছে।

আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই প্রতি অর্থবছরেই বাজেটের আকার রেকর্ড গড়েছে। সর্বশেষ তিন অর্থবছরেই বাজেটের আকার বেড়েছে লাফিয়ে লাফিয়ে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটের আকার ছিল তিন লাখ ৯১ হাজার ৬৯০ কোটি টাকা। ২০১৯-২০ অর্থবছরে এক লাখ ৩১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বেড়ে বাজেটের আকার দাঁড়ায় পাঁচ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। আর গত বছর করোনা সংকটের মধ্যে ঘোষণা করা ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট আগের বছরের চেয়ে ৪৪ হাজার ৮১০ কোটি টাকা বাড়িয়ে পাঁচ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা করা হয়। করোনা সংকট না কাটলেও এর কারণে আগামী অর্থবছরের বাজেটের আকারে এতটা উল্লম্ফন ঘটাতে রাজি নন অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। তাই চলতি অর্থবছরের তুলনায় আগামী অর্থবছরের বাজেটের আকার ৩৩ হাজার ৫১১ কোটি টাকা বাড়ানো হচ্ছে। আগামী অর্থবছরের জন্য প্রাথমিকভাবে ছয় লাখ এক হাজার ৫১১ কোটি টাকার বাজেট প্রাক্কলন করা হচ্ছে।

অর্থনীতিবিদরা যে কয়টি বিষয় নিয়ে আপত্তি তোলেন, তার মধ্যে রাজস্ব আয় অন্যতম। সরকার সব সময় অবাস্তব এবং উচ্চাভিলাষী রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা দিয়ে থাকে বলে তাঁরা মনে করেন। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ রাজস্ব আয়ে বড় ধাক্কা দিয়েছে।

ডেঙ্গু নিয়ে আবারও শঙ্কা মশার উৎপাতে নাজেহাল নগরবাসী-বাংলাদেশ প্রতিদিন

ঝড় বৃষ্টি, দুই সিটির মশক নিধন অভিযান, কোটি টাকা খরচ করে কেনা নতুন কীটনাশক; কিছুতেই কমছে না ঢাকার মশা। গত ২২ এপ্রিল রাতে ঝড়ে মশার প্রকোপ কিছুটা কমলেও দুই দিনের মধ্যে আবারও যেন রাজধানী দখলে নিয়েছে খুদে প্রাণীটি। মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ রাজধানীবাসী। শান্তিতে করা যাচ্ছে না ইফতার বা সাহরি। সন্ধ্যার পর বাইরে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা দায়। দরজা-জানালা বন্ধ রেখেও মিলছে না মুক্তি। কাউকে বাসায় ঢোকাতে দরজা খুললে মুহূর্তের মধ্যে অগণিত মশা ঢুকে পড়ছে ঘরে। মশার কারণে গত কয়েক মাস ধরে বিতর্কের মুখে থাকা ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এখনো যেন ঝড়-বৃষ্টির দিকেই তাকিয়ে আছে। ২০১৯ সালে এডিস মশার কারণে রাজধানীতে ভয়াবহ রূপ নেয় ডেঙ্গু। অসংখ্য মানুষ প্রাণ হারান। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে শপথ অনুষ্ঠানে দুই মেয়রকে সতর্ক করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘মশা আপনাদের ভোট যেন খেয়ে না ফেলে?’ অথচ, বছর না ঘুরতেই মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে ঢাকাবাসী। গত ফেব্রুয়ারি-মার্চে মশার উপদ্রব সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়। এ নিয়ে বিতর্কের মুখে ৩ মার্চ এক অনুষ্ঠানে, ঢাকা দক্ষিণ সিটির (ডিএসসিসি) মেয়র দুই সপ্তাহের মধ্যে মশা নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে আশা প্রকাশ করেন। উত্তর সিটির (ডিএনসিসি) মেয়রও বিভিন্ন স্থানে মশক নিধন অভিযানে গিয়ে এক-দুই সপ্তাহের মধ্যে মশা নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে আশা প্রকাশ করেন। তবে মার্চ মাসজুড়ে তা-ব চালিয়েছে মশা। এপ্রিলে মশা কিছুটা কমলেও এখনো সন্ধ্যার পর ঘরে-বাইরে স্থির দাঁড়িয়ে থাকা দায়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রাকৃতিকভাবে এখন কিউলেক্স মশা কমতে থাকবে, তবে এডিস মশা বাড়বে। তাই এখনই এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। এদিকে দুই সিটি করপোরেশন ব্যর্থ হওয়ায় খোদ নগরবাসী মশার বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমেছেন। মশারি, কয়েল, অ্যারোসল স্প্রে, ধুপ, মশা মারার ইলেকট্রিক ব্যাট, ইলেকট্রিক আলোর ফাঁদসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম কিনে মশা থেকে বাঁচার চেষ্টা করছেন। এ ব্যাপারে ডিএনসিসি ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা তারিকুল ইসলাম বলেন, গরমের মধ্যেও দিন-রাত দরজা-জানালা বন্ধ রাখতে হচ্ছে। তার পরও মশা কোথা থেকে ঢুকে পড়ে বুঝি না। বন্ধ ঘরেই কয়েল জ্বালিয়ে রাখি। শান্তিতে সাহরি ও ইফতার করতে পারি না। তবে দুই সিটি করপোরেশন বলছে, লকডাউনেও তাদের মশা মারা অভিযান অব্যাহত রয়েছে। ডিএসসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা আবু নাসের গতকাল বলেন, লকডাউনের আগেই ১৫ দিনের ওষুধ সব অঞ্চলে দিয়ে দেওয়া হয়েছে। অভিযান চলছে। মশাও কমেছে।

ভারতের কয়েকটি খবরের বিস্তারিত

ভারতে ব্যাপকহারে লুকানো হচ্ছে কোভিডে মৃতের সংখ্যা, সক্রমণ মৃত্যু সরকারি তথ্যের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি- গণশক্তি

ক্রমশ খারাপ হচ্ছে ভারতের কোভিড পরিস্থিতি। হাসপাতালগুলোতে আর রোগী ভর্তির জায়গা নেই, অক্সিজেনের মজুদ ফুরিয়ে আসছে, চিকিৎসার অভাবে মানুষ মারা যাচ্ছে। আবার মারা যাওয়ার পরেও সৎকারের জন্য লাইনে থাকতে হচ্ছে। এরইমধ্যে প্রমাণ পাওয়া গেছে যে, ভারতে কোভিডে মৃতের সংখ্যা সরকারি তথ্যের থেকেও অনেক বেশি।

ভারতে প্রতিদিনই শনাক্ত হচ্ছে ৩ লাখের বেশি মানুষ। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সংখ্যা আসল সংক্রমণের তুলনায় অনেক কম। এখন অনেকেই সন্দেহ প্রকাশ করছেন ভারতে কোভিডে মৃতের আসল সংখ্যা নিয়েও। দেশটিতে কোভিডে মৃতের সংখ্যা ২ লাখ প্রায়।

প্রতিদিনই ২ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যুর খবর জানাচ্ছে সরকার। কিন্তু দেশটির মরদেহ সৎকারের স্থানগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে সেখানে আগুন আর বন্ধ হচ্ছে না। সরকার যে তথ্য দিচ্ছে তার থেকেও অনেক বেশি মানুষের সৎকার করা হচ্ছে।

নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশটির রাজনীতিবিদরা জনরোষের ভয়ে মৃতের সংখ্যা কমিয়ে বলছে। কিংবা হাসপাতালগুলো মৃতের সংখ্যা কম গণনা করছে। আবার অনেক ক্ষেত্রে পরিবারগুলোও কোভিডে মৃতের কথা লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করছে। কারণ, ভারতে কোভিডে মৃত্যুকে কিছু ক্ষেত্রে লজ্জাজনক হিসেবে মনে করার প্রবণতা দেখা গেছে।

মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের মহামারি বিশেষজ্ঞ বর্বর মুখার্জি বলেন, ভারত সরকারের দেয়া তথ্যের কোনো ঠিক নেই। আমরা যতগুলো মডেলই তৈরি করেছি, তাতে দেখা গেছে মৃতের সংখ্যা ২ থেকে ৫ গুন বেশি। দেশটির চিতাগুলো এখন ২৪ ঘন্টাই জ্বলছে। ধোঁয়ায় ঢেকে যাচ্ছে আশেপাশের আকাশ। আশেপাশের মানুষেরা বলছেন, এরকম অবস্থা তারা কখনো দেখেননি।

ভারতের শহর ভোপালে ১৯৮০র দশকে গ্যাস লিক হয়ে হাজারো মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। তারা বলছেন, সেই ঘটনার পর এই প্রথম সেরকম হারে মরদেহ সৎকার করতে দেখছেন তারা। কিন্তু সরকারি তথ্য বলছে, গত ১৩ দিনে সেখানে মাত্র ৪১ জনের কোভিডে মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু নিউ ইয়র্ক টাইমসের অনুসন্ধানে জানা গেছে, এই একই সময়ে এক হাজারের বেশি মানুষকে দাহ করা হয়েছে সেখানে। ভোপালের কার্ডিওলোজিস্ট জি সি গৌতম জানান, প্রতিদিন মৃতের সংখ্যা বাড়ছে কিন্তু মৃতের সংখ্যা রেকর্ড করা হচ্ছে না। কর্তৃপক্ষ এটি প্রকাশ্যে আনছে না কারণ তারা মানুষকে উদ্বিগ্ন করতে চান না। একই অবস্থা দেখা গেছে, লক্ষেèৗ, মির্জাপুরসহ উত্তর প্রদেশের অনেক শহরে। গুজরাটেও মৃতের সংখ্যা কমিয়ে দেখানো হচ্ছে বলে জানিয়েছে নিউ ইয়র্ক টাইমস। গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য বিশ্লেষণ করে জানা গেছে, সরকার যে মৃতের সংখ্যা বলছে তার থেকেও অন্তত ৫ গুন বেশি মানুষ কোভিডে মারা গেছেন।

করোনা রুখতে কড়া দাওয়াই, এবার এলাকাভিত্তিক লকডাউনের ইঙ্গিত কেন্দ্রের-সংবাদ প্রতিদিন

করোনার (Coronavirus) দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কায় বিধ্বস্ত দেশ। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে সংক্রমণ। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃতের সংখ্যাও। গত কয়েকদিনের ভয়াবহ পরিস্থিতির দিকে নজর রেখে সমস্ত রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলকে কোভিড (COVID-19) মোকাবিলায় কড়া হওয়ার বার্তা দিল কেন্দ্র। স্থানীয় কনটেনমেন্ট জোন গড়ার নির্দেশের মধ্যে এলাকাভিত্তিক লকডাউনের ইঙ্গিত।#

পার্সটুডে/গাজী আবদুর রশীদ/২৬

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ