মে ০৭, ২০২১ ২১:৫৩ Asia/Dhaka

অনতিবিলম্বে মুসলমানদের প্রথম কেবলা মসজিদুল আকসা, আল কুদস এবং ফিলিস্তিন মুক্ত হবে বলে আশাপ্রকাশ করেছেন আল কুদস কমিটি বাংলাদেশের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মোস্তফা তারেকুল হাসান। আজ বিশ্ব কুদস দিবসে রেডিও তেহরানকে দেয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন।

তিনি আরব লীগ এবং ওআইসির ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ উল্লেখ করে বলেন, যারা নেতৃত্ব দিচ্ছে তারা সবাই দাসানুদাসে পরিণত হয়েছে।

  • মুসলিম জাতিসংঘ তৈরি হওয়া দরকার
  • সেই জাতিসংঘ দিয়ে মুসলমানদের প্রথম কেবলা আল কুদস উদ্ধারের মহাসংগ্রাম শুরু করা দরকার

কয়েকটি আরব দেশের সাথে ইহুদিবাদী ইসরাইলের ট্রিটি ঐতিহাসিক ভুল

সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ, উপস্থাপনা ও তৈরি করেছেন গাজী আবদুর রশীদ।

ইমাম খোমেনী (র)

রেডিও তেহরান: জনাব, অধ্যাপক মোস্তফা তারেকুল হাসান, শুরুতেই আপনার কাছে জানতে চাইব, ইরানের ইসলামি বিপ্লবের নেতা মরহুম ইমাম খোমেনী (র) রজমান মাসের শেষ শুক্রবারকে আন্তর্জাতিক কুদস দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন। ইহুদিবাদীদের কবল থেকে বায়তুল মুকাদ্দাস মুক্ত করার যে লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছিল আপনার দৃষ্টিতে তা এখন কোন পর্যায়ে আছে?

মোস্তফা তারেকুল হাসান: আপনার প্রশ্নটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা আল-কুদ্স মুক্তির আন্দোলন দীর্ঘদিন ধরে করে আসছি। সারা বিশ্বের মুসলমানের প্রাণের স্পন্দন হচ্ছে আল-কুদ্সকে মুক্ত করা। মুসলমানদের প্রথম কিবলা মসজিদুল আকসাকে ইহুদিবাদী ইসরাইল জবর দখল করে রেখেছে। সেখানে মুসলমানরা কালে-ভদ্রে ঢোকার সুযোগ পায়, ইবাদতের সুযোগ পায়। তবে বেশিরভাগ সময় মসজিদুল আকসা অবরুদ্ধ থাকে। আমাদের মুসলমানের প্রাণের দাবি বায়তুল মোকাদ্দাসকে মুক্ত করা। আর সেই দাবি মেটানোর জন্যই ইরানের ইসলামি বিপ্লবের মহান নেতা মরহুম ইমাম খোমেনী (র.)রমজানের শেষ শুক্রবারকে ‘আল কুদস দিবস’ ঘোষণা করলেন। ইমাম খোমেনী (র.)এর ঘোষণাটি সারা বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করল। বিশ্বের মুসলমানদের কাছে আন্দোলনের একটি নতুন মাত্রা যোগ হলো। এ কারণে আমরা সারা বছরই ফিলিস্তিন সম্পর্কে কথা বলি, আল কুদস সম্পর্কে কথা বলি, ফিলিস্তিনের নির্যাতিত ভাই-বোনদের মুক্তি নিয়ে কথা বলি। কিন্তু সুনির্দিষ্টভাবে আল কুদস মুক্ত করার বিষয় নিয়ে কথা বলি এবং আন্দোলন করি। এজন্য নানা ধরনের স্লোগান তুলি, নানা দাবি দাওয়া উত্থাপন করি, নানাভাবে জোরাল আওয়াজ তুলি। বিশ্বের মুসলমানদের সাথে সাথে বাংলাদেশের মুসলমানদের পক্ষ থেকে আল-কুদস কমিটিও একই চেষ্টা করি।

মসজিদুল আকসা মুক্ত হবেই

আমরা মনে করি অদূরভবিষ্যতে মসজিদুল আকসা মুক্ত হবে, আল কুদস মুক্ত হবে। বর্তমানে বিশ্বে একটি মুসলিম জাগরণ চলছে। যদিও একদিকে মনে হচ্ছে মুসলমানরা মার খাচ্ছে। তবে বিষয়টিকে বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে তাঁরা তাঁদের অধিকারকে আদায় করে নেয়ার চেষ্টা করছে। অধিকার প্রতিষ্ঠার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। সেদিক থেকে আমরা আশাবাদী যে বিশ্বের মুসলমানদেরকে সাথে নিয়ে ফিলিস্তিনের মুসলমানরাও একদিন মুক্ত হবে এবং আমরা আমাদের প্রথম কেবলা মসজিদুল আকসাকে ফিরে পাব। আমরা সহজভাবে নামাজ আদায় করতে পারব। ইবাদত বন্দেগি করতে পারব।

রেডিও তেহরান: জনাব মোস্তফা তারেকুল হাসান, আপনি বললেন, বিশ্ব মুসলিমের প্রাণের জায়গা- এবং দাবি আল- কুদসকে মুক্ত করা। তো আপনার কথার সুত্র ধরেই জানতে চাইব, কুদস দিবস পালনের সঙ্গে মুসলিম ঐক্যের একটা সম্পর্ক রয়েছে। আপনার কী মনে হয় মুসলিম ঐক্য প্রতিষ্ঠায় বিশ্ব কুদস দিবস বিশেষ কোনো ভূমিকা রাখছে?

ইরানে কুদস দিবসে ইসরাইলি পতাকায় আগুন

মোস্তফা তারেকুল হাসান: দেখুন, খুবই দুর্ভাগ্যজনক যে এখনও সেভাবে ভূমিকা রাখতে পারছে না। তবে আমি বিশ্বাস করি, আল কুদস দিবস এবং আল কুদস- এটাই মুসলিম ঐক্যের একটি প্রতীক হতে পারে। কারণ শিয়া, সুন্নি, হানাফি, শাফেয়ি, হাম্বলি- মুসলমানদের কেউই তো অস্বীকার করছে না যে আল কুদস কিংবা মসজিদুল আকসা আমাদের প্রথম কেবলা না। সবাই এটা মনে করে মসজিদুল আকসা মুক্ত হওয়া দরকার। কিন্তু এটা মুক্তির জন্য যেভাবে আন্দোলন হওয়া দরকার সেভাবে আন্দোলন সবাই করছে না। তবে আমি আবারও বলছি-আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি ‘আল কুদস মুক্তির আন্দোলনে সবাই যদি অংশগ্রহণ করে তাহলে আল কুদস আন্দোলনই সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারে। কারণ আল কুদস সবার।

রেডিও তেহরান: জ্বি, আপনি বললেন আল কুদস বিশেষ কোনো মাজহাব ও গোষ্ঠীর নয়; সব মুসলমানের আল-কুদস, সমস্ত মুসলমানের প্রাণের স্পন্দন অথচ সেই আল-কুদস দখলকারী ইহুদিবাদী ইসরাইলের সঙ্গে অনেক আরব মুসলিম রাষ্ট্র এখন প্রকাশ্য সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করেছে। বিষয়টি নিয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ কী?

মোস্তফা তারেকুল হাসান: দেখুন, এটা খুব দুর্ভাগ্যজনক। যেদিন ইহুদিবাদী ইসরাইলের সঙ্গে কয়েকটি আরব রাষ্ট্রের ট্রিটি হলো সেদিন আমরা কঠোর প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছি এবং তীব্র নিন্দা জানিয়েছি। এটা আসলে একেবারেই হওয়া উচিত ছিল না। তারপরও এটি হয়েছে এবং আমাদের জন্য খুবই দুর্ভাগ্যজনক। এধরনের চুক্তি আমরা কখনই আশা করিনি। যে কাজটি হয়েছে সেটি ভুল; ঐতিহাসিক ভুল। মুসমানদের পক্ষ থেকে মুসলিম কোনো এদশ এটা করতে পারে না। এটা করলে মুসলমানদের নিজস্ব আলাদা কোনো পরিচয় থাকবে না। মুসলমানরা ইহুদিবাদীদের সাথে লীন হয়ে যাবে। তাদের ক্রীড়নকে পরিণতে হবে, তাদের দাসানুদাসে পরিণত হবে। আমরা বিশ্বাস করি অনতিবিলম্বে যারা ঐ চুক্তি করেছে তারা বের হয়ে আসবে।

রেডিও তেহরান: জনাব মোস্তফা তারেকুল হাসান, আগের প্রশ্নের সুত্র ধরেই জানতে চাইব- আল-কুদস উদ্ধারে আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টাকে কতটা শক্তিশালী বলে মনে হয়? এ ক্ষেত্রে ওআইসি এবং আরব লীগের ভূমিকাকে আপনি কীভাবে দেখেন?

আরব লীগ

মোস্তফা তারেকুল হাসান: ওআইসি এবং আরব লীগের ভূমিকা সবসময়ই প্রশ্নবিদ্ধ। ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি ওআইসি এবং আরব লীগের কোনো প্রয়োজন নেই। । ঐ দুটি সংগঠন বন্ধ করে দিয়ে মুসলিম জাতিসংঘ তৈরি হওয়া দরকার। খুব সক্রিয়ভাবে একটি ইসলামি জাতিসংঘ তৈরি হওয়া দরকার। আরব লীগ এবং ওআইসির যারা নেতৃত্ব দিচ্ছে তারা সবাই দাসানুদাসে পরিণত হয়েছে। কেউ সৌদি আরবের দাস হয়েছে। কেউবা সৌদি আরবের ভয়ে আমেরিকার দাসানুদাস হয়েছে। তাদের রক্তচক্ষু দেখলে তারা কোনো কথাই বলতে পারে না। তাহলে তারা কিভাবে মুসলমানদের অধিকার আদায় করবে, কিভাবে মুসলমানদের সমস্যা নিয়ে কথা বলবে? আমি মনে করি যে মুসলিম জাতিসংঘ তৈরি হওয়া দরকার। আর সেই জাতিসংঘ দিয়ে মুসলমানদের প্রথম কেবলা আল কুদস উদ্ধারের মহাসংগ্রাম শুরু করা দরকার।

ওআইসি

রেডিও তেহরান: জনাব অধ্যাপক মোস্তফা তারেকুল হাসান সব শেষে আপনার কাছে জানতে চাইব, আপনি আল-কুদ্‌স কমিটি বাংলাদেশের সেক্রেটারি জেনারেল। প্রতিবারের মতো এবারও আপনারা অনুষ্ঠান করেছেন। তবে করোনা প্যানডেমিকের কারণে অনলাইন ওয়েবিনার বা অনলাইন সেমিনার করেছেন। তো এবারে আপনাদের মূল প্রতিপাদ্য কি ছিল? কেমন হলো..

আল কুদস কমিটি বাংলাদেশ'র ওয়েবিনার

মোস্তফা তারেকুল হাসান: ধন্যবাদ আপনাকে। এটি জানার জন্য সবাই অপেক্ষা করবে বলে আমি মনে করি। আলহামদুলিল্লাহ আজকে আমরা অত্যন্ত সফল একটি প্রোগ্রাম করেছি। করোনা মহামারির মধ্যে আমরা বড় কোনো সেমিনার করতে পারিনি। যে কারণে আমরা ওয়েবিনার করেছি। একে সহজবোধ্য নাম দিয়েছি অনলাইন সেমিনার। আমাদের আজকের অনুষ্ঠানটি নিয়ে আমরা কিছুটা প্রচারণা চালিয়েছিলাম। মসজিদের ইমামদের কাছে চিঠি দিয়েছিলাম যেন শুক্রবার অর্থাৎ আজ শেষ জুমার দিন এ বিষয়ে কথা বলেন। এতে জনমত তৈরি করতে সহযোগিতা হয়।

আজকের সেমিনার বা ওয়েবিনারে সভাপতিত্ব করেছেন-ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক, আল কুদস কমিটি বাংলাদেশের সভাপতি কাওসার মোস্তফা আবুল উলায়ী, ওয়েবিনারে প্রধান অতিথি হিসাবে ছিলেন-বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, বিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. মোহাম্মাদ শমসের আলী। আলোচক হিসেবে ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট বদরুদ্দোজা, মাওলানা একেএম মাহবুবুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মোহাম্মাদ ছিদ্দিকুর রহমান খান, সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্ট জনাব জামালউদ্দীন বারি, আজকের ভোলার সম্পাদক অধ্যক্ষ শওকত হোসেনসহ আরও কয়েকজন আলোচনা  করেছেন। আর আজকের অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলাম আমি মোস্তফা তারেকুল হাসান-সেক্রেটারি জেনারেল আল কুদস কমিটি বাংলাদেশ।

দীর্ঘ আড়াই ঘন্টাব্যাপী অনুষ্ঠানটি চলেছিল। অসংখ্য শ্রোতৃমণ্ডলী অনলাইনে যোগদান করেছেন। কাজেই রমজানের শেষ শুক্রবার হযরত ইমাম খোমেনী(র.)কর্তৃক ঘোষিত আল কুদস দিবসের আলোচনাটিই ছিল আমাদের মূল প্রতিপাদ্য। আমরা আজকের অনুষ্ঠানের উপসংহার টেনেছিলাম এভাবে যে, রমজানে আমাদের যে তাক্বওয়া সৃষ্টি হয়, রমজানে যে মানুষ আল্লাহমুখী হয়, রমজানে মানুষের ভেতর জ্বলণী সৃষ্টি হয় সেই যে অনুভূতি তাকে কাজে লাগিয়ে আমরা ফিলিস্তিনের অসহায় নারী শিশুদের পাশে থাকবে, ফিলিস্তিনের নির্যাতিত মানুষের পাশে থাকব। আর এই চেতনা অর্জনের মাধ্যমে আগামী দিনে ফিলিস্তিন মুক্তির আন্দোলনকে আরো বেগবান করব। ইনশাআল্লাহ আমরা অনতিবিলম্বে ফিলিস্তিন এবং আল কুদস মুক্ত করব। এইছিল আজকের আলোচনার প্রধান বিষয়।

রেডিও তেহরান: তো জনাব অধ্যাপক মোস্তফা তারেকুল হাসান, আন্তর্জাতিক কুদ্স দিবসে রেডিও তেহরানের সঙ্গে কথা বলার জন্য আপনাকে আবারও অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

মোস্তফা তারেকুল হাসান: আপনাকেও ধন্যবাদ এবং রেডিও তেহরানের বাংলা বিভাগের সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।#

পার্সটুডে/গাজী আবদুর রশীদ/৭

  • বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

 

 

ট্যাগ