মে ০৮, ২০২১ ১৭:৩৬ Asia/Dhaka

গত কয়েকটি আসরে আমরা ইরানের একটি গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সম্পদ 'গ্যাস' নিয়ে কথা বলার চেষ্টা করেছি। আজ থেকে আমরা ইরানের আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সম্পদ 'তেল শিল্প' নিয়ে কথা বলার চেষ্টা করবো।

ইরানে পণর হাজার কোটি ব্যারেলেরও বেশি তেল রয়েছে বলে এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত খনিগুলোর পরিসংখ্যানে উল্লেখ করা হয়েছে। এই পরিসংখ্যান অনুযায়ী বিশ্বের তেল মজুতের যেই পরিমাণ তথ্যপঞ্জিতে প্রমাণিত তার প্রায় দশ শতাংশই রয়েছে ইরানে। সুতরাং তেল মজুতের ক্ষেত্রে বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম দেশ এখন ইরান। বেশিরভাগ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ও উন্নয়নের চালিকাশক্তি হিসাবে তরল জ্বালান মানে তেলের একটি বিশেষ স্থান রয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে  অর্থনৈতিক ও শিল্প বিকাশের তীব্রতা ও দ্রুততার বিষয়টি মূলত জ্বালানি খরচের মাত্রা ও স্তরের সাথে ব্যাপকভাবে সম্পর্কিত। গ্লোবাল এনার্জি পোর্টফোলিওতে এই বাস্তবতারই প্রতিফলন ঘটে যে এই পোর্টফোলিওকে বৈচিত্র্যময় করার জন্য ব্যাপক চেষ্টা-প্রচেষ্টা চালানো সত্ত্বেও তেল এবং গ্যাসই এখনও পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জ্বালানি শক্তি।

এক্সনমোবিল নামে বিখ্যাত যে কোম্পানিটি রয়েছে ওই কোম্পানি তার দুই হাজার সতেরো সালের এনার্জি আউটলুক প্রতিবেদনে ঘোষণা করেছে যে, দুই হাজার চল্লিশ সাল পর্যন্ত বিশ্বের জ্বালানি শক্তি নিশ্চিত করার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উত্স হিসেবে থাকবে এই তেল। এই তেল বিশ্বের মোট জ্বালানি চাহিদার শতকরা বত্রিশ ভাগ  নিশ্চিত ও সরবরাহ করে থাকে। তেল একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত পণ্য। শিল্প কল-কারখানাগুলোকে সক্রিয় রাখা এভং এগুলোর তৎপরতার জন্য এমনকি নতুন নতুন শিল্প কারখানা থৈরি করা ও প্রতিষ্ঠিত শিল্পগুলোর উৎপাদন, উন্নয়ন ও বিকাশ আরও বৃদ্ধি করার ক্ষেত্রে এই খনিজ তরলটি অগ্রণী ভূমিকা পালন করে।

ব্রিটিশ পেট্রোলিয়াম বা বিপি'র মতে দুই হাজার ষোলো সালের শেষে বিশ্বের তেলের মজুদ ছিল এক লক্ষ সত্তর হাজার কোটি ব্যারেলেরও বেশি। বিশ্বের এই তেলের মজুদের প্রায় অর্ধেকই পশ্চিম এশীয় অঞ্চলে অবস্থিত। এই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, পণেরো হাজার কোটি ব্যারেলেরও বেশি তেলের মজুদ রয়েছে ইরানে। তার মানে দাঁড়ায় বিশ্বব্যাপী তেলের যে পরিমাণ মজুদ রয়েছে তার শতকরা প্রায় দশ ভাগের বেশি মজুদ রয়েছে ইরানে। তেল মজুদের ক্ষেত্রে বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম দেশ ইরান।

ইরানে এক শ সত্তরটিরও বেশি উন্নত তেল ও গ্যাস ক্ষেত্র রয়েছে। এর মধ্যে এক শ বিশটি তেল ক্ষেত্র এবং পঞ্চাশটি হলো গ্যাস ক্ষেত্র। এছাড়াও রয়েছে এক শ সত্তরটিরও বেশি উন্নত মানের এবং আধুনিক তেল ভাণ্ডার। এসব তেল এবং গ্যাস ক্ষেত্র থাকার কারণে বিশ্বে ইরানের বিশেষ মর্যাদা ও স্থান রয়েছে। যদিও ইরানে দুই শ টিরও বেশি তেল ও গ্যাসের ভাণ্ডার থেকে তেল উত্পাদন ও বিকাশের কাজ শুরু হয় নি। ইরানের অপরিশোধিত তেলের মজুদের প্রায় সত্তর ভাগই সমুদ্র উপকূলবর্তী বিভিন্ন স্থানে আর বাদবাকি তেলের বেশিরভাগই পারস্য উপসাগর উপকূলীয় এলাকায় অবস্থিত। ইরানের উত্তরাঞ্চলের ক্যাস্পিয়ান সাগরের উপকূলেও ইরানের তেলের মজুদ রয়েছে।

বিশ্বে জ্বালানি হিসেবে তেলের ব্যবহার প্রাচীনকাল থেকেই হয়ে আসছে। ঐতিহাসিক দলিল এবং প্রত্নতাত্ত্বিক খননকাজ থেকে প্রমাণিত হয় যে, মেসোপটেমিয়ায় মানে আধুনিক ইরাকে বসবাসকারী প্রাচীন সভ্য জনগোষ্ঠী প্রায় চার হাজার বছর আগে বিটুমিনসহ বেশ কিছু পেট্রোলিয়াম পণ্য সামগ্রীর সাথে পরিচিত ছিল। রোমান এবং গ্রীকরাও ইরাকিদের মতো জাহাজের কাঠের জোড়ায় বিটুমিনের ব্যবহার করতো। কারণ হলো বিটুমিন হলো দুর্ভেদ্য পদার্থ অর্থাৎ বিটুমিন ভেদ করে ভেতরে পানি যেত না। আবার এই বিটুমিনই অন্ধকার তাড়ানোর জন্য মশাল জ্বালানোর কাজে ব্যবহার করা হতো। এর পাশাপাশি শিখা প্রজ্জ্বলনসহ উত্তাপ তৈরিতেও বিটুমিন ব্যবহার করেছিল প্রাচীন সভ্য জাতির লোকজন। হাখামানেশিয় যুগে ইরানে ওষুধ তৈরিসহ মেডিক্যাল বিভ্যাগে এই তেলের ব্যবহার হতো।

এ প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য যে, গ্রিক ইতিহাসবিদ হেরোডোটাস ইরানীদের তেল এবং বিটুমিন উত্তোলন সম্পর্কে তাঁর বইতে লিখে গেছেন। বিশ্বে প্রথম তেল অনুসন্ধানের ঘটনা ঘটেছিল ফ্রান্সে। সতেরো শ পঁয়তাল্লিশ সালের ঘটনা এটি। আর আঠারো শ উনষাট খ্রিস্টাব্দে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভেনিয়ায় তেলকূপ খনন করে তা থেকে সর্বপ্রথম তেল উত্তোলন করা হয়েছিল। মধ্যপ্রাচ্যে তেল কূপগুলোর অনুসন্ধান কাজের সূচনা এবং তেলকূপ থেকে তেল উত্তোলনের কাজ শুরু হয়েছিল বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে। ইরানের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর মাসজেদ সোলায়মানেই প্রথম তেল আবিষ্কার হয়েছিল।

এই মাসজেদ সোলায়মান শহরেরই এক নম্বর তেল কূপ থেকে ইরানের তেল উত্তোলনের সূচনা হয়েছিল। #

পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/ মো:আবু সাঈদ/ ৮

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ