জুন ১৩, ২০২১ ২০:৪৫ Asia/Dhaka

শ্রোতা/পাঠকবন্ধুরা! রেডিও তেহরানের স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা বিষয়ক অনুষ্ঠান স্বাস্থ্যকথার আসরে স্বাগত জানাচ্ছি আমি গাজী আবদুর রশীদ। আশা করছি আপনারা সবাই ভালো আছেন। মহামারি করোনা নিয়ে আজও আলোচনা হবে। আর আলোচনা করবেন-কানাডা প্রবাসী বিশিষ্ট চিকিৎসক শাহনাজ কাজী। তো চলুন আজকের আলোচনা শুনি।

রেডিওি তেহরান: ড. শাহনাজ কাজী রেডিও তেহরানের স্বাস্থ্যকথার আসরে আপনাকে স্বাগত জানাচ্ছি। আপনি বলছিলেন-মারাত্মকভাবে আক্রান্ত না হলে হাসপাতালে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। তো সেক্ষেত্রে চিকিৎসাটা কিভাবে নেবেন এবং কি চিকিৎসা নেবেন?

ডা. শাহনাজ কাজী: দেখুন, আমরা বলি সিমটোমেটিক ট্রিটমেন্ট বা লক্ষণ নির্ভর চিকিৎসা। এটা হচ্ছে- শুধুমাত্র যে সিমটমটা হচ্ছে রোগীর সেটার চিকিৎসা। জ্বর হলে জ্বরের চিকিৎিসা। যেমন সাধারণ জ্বরের চিকিৎসা যেভাবে করা হয়। যদি গলা ব্যথা হয় সেক্ষেত্রে গলা ব্যথার চিকিৎসা হবে, ডায়ারিয়া হলে তার চিকিৎসা হবে। যে সিমটমে করোনা রোগী আক্রান্ত হবেন সেই সিমটমের চিকিৎসা হবে। এটাই কিন্তু প্রধান গাইডলাইন।

রেডিও তেহরান: তার মানে সিমটম অনুযায়ী চিকিৎসা নিতে হবে, জ্বর হলে-জ্বরের, গলা-ব্যথা হলে-তার ওষুধ, ডায়ারিয়া হলে তার চিকিৎসা-এভাবে চিকিৎসাটা নিতে হবে।তার মানে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে-তাইতো..

 

করোনাভাইরাস

ডা.শাহনাজ কাজী: জ্বি, রোগীকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। রোগীর সিমটমগুলোকে সর্বক্ষণ নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে যে, কেমন আছেন মানুষটি। করোনা রোগীর ক্ষেত্রে অনেক সময় অক্সিজেন লেভেলটা অনেক কমে যায়। আর অক্সিজেন লেভেলটা কমে গেল কিনা সেটার জন্য আমি যতটুকু জানতে পেরেছি বাংলাদেশে এখন অক্সিজেন স্যাচুরেশন যন্ত্রটা পাওয়া যায়।

অক্সিজেন সেচুরেশন লেভেলটা কত আছে পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে

ওটা যদি বাসায় থাকে তাহলে টাইম টু টাইম অক্সিজেন লেভেলটা চেক করা যাবে। কি অবস্থায় আছেন তিনি-অক্সিজেন লেভেটটা ঠিক আছে কি না, কম বা বেশি হচ্ছে কিনা তা বোঝা যাবে। একজন সাধারণ মানুষের জন্য শতকরা ৯৪ ভাগ থাকে অক্সিজেন লেভেল। এটা থাকলে ঠিক আছে। কিন্তু এটা নেমে গিয়ে ৯০ চলে আসল। এর নিচে নেমে গেলে আমরা চিকিৎসরা বলি তার অবস্থার অবনতি  হচ্ছে। তখন অবশ্যই আমাদের চিন্তা করা উচিত তাঁকে হাসপাতাল নেয়া কিংবা চিকিৎসার ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ করতে। এর আগ পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত রোগীকে বাসায় থাকাই সবচেয়ে সমীচীন। তাছাড়া প্রচুর পরিমাণে পানি খেতে হবে, ফল-ফলারি খেতে হবে, রেস্ট নিতে হবে। আরেকটি বিষয় আমরা তো এখন সবাই জানি। সেটি হচ্ছে তাঁকে আলাদা থাকতে হবে। আলাদা থাকাটা সুনিশ্চিত করতে হবে। যদি বাড়িতে অন্য কেউ তারা দ্বারা আক্রান্ত না হয়ে থাকে। অবশ্যই আলাদা থাকাটা সুনিশ্চিত করতে হবে।

রেডিও তেহরান: ডা. শাহনাজ কাজী, আপনি বললেন, বাড়িতে থাকতে হবে এবং আলাদা থাকাটা সুনিশ্চিত করতে হবে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে করোনা এমন ভীতিকর একটা বিষয় যে কারও করোনা হলে-তার ধারেকাছে যেতেই মানুষ ভয় পান। সেক্ষেত্রে আক্রান্ত মানুষটি একইবাড়িতে থাকেন-কিভাবে থাকবেন তিনি? একটি রুমের মধ্যেই কি তিনি আবদ্ধ থাকবেন? বিষয়টি যদি স্পষ্ট করেন..

করোনা রোগীকে সম্পূর্ণ আলাদা রাখতে হবে

ডা. শাহনাজ কাজী: এত সুন্দর একটা প্রশ্ন করার জন্য আমি অত্যন্ত খুশি হলাম। অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে-বাড়িতে অন্য কারও যদি একই সিমটম না থাকে। যিনি করোনা পজিটিভ তাঁকে সবার থেকে সম্পূর্ণ আলাদা করে ফেলতে হবে। তাঁর আলাদা একটা রুম থাকতে। সেখানেই তিনি থাকবেন। আমি এর আগে বলেছিলাম যে শারিরীক দূরত্ব ৬ ফুট, সেটি যদি আমরা মানতে পারি তাহলে একজন থেকে অন্যজন আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকবে। আমরা বলতে পারি খানিকটা শঙ্কামুক্ত থাকব। ফলে আক্রান্ত ব্যক্তি অবশ্যই পৃথক একটি রুমে থাকবেন। আরেকটি বিষয় অবশ্য অত বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি না-কারণ বাংলাদেশের সব বাসাতে অ্যাটাচ বাথরুম থাকে না। যদি থাকে তাহলে তিনি আলাদা একটি বাথরুম ব্যবহার করবেন। যদি সম্ভব হয় তার খাবার-দাবার রুমের দরজার সামনে রেখে দেয়া তিনি নিজে নিয়ে নেবেন সেখান থেকে। ভেতরে খাবেন আবার পাত্রগুলো বাইরে বের করে দেবেন। এই ধরণের ব্যবস্থা থাকা ভালো। অর্থাৎ তাঁকে সম্পূর্ণ আলাদা করে ফেলা। যেটাকে আইসোলেশন বলে। আইসোলেশন মানে সে সম্পূর্ণভাবে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের থেকে আলাদা থাকবেন অন্ততপক্ষে ১৪ দিন। এরপর যখন তাঁর করোনা পরীক্ষা করে নেগেটিভ হবে তখন তিনি ফ্রি আবার সবার সাথে মিশতে পারবেন।

রেডিও তেহরান: ডা. শাহনাজ কাজী আপনি এ সম্পর্কে আমাদের শ্রোতাদের উদ্দেশ্যে আর কিছু বলবেন?

ডা. শাহনাজ কাজী: দেখুন, বাংলাদেশে সাধারণ পরিবারের কেউ একজন করোনায় আক্রান্ত হলে তাঁর জন্য পৃথক একটা রুমের ব্যবস্থা করা অনেক সময় সম্ভব হয় না। সেক্ষেত্রে আমাদের ঐটুকু ভাবতে হবে পরিবারের অন্যান্য যাঁরা আছেন তাদেরও করোনা পজিটিভ এমনটি ভেবে নেওয়াটাই আসলে সমুচিত। যদিও তাদের সিমটম না থাকে। কারণ অ্যাসিমটেমেটিক ইনফকেশটাও হচ্ছে। অ্যাসিমটেমিটক ইনফেকশটা হচ্ছে কোনো ব্যক্তির দেহের ভেতর ভাইরাসটি আছে এবং করোনা রোগীর মতোই তার ভেতরে কাজ করছে কিন্তু সিমটমটা প্রকাশ পাচ্ছে না। তিনি যদি বাইরে যান এবং শারীরিক দূরত্ব না মেনে অন্যদের সাথে মেলোমেশা করেন তাহলে তিনি কিন্তু অন্যদেরকে আক্রান্ত করতে পারেন। এই বিষয়টি সম্পর্কে আমার যেটা মনে হয় আমাদের দেশে সচেতনার খুব বেশি অভাব রয়েছে। এ ব্যাপারে আমাদের সবাইকে আসলে দায়িত্বশীল হতে হবে। দায়িত্বশীল হওয়াটা খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমি আরেকজনকে বলতে পারি না কিন্তু আমি আমার নিজের করণীয়টুকু করতে পারি। এটা যদি আমরা করি তাহলে আমার কাছে মনে হয় অন্ততপক্ষে কিছুটা তো ভালো পরিস্থিতির দিকে আমরা যেতে পারি।

শ্রোতা/পাঠকবন্ধুরা! ভীতিকর করোনার হাত থেকে বাঁচার জন্য আমাদের করণীয় সম্পর্কে বিশিষ্ট চিকিৎসক-ডা, শাহনাজ কাজীর আলোচনা শুনলেন। আসুন করোনাকে ভয় নয়, নিয়ম মেনে চলে করোনাকে আমরা নিয়ন্ত্রণ করি এবং সুস্থ্ থাকি।#

পার্সটুডে/গাজী আবদুর রশীদ/১৩

ট্যাগ