আগস্ট ১৩, ২০২১ ১৬:৩৩ Asia/Dhaka

করোনা মোকাবিলায় সরকারের লকডাউন ছিল অপরিকল্পিত। ছিল সমন্বয়হীনতা ও সিদ্ধান্তহীনতা। আর গার্মেন্টস কারখানাগুলো খুলে দিয়ে সরকার স্পষ্টভাবে প্রমাণ করেছে সরকার ধনীদের পক্ষে আর গরিবদের বিপক্ষে। রেডিও তেহরানকে দেয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেছেন,বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির(ন্যাপ) সেক্রেটারি জেনারেল এম গোলাম মোস্তফা ভুঁইয়া।

সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ, উপস্থাপনা ও তৈরি করেছেন গাজী আবদুর রশীদ।

রেডিও তেহরান: জনাব এম গোলাম মোস্তফা ভুঁইয়া, করোনার বাড় বাড়ন্ত। মৃত্যু সংক্রমণ দুটোই বেড়েছে। লকডাউনে “রাস্তায় গাড়ির চাপ, চেকপোস্টে হিমশিম অবস্থা ছিল পুলিশের। বাংলাদেশের মিডিয়ার খবর। কোনো কোনো খবরে এমন লেখা হয়েছে, শেষের আগেই শেষ কঠোর বিধিনিষেধ শেষ হয়েছিল। এরপরও ১০ আগস্ট পর্যন্ত লকডাউন বাড়িয়েছিল বাংলাদেশ সরকার। কী বলবেন আপনি? বাস্তবায়ন সম্ভব হবে?

করোনা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে

এম গোলাম মোস্তফা ভুঁইয়া: ধন্যবাদ আপনাকে। আসলে এটি তো বাস্তবায়ন হচ্ছে না। বিষয়টিকে খুব ভালোভাবে খেয়াল করলে দেখা যাবে সরকারের সবগুলো লকডাউন একেবারে অপরিকল্পিত। তাছাড়া সিদ্ধান্তহীনতার কারণে আজ বাংলাদেশে করোনা ভয়াবহ আকার ধারন করেছে। পবিত্র ঈদুল আজহার পর যে লকডাউনটি শুরু হয়েছিল-প্রথম দিকে অনেকটাই বলা চলে আশি ভাগ বাস্তবায়ন হচ্ছিলো। হঠাৎ করে সরকার কি বুঝে অথবা কাদের স্বার্থে গার্মেন্টসগুলো খুলে দিল সেটি বুঝি না। আমি মনে করি এটি একেবারে অপরিকল্পিত এবং আত্মঘাতী একটি সিদ্ধান্ত ছিল।

রেডিও তেহরান: লকাডাউন কিংবা কঠোর বিধিনেষধ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে যেসব বিষয় ঘটছে তার জন্য কি এ বিষয়ে সরকারের দায়িত্বশীলদের মধ্যে সমন্বয়হীনতা দেখছেন?

এম গোলাম মোস্তফা ভুঁইয়া: শুধু সমন্বয়হীনতা নয় একইসাথে সিদ্ধান্তহীনতা-দুটোই দেখছি। এরইমধ্যে সরকার স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছে যে সরকারের সাথে  কলকারখানার মালিকরা যারা কথা দিয়েছিল তারা সেকথা রাখেননি। অথবা সরকার সেই কথা রাখার জন্য মালিকদেরকে বাধ্য করতে পারেনি। ভ্যাকসিন নিয়ে সরকারের মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রীর বক্তব্য- পরে তা প্রত্যাহার করে নেয়া, বিষয়টি নিয়ে সরকারের অপর মন্ত্রীরা ভিন্ন ভিন্ন কথা বলেছেন। অর্থাৎ মন্ত্রীদের মধ্যেও আমার মনে হয় যে কোনো সমন্বয় নেই। এটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বুঝতে হবে। আসলে সমন্বয়হীনতা প্রধানমন্ত্রীর অনেক সদিচ্ছাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করে দিচ্ছে বলে আমি মনে করি।

রেডিও তেহরান: আপনি গার্মেন্টস খুলে দেয়ার কথা বলছিলেন, তো লকডাউনের ভেতরেই গার্মেন্টস খুলে দেয়া হয়েছে। এ নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো- সরকার ধনীদের পক্ষে আর গরিবদের বিপক্ষে। এই অভিযোগ সম্পর্কে আপনি কী বলবেন?

Image Caption

এম গোলাম মোস্তফা ভুঁইয়া: এটি স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে। সরকার ধনিক শ্রেণির স্বাস্থ্যরক্ষা করছে। সাধারণ মানুষের স্বার্থে সরকার কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। সেই ঈদুল ফেতর থেকে শুরু করে এই পর্যন্ত কয়েকটি ঘটনায় প্রমাণিত হয় সরকার শুধুমাত্র লুটেরা শ্রেণির স্বার্থরক্ষার জন্যই ব্যস্ত রয়েছে। এখানে সাধারণ মানুষের কি হলো না হলো তাতে কিছু আসে যায় না। গণপরিবহন বন্ধ করে দিল সরকার ফেরি খোলা থাকল।

জনস্রোত

হাজার হাজার মানুষ পঙ্গপালের মতো গ্রামে ছুটল। সেই মানুষগুলো তো কাছাকাছি মিশল। সেখানে তো সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা গেল না। তাহলে করোনাকে শহর থেকে গ্রামে নিয়ে যাওয়া হলো। সরকারের সিদ্ধান্তহীনতা অথবা ব্যর্থতার কারণে কিন্তু করোনা পৌঁছে গেল সর্বত্র। অন্যদিকে আপনারা খেয়াল করুন চৌদ্দ দিনের যে লকডাউন ছিল সেখানে মাঝপথে এসে গার্মেন্টস এবং শিল্প কলকারখানা খুলে দেয়া হলো। তাহলে সরকার সেখানে ধনিক শ্রেণির স্বার্থরক্ষা করল। ফলে মনে হচ্ছে সরকার শুধুমাত্রই গার্মেন্ট মালিকদের স্বার্থরক্ষার জন্য দেশের কোটি কোটি মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিল।

রেডিও তেহরান:যে করোনাভাইরাস মোকাবেলার জন্য এত ব্যবস্থা সেজন্য কিন্তু দেশের বেশিরভাগ মানুষকে টিকা আওতায় আনা যায় নি। কীভাবে দেখছেন বিষয়টিকে?

করোনা ভ্যাকসিন 

এম গোলাম মোস্তফা ভুঁইয়া: কোনো বিতর্কে না গিয়েও সরকারের তথ্য যদি সম্পূর্ণ বিশ্বাস করি তাহলেও আমরা জানি এরইমধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে যতটুকু বলা হয়েছে তাতে আড়াই কোটি করোনা ভ্যাকসিন তাদের কাছে মজুদ রয়েছে। তো দেশে আঠারো বছর বয়সের উপরের জনসংখ্যা প্রায় বারো কোটি। তো টিকা আছে আড়াই কোটি। তাহলে কিভাবে সম্ভব এতসংখ্যক মানুষকে টিকা দেয়া!তাহলে সরকার কীভাবে এসব কথা বলেন! আসলে অনেক সময় মনে হয় সরকার দেশের আঠারো কোটি মানুষকে বোকাই মনে করে।

রেডিও তেহরান: জনাব এম গোলাম মোস্তফা, করোনাকালে দেশের প্রধান রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনগুলোর ভূমিকাকে আপনি কিভাবে মূল্যায়ন করবেন?

এম গোলাম মোস্তফা ভুঁইয়া: দেখুন, করোনা যখন প্রথম দেশে এলো তখনই আমরা বলেছিলাম সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে জাতীয় ঐক্যমত্যে পৌঁছানো। আমরা কখনও বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিলাম না। রাষ্ট্রক্ষমতার বাইরের ক্ষুদ্র একটা রাজনৈতিক শক্তি আমরা। আমাদের কতটুকু সামর্থ্য আছে? দেশের বিভিন্ন পর্যায়ে আমাদের শতশত নেতাকর্মী মহা বিপর্যয়ের মধ্যে রয়েছে। অনেকে মারা গেছেন। প্রত্যেকটি দলের কিন্তু একই অবস্থা। রাষ্ট্র এবং সরকার যদি ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে না পারে তাহলে ক্ষমতাসীন দলের বাইরে যারা আছে তারা ইচ্ছে করলেও কিছু করতে পারে না; তাদের পক্ষে সম্ভব না।

একটা বিষয় খেয়াল করলে বুঝতে পারবেন, করোনা যখন শুরু হলো দেশে তখন প্রায় সব রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছে। কারও বাসায় একমণ চাউল থাকলে সে দশ কেজি চাউল সাধারণ মানুষকে সহযোগিতা করেছে। কিন্তু দ্বিতীয় ধাপে এসে বিষয়টি হালকা হয়ে গেছে এই কারণে যে মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থারও বিপর্যয় ঘটেছে। যারফলে সাধারণ এবং মধ্যবিত্ত মানুষ আর সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারছে না। এখানে সরকারের উচিত ছিল যে জাতীয় ঐক্যমত্য প্রতিষ্ঠা করা। নিবন্ধিত প্রায় ৩৯ টি রাজনৈতিক দল বাংলাদেশে আছে। সকলের সাথে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বসে জাতীয় ঐক্যমত্য প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে প্রান্তিক পর্যায়ে যদি সর্বদলীয় কমিটি করে দেয়া সম্ভব হতো তাহলে আমার বিশ্বাস যে এই মুহূর্তে আমি মনে করি না যে লকডাউনের প্রয়োজন হতো।

লকডাউনের ছবি, বাস্তব পরিস্থিতি প্রায়ই ভিন্ন

যেহেতু আমরা লকডাউনে বারবার ব্যর্থ হচ্ছি সেহেতু মাস্ক বাধ্যতমূলক করে দেয়া এবং তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত দ্রুততম সময় ভ্যাকসিনের ব্যবস্থা করা। এটি যদি আমরা করতে পারি তাহলে এই বিপর্যয় মোকাবেলা করতে সক্ষম হব। এখন প্রতিমাসে দশদিন, পাঁচদিন, পনের দিন লকডাউন দিলে সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আর প্রকৃত অর্থে করোনা মোকাবিলা করতে পারব না। করোনা মোকাবিলা করার জন্য আমি মনে করি- এখনও সময় আছে; সরকারের উচিত জাতীয় ঐক্যমত্য প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সর্বদলীয় কমিটি করে দেয়া; যার মধ্য দিয়ে সাধারণ মানুষকে সচেতন করা যাতে করে তারা মাস্ক পরেন, স্বাস্থ্য সচেতন হন এবং টিকা গ্রহণে আগ্রহী হন।

রেডিও তেহরান:তো জনাব এম গোলাম মোস্তফা ভুঁইয়া বাংলাদেশে করোনার সংক্রমণ,মৃত্যু বৃদ্ধি, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, সরকারি উদ্যোগ, লকডাউন, শিল্পকারাখানা খুলে দেয়া বিশেষ করে গার্মেন্টস খুলে দেয়া এবং সাধারণ মানুষের বাস্তব অবস্থা নিয়ে রেডিও তেহরানের সাথে কথা বলার জন্য আপনাকে আবারও অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

এম গোলাম মোস্তফা ভুঁইয়া: আপনাকেও ধন্যবাদ, রেডিও তেহরানকেও ধন্যবাদ।

পার্সটুডে/গাজী আবদুর রশীদ/১৩

 

ট্যাগ