সেপ্টেম্বর ০৮, ২০২১ ২২:১৫ Asia/Dhaka

করোনা মহামারিকালে গোটা বিশ্ব আজ বন্দি। মানুষ প্রতিটি মুহূর্ত উদ্বেগ উৎকণ্ঠার মধ্যে কাটাচ্ছেন। মানুষের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রভাব পড়েছে করোনার। মানুষ অনেকটা অসহায় হয়ে পড়েছে।

এ অবস্থায় বাংলাদেশে করোনার চিকিৎসা,ভ্যাকসিন,লকডাউন, হাসপাতালে সিট না পাওয়া-অক্সিজেনের অভাব, স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চলা এসব নিয়ে নানা খবর প্রতিদিন মিডিয়ায় দেখা যায়। অক্সিজেন অভাবে মারা যাচ্ছে অনেক রোগী এরকম খবরও মিডিয়ায় দেখা যাচ্ছে। এরবাইরেও নানারকম সংকটে আছে মানুষ।

যখন রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন বিভাগীয় শহর, জেলা শহর ও শহরতলীর হাসপাতাল অক্সিজেনের ভয়াবহ সংকট তখন অজপাড়াগাঁয়ের মানুষের অবস্থা কি! তারা কোথায় অক্সিজেন পাচ্ছে? এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে রেডিও তেহরান  গোটা দেশের শহর-বন্দরসহ প্রত্যন্ত অঞ্চলে দেখতে পেয়েছে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের ব্যানারে তরুণ সমাজ আবার  কখনও ব্যক্তি পর্যায়ে মুমূর্ষু করোনা রোগীকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিনা পয়সায় অক্সিজেন সরবরাহ করছে। খাবার-ওষুধ সরবরাহ করছে। আমরা ধারাবাহিকভাবে এসব ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সংগঠন কিংবা ব্যক্তিদের সেবাধর্মী মানবিক কাজ আপনাদেরকে তুলে ধরব। আপনারাও আপনাদের মানবিক কাজের বিষয়টি আমাদেরকে লিখে জানান এবং সাক্ষাৎকার দিতে পারেন। তো আজ এরকম একটি সংগঠনের সাথে কথা বলব। সাতক্ষীরা জেলার সর্বদক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে সুন্দরবন উপকূলীয় কালীগঞ্জ এবং শ্যামনগর উপজেলায় তারা কাজ করছেন। সংঠনের নাম 'কালিগঞ্জ ফ্রি অক্সিজেন সার্ভিস'। এই সংগঠনের সমন্বয়ক মো: ইশারাত আলী হচ্ছেন আমাদের আজকের অতিথি। তিনি সাতক্ষীরা নিউজ ২৪ ডট কমে’র সম্পাদক এবং আইওএম (রিম্যাপ)সাতক্ষীরা'র সমন্বয়ক।

সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ, উপস্থাপনা এবং তৈরি করেছেন গাজী আবদুর রশীদ।

জনাব মো: ইশারাত আলী রেডিও তেহরানে আপনাকে স্বাগত জানাচ্ছি।

ইশারাত আলী: ধন্যবাদ আপনাকে, ধন্যবাদ রেডিও তেহরানকে।

রেডিও তেহরান: জনাব মো.ইশারাত আলী, করোনায় আক্রান্ত মুমূর্ষু রোগীদেরকে আপনারা ঝুঁকি নিয়ে বিনা পয়সায় অক্সিজেন সরবরাহ করছেন। কোন প্রেক্ষাপটে আপনাদের মধ্যে এই মানবিক ছোঁয়ার পরিকল্পনাটি মাথায় এলা?

ইশারাত আলী: ধন্যবাদ আপনাকে। শুরুতে সুন্দর একটি প্রশ্ন। আপনারা সবাই জানেন যে সাতক্ষীরা একটি দুর্যোগপ্রবণ এলাকা। নানারকম দুর্যোগের মধ্যেও এখানকার মানুষ মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার চেষ্টা করে থাকে। আইলা, সিডর, আমপান, বুলবুল,ইয়াস’এর মতো বড় বড় দুর্যোগ মোকাবিলা করেই এখনও সাতক্ষীরার মানুষ টিকে আছে। এরমধ্যে যখন কোভিড ১৯ গোটাদেশসহ সাতক্ষীরাও আঘাত হানে তখন প্রাথমিক পর্যায়ে মোকাবেলা করা খুব কঠিন কাজ ছিল। কারণ প্রতিমুহূর্তে করোনা পজিটিভ রোগীর জন্য অক্সিজেনের প্রয়োজন হচ্ছিল। ঠিক সেইসময় আমাদের কয়েকজন সহকর্মী মিলে একসাথে বসে আলাপ আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেই বিগত দুর্যোগের সময়ে আমরা যেভাবে সামনে থেকে মোকাবিলা করেছি করোনা মহামারির দুযোর্গেও আমরা সামনে থেকে মোকাবেলা করব। আর সে-লক্ষ্যে আমরা গত জুন মাসের ২০ তারিখে একটি সভায় বসে সিদ্ধান্ত নেই তারপর ২২ তারিখে একটি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে আমরা কোভিড-১৯ এ অক্সিজেন পরিষেবা শুরু করি। সেখান আজ অবধি আমরা সেই কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি।

রেডিও তেহরান: আপনারা অক্সিজেন সেবার কার্যক্রমের শুরুটা কিভাবে মানে কতটা সিলিন্ডার নিয়ে শুরু করলেন?

করোনা রোগীদের ফ্রি অক্সিজেন সেবাদান

ইশারাত আলী: আমরা করোনা আক্রান্ত রোগীদের অক্সিজেন সেবা কার্যক্রম শুরু করি মাত্র ৩টি সিলিন্ডার নিয়ে। তখন আমাদের উদ্দেশ্য ছিল কালীগঞ্জসহ এ অঞ্চলের কোনো মানুষ অক্সিজেন অভাবে মারা যাবে না। কিছুটা হলেও আমরা সেই লক্ষ্যে পৌঁছতে সক্ষমত হয়েছি। এখন আমাদের ছোটো সিলিন্ডার ২১ টি। জাম্বু সাইজের বড় সিলিন্ডার ২০ টি। এসব অক্সিজেন সিলিন্ডারের সাহায্যে আমরা নিয়মিত ব্যাকাপ দিয়ে যাচ্ছি। আমাদের কাছে ফোন আসলে অথবা যেকোনোভাবে আমাদের কাছে খবরটি পৌঁছালেই আমরা কিন্তু তাদেরকে অক্সিজেন সেবাটি পৌঁছে দেই।

রেডিও তেহরান: সাধারণ আপনারা কোন্‌ ধরণের রোগীদের অক্সিজেন সেবা দিচ্ছেন? তারা কি হসপিটাল ফেরত রোগী?

ইশারাত আলী: প্রথমত আমরা করোনা পজিটিভ রোগী যাদের অক্সিজেন প্রয়োজন তাদেরকে অক্সিজেন পরিষেবা দেই। এছাড়া ধরুন কোনো মানুষের করোনা পজিটিভের উপসর্গ দেখা দিয়েছে এবং তার শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। এমন অবস্থায় তাঁকে অক্সিজেন দিয়ে হসপিটালে পাঠানোর ব্যবস্থা করি। আবার যখন কোনো রোগী করোনা নেগেটিভ হয়ে বাড়ি ফিরে আসেন তখনও তার অক্সিজেনের প্রয়োজন হয়। সে অবস্থায় দীর্ঘ পরিসরে আমরা তাকে অক্সিজেন দেয়ার ব্যবস্থা করি।

রেডিও তেহরান:  এ পর্যন্ত কতজনের মতো রোগীকে অক্সিজেন সেবা দিয়েছেন।

ইশারাত আলী: দেখুন, এরইমধ্যে আমরা ৩২০ টি সার্ভিস শেষ করেছি।

রেডিও তেহরান: আপনারা কি দিন-রাত ২৪ ঘন্টা এই সেবা দিচ্ছেন এবং কত দূর পর্যন্ত আপনারা এই সেবা পৌঁছে দিচ্ছেন?

ফোন দিলেই করোনা রোগীর কাছে পৌঁছে যায় অক্সিজেন সেবা

ইশারাত আলী: আমরা কালীগঞ্জ, শ্যামনগর, আশাশুনিসহ জেলার বিভিন্ন জায়গায় ফ্রি অক্সিজেন সেবা দিচ্ছি। 01972651840  এই নাম্বারটি থেকে ফ্রি অক্সিজেন সেবা দিয়ে থাকি। কোনো মানুষের অক্সিজেনের প্রয়োজন হলে আমাদেরকে ফোন দেবেন আমরা অক্সিজেন নিয়ে সাথে সাথে তাদের কাছে পৌঁছে যাব।

রেডিও তেহরান: করোনা রোগীর কথা শুনলেই তো মানুষ ভয় পায় আতঙ্কিত হয়। দেখা যায় করোনা আক্রান্ত রোগীর বাড়িতে লাল পতাকা উড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। কেউ যাচ্ছে না সেখানে- সেক্ষেত্রে আপনারা কিভাবে যাচ্ছেন.

ইশারাত আলী: জ্বি আপনি ঠিকই বলেছেন, লকডাউনের একটি বিষয় তো আছে। করোনা পজিটিভ রোগীর বাড়িতে লকডাউনের একটি ব্যানার টাঙিয়ে দেয়া দেয় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষে। সাধারণত সেখানে যাওয়া নিয়ে কিছু রেসটেকশন হয়ে যায়। বিভিন্ন পরিস্থিতি মোকাবেলা করে সেইসব জায়গায় গিয়ে তাদের চিকিৎসা দেয়ার জন্য অ্যামবুলেন্স ডাকা, কিংবা ডাক্তার ডাকা এবং অক্সিজেন দেয়া এসব কাজ আমরা করেছি এবং করছি।

রেডিও তেহরান: কোনো সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন কি?

ইশারাত আলী: সমস্যা আসলে তেমন কিছু হয় নি। মুমূর্ষু রোগীর পাশে সাধারণ মানুষ থাকে। আর আমরা একজন মুমূর্ষু রোগীকে অক্সিজেন সেবা দেয়ার জন্য তার পাশে যাই।সেক্ষেত্রে সাধারণ মানুষ সবসময় আমাদের সহযোগিতা করেছে একইসাথে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তর থেকে আমাদেরকে সহযোগিতা করেছে।

রেডিও তেহরান: জনাব মো: ইশারাত আলী-আচ্ছা অক্সিজেন সেবা দিতে গিয়ে আপনাদের অভিজ্ঞতা থেকে যদি বলেন-চিকিৎসা ও অক্সিজেন অভাবে কি পরিমাণ রোগীর মৃত্যু হয়েছে?

ইশারাত আলী: দেখুন বিভিন্ন সময় আমাদের কাছে খবর এসেছে অক্সিজেন অভাবে অমুক জায়গায় অমুক ব্যক্তি মারা গেছেন। যখন এ ধরণের খবর পেয়েছি তখন আমরা অত্যন্ত ব্যথিত হয়েছি। কারণ একজন করোনা আক্রান্ত রোগী অক্সিজেন অভাবে মারা গেছে অথচ তাকে অক্সিজেন সেবা দিতে পারি নি- এটা আমাদের একধরণের ব্যর্থতা। কারণ এই খবরটি আমরা তাদেরকে পৌঁছে দিতে হয়তো ব্যর্থ হয়েছি। তবে কোভিড ১৯ আক্রান্ত মানুষের শ্বাস কষ্ট হচ্ছে কিংবা সংকটে পড়েছে এমন খবর খবর পেলেই আমরা দ্রুততম সময়ের মধ্যে তাঁদের কাছে পৌঁছে যাই। সব সময়ই আমাদের এ প্রস্তুতি থাকে।

রেডিও তেহরান: জনাব, মো: ইশারাত আলী-প্রান্তিক মানুষকে বিনা পয়সায় অক্সিজেন সেবাদান নিয়ে রেডিও তেহরানকে সময় দেয়ার জন্য আপনাকে আবারও অনেক অনেক ধন্যবাদ।

ইশারাত আলী: ধন্যবাদ আপনাকে, ধন্যবাদ রেডিও তেহরানকে।#

পার্সটুডে/গাজী আবদুর রশীদ/৮

 

ট্যাগ