নভেম্বর ০৯, ২০২১ ১৯:৩৩ Asia/Dhaka

গত পর্বে আমরা শিশু-কিশোরদের পবিত্র কুরআন শেখানোর পন্থা ও সংশ্লিষ্ট নানা কৌশল এবং এ সংক্রান্ত প্রধান নীতিমালা সম্পর্কে কথা বলেছি।

আজ আমরা শিশুদের সামাজিক হওয়ার কৌশল শেখানোর ওপর বিশেষ আলোকপাত করব।

ইসলামের দৃষ্টিতে মানুষের রয়েছে নানা ধরনের প্রতিভা ও যোগ্যতা। আর এসবের যথাযথ বিকাশ ঘটানো হলে মানুষ হতে পারে সর্বোচ্চ মর্যাদা ও সৌভাগ্যের অধিকারী এবং বিশ্বজগত হতে পারে তার নিয়ন্ত্রণাধীন। নানা কৌশল ও জ্ঞানের সাহায্যে মানুষ এমন শক্তি অর্জন করে যে এর ফলে মানুষ জীবনে নানা সংকটে কম ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ব্যক্তি ও সামাজিক জীবনে সন্তুষ্টির মাত্রা বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়। মানুষ বেশিরভাগ কৌশলের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ শৈশবেই শুরু করে। সামাজিক কৌশল শিক্ষা শুরু করারও সর্বোত্তম সময় হচ্ছে শৈশব। জীবনের নানা কৌশল শেখার জন্য অনুশীলন জরুরি।

মানুষ সামাজিক জীব। জীবনের একটা বড় অংশই কেটে যায় সমাজবদ্ধ জীবনের নানা কাজে। গবেষণায় দেখা গেছে মানুষের ৭৫ শতাংশ সময়ই কেটে যায় অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগের কাজে। সামাজিক লেনদেন ও যোগাযোগের কৌশল জানা তাই খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সামাজিক যোগাযোগ ও লেনদেনর কৌশল শেখার ভিত্তি গড়ে তুলতে হয় শৈশবেই। সামাজিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে সে-ই সফল যে নানা ধরনের কথা বা ইঙ্গিত ও অনুভূতির মাধ্যমে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়। মানুষ এইসব যোগাযোগের কাজ শুরু করে শৈশব থেকেই। সামাজিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে যারা সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করে শৈশবেই শক্ত ভিত্তি গড়ে তুলেছে তারা পরবর্তী পর্যায়েও সহজেই এগিয়ে যেতে পারে।  সুস্থ সামাজিক জীবন ও আত্মবিশ্বাস গড়ে তোলার জন্যও এ বিষয়টি জরুরি। অন্যদের সঙ্গে সঠিক সময়ে সঠিক আচরণ করতে শেখাও একটি জরুরি সামাজিক কৌশল যা শৈশব থেকেই শিখতে হয়। যে শিশু ঘরকুনো ও সমাজকে এড়িয়ে চলতে অভ্যস্ত সে বড় হয়েও সামাজিক যোগাযোগে যথাযথ হতে পারে না।

জন্মের পর থেকেই মানব শিশু যতই বড় হতে থাকে ততই সে সমাজকে ও পারিপার্শ্বিক জগতকে বেশি মাত্রায় চিনতে থাকে ও সামাজিক যোগাযোগেও সে দক্ষ হয়ে উঠতে থাকে। খুব ছোট শিশু নতুন নানা কিছু দেখতে পেয়ে ও শিখতে পেরে আনন্দ অনুভব করে। তবে সে সম্পর্ক রাখার ক্ষেত্রে বাবা-মাকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়। একটু বড় হওয়ার পর সে অন্যদের সঙ্গে খেলাধুলায় মেতে থেকে আনন্দ পায়। শিশুর সামাজিক হওয়ার পর্যায়গুলোও নানা ভুল ভ্রান্তি থেকে শেখার মাধ্যমে উন্নতির দিকে এগিয়ে চলে। প্রথম দিকে শিশুরা নিজ খেলনা অন্যদের সঙ্গে শেয়ার করতে চায় না। কিন্তু ধীরে ধীরে অন্যদের সহমর্মী হয়ে উঠে তারা অন্য শিশুদের বন্ধু হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করে।

শিশু যদি শৈশবে ভালো ও নির্ভরযোগ্য বন্ধু পায় তাহলে সে সহজেই নিজেকে তাদের মত উন্নত করতে পারবে। আর যদি ব্যাপারটা হয় এর বিপরীত তাহলে ওই শিশুর ওপর বহুকাল ধরে খারাপ বন্ধুদের নেতিবাচক প্রভাবগুলো কাজ করতে থাকবে। শিশুর ভবিষ্যৎ আধ্যাত্মিক জীবনও এরই আলোকে সুস্থভাবে গড়ে উঠবে বা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ভালো বন্ধু শিশু কিশোরদের দেয় আনন্দ ও তাদের একঘেয়েমি অবস্থার ক্লান্তিবোধ আর হতাশাও দূর করে এইসব বন্ধুর উপস্থিতি। 

মানুষ সামাজিক জীব বলে শিশু-কিশোরদের জন্য দরকার হয় সমবয়স্ক বন্ধু ও খেলার সাথী। বাবা মা তো আর সব সময় তাদের খেলার সঙ্গী হতে পারেন না। শিশুরা যখন একবার খেলার সাথী বা বন্ধু থাকার মজা বুঝতে পারে তখন সে অনেক স্থায়ী বন্ধু গড়ে তোলার চেষ্টা করে। সমবয়সীদের সঙ্গে শিশু-কিশোরদের সামাজিক সম্পর্ক যত মধুর হয় বড়দের সঙ্গে বা ছোটদের সঙ্গে ততটা মধুর হয় না।

শিশুদেরকে সামাজিক করার নানা কৌশল জানাটা অভিভাবক ও বাবা মায়ের জন্য জরুরি। যেমন, খুব কচি শিশুদের দিকে বেশি বেশি লক্ষ্য রাখা ও নজর দেয়া জরুরি। নানা ধরনের অঙ্গ-ভঙ্গি দেখে তারা আনন্দ পায়। খুব ছোট শিশুরা অন্য ছোট শিশুদের দেখেও আনন্দ পায়। আর তাই বন্ধু ও আত্মীয়স্বজনকে তাদের শিশুসহ বাসায় আমন্ত্রণ জানানো উচিত যাতে আপনার শিশুরাও তাদের ও বড়দের দেখে আনন্দ পায়।  শিশুরা এটা চায় যে সবাই তার প্রতি লক্ষ্য করুক ও তাকে ভালোবাসুক। সমবয়সী শিশুদের সঙ্গে আপনার শিশুরা যেন নিয়মিত মিশতে পারে সে ব্যবস্থা রাখতে হবে। তবে এ জন্য ঘরে অনেক খেলনা রাখতে হবে। কারণ অনেক শিশু তার খেলনা অন্য শিশুকে ধরতে নাও দিতে পারে।

শিশুরা যেন বড় হতে থাকার পরও আত্মকেন্দ্রিক বা আত্মস্বার্থকে প্রাধান্য দেয়ার শিশুসুলভ অবস্থায় না থাকে সে জন্য অভিভাবক ও বাবা-মাকে সামাজিক দিক থেকে আদর্শ চরিত্রের হতে হবে। কেউ ভালো কিছু করলে যে ধন্যবাদ বলতে হয় বা অনুরোধ জানাতে 'প্লিজ বা দয়া করে এটা করুন' জাতীয় বাক্য বলা-এসব যেন শিশুরা আপনার মুখ থেকে শুনে শুনে শিখতে পারে।

আপনি যে আপনার জন্য নির্ধারিত হালুয়া বা মিষ্টির কিছু অংশ অন্যকে দিচ্ছেন বা আপনার পত্রিকা বা বই অন্যদেরও পড়তে দিচ্ছেন সেটা যেন শিশুরা দেখতে পায়। শিশুদেরকে নানা ধরনের গ্রুপে যুক্ত করাটাও তাদেরকে সামাজিক করে তোলার অন্যতম পন্থা। এসব গ্রুপ হতে পারে খেলাধুলার নানা গ্রুপ বা বিশেষ কোনো কোনো ক্লাস যেখানে শিশুরা অন্য শিশুদের সঙ্গে মেশার সুযোগ পাবে। আর এসব গ্রুপে থেকেই শিশু শিখবে যে কিভাবে বন্ধু বানাতে হয় ও বন্ধুত্ব টিকিয়ে রাখতে হয়। 

সামাজিক নানা পর্যায়ে অন্যরা কি ধরনের আচরণ করে থাকে তা থেকে শিশুরা অনেক কিছু শিখে নেয়। অন্য শিশুদের দেখতে গিয়ে ও তাদের সঙ্গে মিশতে গিয়ে সামাজিকতার নানা দিক তারা ব্যাপক মাত্রায় শেখার সুযোগ পায়।  সামাজিক হওয়া ও সামাজিকতার কৌশলগুলো শিশুদের শেখানোর জন্য সব সময়ই সক্রিয় থাকা উচিত এবং দেরি হয়ে গেছে মনে করে এ থেকে দূরে সরে যাওয়া উচিত নয়। অন্যদের সঙ্গে কিভাবে সমঝোতা বা বিরোধ মিটমাট করতে হয় তাও যে কোনো সময় শিশুদের শেখাতে বিব্রত হবেন না।#

পার্সটুডে/এমএএইচ/আবুসাঈদ/ ০৯

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ