ইমাম সাদিক (আ) তাঁর চাচা যাইদ ইবনে আলীর হত্যাকারীদের প্রকাশ্যেই লানত দিয়েছিলেন
ইসলামের অনন্য গৌরব ইমাম জাফর সাদিক (আ.)
১৪৮ হিজরির ২৫ শাওয়াল ইসলামের অনন্য কাণ্ডারি মুসলিম বিশ্বের প্রাণপ্রিয় প্রবাদ-পুরুষ ইমাম আবু আব্দুল্লাহ জাফর আস সাদিক (আ.)'র শোকাবহ শাহাদাতের বার্ষিকী। এ উপলক্ষে সবাইকে গভীর শোক ও সমবেদনা জানাচ্ছি।
যাঁদের অনন্য প্রেম, জিহাদ ও কুরবানিতে প্রদীপ্ত পবিত্র ইসলাম
মহান আল্লাহর আরশে-আযমে খোদাই যাঁদের পবিত্র নাম
যাঁদের নুরের দরিয়ায় উজালা হল স্বর্গ-মর্ত ধাম
সভ্যতার হীরার কুচি ছড়ালো যাদের প্রজ্ঞা-প্রদীপ্ত কালাম
যাঁদের আসমানি উদারতা আর মহত্ত্বের সুবাসে ধন্য খাস ও আম
যাঁদের আলোক-প্রভার পরশ পেতে উন্মুখ আম্বিয়ায়ে কেরাম
তাঁদের তরে ঝরে পড়ুক অজস্র দরুদ ও সালাম
ইসলামী সভ্যতার এমনই এক অনন্য নকীব বিশ্ব-বিশ্রুত মহান ইমাম
মহানবীর (সা) রহমত-তরীর নির্ভিক কর্ণধার জাফর আস সাদিক আল-ইমাম!!
রেখেছেন চির-উন্নত নবী-বংশের সুনাম ও মুহাম্মাদি পয়গাম !
জ্ঞানের সব শাখা-আলোকিত-করা ইসলামের চির-গৌরবময় আলাম!
মর্মান্তিক শাহাদাত যাঁর আজও তোলে মর্মভেদী শোকের তুফান-উদ্দাম!
১৪৮ হিজরির ২৫ শাওয়াল ইসলামের ইতিহাসে এক গভীর শোকাবহ দিন। কারণ, এই দিনে শাহাদত বরণ করেন মুসলিম বিশ্বের প্রাণপ্রিয় প্রবাদ-পুরুষ ইমাম আবু আব্দুল্লাহ জাফর আস সাদিক (আ.)। ইসলাম ও এর প্রকৃত শিক্ষা তাঁর কাছে চির-ঋণী। ইমাম সাদিক (আ.) আব্দুল মালিক ইবনে মারওয়ানের শাসনামলে ৮২ হিজরির ১৭ই রবিউল আউয়ালে মদিনায় জন্ম গ্রহণ করেন। সে সময় মুসলিম বিশ্বে চলছিল নিষ্ঠুর ও স্বৈরাচারী শাসকদের রাজত্ব। ইসলামী ভূখণ্ডের যে প্রান্তেই তাদের অপকর্মের প্রতিবাদ করা হত সেখানেই উম্মতের নিরীহ ও নিরপরাধ মানুষদের নির্দ্বিধায় হত্যা করা হত। এ সময় ইসলামের প্রকৃত বাণী তুলে ধরাই ছিল অত্যন্ত দুরূহ কাজ। কিন্তু ইসলামের সেই মহা-দুর্দিনে ইসলামী শিক্ষা ও সংস্কৃতির পুনরুজ্জীবন, সংরক্ষণ, বিকাশ এবং মুসলিম সমাজের সংস্কারের ক্ষেত্রে কাণ্ডারি হিসেবে আবির্ভূত হন বিশ্বনবী (সা.)'র পবিত্র আহলে বাইতের সদস্য ইমাম জাফর সাদিক (আ.)। তাঁর মহান আত্মার প্রতি অশেষ দরুদ ও সালাম পেশের পাশাপাশি সবাইকে জানাচ্ছি গভীর শোক ও সমবেদনা। এই মহান ইমামের কিছু অমূল্য অবদান ও তাঁর অনুপম চরিত্র তুলে ধরব এ আলোচনায়।
ইমাম জা’ফর আস সাদিক (আ.) মুসলমানদের সব মাজহাবের কাছেই বরেণ্য ও শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তিত্ব হওয়ায় তাঁর আদর্শ হতে পারে মুসলিম উম্মাহর ঐক্যের সূত্র। চারজন সুন্নি ইমামের মধ্যে একজন তাঁর প্রত্যক্ষ ছাত্র এবং আরো দুই জন সুন্নি ইমাম তাঁর পরোক্ষ ছাত্র ছিলেন। উল্লেখ্য শিয়া মাযহাব ইমাম জাফর সাদেক (আ) এর জ্ঞান থেকে বিরতিহীনভাবে গ্রহণ করে হৃষ্টপুষ্ট ও সমৃদ্ধ হয়েছে, যে কারণে শিয়া মাযহাব 'জাফরি মাজহাব' হিসেবেও খ্যাত।
ইমাম সাদিক (আ.) রেসালাতের কোলে তথা রাসূলের বংশ-ধারায় জন্ম নেন এবং বিশ্বনবী (সা.)'র আহলে বাইতের ঘরেই বেড়ে ওঠেন। তিনি নিজ দাদা ও বনি হাশিমের শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি ইমাম আলী ইবনে হুসাইন যাইনুল আবেদীন (আ.) এবং পিতা ইমাম মুহাম্মাদ বাকির (আ.)-এর মাধ্যমে প্রশিক্ষিত হন। তাঁর মৃত্যুর পর ইমাম সাদিক (আ.) নিজ পিতা ইমাম বাকির (আ.)-এর তত্ত্বাবধানে উনিশ বছর শিক্ষা গ্রহণ করেন এবং অবশেষে তাঁর মৃত্যুর পর ইমামতের মহান দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
ইমাম সাদিক (আ.) এমন এক সমাজে বড় হন যেখানে মানুষ কেবল অত্যন্ত গোপনে ও সতর্কতা অবলম্বন করে মহানবী মুহাম্মাদ (সা.)'র আহলে বাইতের সাথে যোগাযোগ করতে পারত। তখন পারস্পরিক চাওয়া-পাওয়া এবং চিন্তাধারাগুলোর মধ্যে তীব্র দ্বন্দ্ব-সংঘাত ও হিংসা-বিদ্বেষ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল। মানুষের জীবনের কোন মূল্য ছিল না এবং ধর্মকেও করা হত অবমাননা। জনগণ ছিল কেবলই শাসকদের লক্ষ্যে পৌঁছার হাতিয়ার। সবচেয়ে বেশী নিপীড়িত ছিল রাসূল (সা.)-এর আহলে বাইতের সমর্থক ও অনুসারীরা। আলী (আ.)-কে গালি দেয়া ছিল আহলে বাইতের শত্রুদের কাছে ফরজ আমলের পূর্ণতাদায়ক মুস্তাহাব!
ইমাম সাদিক (আ.)কে তাঁর বাবা ইমাম বাকির (আ.)-এর সঙ্গে সব অন্যায় ও অবিচারের কেন্দ্র সিরিয়ায় জোর কোরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। এরপর থেকে তাঁর ওপরও বনি উমাইয়ার শত্রুতার ঝড় বইতে থাকে। পরিবেশ এতটা প্রতিকূল হওয়া সত্ত্বেও ইমাম সাদিক (আ.) সত্য বলা হতে এবং মানুষকে সঠিক পথের দিশা দেয়া থেকে বিরত থাকতেন না। তিনি সবসময় জালিম শাসকের সহযোগী না হতে ও শাসকদের পক্ষ থেকে নিয়োজিত বিচারকদের শরণাপন্ন হতে নিষেধ করতেন এবং সরকারী যে কোন পদ গ্রহণে নিরুৎসাহিত করতেন। ইমাম সাদিক (আ.)-এর সময় যাইদ ইবনে আলী (আ.) উমাইয়া শাসক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন। যখন যাইদ শহীদ হন ইমাম (আ.) প্রকাশ্যে তাঁর প্রশংসা ও তাঁর হত্যাকারীদের লানত করেন। যাইদ ইবনে আলীকে হত্যার পর হিশাম ইবনে আব্দুল মালিক হযরত আলী (আ.)-এর বংশধরদের প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ করতে থাকে। এ ছাড়াও সে নানা পন্থায় ইমাম সাদিক (আ.)-এর ওপর সংকীর্ণতা আরোপ করে। কিন্তু মহান আল্লাহর কৃপায় বনি উমাইয়াদের এইসব প্রচেষ্টা সত্ত্বেও মহানবীর (সা.) আহলে বাইতের প্রতি জনগণের ভালবাসা বাড়তেই থাকে।
বনি উমাইয়াদের মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব জোরদার হওয়ার সুযোগে আব্বাসিয়রা ১৩২ হিজরিতে উমাইয়া শাসনের পতন ঘটায় নবীবংশের কাছে ক্ষমতা দেয়ার শ্লোগান দিয়ে। কিন্তু এরপর নিজেরাই ক্ষমতা দখল করে। জনগণ বুঝতে পারে যে তারা প্রতারিত হয়েছে। প্রথম আব্বাসিয় শাসক সাফফাহ তার ক্ষমতা কিছুটা সংহত করার পর নিজের ভাই মনসুর দাওয়ানিকির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে।
বনি উমাইয়ার শক্তির ভিত দুর্বল হওয়ায় ও অন্যরা পর্যাপ্ত শক্তির অধিকারী না হওয়ায় এ অবস্থাটি ইমাম সাদিক (আ.)-এর জন্য সুবর্ণ এক সুযোগ এনে দেয়। ইমাম এ বিষয়টি অনুভব করে তীব্র কষ্ট পেতেন যে, দীর্ঘ দিনের বিচ্যুতি ও অনাচার ইসলামকে এতোই বদলে দিয়েছে যে তা অন্তঃসারশূন্য ও আচারসর্বস্ব এক ধর্মে পরিণত হয়েছে। এ কারণে তিনি মানুষকে হেদায়াত এবং ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা ও বিধিবিধান প্রচারের লক্ষ্যে তাঁর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দ্বার উন্মোচন করেন।
এ সময়ে ইমাম সাদিক (আ.)-এর ঘর ছিল একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মত ছিল যেখানে বড় বড় মনীষীরা তাঁর কাছে হাদিস, তাফসির, দর্শন ও কালাম শাস্ত্র শিখতেন। তাঁর ক্লাসে সাধারণত দুই হাজার প্রসিদ্ধ আলেম অংশ নিতেন। কখনও কখনও এ সংখ্যা চার হাজারে পৌঁছাত। হাদিস বর্ণনাকারী এবং জ্ঞান পিপাসুরা তাঁর কাছ থেকে শেখার জন্য দূর দূরান্ত থেকে মদিনায় আসত। এ সময় তিনি সতর্ক প্রহরা ও নজরবন্দী অবস্থায় ছিলেন না।
ইসলামী ইতিহাসের বিপুল সংখ্যক বিখ্যাত পণ্ডিত ও ইসলামী শাস্ত্রের বিশেষজ্ঞ আলেম তাঁর কাছে প্রশিক্ষণ পেয়েছেন। রসায়ন শাস্ত্রের জনক নামে খ্যাত জাবির বিন হাইয়্যান ছিলেন তাঁরই ছাত্র। এ ছাড়াও আহলে সুন্নাতের বিপুল সংখ্যক বিখ্যাত আলেমও তাঁর ছাত্র হয়ে পাণ্ডিত্য অর্জন করেন। এদের মধ্যে হানাফি মাযহাবের প্রতিষ্ঠাতা ইমাম আবু হানিফা,সুফিয়ান সাওরী,কাজী সাকুনী,কাজী আব্দুল বাখতারী প্রমুখের নাম উল্লেখযোগ্য ।
ইমাম জাফর সাদিক (আ) পৃথিবীর কক্ষপথ, পৃথিবীর সৃষ্টি ও আণবিক সূত্র, মানব দেহের উপাদান, মায়ের বাম কোলে শিশুর বেশি ঘুম আসার রহস্য, পরিবেশ দূষণ ও অসুস্থ মানুষের দেহের উত্তাপের মাধ্যমে অন্যদের মধ্যে রোগ বিস্তারের তথ্যসহ অনেক বৈজ্ঞানিক তথ্য দিয়ে গেছেন প্রায় ১৪০০ বছর আগে! আজকের যুগের বৈজ্ঞানিক গবেষণায় সেসব তথ্যের নিখুঁত সত্যতা দেখে বৈজ্ঞানিক মহল বিস্মিত হচ্ছেন! আসলে শ্রেষ্ঠ ফকিহ্ ইমাম জাফর সাদিক ছিলেন সব ধরনের জ্ঞানের ক্ষেত্রেই অলৌকিক জ্ঞানের অধিকারী, ফকিহ বলতে অতীতে বহুমুখী সার্বিক জ্ঞানের অধিকারী হওয়াকেই বোঝানো হত।
ইমাম জাফর সাদিক (আ.)-এর কাছে শিক্ষাপ্রাপ্ত শিষ্যদের মধ্যে ইতিহাস বিখ্যাত প্রায় ১৪ হাজার মুহাদ্দিস (হাদিস বিশারদ) ও ইসলামী পণ্ডিতের নাম উল্লেখযোগ্য। হযরত ইমাম বাকের (আ.) ও হযরত ইমাম জাফর সাদিক (আ.)-এর বর্ণিত ইসলামী বর্ণনার সংখ্যা মহানবীর-সা. ও তাঁর আহলে বাইতের অন্য দশ ইমামের বর্ণিত হাদিসের চেয়েও অনেক বেশী।
ইমাম জাফর সাদিক (আ.) তাঁর ইমামতের শেষ পর্বে এসে আব্বাসীয় শাসক মানসুরের কু-দৃষ্টির শিকার হন। মানসুর তাঁকে সদা কড়া পাহারা,নিয়ন্ত্রণ ও সীমাবদ্ধতার মাঝে বসবাস করতে বাধ্য করে। মানসুর নবীবংশের সাইয়্যেদ বা আলাভীদের উপর অসহ্য নির্যাতন চালাতে থাকে। তার ঐ নির্যাতনের মাত্রা উমাইয়া রাজাদের নিষ্ঠুরতা ও বিবেকহীন স্পর্ধাকেও হার মানায়। মানসুরের নির্দেশে নবীবংশের লোকদের দলে দলে গ্রেপ্তার করে জেলে ভরা হত। অন্ধকারাচ্ছন্ন জেলে তাদের উপর পৈশাচিক নির্যাতন চালিয়ে তিলেতিলে তাদের হত্যা করা হত। তাদের অনেকের শিরোশ্ছেদ করা হয়েছে ও বহুজনকে জীবন্ত কবর দেয়া হয়েছে। তাদের অনেকের দেহের উপর দেয়াল ও অট্টালিকা নির্মাণ করা হত।
আব্বাসিয় শাসক মানসুর হযরত ইমাম জাফর সাদিক (আ.)-কে মদিনা ত্যাগ করে তার কাছে উপস্থিত হওয়ার নির্দেশ দেয়। মানসুর বেশ কিছুকাল ইমাম সাদিককে কড়া পাহারার মাঝে নজরবন্দী করে রাখে ও বহুবার ইমামকে হত্যার চেষ্টাও করে। অবশেষে সে ইমামকে মদিনায় ফিরে যাওয়ার অনুমতি দিলে ইমাম মদিনায় ফিরে যান। ইমাম তাঁর জীবনের বাকী সময়টুকু অত্যন্ত কঠিন ‘তাকিয়া ’ বা গোপনীয়তা বজায় রেখে অতিবাহিত করেন। এরপর এক সময় মানসুরের ষড়যন্ত্রে বিষ প্রয়োগের মাধ্যমে ইমামকে শহীদ করা হয়।
আব্বাসিয় শাসক মানসুর ষষ্ঠ ইমামের শাহাদত লাভের নিশ্চিত সংবাদ পেয়ে মদিনার প্রশাসককে চিঠি মারফৎ একটি নির্দেশ পাঠায়। তাতে বলা হয়েছে,মদিনার প্রশাসক ষষ্ঠ ইমামের শোকার্ত পরিবারের প্রতি সান্ত্বনা জ্ঞাপনের জন্যে যেন তাঁর বাড়িতে যায়। এরপর সে যেন ইমামের ওসিয়ত নামা’ তাঁর পরিবারের কাছ থেকে চেয়ে নিয়ে তা পড়ে দেখে। ইমামের‘ওসিয়ত নামায়’ যাকে তাঁর পরবর্তী ইমাম ঘোষণা করা হয়েছে, তাঁকে যেন তৎক্ষণাৎ সেখানেই শিরশ্ছেদ করা হয়। এই নির্দেশ জারির ব্যাপারে মানসুরের মূল উদ্দেশ্য ছিল এর মাধ্যমে ইমামতের বিষয়টি চিরতরে নিঃশেষ করে দেয়া যাতে আহলেবাইতপন্থী মুসলমান তথা শিয়াদের প্রাণ প্রদীপ চিরতরে নিভে যায়। মানসুরের নির্দেশ অনুসারে মদিনার প্রশাসক ইমামের বাড়িতে গিয়ে তাঁর ‘ওসিয়ত নামা’ চেয়ে নেয়। কিন্তু তা পড়ার পর সে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ে। কারণ, ঐ ‘ওসিয়ত নামায়’ ইমাম মানসুর ও মদিনার প্রশাসক এবং নিজের দুই সন্তানসহ পাঁচ ব্যক্তিকে তাঁর উত্তরাধিকারী হিসেবে মনোনীত ও ঘোষণা করেছেন।
মালিকি মাজহাবের প্রতিষ্ঠাতা মালিক ইবনে আনাস বলেছেন. " জ্ঞান, ইবাদত ও তাকওয়ার ক্ষেত্রে জাফর ইবনে মুহাম্মাদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ কোনো ব্যক্তিকে কোনো চোখই দেখেনি, কোনো কানই শোনেনি এবং কোনো মানুষ কল্পনাও করেনি।" মালিক ইবনে আনাস ইমামের কাছ থেকে হাদিসও বর্ণনা করেছেন।
হানাফি মাজহাবের প্রধান আবু হানিফা বলেছেন, "আমি জাফর ইবনে মুহাম্মাদ থেকে বড় কোন জ্ঞানী বা ফকিহকে দেখিনি। সবচেয়ে জ্ঞানী সেই ব্যক্তি যে মানুষের মতপার্থক্যের বিষয়গুলো সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি জ্ঞান রাখেন। আর জাফর ইবনে মুহাম্মাদ হলেন সেই জ্ঞানের অধিকারী।'' অতীতে আরবি ভাষায় ফিক্হ বা ফিকাহ বলতে সব ধরনের জ্ঞানকে বোঝানো হত।
ইমাম আবু হানিফা দুই বছর ইমাম সাদিকের (আ) ক্লাসে যোগ দিয়ে নিজেকে গর্বিত মনে করতেন। আবু হানিফা বলেছেন, 'যদি জাফর ইবনে মুহাম্মাদের সান্নিধ্যের ঐ দু’বছর না থাকত তবে আবু হানিফা ধ্বংস হয়ে যেত। সেই দুই বছরে আমি যা শিখেছি সারা জীবনেও আমি ততটা শিখতে পারিনি।'
সাইয়্যেদ মির আলী হিন্দি ইমাম সাদিক (আ) সম্পর্কে বলেছেন, 'তাঁর ছিল দিগন্ত প্রসারী চিন্তাশক্তি, দূর-দৃষ্টি ও প্রচলিত জ্ঞানগুলোর সব শাখার পূর্ণ জ্ঞান। ফিকাহ শাস্ত্রের বিভিন্ন মাজহাবের প্রধানরা ছাড়াও দর্শন শিক্ষার্থী ও দার্শনিকরাও ইসলামী বিশ্বের দূর দূরান্ত থেকে তাঁর ক্লাসে উপস্থিত হতেন।’
ইমাম জা’ফর সাদিক বলেছেন: যারা নামাজকে কম গুরুত্ব দেবে আমাদের তথা মহানবীর আহলে বাইতের শাফায়াত তাদের ভাগ্যে জুটবে না। তিনটি বিষয়ের পরিচয় পাওয়া যায় এ তিন ক্ষেত্রে: রাগের মুহূর্তে ধৈর্যের, যুদ্ধের সময় বীরত্বের ও অভাবের সময় ভাইয়ের পরিচয়।
ইমাম সাদিক (আ)'র শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে সবাইকে আবারও জানাচ্ছি গভীর শোক ও সমবেদনা। #
পার্সটুডে/এমএএইচ/১৬
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।