প্রতিরোধকামী সংগঠনগুলোর বিষয়ে ইসরাইলের সবচেয়ে বড় ভুল কি?
অবরুদ্ধ গাজার বিরুদ্ধে ইহুদিবাদী শাসক গোষ্ঠীর গণহত্যা আজ ১৫ নভেম্বর ১৪তম মাসে প্রবেশ করবে। এদিকে, ২০২৩ সালের ৮ই অক্টোবর লেবাননের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু হলেও লেবাননের বিরুদ্ধে ইহুদিবাদী ইসরাইলের পূর্ণ মাত্রার যুদ্ধের দ্বিতীয় মাসও পার হচ্ছে। এই সময়কালে ইহুদিবাদী শাসক গোষ্ঠী গাজা ও লেবাননের প্রতিরোধ যোদ্ধাদের উপর অনেক মানবিক ও শারীরিক আঘাত এনেছে।
ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গাজায় শহীদের সংখ্যা ৪৩ হাজার সাতশো ছত্রিশ এবং আহতের সংখ্যা এক লাখ তিন হাজার তিনশো সত্তর এ পৌঁছেছে। এদিকে লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে যে ২০২৩ সালের ৮ অক্টোবর থেকে ৩,৩৬৫ জন জন শহীদ হয়েছে এবং ১৪৩৬৬ জন আহত হয়েছে। মানুষের হতাহতের পাশাপাশি ইহুদিবাদীরা প্রতিরোধের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামরিক, লজিস্টিক এবং যোগাযোগ অবকাঠামোকে দুর্বল করার চেষ্টা করেছে এবং বিপুল সংখ্যক হামাস ও হিজবুল্লাহ নেতাকে শহীদ করেছে। যখন ইহুদিবাদীদের অপরাধ অব্যাহত রয়েছে এবং তারা গাজা ও লেবাননে প্রতিরোধকামীদের নির্মূল করার চেষ্টা করছে বলে দাবি করছে তখন আমেরিকান ম্যাগাজিন ফরেন অ্যাফেয়ার্স একটি নোটে লিখেছে যে ইউরোপ এবং আমেরিকার পূর্ণ সমর্থন নিয়ে ইহুদিবাদী শাসক গোষ্ঠীর সেনাবাহিনী বর্বরোচিত কঠোর হামলা চালিয়ে গাজার অধিকাংশ অবকাঠামো এবং বাড়িঘর ধ্বংস করেছে এবং লেবাননে বাড়িঘর ও গ্রাম ধ্বংস করে সেখানে একটি বাফার জোন তৈরি করছে কিন্তু প্রতিরোধের অক্ষকে পুরোপুরি ধ্বংস করতে সক্ষম হয় নি।
ফরেন অ্যাফেয়ার্সের মতে, প্রতিরোধ অক্ষের ঐতিহাসিক ধৈর্য ও সহনশীলতার মাত্রা দেখায় যে হামাস এবং হিজবুল্লাহর মতো প্রতিরোধকামী সংগঠনগুলোকে নির্মূল করতে ইহুদিবাদী শাসক গোষ্ঠী ব্যাপক সমস্যার সম্মুখীন হবে এবং তারা সর্বাত্মক যুদ্ধে স্বল্পমেয়াদী কথিত কৌশলগত বিজয় ছাড়া আর কিছুই অর্জন করবে না।
প্রতিরোধ অক্ষ তার শক্তি নিয়ে দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে থাকার পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে।ফরেন অ্যাফেয়ার্স স্বীকার করেছেন যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণগুলির মধ্যে একটি হল প্রতিরোধের অক্ষ এই অঞ্চলের সম্প্রদায়গুলোতে অত্যন্ত শক্তভাবে শিকড় গাড়তে সক্ষম হয়েছে এবং বহুবার তারা নমনীয়তা এবং সহনশীলতা দেখিয়েছে। এই আন্দোলনগুলো তাদের দেশের সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে এমনভাবে প্রবেশ করেছে যে তাদের ধ্বংস করা কার্যত অসম্ভব। প্রতিরোধকামী সংগঠনগুলো স্থিরভাবে দাঁড়িয়ে থাকার পেছনে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ এর নেতা এবং সদস্যদের বিশ্বাসের শক্তি এবং ধর্মীয় বিশ্বাসের সাথে সম্পর্কিত। প্রতিরোধকামী সংগঠনগুলোর নেতা ও সদস্যদের মৃত্যুভয়ই নেই এবং একইসঙ্গে ধর্ম ও স্বদেশের জন্য শহীদ হওয়াকেও সম্মান মনে করে। ইহুদিবাদী শাসক গোষ্ঠীর নজিরবিহীন অপরাধের বিরুদ্ধে তাদের মানসিক শ্রেষ্ঠত্ব ও দৃঢ়চিত্ততা বজায় থাকার পেছনে এটাও একটা অন্যতম প্রধান কারণ।
ইহুদিবাদী শাসক গোষ্ঠীর ভয়াবহ অপরাধযজ্ঞের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার শক্তি অব্যাহত থাকার পেছনে আরেকটি কারণ হল এই প্রতিরোধ সংগঠনগুলোর সহনশীল কমান্ডিং শ্রেণিবিন্যাস। গাজা ও লেবাননে হামাস এবং হিজবুল্লাহর বিশিষ্ট নেতাদের শাহাদত এই প্রতিরোধকামী সংগঠনগুলোর পতনের কারণ হয়নি। কারণ কমান্ডের শ্রেণিবিন্যাস এতটাই নমনীয় যে নতুন লোকেরা তাৎক্ষণিকভাবে শহীদ কমান্ডারদের স্থান পূরণ করতে স্বতস্ফূর্তভাবে এগিয়ে এসেছিল।
এই সমস্ত কারণগুলোর উপস্থিতির ফলেই ইহুদিবাদী শাসক গোষ্ঠীর অপরাধযজ্ঞের বিরুদ্ধে প্রতিরোধকামী শক্তিগুলোর রুখে দাঁড়ানোর দৃঢ় মনোবল এবং ইচ্ছা কখনোই নি:শেষ হবে না বরং তা আরো প্রবল বেগে অব্যাহত থাকবে। আর এই কারণেই ইহুদিবাদী শাসক গোষ্ঠীর মন্ত্রিসভার পাশাপাশি দখলকৃত অঞ্চলের কিছু লোক যুদ্ধ বন্ধ করতে ইহুদিবাদী সরকারকে বারবার সতর্ক করে আসছে ।#
পার্সটুডে/এমবিএ/১৫
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।