ইসলামী জাগরণের অনন্য নকীব ইমাম খোমেনী (র.)
(last modified Sat, 03 Jun 2023 09:20:55 GMT )
জুন ০৩, ২০২৩ ১৫:২০ Asia/Dhaka
  • ইসলামী জাগরণের অনন্য নকীব ইমাম খোমেনী (র.)

ইসলামী জাগরণের অনন্য নকীব ও  ইসলামী বিপ্লবের মহানায়ক মরহুম ইমাম খোমেনীর মৃত্যু বার্ষিকীতে সবাইকে জানাচ্ছি গভীর শোক ও সমবেদনা।

আলবোর্জ আর জাগ্রোস পর্বতমালার পাদদেশে

টিউলিপ, নার্গিস আর গোলাপের দেশে 
ফুটলো আবার এ কোন্ মুহাম্মাদি ফুল! 

মা আমিনা আর ফাতিমার কোল ঘেঁষে 
ছড়িয়ে পড়লো সে ফুলের সৌরভ মনোরম সুবাসে!  
মায়েরা আবারও বীর পুত্রদের জিহাদে পাঠালো হেসে হেসে!
ইরানের খোমেইন থেকে জেগে-ওঠা সে নুর অতুল 
আজো মুক্তির প্রলয় শিখা ছড়ায় দেশে দেশে! 
খোমেনির নামে আজো কাঁপে দানব অসুরের দল মহাত্রাসে 
চির-উন্নত শির খোমেনির! যার বাণীতে যেন স্বর্গের পরম আশ্বাসে
প্রজ্ঞার ঝর্ণাধারা ছুটে আসে,

হাফিজ-রুমি-সাদির গুলবাগিচার ফুলগুলো হাসে
আজও বিপ্লবীরা স্মরে তাঁরে অশ্রুজলে গভীর ভালোবেসে!

ইসলামী বিপ্লবের সফল নেতা ইমাম খোমেনী (র.) আধুনিক যুগে প্রথমবারের মত ধর্মনিরপেক্ষ পশ্চিমা বিশ্ব-ব্যবস্থা আর সংস্কৃতির কর্তৃত্ব ও আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ করে বিশ্ব-রাজনীতিতে এক প্রবল ভূমিকম্প হয়ে দেখা দিয়েছিলেন। খোদাবিমুখ প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের কথিত পরাশক্তিগুলোর আধিপত্যকে অবজ্ঞা করে তিনি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ইসলামকে তুলে ধরেছেন সমসাময়িক যুগের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় শক্তি হিসেবে। তাঁর নেতৃত্বে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী শক্তির প্রতি ইরানি জাতির প্রবল চপেটাঘাত ইবলিসি শক্তিগুলোর একাধিপত্যকে নড়বড়ে করে দেয়। বিগত হাজার বছরের ইতিহাসে ইসলামী শক্তির এমন প্রবল উত্থান আর কখনও ঘটেনি। প্রাচ্যও নয় পাশ্চাত্যও নয় ইসলামই শ্রেষ্ঠ  -বর্তমান যুগে এমন ধারণার বলিষ্ঠ নজির হয়ে দেখা দেয় ইমাম খোমেনীর নেতৃত্বাধীন ইরান।

" ইসলাম ধর্ম মেনেই স্বাধীনতা অর্জন" ছিল ইরানের ইসলামি বিপ্লবের বৈশ্বিক বার্তা। অথচ সমাজবাদী ও লিবারেল রাষ্ট্র ব্যবস্থার কর্তৃত্বাধীন আধুনিক বিশ্বে ধর্মীয় আইন-ভিত্তিক সমাজ-ব্যবস্থার প্রতিষ্ঠা ছিল অকল্পনীয়।  ইমাম খোমেনী (র.) ছিলেন প্রজ্ঞাবান, প্রবল আত্মবিশ্বাসী ও অকুতোভয়। এ ছিল এই বিপ্লবের এক বিরল সৌভাগ্য। নবী-বংশের রক্তধারা এই ইমাম সময়ের গতি-প্রকৃতি বুঝতেন। সাধারণ মানুষের প্রতি তাঁর সহমর্মিতা, গভীর দরদ ও আকুতি ইসলামী জাগরণকে করেছে বেগবান। তাঁর নেতৃত্বের কারণেই ইরানি জাতি পরাশক্তিগুলোর প্রভাব এবং অবসাদ ও হতাশা দুর করতে সক্ষম হয়। ইমাম ছিলেন দ্বিধাহীন ও নিঃশঙ্ক আত্মত্যাগের  প্রোজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। ইরানি জনগণের ওপর তিনি ইসলামী রাষ্ট্র-ব্যবস্থাকে জোর করে চাপিয়ে দেননি যদিও তাদের অবিসম্বাদিত নেতা হিসেবে তিনি তা করতে পারতেন। তিনি গণভোটের আশ্রয় নিয়ে জনগণের সম্মতির ভিত্তিতেই ইসলামী রাষ্ট্র-ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেন যা হাজার বছরের ইতিহাসে এক অনন্য দৃষ্টান্ত।

ইমাম খোমেনী (র.)’র বিরল দূরদৃষ্টি ও ইস্পাত-কঠিন খোদায়ী সংকল্প তাঁকে দিয়েছে কিংবদন্তীতুল্য জনপ্রিয়তা। তিনি খাঁটি মুহাম্মাদি ইসলামের চেতনায় জাগিয়ে তুলেছিলেন ইরানের আলেম সমাজ ও জনগণকে। ইমামের খোদাভীতি ও একনিষ্ঠতা-উদ্ভূত  দিক-নির্দেশনার সুবাদে ইরানের সব স্তরে, বিশেষ করে যুব সমাজের মধ্যে জিহাদ ও শাহাদতের সংস্কৃতির বিস্ময়কর প্রভাব ছড়িয়ে পড়ে। আর এ বিষয়টি বিশ্ববাসীকে অভিভূত করেছে। আয়াতুল্লাহ খোমেনী ছিলেন মানবাদর্শের এক মূর্ত প্রতীক। তিনি নৈতিক, বুদ্ধিবৃত্তিক, রাজনৈতিক ও আধ্যাত্মিক যোগ্যতার অপূর্ব সমন্বয়ের মাধ্যমে ইরানে এরূপ বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হন।  রাজনৈতিক বিপ্লব পরিচালনায় তাঁর অতুলনীয় ভূমিকা তাঁর পণ্ডিত, দার্শনিক ও আধ্যাত্মবাদী পরিচিতিকেও ছাড়িয়ে গেছে। ফলে ১৯৭৯ সালে তিনি দেশে ফিরে এসে কোনো সম্পদ, দল গঠন ও গেরিলা যুদ্ধ এবং বিদেশী সাহায্য ছাড়াই গোটা জাতি ও ইসলামী বিপ্লবের অবিসম্বাদিত নেতায় পরিণত হন।

ইমাম খোমেনীর ছিল অদম্য ইচ্ছাশক্তি ও ন্যায়ের প্রশ্নে অবিচলতা

মরহুম ইমাম খোমেনীর ছিল অদম্য ইচ্ছাশক্তি ও ন্যায়ের প্রশ্নে অবিচলতা। তাই ইহুদিবাদী ইসরাইলের সঙ্গে ইরানের রাষ্ট্রীয় ও কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন না করার পরামর্শে তিনি কান দেননি। অথচ তিনি মিশর ও তুরস্কের পথ ধরে ইরানকে এ দিক থেকে বিপদমুক্ত রাখার ভুল যুক্তি মেনে নিতে পারতেন! আর এমন আপোষহীন মহান ব্যক্তি আসলেই  ইসলাম ও মুসলমানের জন্য এক মহা-ঐশী উপহার। হযরত ইমাম হুসাইন (আ.)'র নেতৃত্বে সংঘটিত মহান কারবালা বিপ্লবের অনন্য আত্মত্যাগের দর্শন ও শিক্ষার পুনরুজ্জীবন ইমাম খোমেনীর সাফল্যের আরেকটি বড় কারণ। ইমাম খোমেনী (র.) নারীসহ সব শ্রেণীর মর্যাদা পুনঃপ্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বিশ্বনবী (সা.)’র আদর্শকে তুলে ধরতেন।

বিশ্বের বড় বড় দেশের নেতা ও রাষ্ট্রীয় প্রতিনিধিরা অনাড়ম্বর জীবন-যাপনে অভ্যস্ত ইমাম খোমেনীর (র.) খুব সাধারণ বাসভবন দেখে বিস্মিত হতেন। বিশ্ব ইতিহাসের গতি পরিবর্তনকারী নেতা হওয়া সত্ত্বেও ইমাম খোমেনি ছিলেন অত্যন্ত সদালাপী, বিনয়ী ও নিরহংকার। তিনি বলতেন, আমাকে নেতা না বলে জনগণের সেবক বলবেন। আল্লাহর প্রতি ইমাম খোমেনী (র.)'র গভীর আস্থার ফলে সৃষ্ট তাঁর সদা-প্রশান্ত চিত্ত ও প্রজ্ঞাপূর্ণ বাণী পরিদর্শকদের মুগ্ধ করত। তিনি সব শ্রেণীর মানুষের আসল সমস্যা ও বিভ্রান্তির মূল কারণগুলো তুলে ধরতেন। তাঁর সব ধরনের বক্তব্য শ্রোতাদের মধ্যে গভীর প্রভাব ফেলত। ইমাম খোমেনীর প্রজ্ঞাপূর্ণ ও একনিষ্ঠ আহ্বানে সাড়া দিয়েই ইরানি জাতি ৮ বছরের পবিত্র প্রতিরক্ষার এক অনন্য নজির গড়ে তোলে যা ইরানকে দিয়েছে অনন্য বিজয়, মর্যাদা এবং সামরিক স্বনির্ভরতা ও সাম্রাজ্যবাদীদের আতঙ্ক হওয়ার গৌরব।

ইমাম খোমেনীর  অনুসারী ছাত্রদের মধ্যেও তাঁর একনিষ্ঠা ও বহুমুখী প্রতিভার প্রভাব দেখা যায়। ইরানের বর্তমান সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ি, শহীদ অধ্যাপক মুতাহ্‌হারি, শহীদ আয়াতুল্লাহ বেহেশতি ও মরহুম আয়াতুল্লাহ মেজবাহ ইয়াজদি প্রমুখের নাম এ প্রসঙ্গে স্মরণীয়। ইমাম খোমেনীর আদর্শিক প্রেরণায় গড়ে উঠেছে ইসরাইল বিরোধী অদম্য বিজয়ী শক্তি লেবাননের হিজবুল্লাহ এবং ফিলিস্তিনের ইসলামী জিহাদ ও হামাস আর সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ'র মত বিপ্লবী নেতা। ইহুদিবাদী ইসরাইলের মোকাবেলায় এইসব সংগ্রামী দলের গত কয়েক দশকের ও সাম্প্রতিক সাফল্য ইমাম খোমেনীর আদর্শিক প্রেরণার কাছে ঋণী। শহীদ সুলায়মানিও তাঁরই আদর্শের ফসল।

পবিত্র কুরআন ও বিশ্বনবী (সা)’র প্রতি অবমাননাকারী কুখ্যাত মুরতাদ সালমান রুশদির মৃত্যুদণ্ডের ঐতিহাসিক ফতোয়া দিয়ে ইমাম খোমেনী (র) পাশ্চাত্যের সাংস্কৃতিক ক্রুসেডের দাঁতভাঙ্গা জবাব দিয়েছিলেন। মহানবীর (সা) সুন্নত অনুসরণ করেই ইমাম তৎকালীন সোভিয়েত নেতা গর্বাচেভের কাছে ইসলামের দাওয়াত পাঠিয়েছিলেন এবং সমাজতন্ত্র জাদুঘরে স্থান পাবে বলে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যা শিগগিরই বাস্তব হয়ে দেখা দেয়। মার্কিন সরকারই যে বিশ্বের সবচেয়ে বড় শয়তান ইমাম খোমেনিই তা বিশ্ববাসীর কাছে সবার আগে তুলে ধরেছিলেন। এই শয়তানের পতনও যে অনিবার্য ইমাম খোমেনি সংগ্রামী মুসলমানদের মধ্যে এই ধারণাকে একনিষ্ঠ বিশ্বাসে পরিণত করতে চেয়েছিলেন যে বিশ্বাস ক্রমেই বাস্তব ও জোরদার হচ্ছে।
 মরহুম ইমাম খোমেনীর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে সবাইকে আবারও গভীর শোক ও সমবেদনা জানাচ্ছি । #

পার্সটুডে/এমএএইচ/০৩