জুন ২৬, ২০২৩ ১৬:৫৬ Asia/Dhaka

৭ ই জিলহজ্ব ইসলামের ইতিহাসের এক শোকাবহ দিন। কারণ, বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)'র পবিত্র আহলে বাইতে জন্ম-নেয়া পঞ্চম ইমাম তথা হযরত ইমাম মুহাম্মদ বাক্বির (আ.) ১১৪ হিজরি সনের ৫৭ বছর বয়সে শাহাদাত বরণ করেন। এই মহান ইমামের শাহাদত বার্ষিকী উপলক্ষে সবাইকে জানাচ্ছি গভীর শোক ও সমবেদনা।

কোনো কোনো নাম জগতের মহা-বিস্ময়!

খোদায়ি নূরের অনন্য প্রকাশ চিরহিরন্ময়!

মানবতার সব শুভ্র জ্যোতি সভ্যতার প্রগতি

তাঁদেরই নূরের ছোঁয়ায় হয়েছে আলোকময়!

তাঁদের স্পর্শ পেতে চির-অধীর  স্বর্গ মর্ত ধাম

 এমনই এক বিশ্ব-বিশ্রুত জগত-নাড়ানো নাম

মুহাম্মাদ ইবনে যাইনুল আবেদিন- পবিত্র ইমাম!

তথা বিশ্ববিশ্রুত মহামানব ইমাম বাক্বির

ইসলামের গৌরব চির-উন্নত শির!

নাতির নাতি তিনি খোদার হাবিব মহানবীর

 ছড়িয়েছেন ইসলামের আলোকিত পয়গাম

 হে জ্ঞানের মহা উন্মোচক-বিশ্লেষক! আপনাকে অশেষ সালাম!

যাকে আগাম-সালাম

জানিয়ে গেছেন স্বয়ং বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহিসসালাম!

যার শাহাদাতে ফেরেশতাকুল স্তব্ধ বিশ্বাসী জগত শোকাভিভূত

আজও কাঁদছে যেন সব বেহেশতি নহর অস্থির অবিরত ! 

 বিশ্বনবীর (সা.)’ পবিত্র আহলে বাইতের সদস্য তথা তাঁর নাতির নাতি (প্র-প্রপৌত্র) হযরত ইমাম বাক্বিরের (আ.) জন্ম হয়েছিল পবিত্র মদীনায় ৫৭ হিজরির পয়লা রজব অথবা তেসরা সফর। তাঁর মা ছিলেন ইমাম হাসানের কন্যা ফাতিমা (সা.আ)। এভাবে ইমাম বাক্বির (আ.) ছিলেন পিতা ও মাতা- উভয়ের দিক থেকেই হযরত আলী (আ.) ও নবী-নন্দিনী ফাতিমা (সা.)'র বংশধর। কারবালার  মহাবিপ্লবের সময় তিনি পিতা ইমাম সাজ্জাদ (আ.) ও দাদা ইমাম হুসাইন (আ.)'র সঙ্গে ছিলেন। এ সময় তাঁর বয়স ছিল মাত্র চার বছর। পিতা ইমাম জাইনুল আবেদিন (আ.) হিজরি ৯৫ সালে শাহাদত বরণ করলে তিনি মুসলিম উম্মাহকে নেতৃত্ব দেয়ার দায়িত্ব তথা ইমামত লাভ করেন। সেই থেকে শাহাদাতের সময় তথা ১৯ বছর পর্যন্ত তিনি এই দায়িত্ব পালন করেন। মহানবী (সা) তাঁর সাহাবি হযরত জাবেরকে বলেছিলেন যে ‘তুমি আমার বংশধর বাক্বিরকে দেখতে পাবে, তাঁর নামও হবে মুহাম্মাদ এবং তাঁর বৈশিষ্ট্যও হবে আমার মত। সে হবে জ্ঞান-বিদারক বা উন্মোচক তথা বাক্বির। তুমি তাঁর কাছে আমার সালাম পৌঁছে দিও।’ জাবের (রা.) সেই দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

ইসলামের সত্যিকার শিক্ষা ও সংস্কৃতিসহ এ ধর্মের সার্বিক দিকগুলোর সংরক্ষণ ও  ক্রম-বিকাশে রয়েছে ইমাম বাক্বির (আ.)’র অনন্য অবদান। তাঁর আগে মহানবীর (সা) বংশধারার নিষ্পাপ সদস্যরা সত্যকে তুলে ধরার সংগ্রামে ব্যস্ত থাকায় এবং সমর্থকদের নিরাপত্তা না থাকায় ইসলামী সাংস্কৃতিক ও জ্ঞান-বিস্তার আন্দোলনের কোনও প্রকাশ্য প্রতিষ্ঠান গড়ে যেতে পারেননি। কিন্তু এই কাজ প্রকাশ্যেই ও মোটামুটি বিনা বাধায় করার সুযোগ পেয়েছিলেন ইমাম বাক্বির (আ)। আর এ জনই তাঁকে বাক্বির আল উলুম বা জ্ঞান বিদীর্ণকারী বলা হয় যা তাঁর সবচেয়ে বিখ্যাত উপাধি।

ইমাম বাক্বির (আ) প্রকাশ্যেই ছাত্র ও সমর্থকদের সমাবেশে ইসলামী বিশ্বাস ও কুরআন-হাদিস সম্পর্কে বক্তব্য রেখে, জ্ঞানগত বহু বিতর্কে অংশ নিয়ে এবং তাঁর আলোচনাগুলোর সংকলন প্রকাশের অনুমতি দিয়ে ইসলামী জ্ঞান-আন্দোলনকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে পেরেছিলেন। প্রকাশ্যেই ইসলামের প্রকৃত রূপ তুলে ধরাসহ ইসলামী সাংস্কৃতিক আন্দোলনকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার যে কাজ ইমাম বাক্বির (আ.)’র মাধ্যমে সূচিত হয়েছিল তাকে ফুলে-ফলে সমৃদ্ধ ও ফলপ্রসূ করেছিলেন তাঁরই পুত্র হযরত ইমাম জাফর আস সাদিক্ব (আ.)।

ধর্ম ও বিজ্ঞানসহ সব বিষয়ে বাক্বির (আ.)’র প্রজ্ঞা আর অলৌকিক জ্ঞান এবং সর্বোত্তম নৈতিক চরিত্র ও আত্মিক গুণগুলোর পাশাপাশি সব ধরনের মানবীয় যোগ্যতার ক্ষেত্রেও তাঁর শ্রেষ্ঠত্বের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছিল সর্বত্র। বিশ্বনবী (সা.)’র সুন্নাতের অনুসরণ, সততা ও ইবাদত-সাধনায়ও তিনি ছিলেন পরিপূর্ণ আদর্শ।ইসলামকে বোঝা ও অনুসরণের জন্য জ্ঞান-চর্চার গুরুত্ব তুলে ধরে ইমাম বাক্বির (আ.) বলেছেন, একজন জ্ঞানী বা আলেমের জ্ঞান যদি মানুষের কল্যাণে আসে তবে সেই জ্ঞানী শত্তুর জন আবেদ বা দরবেশের চেয়েও উত্তম’।

ইমাম বাক্বির (আ) ছিলেন দ্বীন ও দুনিয়ার জ্ঞানের বিকাশকারী এবং বিশ্লেষক। আল্লাহ-প্রদত্ত অলৌকিক জ্ঞানের অধিকারী এই ইমামের জ্ঞানের কাছে সে যুগের শ্রেষ্ঠ জ্ঞানীরাও ছিলেন শিশুর মত তুচ্ছ। পিতা ইমাম জাইনুল আবেদিন (আ) ও তাঁর পুত্র ইমাম বাক্বিরের মাধ্যমে পবিত্র কুরআন ও বিশ্বনবী (সা.)’র সুন্নাহ’র জ্ঞান ব্যাপক মাত্রায় ছড়িয়ে পড়ে।

 ইমাম বাক্বির (আ.) নানা বিষয়ে জ্ঞান-অন্বেষণকারীদের অনেক জটিল প্রশ্নের উত্তর ও সমাধান দিতেন। এ মহান ইমাম ও তাঁর পুত্র ইমাম জাফর সাদিক্ব (আ.)’র সাংস্কৃতিক আন্দোলনের ফসল হিসেবে তাঁদের ছাত্ররা মুসলিম সমাজকে উপহার দিয়েছিলেন প্রায় ছয় হাজার বৈজ্ঞানিক গ্রন্থ। 

ইমাম বাক্বির (আ)’র কয়েকটি বইয়ের কথা জানা যায়। যেমন, ‘মাআসিরুল বাক্বির' নামক বইয়ে আত্মার বৈশিষ্ট্য, আলেমদের গুণ ও মহান আল্লাহর নানা গুণ এবং তাঁর খোদায়ী সত্ত্বার দিকসহ বহু বিষয়ে আলোচনা রয়েছে। তাঁর উম্মুল কিতাব নামক বইয়ে রয়েছে আত্মশুদ্ধি ও আধ্যাত্মিক নানা প্রতীকের ব্যাখ্যা সম্পর্কিত আলোচনা। এ ছাড়াও পবিত্র কুরআনের ব্যাখ্যা বিষয়ে ইমামের বই ‘তাফসির আল বাক্বির'ও উল্লেখযোগ্য।

ইমাম বাক্বির (আ) ছিলেন শ্রেষ্ঠ আবেদ ও পরহিজগার এবং সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও শ্রেষ্ঠ নেতা, আইনবিদ ও সংস্কারক।  তাঁর ইবাদত-বন্দেগি, খোদাভীরুতা, মহানুভবতা ও দয়া ছিল সবার জন্যই অনুকরণীয় আদর্শ। তিনি নামাজে আল্লাহর সঙ্গে এমনভাবে কথা বলতেন যেন তিনি সরাসরি আল্লাহকে দেখছেন। মানুষকে হেদায়াতের কঠিন দায়িত্ব পালনে ব্যস্ত থাকা সত্ত্বেও তিনি কঠোর কায়িক শ্রমের মাধ্যমে জীবিকা অর্জন করতেন। ইমাম অলসতা ও বেকারত্বকে ঘৃণা করতেন। কোনও সাহায্য প্রার্থী বা অভাবগ্রস্ত ব্যক্তি কখনও ইমাম বাক্বির (আ.)’র কাছে সাহায্য চেয়ে খালি হাতে ফিরেনি।

জুলুমের বিরুদ্ধে সংগ্রাম ছিল অন্যান্য ইমামদের মতই ইমাম বাক্বির (আ.)’র চরিত্রের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য। তিনি বনি উমাইয়া শাসকদের নানা কুকীর্তির সমালোচনা করতেন। ফলে উমাইয়া শাসক হিশাম বিন আবদুল মালিক তাঁকে সিরিয়ায় নিজ দরবারে তলব করে। ইমাম বাক্বির আ. সেখানে উপস্থিতি হয়ে বলেছিলেন: ‘তোমার হাতে রয়েছে ক্ষণস্থায়ী রাজত্ব, কিন্তু আমাদের জন্যই হল চিরস্থায়ী নেতৃত্ব ও শাসন এবং খোদা-ভীরুদের জন্যই রয়েছে শুভ-পরিণাম।’

সিরিয়ায় ইমাম বাক্বির (আ.)’র উপস্থিতি তাঁর আধ্যাত্মিক ও জ্ঞানগত শ্রেষ্ঠত্বকে সবার কাছেই স্পষ্ট করে দেয়। সেখানেও তিনি খাঁটি ইসলামকে স্পষ্ট ভাষায় তুলে ধরেন। ফলে গণ-জাগরণের ভয়ে ভীত হিশাম ইমামকে আবারও মদীনায় ফেরত পাঠায়। হিশাম ইমাম বাকির (আ)’র জ্ঞানগত যোগ্যতার কাছে শিশুতুল্য হওয়া সত্ত্বেও তাঁর সঙ্গে বিতর্কে লিপ্ত হয়। বিতর্কে পরাজিত হয়ে হিশাম ক্রুদ্ধ হয়ে ৫৭ বছর বয়স্ক ইমাম বাক্বির (আ.) কে বিষপ্রয়োগে শহীদ করে।  সেই শোকাবহ দিনটিই হলো ৭ জিলহজ্ব। মদীনায় পবিত্র জান্নাতুল বাকি কবরস্থানে পিতা ইমাম জাইনুল আবেদিনের কবরের পাশেই তাঁকে দাফন করা হয়। প্রায় একই স্থানে রয়েছে ইমাম হাসান মুজতবা (আ.) ও ইমাম বাক্বির (আ.)'র পুত্র তথা বিশ্বনবী (সা.)'র পবিত্র আহলে বাইতে জন্ম-নেয়া ষষ্ঠ ইমাম হযরত ইমাম জাফর সাদিক্ব (আ.)'র কবর। এখানে তাঁদের সবার কবরের ওপরই ছিল সুদৃশ্য গম্বুজসহ মাজার। কিন্তু প্রায় ১২/১৩ শত বছর ধরে এইসব মাজার টিকে থাকা সত্ত্বেও এখন থেকে প্রায় ৯০ বছর আগে ধর্মান্ধ ওয়াহাবিরা এই পবিত্র মাজারগুলো ধ্বংস করে দিয়েছে।

হিশামের হিংসা ইমাম বাক্বিরকে শহীদ করলেও তা নেভাতে পারেনি ইমামের রেখে যাওয়া জ্ঞানের আলো এবং মুসলিম মানসে আহলে বাইতের সর্বোচ্চ মর্যাদার প্রদীপ্ত শিখা। আর সেই আলো ধরেই আজো ইসলামী ইরানসহ বিশ্বের নানা অঞ্চলে এগিয়ে চলছে মানবজাতির সার্বিক মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামী সভ্যতা পুনর্নির্মাণের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা।

 

 

সিরিয়ার  এক ব্যক্তি নিজেকে অত্যধিক জ্ঞানী বলে মনে করতেন। সুযোগ পেলেই ইমাম বাক্বির (আ.)-কে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে কথা বলা ছিল তার স্বভাব। একদিন সে ইমামের ক্লাসে অংশ নেয়া প্রসঙ্গে ইমামকে বললেন: নবীর আহলে বাইতের প্রতি আমার কোনো অনুরাগ নেই। কিন্তু যেহেতু আপনি কথা বলার শিল্পে ও নানা জ্ঞানে বেশ দক্ষ তাই আপনার ক্লাসে আসি। কিন্তু আমি আপনার অনুরাগী ও অনুসারী নই। ইমাম বাক্বির আ. বললেন: আল্লাহর কাছে কোনো কিছুই গোপন থাকবে না। এভাবে সে ইমামের প্রতি অপমানজনক আচার-আচরণ চালিয়ে যাচ্ছিল।

সিরিয় এই পণ্ডিত কিছুকাল পর অসুস্থ হয়ে পড়ে। নানা ধরনের চিকিৎসায় কোনো সুফল আসছিল না। চলাফেরার শক্তি হারা ওই পণ্ডিতের অবস্থা এক রাতে বেশ শোচনীয় হয়ে পড়ে। সে এ সময় স্বপ্ন দেখে যে, তাঁর মৃত্যু হয়েছে ও এই সময় ইমাম বাক্বির (আ.) তার আরোগ্যের জন্য দোয়া করছেন; আর আল্লাহ ইমামের দোয়া কবুল করায় পণ্ডিত আবারও জীবন ফিরে পেয়েছে।  এই স্বপ্নের কথা তুলে ধরে পণ্ডিত বন্ধুদের দিয়ে ইমামকে অনুরোধ জানান তিনি যেন তাকে দেখতে আসেন। ইমামের কাছ যাওয়ার শক্তি তার ছিল না বলে সে দুঃখ প্রকাশ করে।  

এদিকে আহলে বাইতের এমন ঘোর বিরোধী ব্যক্তির মুখে এমন কথা শুনে সবাই বিস্মিত হয়। যাই হোক, ইমাম তাকে দেখতে আসেন ও ওই পণ্ডিতের পরিবারের সদস্যদের  বলেন তার জন্য বিশেষ ওষুধ তৈরি করতে। ইমাম নিজের হাতে তাকে ওষুধ সেবন করান। ইমামের ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী ওই ব্যক্তি কয়েক দিনের মধ্যেই মোটামুটি সুস্থ হয়ে ওঠে। এবার সে নিজেই ইমাম বাক্বির (আ.)'র কাছে এসে অত্যন্ত আদব সহকারে বসে ইমামের কাছে ক্ষমা চায় ও অশ্রুসজল চোখে বলল, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আপনি মানুষের মধ্যে আল্লাহর হুজ্জাত বা প্রমাণ এবং যারাই আপনাকে ছাড়া অন্য কারো সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ বা জোটবদ্ধ হবে তারাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা ও সংস্কৃতি প্রচারের জন্য এই মহান ধর্ম ইমাম বাক্বির (আ.)'র কাছে চির-ঋণী হয়ে আছে। ইমাম অনেক সুযোগ্য ছাত্র তৈরি করেছিলেন। তাঁকে বাক্বির বলা হয় এ কারণে যে তিনি ছিলেন দ্বিন ও দুনিয়ার জ্ঞানের বিকাশকারী এবং বিশ্লেষক যা তাঁর সবচেয়ে বিখ্যাত উপাধি। আল্লাহ-প্রদত্ত অলৌকিক জ্ঞানের অধিকারী ইমামের জ্ঞানের কাছে সে যুগের শ্রেষ্ঠ জ্ঞানীরাও ছিলেন শিশুর মত তুচ্ছ। বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) তাঁর সাহাবি জাবির ইবনে আবদুল্লাহ আনসারিকে বলেছিলেন, তুমি আমার সন্তান তথা বংশধর বাক্বিরকে দেখা পর্যন্ত জীবিত থাকবে। তুমি তখন তাঁকে আমার সালাম পৌঁছে দিও।  জাবির শিশু ইমাম বাক্বির (আ.)'র সঙ্গে সাক্ষাতের সময় তাঁর পায়ে চুমো দিয়ে বলেছিলেন,

 "হে নবীর সন্তান! আপনার  জন্য আমার জীবন উতসর্গিত হোক। আপনার পিতা নবী (সা.)'র সালাম গ্রহণ করুন, কারণ, তিনি আপনাকে সালাম দিয়েছেন। ইমাম বাক্বির (আ.) অশ্রুসজল চোখে বললেন: সালাম ও দরুদ আমার পিতা নবী (সা.)'র ওপর ততদিন ধরে বর্ষিত হোক যতদিন এই আকাশ ও জমিন টিকে থাকবে। আর তোমার ওপরও সালাম হে জাবির, যেহেতু তুমি তাঁর সালাম আমার কাছে পৌঁছে দিয়েছ।"

জনৈক আসাদ বিন কাসির বলেছেন : আমি একবার আমার দরিদ্র অবস্থা এবং আমার ওপর ভাইদের অত্যাচারের ব্যাপারে ইমামের কাছে নালিশ করলাম। তিনি বললেন : "যে ভাই সামর্থবান ও সম্পদশালী অপর ভাইয়ের সাথে সম্পর্ক রাখে, কিন্তু ঐ ভাই দরিদ্র হয়ে গেলে তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে ও তার ওপর অত্যাচার চালায় সে অত্যন্ত খারাপ মানুষ।" এরপর তিনি আমাকে ৭০০ দেরহাম দান করার নির্দেশ দিলেন যাতে আমি সেই অর্থ দিয়ে আমার দারিদ্র্য দূর করতে পারি। এরপর ইমাম আমাকে বললেন : "তুমি স্বচ্ছল হতে পারলে কিনা তা আমাকে জানিও"।

 ধর্ম ও বিজ্ঞানসহ সব বিষয়ে বাক্বির (আ.)’র প্রজ্ঞা আর অলৌকিক জ্ঞান এবং সর্বোত্তম নৈতিক চরিত্র ও আত্মিক গুণগুলোর পাশাপাশি সব ধরনের মানবীয় যোগ্যতার ক্ষেত্রেও তাঁর শ্রেষ্ঠত্বের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছিল সর্বত্র। বিশ্বনবী (সা.)’র সুন্নাতের অনুসরণ, সততা ও ইবাদত-সাধনায়ও তিনি ছিলেন পরিপূর্ণ আদর্শ।

ইমাম বাকির (আ.)মুমিনের গুণাবলী সম্পর্কে  বলেছেন:  নিশ্চয়ই মুমিন যখন সন্তুষ্ট হয় তখন তার সন্তুষ্টি তাকে পাপ ও বাতিল ( ভ্রান্ত) কাজে প্রবেশ করায় না ( পাপ ও ভ্রান্ত কাজ করতে তাকে উদ্বুদ্ধ করে না) এবং যখন সে হয় ক্রুদ্ধ তখন তার ক্রোধ সত্য বলা থেকে তাকে বিরত রাখে না। মুমিন হচ্ছে সেই ব্যক্তি যখন সে ক্ষমতাবান হয় ( ক্ষমতা লাভ করে) তখন তার ক্ষমতা (ও শক্তি) তাকে সীমালঙ্ঘন করতে উদ্বুদ্ধ করে না এবং যে বিষয় সত্যিকার অর্থে তার নয় সেদিকে তাকে ধাবিত করে না। ( দ্র:  বিহারুল আনওয়ার, খ:  ৭১ , পৃ:  ৩৫৮ , হাদিস নং ৩)  

ইমাম বাক্বির (আঃ) বলেছেন : যে ব্যক্তির অন্তরে জ্বলজ্বলে ও সাদা কোন অংশ নেই, সে মুমিন নয়। যখন ব্যক্তি কোন পাপ কাজ করে তখন ঐ সাদা অংশের ওপর কালো একটি ছাপ পড়ে। যদি সে তওবা করে আল্লাহর কাছে অনুশোচনা করে তবে সেই কালো ছাপ মুছে যায়। আর যদি সে তওবা না করে পাপ কাজ অব্যাহত রাখে, তবে কালো ছাপ গভীর থেকে গভীরতর হয়। একসময় তার অন্তরে আর কোন সাদা জায়গা থাকে না,পুরোপুরি কালো হয়ে যায়। এ ধরনের অন্তরের অধিকারীরা কখনো সুপথ পায় না। সবাইকে আবারও জানাচ্ছি গভীর শোক ও সমবেদনা।#

পার্সটুডে/এমএএইচ/২৬

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। 

ট্যাগ