শ্রেষ্ঠ মহামানবী হযরত ফাতিমার (সা) ওফাতবার্ষিকী
(last modified Tue, 28 Jan 2020 15:04:13 GMT )
জানুয়ারি ২৮, ২০২০ ২১:০৪ Asia/Dhaka

খাতুনে জান্নাত হযরত ফাতিমা সম্পর্কে যদি বলা হয় তিনি বিশ্বনবী মুহাম্মাদ (সা.)’র ও হযরত খাদিজার কন্যা, আমিরুল মু’মিনিন আলী (আ.)’র স্ত্রী, শহীদদের নেতা ইমাম হুসাইন ও জান্নাতি যুবকদের অন্যতম সর্দার ইমাম হাসানের ও বীরঙ্গনা যেইনাব- এর মা-এসব বর্ণনায় কী তাঁর প্রকৃত পরিচয় ও মর্যাদা পুরোপুরি ফুটে ওঠে? 

না, এইসব পরিচয় ও মর্যাদা সত্য হওয়া সত্ত্বেও ফাতিমা কেবল এসবেই সীমিত নন। ফাতিমার তুলনা কেবলই ফাতিমা”। “হ্যাঁ, নবী-নন্দিনী ফাতিমা যাহরার মাহাত্ম্য যতই বলা হোক না কেন, তা অপূর্ণই থেকে যাবে ঠিক যেমনি জানা যায়নি তাঁর পবিত্র কবর কোথায় রয়েছে। তিনি কেবল সর্বকালের সেরা নারীই ছিলেন না। বলা হয় মহান আল্লাহর পর সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি হলেন মহানবী (সা) এবং তাঁর পর  সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি  হলেন আমিরুল মু'মিনিন আলী (আ)। আর এ দু'জনের পরই সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি হলেন হযরত ফাতিমা। তাই এমন ব্যক্তিদের মহিমা ও মহ্ত্ত্ব পুরোপুরি তুলে ধরা মহান আল্লাহর পর কেবল এই তিন শীর্ষ সৃষ্টির পক্ষেই সম্ভব। ইমাম হাসান ও হুসাইনসহ বিশ্বনবীর আহলে বাইতের ১১ জন সদস্য মা ফাতিমাকে তাঁদের জন্য আদর্শ বলে মনে করতেন।

ফাতিমা যাহরা (সা.আ) মানবজাতির চিরন্তন গৌরব ও আদর্শ মানুষের প্রতীক। তিনি মানব জাতির জন্য অসাধারণ ত্যাগ, বিশ্বস্ততা, অন্যায়ের ব্যাপারে আপোসহীনতা, সততা, দানশীলতা, ধৈর্য, চারিত্রিক পবিত্রতা, আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্টিসহ অনেক মহান স্বর্গীয় গুণের আদর্শ। স্নেহময়ী জননীর মত বিশ্বনবীর সেবা-যত্ন করা এবং বিপদের সময় তাঁর সহায়তায় এগিয়ে আসার জন্য মহীয়সী নারী ফাতিমা'র অন্য একটি উপাধি উম্মে আবিহা বা পিতার জননী। বিশ্বনবী (সাঃ) তাঁকে সর্বযুগের শ্রেষ্ঠ নারী বলে উল্লেখ করেছেন। রাসুলে খোদা বলেছেন, 'ফাতিমা  আমার দেহের অংশ, যা কিছু তাঁকে সন্তুষ্ট করে তা আমাকে সন্তুষ্ট করে এবং যা কিছু আমাকে সন্তুষ্ট করে তা আল্লাহকেও সন্তুষ্ট করে, আর যা কিছু ফাতিমা কে কষ্ট দেয়, তা আমাকে কষ্ট দেয়, আর যা আমাকে কষ্ট দেয়, তা আল্লাহকেও কষ্ট দেয়।' হযরত ফাতিমা বেহেশতে সর্ব প্রথম প্রবেশ করবেন বলে বিশ্বনবী- উল্লেখ করেছেন।

প্রিয় কন্যা ফাতিমাকে নিজের দেহের অংশ বলে মহানবী (সা) এটাও বুঝিয়েছেন যে পিতার রিসালতের অন্যতম কাণ্ডারি ছিলেন ফাতিমা। এই মহিয়সী নারীর অনন্য ত্যাগ-তিতিক্ষা ও সেবা না থাকলে ইসলাম বিলুপ্ত হয়ে যেত। রাসূলের পুত্র সন্তানরা মারা যাওয়ায় ইসলামের শত্রু কাফির-মুশরিক ও মুনাফিকরা  রাসূলকে ‘আবতার’ বা ‘লেজকাটা’ তথা নির্বংশ বলে গালি দিত। ফলে মনে মনে খুব কষ্ট পেতেন রাসূলুল্লাহ্ (সা.) । মহান আল্লাহ্ তাঁর এ কষ্ট দূর করার জন্য যে অমূল্য নেয়ামত তাঁকে দান করেন তিনিই হলেন হযরত ফাতিমা (সালামুল্লাহি আলাইহা) । এ উপলক্ষেই পবিত্র কুরআনের সুরা কাওসার নাযিল হয়।

মহান আল্লাহর নির্দেশে মহানবী (সা.) তাঁর কন্যা সন্তানের নাম রাখেন ফাতিমা।  এ সম্পর্কে মহানবী বলেন : ‘তাঁর নামকরণ করা হয়েছে ফাতিমা। কারণ, আল্লাহ তাঁকে ও তাঁর অনুসারীদের জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্ত রেখেছেন।’

আল্লামা ফখরুদ্দীন রাযী তাঁর তাফসীর গ্রন্থে বলেছেনহযরত ফাতিমার শানেই সুরা কাওসার নাযিল হয়েছে। তিনি এ প্রসঙ্গে আরও বলেনঅনেক অত্যাচার সত্ত্বেও হযরত ফাতিমার বংশধারা পৃথিবীতে টিকে আছেঅন্যদিকে বনি উমাইয়্যা ধ্বংস হয়ে গেছে।

ইসলামের যেসব শত্রু পুত্রসন্তান নিয়ে গর্ব বোধ করত তাদের কোন খবর আজ বিশ্ববাসী জানে না অথচ রাসূলের বংশধারা হযরত ফাতিমার মাধ্যমে কিয়ামত পর্যন্ত বজায় থাকবে। মহানবীর আহলে বাইতের  বংশধারায় জন্ম নেয়া ১১ জন পবিত্র ইমাম হযরত ফাতিমা তথা মহানবীরই বংশধর। এ বংশধারাতেই শেষ জামানায় ইমাম মাহদী (আ.) আবির্ভূত হবেন এবং তিনি সারা বিশ্বে আল্লাহর ধর্মকে প্রতিষ্ঠিত করবেন।

শ্রেষ্ঠ মহামানবী হযরত ফাতিমা  ছিলেন সব মানবীয় মহৎ গুণের আদর্শ আর এ জন্যেই তাঁর অনেক উপাধি ছিল যেমন, আস-সিদ্দিক্বা বা সত্য-নিষ্ঠ,আল-মুবারাকাহ বা বরকতপ্রাপ্ত,আত-ত্বাহিরা বা পবিত্র,আল-মারজিয়া বা আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্টআজ জাকিয়া বা সতীমুহাদ্দিসাহ বা হাদিসের বর্ণনাকারী,  আজ যাহরা বা দ্যুতিময় ইত্যাদি 

হযরত ফাতিমা সংসারের যাবতীয় কাজ নিজে করতেন। তিনি যাঁতার মাধ্যমে আটা তৈরি করতে করতে তাঁর হাতে ফোস্কা পড়ে যেত। আর সেই আটা দিয়ে রুটি তৈরি করে সেগুলো মদীনার দরিদ্রদের মধ্যে বিতরণ করতেন। হযরত ফাতিমার কাপড়ের পোশাকে থাকতো তালি পার্থিব কোন বস্তুই তাঁকে আকৃষ্ট করতে পারত না। আর এজন্যই রাসূল (সা.) তাঁকে বাতুল উপাধিতে ভূষিত করেছিলেন। 

হযরত ফাতিমা কাছে এলে দ্বীনের নবী নিজে উঠে দাঁড়িয়ে তাঁকে বরণ করে নিজের পাশে বসতে দিতেন। এ থেকে বোঝা যায় ফাতিমাকে সম্মান দেখানোর পেছনে রয়েছে ঐশীলোকের সুস্পষ্ট ইংগিত। হযরত ফাতিমা যাহরা পিতার শারীরিক বিদায়ের কারণে যতটা না দুঃখ পেয়েছিলেন তার চেয়েও বেশি ব্যথা পেয়েছিলেন পিতার আদর্শ তথা ইসলামের শিক্ষা ম্লান ও বিকৃত হয়ে পড়ার কারণে। দুনিয়া থেকে মহানবীর দৈহিক বিদায়ের মাত্র দুই মাস বা মতান্তরে ৯৫ দিন পর তেসরা জমাদিউস সানি ওফাত লাভ করেন হযরত ফাতিমা।

কোনো কোনো বর্ণনা অনুযায়ী রাজনৈতিক কারণে প্রভাবশালী মহলের হামলায় হযরত ফাতিমা আহত হয়ে শাহাদাত বরণ করেন। 

ফাতিমা সিদ্দিকা (সা. আ.) ঐশী পন্থায় অনেক জ্ঞান অর্জন করেছিলেন। ফাদাক ও মানজিল শীর্ষক তাঁর ভাষণ এই মহামানবীর অতুল জ্ঞান, খোদাভীরুতা এবং দূরদর্শিতাকেই তুলে ধরে। নবী-নন্দিনী বলেছেন, পৃথিবীতে তিনটি জিনিস আমার খুবই প্রিয়। আল্লাহর পথে ব্যয়, রাসূলে খোদার (সাঃ)র চেহারার দিকে তাকানো এবং কুরআন তিলাওয়াত। পবিত্র রআনের আয়াত শ্রবণ মুসলমানদেরকে মুক্তির তীরে পৌঁছে দেয়। তিনি আরও বলেছেন, নারীদের জন্য সর্বোত্তম বিষয় হচ্ছে, তারা যেন কোনো অচেনা পুরুষকে না দেখে এবং কোনো অচেনা পুরুষও তাদের না দেখে।

ফাতিমা বা তাঁর বংশধরদের কেউই ঐশী সম্মানকে পার্থিব ভোগের কাজে লাগান নি। আত্মত্যাগের বিশালত্বে ফাতিমা এবং তাঁর বংশধররা ইতিহাসে অনন্য। হজরত ফাতিমা (সা)  আদর্শ মানবাত্মার প্রতীক। তাঁর প্রতি জানাচ্ছি অশেষ দরুদ ও সালাম।#

পার্সটুডে/মু.আ.হুসাইন/মো.আবুসাঈদ/২৮

ট্যাগ