হযরত আলী (আ.) ও ফাতেমা (সা.আ.)'র বিয়েবার্ষিকী
(last modified Sat, 03 Sep 2016 10:22:26 GMT )
সেপ্টেম্বর ০৩, ২০১৬ ১৬:২২ Asia/Dhaka

রংধনু আসরের শিশুকিশোর বন্ধুরা, তোমরা নিশ্চয়ই মাঝে মধ্যে আত্মীয়-স্বজন কিংবা নিজের পরিবারের কারো না কারো বিয়েশাদী কিংবা বিয়ে বার্ষিকীর অনুষ্ঠানে অংশ নাও। এসব অনুষ্ঠানে খুব মজা হয় তাই না? সে যাই হোক, আজ তোমাদেরকে আমরা এমন এক বিয়ের কাহিনী শোনাব, যে বিয়ের অনুষ্ঠান কেবল দুনিয়াতেই নয় বরং আল্লাহর নির্দেশে আসমানেও তার আয়োজন হয়েছিল।

অভুতপূর্ব এ বিয়ের কথা শুনে তোমরা নিশ্চয়ই অবাক হচ্ছো! হ্যাঁ, অবাক হবারই কথা। তবে তোমরা যদি এ বিয়ের বর আর কনের নাম শোনো, তাহলে তোমাদের মনের খটকা এক নিমিষেই দুর হয়ে যাবে। তাহলে আর কথা না বাড়িয়ে সেই সৌভাগ্যবান বর ও কনের সাথে তোমাদের পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি।  

ঐতিহাসিক ওই বিয়ের বর ছিলেন আমিরুল মোমেনীন হযরত আলী (আ.) আর কনে ছিলেন নবী নন্দিনী হযরত ফাতিমাতুজ্জাহরা (সা.আ.) । আজ হচ্ছে এই মহান ব্যক্তিত্বদের বিয়ে বার্ষিকী। দ্বিতীয় হিজরীর ১ লা জিলহজ্জ ছিল তারা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। ঐতিহাসিক এ বিয়ে উপলক্ষে আমরা একটি বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছি। এতে হযরত আলী ও হযরত ফাতিমার সংক্ষিপ্ত পরিচয়, বিয়ে এবং তাদের দাম্পত্য জীবন সম্পর্কে খানিকটা আলোচনা করা হবে। এ অনুষ্ঠানে হযরত ফাতেমা (সা. আ.)-কে নিবেদিত একটি গান শোনানো জন্য অংশ নিয়েছে বাংলাদেশের ময়মনসিংহ শহরের এক বন্ধু।  

Image Caption

বন্ধুরা, তোমরা নিশ্চয়ই জানো যে, হযরত ফাতিমা (সা. আ.) ছিলেন রাসূলে খোদা (সা.) এর সবচেয়ে আদরের কন্যা। আরবী ২০শে জমাদিউস সানী হযরত খাদিজাতুল কোবরার গৃহ আলোকিত করে তিনি ধরার বুকে আগমন করেন। জন্মের পর রাসুল (সা.) তাঁর নাম রাখেন ফাতিমা। ফাতিমা নামটির অর্থ হলো সকল প্রকার অপবিত্রতা থেকে মুক্ত। অনেকগুলো গুণের অধিকারী ছিলেন বলে তাঁকে সিদ্দিকাহ বা সত্যবাদিনী, মুবারাকাহ বা বরকতময়ী, তাহেরাহ বা পবিত্রা, জাকিয়াহ বা পরিশুদ্ধতার অধিকারী, রাজিয়া বা সন্তুষ্ট, মার্জিয়া বা সন্তোষপ্রাপ্ত মুহাদ্দিসাহ বা হাদিস বর্ণনাকারী এবং যাহরা বা দীপ্তিময় উপাধীতে ডাকা হতো। এছাড়া তিনি উম্মুল হাসান, উম্মুল হুসাইন, উম্মুল মুহসিন, উম্মুল আয়েম্মা এবং উম্মে আবিহা নামেও পরিচিত ছিলেন।

আসরের এ পর্যায়ে তোমাদেরকে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি কল্পনার চেয়েও সুন্দর, সিংহের চেয়েও সাহসী, সমুদ্রের চেয়েও প্রশান্ত এবং অগাধ জ্ঞানের অধিকারী এক বিষ্ময় বালকের সাথে। যিনি ৬০০ খ্রিস্টাব্দের ১৩ই রজব পবিত্র কাবাগৃহে জন্মগ্রহণ করেন। জন্মের তিনদিন পর বালকটির মা ফাতিমা বিনতে আসাদ তার নাম রাখেন আলী। হযরত আলী (আ.) ছিলেন রাসুলেখোদার চাচা আবু তালিবের পুত্র। আবু তালিবের দুর্দিনে রাসুল (সা.) হযরত আলীকে ভরনপোষনের দায়িত্ব নেন। রাসুলখোদা যখন নবুয়্যত পান, তখন কিশোর আলীই তার প্রতি প্রথম ইমান আনেন। শুধু তাই নয়, নবীজিকে তিনি সবসময় তিনি ছায়ার মতো অনুসরণ করতেন। তার বীরত্ব, জ্ঞান গরিমা, ত্যাগ, প্রজ্ঞা ও সাহসিকতায় রাসুল (সা.) ছিলেন মুগ্ধ। আর সেজন্যই তিনি তার প্রাণপ্রিয় কন্যা হয়রত ফাতিমাকে আলীর সাথে বিয়ে দিয়েছিলেন।

বন্ধুরা, হযরত আলী ও মা ফাতিমার সংক্ষিপ্ত পরিচয় তো জানলে। এবার আমরা তাদের বিয়ে সম্পর্কে খানিকটা আলোচনা করবো। মক্কা থেকে মদীনায় হিজরত করার দু'বছর পর অনেকেই রাসুলের কাছে ফাতিমার বিয়ে প্রস্তাব পাঠালেন। কিন্তু রাসূলেখোদা কাউকে কিছু না বলে আল্লাহর সিদ্ধান্তের অপেক্ষা করছিলেন। অবশেষে হযরত আলী (আ.) তাঁর কাছে ফাতিমার বিয়ের প্রস্তাব পাঠালেন। মহানবী এতে খুশী হলেন। আলীর প্রস্তাব নিয়ে মহানবী কন্যা হযরত ফাতিমার কাছে এলেন। জিজ্ঞেস করলেন, "মা, তুমি কি আলীকে বিয়ে করতে রাজি আছো? আল্লাহ আমাকে এ নির্দেশ দিয়েছেন।"

হযরত ফাতিমা একথা শুনে মনে মনে খুশী হলেন। কিন্তু লজ্জায় মুখ ফুটে কিছু বলতে পারলেন না। কেবল মাথা নিচু করে সম্মতি জানালেন। মহানবী মেয়ের সম্মতি জানতে পেরে খুশীতে 'আল্লাহু আকবার' বলে উঠলেন।

এরপর দ্বিতীয় হিজরীর ১ জিলহাজ্জ রোজ শুক্রবার হযরত আলীর সাথে হযরত ফাতেমার শুভ বিবাহ সুসম্পন্ন হয়। এ বিবাহ অনুষ্ঠানে সকল আনসার ও মুহাজির উপস্থিত ছিলেন। বিয়ের অনুষ্ঠানে ভাষণ দিতে গিয়ে মহানবী (সাঃ) সাহাবীদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন,আল্লাহর আদেশে আমি ফাতেমার সাথে আলীর বিয়ে দিচ্ছি এবং তাদের বিয়ের মোহরানা বাবত ধার্য করেছি চারশ মিসকাল রৌপ্য। এরপর মহানবী (সা.) হযরত আলীকে জিজ্ঞেস করলেন, হে আলী তুমি কি এতে রাজী আছ? হযরত আলী সম্মতি জানিয়ে বললেন, হ্যাঁ, আমি রাজী। তখন নবীজী দু'হাত তুলে তাঁদের জন্য এবং তাঁদের অনাগত বংশধরদের সার্বিক কল্যাণের জন্য দোয়া করলেন।

বন্ধুরা, তোমরা হয়তো শুনেছো যে, বিয়েতে বরের পক্ষ থেকে কনেকে দেনমোহর পরিশোধ করা ফরজ। আর হযরত আলী (আ.) নিজের ঢাল বিক্রি করে তা পরিশোধ করেছিলেন। সে যাই হোক, তাদের এই বিয়ের অনুষ্ঠানটি কিন্তু খুবই সাদামাটা ছিল। তাই হযরত উম্মে আয়মন এসে মহানবীর কাছে দুঃখ করে বললেন, সেদিনও তো আনসারদের এক মেয়ের বিয়ে হল। সে অনুষ্ঠানে কত জাঁকজমক ও আনন্দ ফুর্তি হল! অথচ বিশ্ববাসীর নেতা মহানবীর মেয়ের বিয়ে কিনা এতো সাদাসিধেভাবে হচ্ছে! উম্মে আয়মনের কথা শুনে রাসুল (সা.) বললেন, এ বিয়ের সাথে পৃথিবীর কোন বিয়ের তুলনাই হয় না। পৃথিবীতে এ বিয়ের কোন জাঁকজমক না হলেও আল্লাহর আদেশে আসমানে এ বিয়ে উপলক্ষে ব্যাপক জাকজমক হচ্ছে। বেহেশতকে অপুর্ব সাজে সাজানো হয়েছে। ফেরেশতারা, হুর-গেলমান সবাই আনন্দ করছে। বেহেশতের গাছপালা থেকে মণি-মুক্তা ঝরছে! একথা শুনে বিয়ের অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকলের মুখ খুশীতে ভরে উঠল। #

পার্সটুডে/আশরাফুর রহমান/৩

 

ট্যাগ