ঈদুল ফিতরের বিশেষ আয়োজন: এলো চির-খুশির ঈদ!!
(last modified Mon, 25 May 2020 08:44:36 GMT )
মে ২৫, ২০২০ ১৪:৪৪ Asia/Dhaka

ঈদ মানে আনন্দ, ঈদ মানে খুশির বন্যা। ঈদ যেন অফুরন্ত আনন্দ এবং সাম্য আর শান্তির সর্বোচ্চ পরশ। ঈদ মানে একতা ও মহামিলন। তাই আসুন সবাই বলে উঠি: ঈদ মুবারক! ঈদ মুবারক, আহা! যদি ঈদের আনন্দের বন্যায় ভেসে যেতো করোনাভাইরাস ও সব অন্যায়! কিন্তু করোনা ও অন্যায়-অবিচার যাচ্ছে না কেন?

আমার মনে হয় আমাদের অনেকের কানে অথবা স্বভাবে সমস্যা আছে! তাই যখন বলা হয় ঘুষ খেয়ো না! ঘুষ খাওয়া অন্যায় কেউ কেউ শোনেন ঘুষ খাওয়া ‘অন্য-আয়’! যখন বলা হয় এই করোনার মধ্যে ‘ঘরেতে থাকুন’ তখন ওই শ্রেণীর লোকগুলো শোনে যে-ঘুরতে থাকুন! যাক্ গে সেসব, আসল কথায় আসি। প্রতিবছর অশেষ খোদায়ি রহমত, বরকত ও মাগফিরাতসহ অজস্র কল্যাণে-ভরা রমজানের পর পবিত্র ঈদুল ফিত্‌র্‌ আমাদের জীবনে আনন্দ, সীমাহীন প্রেম প্রীতি ও কল্যাণকে স্থায়ী করার বার্তা নিয়ে আসে। প্রকৃত ঈদ মুছে দেয় সব মলিনতা ও কলুষতা। প্রকৃত ঈদ দূর করে হিংসা-বিদ্বেষ এবং আবদ্ধ করে মানুষকে প্রীতির বন্ধনে। আর যে মহান আল্লাহ আমাদের দান করেছেন এমন পবিত্র মাস ও আনন্দময় ঈদ সেই সর্বশক্তিমান ও পরম করুণাময় আল্লাহকে ধন্যবাদ জানাতে আসুন সবাই বলি:

সুবহানআল্লাহ ওয়া আলহামদুলিল্লাহ! ওয়া লাইলাহা ইল্লাল্লাহু ও আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ। অর্থাৎ মহান আল্লাহ পবিত্র! সব প্রশংসা তাঁরই। আর মহান আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই এবং তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ! তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ বা সবচেয়ে বড় এবং প্রশংসা বলতে যা কিছু আছে তার সবই মহান আল্লাহর প্রাপ্য!

বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা) বলেছেন: শাওয়াল মাস শুরু হলে এর প্রথমেই মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে একজন আহ্বায়ক ডাক দিয়ে বলেন: হে মুমিনরা, এ দিন ভোর বেলায় পুরস্কার নেয়ার জন্য ছুটে যাও। অর্থাৎ রমজানের খোদায়ি পুরস্কার দেয়া হচ্ছে বলে তা গ্রহণ করতে ছুটে যাও। মহানবী (সা) আরও বলেছেন, যখন ঈদুল ফিতরের সন্ধ্যা- যার নাম পুরস্কারের সন্ধ্যা-তা সমাগত হয় তখন মহান আল্লাহ ইবাদাতকারী বা আমলকারীদেরকে কোনো হিসাব বা সংখ্যার তোয়াক্কা না করেই ব্যাপক পুরস্কার দিয়ে থাকেন। ঈদুল ফিতরের দিন ভোরবেলায় মহান আল্লাহ ফেরেশতাদেরকে শহরগুলোতে পাঠান। তারা পৃথিবীতে নেমে আসে এবং জনপদগুলোর অলি- গলির মুখে ও চলাচলের পথে দাঁড়িয়ে বলেন (মানুষ ও জিন ছাড়া আল্লাহর সব সৃষ্টি তাদের ওই কথা শুনতে পায়): হে মুহাম্মাদের উম্মত! তোমাদের দয়ালু প্রতিপালকের দিকে রওনা হও তথা ঈদের জামাতে শরিক হতে বের হও। কারণ তিনি তথা দয়ালু প্রতিপালক তোমাদের ব্যাপক বা বিপুল পুরস্কার দিবেন এবং তোমাদের গোনাহগুলো ক্ষমা করবেন। মুসলমানরা যখন ঈদের জামাতে শরিক হওয়ার জন্য সেদিকে যেতে থাকে তখন মহান আল্লাহ ফেরেশতাদের বলেন: হে আমার ফেরেশতারা! যেসব কর্মী তাদের কাজ সম্পন্ন করে তাদের পুরস্কার কী? ফেরেশতারা বলেন: তাদের পুরস্কার হল পরিপূর্ণ পারিশ্রমিক বা প্রতিদান দেয়া। তখন মহান আল্লাহ বলেন: হে আমার বান্দারা! যা খুশি তা চাও আমার কাছে! আমার সম্মান ও ঔজ্জ্বল্যের বা জালালের কসম খেয়ে বলছি, আজ এই ঈদের জামাতের সমাবেশে তোমরা দুনিয়া ও পরকালের জন্য যা যা চাইবে তার সবই আমি তোমাদের দান করব।  উল্লেখ্য, মহান আল্লাহর কাছে নিষিদ্ধ তথা অবৈধ বা হারাম কিছু চাইলে তিনি তা কখনও দান করবেন না!

আসুন মহানবীর (সা.) এই হাদিস শোনার পর আমরা মহান আল্লাহর প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে আবারও বলি: সুবহানআল্লাহ ও আলহামদুলিল্লাহ! আসুন এবার বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা) ও তাঁর পবিত্র আহলে বাইতের শানেও দরুদ পাঠাতে বলি:

আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদ ওয়া আলে মুহাম্মাদ! অর্থাৎ মুহাম্মাদ ও তাঁর পবিত্র বংশধরদের প্রতি মহান আল্লাহর দরুদ বা প্রশংসা বর্ষিত হোক।

আমরা যারা আজ জন্মগতভাবে মুসলমান এবং যারা অমুসলিম পরিবারের সদস্য হয়েও গবেষণা করে ইসলামের সৌন্দর্যে আকৃষ্ট হয়ে পবিত্র ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন ও এ ধর্মের নীতিমালার অনুসরণ করছেন তারা সবাই মহানবী (সা) এবং তাঁর পবিত্র আহলে বাইত ও মহানবীর ন্যায়পরায়ণ সাহাবিদের দ্বীনী সংগ্রাম-সাধনা ও প্রচেষ্টার কাছে ঋণী। তাই আজ এ ঈদের দিনে এবং অন্য সময়ও বিশেষ শ্রদ্ধাভরে তাদের স্মরণ করাটা জরুরি। মহানবী (সা) বলেছেন: সব কিছুর একটি ভিত্তি রয়েছে। আর ইসলাম ধর্মের ভিত্তি হল আমার ও আমার আহলে বাইতের প্রতি ভালবাসা। আর এ জন্যই মহানবী এবং তাঁর আহলে বাইতের প্রতি সালাম দেয়া ও দরুদ পড়া ছাড়া নামাজ পরিপূর্ণ হয় না।

অন্যদিকে পবিত্র রমজানের রোজা কবুল ও পরিপূর্ণ হয় না ফিতরা নামক জাকাত দেয়া ছাড়া। আর ঈদের নামাজ ও জামাত হল রমজানের পরিপূর্ণতার সর্বোচ্চ স্তর। ইসলামের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিত্বরা বলে থাকেন ঈদুল ফিতর প্রকৃতপক্ষে তাদের জন্যই আনন্দের যাদের রোজা ও রোজার মাসে রাত জেগে-করা ইবাদতগুলো কবুল হয়েছে! একমাস ধরে যে মুসলমান নিজেকে নামাজ ও রোজার মাধ্যমে পরিশুদ্ধ করতে পারেনি এবং এভাবে নফসের বিরুদ্ধে জিহাদ তথা নিজ ইচ্ছার অসংযমী প্রবণতাকে দমনের জিহাদে জয়ী হয়নি ঈদের দিনে তার আনন্দ প্রকাশের কোনো অর্থ হয় না।

ঠিকই বলেছেন প্রকৃত ঈদুল ফিতর তখনই ঈদুল ফিতর হয়ে ওঠে যখন মানুষ প্রকৃত মানুষের স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্যগুলো বা ফিতরাত অর্জন করবে। অনেকের কাছেই ঈদের আনন্দ মানে আধ্যাত্মিকতার পরশবিহীন হৈ-হুল্লোড় এবং এমনকি অশোভন নাচ-গানও ঈদের অংশ যা অনেক টেলিভিশন বা রেডিও থেকে প্রচার করা হয়! সংস্কৃতির নামে এসব অপসংস্কৃতি আসলে অসৎ আনন্দ বা অসৎ বিনোদনের ব্যবস্থা মাত্র! আর অসৎ আনন্দ ও পবিত্র বেদনার মধ্যে যে কোনো একটিকে বেছে নিতে বলা হলে মুমিন বা  মুসলমান পবিত্র বেদনাকেই বেছে নিবেন।

ঈদের রাতে তথা ঈদের সকাল হওয়ার আগেই তাই প্রকৃত মুমিনদের পুরো রাত কাটে ইবাদত ও মহান আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতাজনিত অশ্রুসিক্ত মুনাজাতে। ইসলামী বর্ণনা অনুযায়ী এ রাতের ইবাদতের গুরুত্ব প্রায় শবে কদরের রাতের ইবাদতের মতই গুরুত্বপূর্ণ। কৃতজ্ঞতা ও ভক্তির প্রকাশের মাধ্যম হল হৃদয়ের গভীর থেকে উঠে আসা মুনাজাত ও মর্মের অশ্রু। তাই আসুন ঈদের দিনেও আমরা শুনি মুনাজাত বিষয়ক নজরুলের গান : রোজ হাশরে আল্লাহ আমার কোরোনা বিচার-এর অংশ-বিশেষ।    

ফিতরার বিষয়ে অনেকের মধ্যেই অনেক অস্পষ্টতা দেখা যায়। ঈদের জামাআতে শরিক হওয়ার আগেই ফিতরা পরিশোধ করা উত্তম। আপনার প্রধান খাদ্যগুলোর প্রায় তিন বা সাড়ে তিন কেজি'র আর্থিক মূল্যই হচ্ছে একজনের জন্য প্রদেয় সর্বনিম্ন ফিতরা। ইসলামী ঐক্য প্রতিষ্ঠা ও সাম্রাজ্যবাদীদের জুলুমের বিরুদ্ধে সংগ্রাম রমজানের সাফল্যের ও ঈমানের আরেকটি বড় শর্ত। পবিত্র ঈদের জামাত এই ইসলামী ঐক্যের একটি মাধ্যম। তাই বলা হয়েছে, যতটা সম্ভব মুসলিম নারীরাও যেন ঈদের জামাতে শরিক হয় যাতে ইসলামের শত্রুরা মুসলমানদের আধিক্য দেখে তাদের সমীহ করে।

এবারে বাংলাদেশের জাতীয় কবি নজরুলের ঈদের চাঁদ কবিতার কিছু অংশ শোনা যাক্‌।

আল্লার ঋণ শোধ করো, যদি বাঁচিবার থাকে সাধ ;

আমাদের বাঁকা ছুরি আঁকা দেখো আকাশে ঈদের চাঁদ!

তোমারে নাশিতে চাষার কাস্তে কী রূপ ধরেছে, দেখো,

চাঁদ নয়, ও যে তোমার গলার ফাঁদ! দেখে মনে রেখো!

প্রজারাই রোজ রোজা রাখিয়াছে, আজীবন উপবাসী,

তাহাদেরই তরে এই রহমত , ঈদের চাঁদের হাসি।

শুধু প্রজাদের জমায়েত হবে আজিকার ঈদগাহে,

কাহার সাধ্য, কোন ভোগী রাক্ষস সেথা যেতে চাহে?

ভেবো না ভিক্ষা চাহি মোরা, নহে শিক্ষা এ আল্লার,

মোরা প্রতিষ্ঠা করিতে এসেছি আল্লার অধিকার!.....

..... দারিদ্র্য-কারবালা-প্রান্তরে মরিয়াছি নিরবধি,

একটুকু কৃপা করনি, লইয়া টাকার ফোরাত নদী।

কত আসগর মরিয়াছে, জান, এই বাপ মা-র বুকে?

সকিনা মরেছে, তোমরা দখিনা বাতাস খেয়েছ সুখে!

শহিদ হয়েছে হোসেন, কাসেম, আসগর, আব্বাস,

মানুষ হইয়া আসিয়াছি মোরা তাঁদের দীর্ঘশ্বাস!

তোমরাও ফিরে এসেছ এজিদ সাথে লয়ে প্রেত-সেনা,

সেবারে ফিরিয়া গিয়াছিলে, জেনো, আজ আর ফিরিবে না।

এক আল্লার সৃষ্টিতে আর রহিবে না কোনো ভেদ,

তাঁর দান কৃপা কল্যাণে কেহ হবে না না-উমেদ !

ডাকাত এসেছে জাকাত লইতে, খোলো বাক্‌সের চাবি!

আমাদের নহে, আল্লার দেওয়া ইহা মানুষের দাবি!

বাঁচিবে না আর বেশিদিন রাক্ষস লোভী বর্বর,

টলেছে খোদার আসন টলেছে, আল্লাহু-আকবর!

সাত আসমান বিদারি আসিছে তাঁহার পূর্ণ ক্রোধ।

জালিমে মারিয়া করিবেন মজলুমের প্রাপ্য শোধ।

ঈদের দিনে মা-বাবাসহ জীবিত ও মৃত আত্মীয় স্বজনদের জন্য দোয়া করা, কবর জিয়ারত করা এবং গোসল করে সুগন্ধি মেখে ঈদের জামাতে যাওয়া ধার্মিক মুসলমানের অন্যতম প্রধান কর্মসূচি। ঈদের জামাতে যাওয়ার আগেই কিছু খাওয়া সুন্নাত বা মুস্তাহাব। আর ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দিনে রোজা রাখা হারাম। ঈদের জামাতের নামাজের পর যে খুতবা বা বক্তব্য রাখা হয় ইমামের পক্ষ থেকে তা শোনা খুবই জরুরি। সাধারণত যোগ্য ইমামদের দেয়া এইসব খুতবায় মুসলমানদের জন্য নানা করণীয় বিষয়, মুসলিম উম্মাহর সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা ও এরই আলোকে দিক-নির্দেশনা থাকে।

এবার ঈদুল ফিতর উদযাপন করা হচ্ছে বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের ব্যাপক বিস্তারের মত মহাসংকটের মধ্যে। করোনায় আক্রান্ত হয়ে যেসব মুসলমান দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন আমরা তাদের জন্য মহান আল্লাহর ক্ষমা ও দয়া কামনা করছি। বিশেষ করে করোনা মোকাবেলা করতে গিয়ে যেসব স্বেচ্ছাসেবী, ডাক্তার ও নার্স জীবন দিয়েছেন তাদেরকে যেন মহান আল্লাহ শহীদ হিসেবে গণ্য করেন সেই দোয়া করছি।

করোনার উদ্ভবের কারণ নিয়ে নানা বিতর্ক শোনা যায়। কেউ বলেন তা প্রাকৃতিক ও কেউ বলেন তা ল্যাবরেটরি থেকে ইচ্ছাকৃতভাবে বা দুর্ঘটনাবশত ছড়ানো হয়েছে। উদ্ভবের কারণ হিসেবে পরিবেশ বিপর্যয়ের কথাও বলা হয়। যাই হোক্ মহান আল্লাহ মানবজাতিকে রক্ষা করুন করোনাভাইরাস হতে। তবে করোনার চেয়েও বড় ভাইরাস হল শির্ক, কুফরি, কপটতা, ধর্মান্ধতা, কুসংস্কার, সাম্রাজ্যবাদ, উপনিবেশিকতা এবং মানব-রচিত সব খোদাদ্রোহী মতবাদ। তাই আমরা দেখছি ইহুদিবাদী ইসরাইল নামক ভাইরাসটি মুসলমানদের দুর্বলতা, অনৈক্য ও একদল আরব মীরজাফর বা মুনাফিক শাসকদের বিশ্বাসঘাতকতার সুযোগে ৭২ বছর পর্যন্ত টিকে থাকতে পেরেছে! যাদের উচিত ছিল ইসরাইল বিরোধী সংগ্রামে অর্থ ও অস্ত্র যোগানো সেইসব মুসলিম শাসকরা তা না করে বিভেদ ছড়াচ্ছেন ইয়েমেন, সিরিয়া ও লিবিয়ার মত অঞ্চলে!

হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী প্রকৃত ঈদ হচ্ছে সেইদিন যেই দিনে আমরা কোনো পাপ করি না। ধনী, দরিদ্র ও বঞ্চিতদের জন্য ঈদ তাই পরীক্ষার। ধনীর জন্য পরীক্ষা হল সে তার সম্পদকে দরিদ্রের সেবায় কাজে লাগালো কিনা। অন্যদিকে দরিদ্রের পরীক্ষা হল দারিদ্র সত্ত্বেও সৎ থাকা এবং সব অবস্থায় আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট থেকে ইসলামী জ্ঞান ও   মহান আল্লাহর প্রকৃত প্রতিনিধিত্বের মর্যাদা অর্জন করা। এ ধরনের ব্যক্তিরাই হচ্ছেন ঈদের দিনের প্রকৃত বীর এবং এ রকম ব্যক্তিদের সংগ্রামের মধ্য দিয়েই বিশ্বব্যাপী ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার পথ তথা ইমাম মাহদির আগমনের পথ সুগম হবে।

মুসলমানদের পবিত্র ঈদগুলো তখনই পুরোপুরি সফল বা আসল ঈদ হবে যখন তারা ঈমানের জোরে ভেতর থেকে এতটাই শক্তিশালী হবে যে একদিকে তারা সব ধরনের পাপের প্রলোভনকে নাকচ করতে পারবে  এবং অন্যদিকে সাম্রাজ্যবাদী ও তাগুতি শক্তির হুমকিকে উপেক্ষা করে মুক্ত করতে পারবে সবগুলো মজলুম জাতিকে। আজ ফিলিস্তিন, কাশ্মির, ইয়েমেন, মিয়ানমার এবং অন্যান্য অঞ্চলের মজলুম ও বঞ্চিত জনগণের কাছে ঈদের দিনে এটাই সবচেয়ে বড় প্রত্যাশা ।

আলোচনার এ পর্যায়ে বাংলাদেশের জাতীয় কবি নজরুল ইসলামের কৃষকের ঈদ শীর্ষক কবিতার কিছু অংশের আবৃত্তি শোনা যাক্

বেলাল! বেলাল! হেলাল উঠেছে পশ্চিমে আসমানে,

লুকাইয়া আছ লজ্জায় কোন্‌ মরুর গোরস্তানে!

হেরো ঈদগাহে চলিছে কৃষক যেন প্রেত-কঙ্কাল

কশাইখানায় যাইতে দেখেছ শীর্ণ গোরুর পাল?

রোজা এপথটার করেছে কৃষক অশ্রু-সলিলে হায়,

বেলাল! তোমার কন্ঠে বুঝি গো আজান থামিয়া যায়!

থালা ঘটি বাটি বাঁধা দিয়ে হেরো চলিয়াছে ঈদগাহে,

তির-খাওয়া বুক, ঋণে-বাঁধা-শির, লুটাতে খোদার রাহে।

জীবনে যাদের হররোজ রোজা ক্ষুধায় আসে না নিদ

মুমূর্ষু সেই কৃষকের ঘরে এসেছে কি আজ ঈদ?

একটি বিন্দু দুধ নাহি পেয়ে যে খোকা মরিল তার

উঠেছে ঈদের চাঁদ হয়ে কি সে শিশু-পাঁজরের হাড়?

আসমান-জোড়া কাল কাফনের আবরণ যেন টুটে

এক ফালি চাঁদ ফুটে আছে, মৃত শিশুর অধর-পুটে।

কৃষকের ঈদ! ঈদগাহে চলে জানাজা পড়িতে তার,

যত তকবির শোনে, বুকে তার তত উঠে হাহাকার!

মরিয়াছে খোকা, কন্যা মরিছে, মৃত্যু-বন্যা আসে

এজিদের সেনা ঘুরিছে মক্কা-মসজিদে আশেপাশে।

কোথায় ইমাম? কোন সে খোৎবা পড়িবে আজিকে ঈদে?

চারিদিকে তব মুর্দার লাশ, তারই মাঝে চোখে বিঁধে

..... কোথা সে শক্তি-সিদ্ধ ইমাম, প্রতি পদাঘাতে যার

আবে-জমজম শক্তি-উৎস বাহিরায় অনিবার?

আপনি শক্তি লভেনি যে জন, হায় সে শক্তিহীন

হয়েছে ইমাম, তাহারই খোৎবা শুনিতেছি নিশিদিন!

দীন কাঙালের ঘরে ঘরে আজ দেবে যে নব তাকিদ

কোথা সে মহান শক্তি-সাধক আনিবে যে পুন ঈদ?

ছিনিয়া আনিবে আসমান থেকে ঈদের চাঁদের হাসি

ফুরাবে না কভু যে হাসি জীবনে, কখনও হবে না বাসি!

সমাধির মাঝে গণিতেছি দিন, আসিবেন তিনি কবে?

রোজা এফতার করিব সকলে, সেই দিন ঈদ হবে।

 

মুসলমানদের জন্য সব ক্ষেত্রে সক্রিয় নেতার গুরুত্ব অপরিসীম। এ প্রসঙ্গে কবি নজরুল আজাদ শীর্ষক কবিতায় লিখেছেন:

আজও তেমনি জমায়েত হয় ঈদগাহে মসজিদে,

ইমাম পড়েন খোৎবা, শ্রোতার আঁখি ঢুলে আসে নিদে।

যেন দলে দলে কলের পুতুল শক্তিশৌর্যহীন,

নাইকো ইমাম, বলিতে হইবে ইহারা মুসলেমিন।

জরারে পৃষ্ঠে বহিয়া বহিয়া জীবন যাবে কি তব,

জীবন ভরিয়া রোজা রাখি ঈদ আনিবে না অভিনব?

সবাইকে জানাচ্ছি আবারও ঈদ মুবারক।#

 

পার্সটুডে/মু.আমির হুসাইন/মো.আবুসাঈদ/২৫

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ