বাংলাদেশে আগাম বন্যায় হাওরের ফসলি জমি তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা
(last modified Thu, 07 Apr 2022 12:26:22 GMT )
এপ্রিল ০৭, ২০২২ ১৮:২৬ Asia/Dhaka
  • বাংলাদেশে আগাম বন্যায়  হাওরের ফসলি জমি তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা

সুনামগঞ্জে আরো বাঁধ ভেঙে তাহিরপুর উপজেলার ঘনিয়াকুড়ি হাওরের ও দিরাই উপজেলার জারুলিয়ার হাওরের ফসল তলিয়ে গেছে।

কৃষকরা স্বেচ্ছাশ্রমে চেষ্ট চালিয়েও সোনালি ফসল রক্ষা করতে পারছেন না। কৃষকদের অভিযোগ, হাওরের অধিকাংশ ফসল রক্ষা বাঁধে ফাটল রয়েছে। ফলে হুমকির মুখে রয়েছে জেলার ছোট-বড় সব হাওরের বাঁধ।

কৃষকদের অভিযোগ, নির্মাণকাজে অনিয়মের কারণেই জেলার সব হাওরের বাঁধ হুমকির মুখে রয়েছে। ফলে একের পর এক বাঁধ ভাঙছে আর ফসল ডুবছে। এতে কৃষকরা নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছেন।

ছায়ার হাওরে শাল্লা অংশে ৬ হাজার ৪০০ হেক্টর, কিশোরগঞ্জের ইটনার ধনপুর ও নেত্রকোনার খালিয়াজুরীর কৃষ্ণপুর অংশে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার হেক্টর জমিতে উচ্চফলনশীল জাতের বোরো আবাদ করা হয়েছে। শুধু ছায়ার হাওর নয়, শনির হাওর, মাটিয়ান হাওর, দেখার হাওরসহ জেলার সব হাওর রয়েছে ফসলডুবির আশঙ্কায়। দুশ্চিন্তায় নির্ঘুম সময় পার করছেন ওই সব হাওরের কৃষকরা। বাহাড়া ইউপি চেয়ারম্যান বিশ্বজিৎ চৌধুরী নান্টু বলেন, বাঁধে চোরাই গর্ত  আছে। সেখান থেকে পানি ঢুকছে। পানি উন্নয়ন বর্ডের লোকজন বলছেন  ইঁদুর আর কাঁকড়ার  গর্ত  থাকায় বাধ চুঁইয়ে পানি প্রবেশ করছে। শাল্লা পাউবোর উপসহকারী প্রকৌশলী (এসও) আব্দুল কাইয়ুম জানান, নদীর পানি দিন দিন বেড়ে হাওরে ঢুকছে। আমাদের আওতার বাইরে যেখানে বাঁধ নেই সেই জায়গা দিয়ে পানি প্রবেশ করে হাওর তলিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া শাল্লার ৯০ নং প্রকল্পের বাঁধে ফাটল ধরেছে। বাঁধে চোরাই লিকেজ থাকায় কয়েকটি জায়গা দিয়ে পানি প্রবেশ করছে। তবে উপজেলা প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও এলাকাবাসীসহ বাঁধ রক্ষায় কাজ করছে। আশা করছি বাঁধটি টিকে থাকবে।

স্থানীয় কৃষকরা আভিযোগ করছেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তাদের দুর্নীতির কারণেই উপজেলাবাসীর একমাত্র বোরো ফসল অকালবন্যায় তলিয়ে যাচ্ছে। তাদের গাফিলতিতে উপজেলার চারটি হাওরের বোরো ফসল এরই মধ্যে পানির নিচে। তাই কৃষকদের ক্ষতিপূরণের দায়ভার পাউবোকে নিতে হবে।

নেত্রকোনা পানি বৃদ্ধি অব্যাহত

এদিকে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের চেরাপুঞ্জিতে ভারী বর্ষণের কারণে নেত্রকোনা জেলার খালিয়াজুরী উপজেলার ধনু নদে পানি অব্যাহতভাবে বাড়ছে। বৈরী আবহাওয়ার কারণে সৃষ্ট প্রচণ্ড ঢেউয়ে কীর্তনখোলা বাঁধ আশঙ্কাজনক অবস্থায় রয়েছে। ফলে স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধ রক্ষায় শত শত কৃষকের চলছে প্রাণান্তকর চেষ্টা। জেলার হাওরবেষ্টিত উপজেলা খালিয়াজুরী। একমাত্র ফসলের ওপর নির্ভরশীল এ হাওরাঞ্চলের কয়েক লাখ মানুষ। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ধনু নদের পানি বৃদ্ধির কারণে খালিয়াজুরী উপজেলার কীর্তনখোলা বাঁধে ফাটল ধরেছে। ফসল রক্ষায় ফাটল সারাতে জেলা প্রশাসন, পাউবো, উপজেলা প্রশাসন, জনপ্রতিনিধিসহ হাওর অঞ্চলের শত শত কৃষক স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে বাঁধ রক্ষায় দিনরাত কাজ করছেন। বাঁধের ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলোয় বাঁশ, বালির বস্তা দিয়ে ঝুঁকিমুক্ত করার চেষ্টা চলছে। এছাড়া কয়েকটি ফসল রক্ষা বাঁধ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।

নেত্রকোনা জেলা প্রশাসক কাজি মো. আবদুর রহমানের নেতৃত্বে পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী এমএল সৈকত, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফখরুজ্জামান জুয়েল, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক এফ এম মোবারক আলী, খালিয়াজুরী উপজেলা নির্বাহী অফিসার এএইচএম আরিফুল ইসলামসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা কীর্তনখোলা বাঁধ পরিদর্শন করেছেন।

এ সময় শত শত কৃষক অভিযোগ করেন নির্মাণকাজে অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে হাওরের বাঁধ পানির চাপে ভেঙে যাচ্ছে। খালিয়াজুরী উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান সুমন তালুকদার বলেন, আগাম বন্যায় প্রতিনিয়ত ফসলহানির আশঙ্কায় থাকি আমরা। চাকুয়া ইউনিয়নের কীর্তনখোলা বাঁধটি ভেঙে গেলে ফসল হারিয়ে এলাকার হাজার হাজার কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। এলকাবাসীর পক্ষ থেকে বাঁধটি স্থায়ীকরণের দাবি জানাচ্ছি।

নেত্রকোনা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী এমএল সৈকত জানান, কীর্তনখোলা ও নাউটানা এলাকায় আশা বাঁধের ফাটল দেখা দিয়েছিল, তা আমরা মেরামত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। ধনু নদের পানির বৃদ্ধি এখনো অব্যাহত রয়েছে। তবে বিপত্সীমার দুই সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জেলা প্রশাসক কাজি মো. আবদুর রহমান বলেন, বৈরী আবহাওয়ার কারণে সৃষ্ট ঝুঁকি নিরসনে সম্মিলিত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। খালিয়াজুরীতে ফসল রক্ষায় একটি পাকা বাঁধ নির্মাণ প্রস্তাব গ্রহণ করার মাধ্যমে এ অঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগ নিরসনে স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আজ বৃহস্পতিবার (০৭ এপ্রিল) পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার চন্দ্রসোনার থাল হাওরের ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ পরিদর্শন করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, প্রথম শ্রেণির ২২ জন ঠিকাদারকে তাদের কাজে অনিয়ম ও দুর্নীতির জন্য আমরা কালো তালিকাভুক্ত করেছি। হাওরের বাঁধের কাজে অনিয়মের ক্ষেত্রে কোনো ছাড় নেই।

তিনি বলেন, সুনামগঞ্জে হাওরে যেহেতু ফসল ডুবে গেছে সেজন্য আমরা রোববার মন্ত্রণালয়ে গিয়ে উচ্চ পর্যায়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করবো। সেই কমিটি সুনামগঞ্জে এসে সুষ্ঠু তদন্ত করবে। সেই তদন্ত অনুযায়ী হাওরের বাঁধের কাজে যদি কোনো সরকারি কর্মকর্তা কিংবা পিআইসির কেউ অনিয়মে জড়িত থাকে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সিরাজগঞ্জে পানি বৃদ্ধিতে তলিয়ে যাচ্ছে নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের ফসল

সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তলিয়ে যাচ্ছে নদী তীরবর্তী বিস্তীর্ণ  নিম্নাঞ্চলের ফসল। গত কয়েকদিন যাবৎ উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে যমুনাসহ অভ্যন্তরীণ নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে নদীর তীরবর্তী প্রায় ৮শ বিঘা নিম্নাঞ্চলের বোরো ধান ডুবে গেছে।

জেলার সদর, কাজীপুর, শাহজাদপুর ও চৌহালী উপজেলার চরাঞ্চলের নিম্নাঞ্চলের জমির কাঁচা ও আধাপাকা ধান সবচেয়ে বেশি ডুবেছে। যমুনা, করতোয়া, বড়াল ও হুড়াসাগর নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় সদরের কাওয়াকোলা, ছোনগাছা, সয়দাবাদ ইউনিয়ন, কাজিপুরের মুরসুরনগর, মেছরা, রতনকান্দি, নাটুয়াপাড়া ইউনিয়ন, শাহজাদপুরের কৈজুরি, সোনাতনী, গালা ও জালালপুর ইউনিয়নের চরাঞ্চলের নিচু জমির কাঁচা ও আধাপাকা ধান সবচেয়ে বেশি ডুবে যাওয়ায় কৃষকদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। অনেকে পানি থেকে কাঁচা ধান কেটে গরুকে খাওয়াচ্ছেন। অনেকে আবার আধাপাকা ধান মাড়াই করে কিছুটা চাল বের করার চেষ্টা করছেন।

এছাড়া পানি বৃদ্ধির কারণে নদী তীরবর্তী তিল, বাদাম ও কাউন ডুবে কৃষকের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ বিষয়ে সানাতনী গ্রামের জিয়া উদ্দিন বলেন, হঠাৎ নদীতে পানি বৃদ্ধির ফলে আমাদের এ এলাকার অন্তত ১১৫ বিঘা জমির ধান ডুবে গেছে। এ ধান দিয়ে আমরা বছরের অর্ধেক সময় খাদ্যের চাহিদা মিটিয়ে থাকি।

এদিকে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের পানি পরিমাপক (গেজ রিডার) আব্দুল লতিফ জানান, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে গত ১০-১২ দিন হলো যমুনায় পানি বাড়ছে। গত ২৪ ঘন্টায় যমুনা নদীর সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা বাঁধ পয়েন্টে ১০ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। সিরাজগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) আ জ ম আহসান শহিদ সরকার জানান, হঠাৎ যমুনায় পানি বৃদ্ধির ফলে জেলার নদী বেষ্টিত চার উপজেলার প্রায় ৮০০ বিঘা কালো বোরো ধান ডুবে গেছে। #

পার্সটুডে/আবদুর রহমান খান/বাবুল আখতার/৭

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ