ঈদে ঘরমুখো মানুষ:
ঈদ উপলক্ষ্যে ভাড়া নৈরাজ্য বন্ধে সেফটি ফাউন্ডেশনের আহ্বান: তীব্র যানজটের আশঙ্কা
আসন্ন ঈদযাত্রায় যে-কোনো মূল্যে সড়ক ও নৌ-পরিবহনের ভাড়া নৈরাজ্য ও চাঁদাবাজি বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন। সোমবার (২৫ এপ্রিল) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, এ বছর ঈদুল ফিতর উদযাপনে ৮০ থেকে ৯০ লাখ মানুষ রাজধানী থেকে বাড়ির উদ্দেশে যাত্রা করবে, যা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। মাত্র পাঁচদিনে এত বিপুল সংখ্যক যাত্রী সুষ্ঠুভাবে পরিবহন করার মতো যানবাহন আমাদের নেই। ফলে অন্যান্য বারের চেয়ে এবার যানবাহনের সংকট ও নৈরাজ্য বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে।
এছাড়াও ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গগামী মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে অতি ধীরগতিতে সংস্কার ও সড়ক প্রশস্তকরণ কাজের কারণে তীব্র যানজট সৃষ্টির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। দেশের অন্যান্য সড়ক-মহাসড়কের বহু স্থানেও বেহাল দশা রয়েছে। ফলে ঈদযাত্রায় মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়বে।
এতে আরও বলা হয়, এই নাজুক অবস্থায় সড়কে ও নৌ-পথের ঘাটে-ঘাটে চাঁদাবাজির কারণে ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্য সৃষ্টি হবে, যা ঈদযাত্রাকে অসহনীয় করে তুলবে। এরই মধ্যে ঈদযাত্রাকে কেন্দ্র করে সড়ক ও নৌ-পথে চাঁদাবাজ সিন্ডিকেট সক্রিয় হয়ে উঠেছে।
অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা যায়, শুধু ঈদ মৌসুমেই কয়েক হাজার কোটি টাকার রাজনৈতিক চাঁদাবাজি হয়। দুর্ভাগ্যজনক যে, এসব চাঁদাবাজির সঙ্গে অনেক পুলিশ সদস্যও সম্পৃক্ত থাকে। মূলত চাঁদাবাজির কারণেই সড়ক ও নৌ-পরিবহনের শৃঙ্ক্ষলা পুরোপুরি ভেঙ্গে পড়ে এবং সড়কে ভয়াবহ যানজটের সৃষ্টি হয়।
এদিকে ঈদে ঘরমুখো মানুষের চাপ সামাল দিতে সোমবার (২৫ এপ্রিল) দুপুরে একযোগে খুলে দেওয়া হয়েছে ঢাকা টাঙ্গাইল মহাসড়কের সফিপুর ও নাওজোর ফ্লাইওভার। এতে ঈদ যাত্রায় উত্তরবঙ্গগামী যাত্রীদের দুর্ভোগ কমবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ফ্লাইওভার প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের উপ-ব্যবস্থাপক সাখাওয়াৎ হোসেন ও সহকারী প্রকৌশলী মো. নুরুজ্জামান জানান, সফিপুর ও নাওজোর ফ্লাইওভারের কাজ এখনো পুরোপুরি শেষ হয় নি। গার্ডার ও স্লাপের কাজ শেষ হয়েছে। ঈদে ঘরমুখো মানুষকে স্বস্তি দিতে ফ্লাইওভার দুটি খুলে দেওয়া হয়েছে।
অপরদিকে, যানবাহনের চাপে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ফেরি ঘাটে দেখা দিয়েছে যানজট। এতে ভোগান্তিতে পড়েছে হাজার হাজার যাত্রী ও যানবাহনের চালকরা। নদী পার হওয়ার অপেক্ষায় দৌলতদিয়া ফেরি ঘাটে আটকে আছে ৬ শতাধিক যানবাহন। যার মধ্যে পণ্যবাহী ট্রাকের সংখ্যাই বেশি।
সোমবার (২৫ এপ্রিল) বেলা ১১টা পর্যন্ত দৌলতদিয়া জিরো পয়েন্ট থেকে গোয়ালন্দ বাজার পর্যন্ত ৮ কিলোমিটার এলাকা পর্যন্ত যানবাহনের লম্বা সারি তৈরি হয়। এতে এক সারিতে যাত্রীবাহী বাস ও অন্য সারিতে পণ্যবাহী ট্রাক ঠায় দাঁড়িয়ে আছে।
বিআইডব্লিওটিসি দৌলতদিয়া ঘাটের ব্যবস্থাপক শিহাব উদ্দিন জানান, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে বর্তমানে ১৭ টি ফেরি দিয়ে পারাপার করা হচ্ছে। চলাচলকারী ১৯ টি ফেরির মধ্যে ২ টি বিকল হয়েছে।
তিনি জানান, ঈদ উপলক্ষে দুই একদিনের মধ্যে আরও ২ টি ফেরি বহরে যুক্ত হবে। সব মিলিয়ে ২১ টি ফেরি চলাচলের কথা রয়েছে।
এদিকে ঈদে ঘরমুখো মানুষের যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে ঈদের দিনসহ তার আগে ও পরে মোট ৭ দিন অপচনশীল পণ্যবাহী ট্রাক এই ঘাট দিয়ে পারাপার বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
অপরদিকে বাংলাদেশ রেলওয়েতে যুক্ত হচ্ছে নতুন ৪৬টি ইঞ্জিন। ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে আগামী ২৭ এপ্রিল এসব ইঞ্জিনের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ৪৬টি ইঞ্জিনের মধ্যে মিটারগেজ ৩০টি ও ব্রডগেজ ১৬টি। মিটারগেজ ইঞ্জিনের মধ্যে ৩০টি বাংলাদেশে এসে পৌঁছেছে। আর ৪০টি ব্রডগেজের মধ্যে ১৬টি এসেছে এবং যা এরই মধ্যে পরীক্ষামূলক চলাচলও সম্পন্ন হয়েছে।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, নতুন ১৬টি ব্রডগেজ লোকমোটিভ পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়েতে যোগ করা হবে। যার মধ্যে সাতটি পশ্চিমাঞ্চলে হস্তান্তরও করা হয়েছে। বাকিগুলোও পর্যায়ক্রমে সেখানে যোগ করা হবে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
এ প্রসঙ্গে রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (রোলিং স্টক) মো. মঞ্জুর-উল-আলম চৌধুরী জানান, মোট ৪৬টি লোকোমোটিভ বহরে যুক্ত হচ্ছে। এতে করে আমাদের ট্রেন পরিচালনার স্বক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। অত্যাধুনিক প্রযুক্তির এসব ইঞ্জিন যুক্ত হলে যাত্রীদের ভোগান্তি কমবে, বাড়বে সেবার মান।#
পার্সটুডে/আবদুর রহমান খান/বাবুল আখতার/২৫
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।