বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের ক্ষোভ
আশুলিয়ায় শিক্ষককে পিটিয়ে হত্যা, অভিযুক্ত শিক্ষার্থীর বাবা আটক
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার উপকণ্ঠে সাভারের আশুলিয়ায় একজন শিক্ষককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত স্কুলছাত্র আশরাফুল ইসলাম জিতুর বাবা উজ্জ্বল হাজীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গতকাল মঙ্গলবার মধ্যরাতে কুষ্টিয়ার কুমারখালী থেকে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। অভিযুক্ত স্কুলছাত্র এখনো পলাতক।
উল্লেখ্য, গত শনিবার সাভার উপজেলার আশুলিয়ায় হাজী ইউনুছ আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক উৎপল কুমার সরকারকে ক্রিকেট স্টাম্প দিয়ে পিটিয়ে মারাত্মকভাবে আহত করে একই প্রতিষ্ঠানের দশম শ্রেণির ছাত্র আশরাফুল ইসলাম জিতু। গত সোমবার ভোরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই শিক্ষক মারা যান।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রভাষক উৎপল কুমার স্কুল ও কলেজের শৃঙ্খলা কমিটির সভাপতি ছিলেন, দায়িত্বের অংশ হিসেবেই উচ্ছৃঙ্খল ছাত্রদের তাঁর শাসন করতে হতো, তাদের অন্যায়-অপকর্মের জন্য বিচারের মুখোমুখি করতে হতো। সংশ্লিষ্ট ছাত্রটির বিরুদ্ধে শিক্ষক উৎপল কুমারের শৃঙ্খলাজনিত পদক্ষেপ নেওয়ার কারণেই সে বিক্ষুব্ধ ছিল।
এদিকে, আশুলিয়ায় হাজী ইউনুছ আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক উৎপল কুমার সরকারকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় আজ (বুধবার) দ্বিতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ করেছেন প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে কলেজের সামনের সড়কে মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল ও কালো ব্যাজ ধারণ কর্মসূচি পালন করেন তাঁরা।
মানববন্ধন থেকে শিক্ষক–শিক্ষার্থীরা ছয়টি দাবির কথা জানিয়েছেন। সেগুলো হলো—মামলার প্রধান আসামি স্কুলছাত্রকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার, অজ্ঞাতনামা আসামিদের গ্রেপ্তার, প্রধান আসামি স্কুলছাত্রের পরিবারের পলাতক সদস্যদের আইনের আওতায় আনা, নিহত শিক্ষকের পরিবারকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ, স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে স্থানীয় ও বাইরের শিক্ষার্থী হিসেবে ভেদাভেদ দূর করতে আইন প্রণয়ন এবং কিশোর গ্যাং ও কিশোর অপরাধ দূর করতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের ক্ষোভ
এদিকে, দেশের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষকদের ওপর আক্রমণ বন্ধ করার দাবি জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক।
আজ এক যৌথ বিবৃতিতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক বলেছে, পদ্মা সেতু উদ্বোধন-উৎসবের ডামাডোলে ঢাকা পড়ে গেছে অন্তত দুটি ঘটনা। এ দুই ঘটনা শিক্ষাঙ্গনের জন্য অশনিসংকেত। দুটি ঘটনায় শিক্ষক হিসেবে আমরা যারপরনাই ক্ষুব্ধ ও মর্মাহত। নড়াইলে এক কলেজ অধ্যক্ষের গলায় পরানো হয়েছে জুতার মালা। আর সাভারে এক স্কুলশিক্ষককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে তাঁরই এক ছাত্রের বিরুদ্ধে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, নড়াইলের মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) বহিষ্কৃত মুখপাত্র নূপুর শর্মার সমর্থনে ফেসবুকে পোস্ট দেয়। তাতে ওই কলেজের শিক্ষার্থীরা উত্তেজিত হয়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসের কাছে ছাত্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানায়। স্বপন কুমার পরিস্থিতি বুঝে অভিযুক্ত ছাত্রকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
এরপর গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে অধ্যক্ষ ছাত্রের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। এতে ছাত্রদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। তখন স্থানীয় বাসিন্দারাও কলেজে গিয়ে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান। স্বপন কুমার বিশ্বাসের গলায় জুতার মালা পরানো হয়েছিল হ্যান্ডমাইকে ঘোষণা দিয়ে। ১৮ জুনের সে ঘটনার সময় কলেজ ক্যাম্পাসে উপস্থিত ছিলেন নড়াইলের জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও পুলিশ সুপার (এসপি)। তাঁদের সঙ্গে ছিল ২০০ থেকে ২৫০ পুলিশ সদস্য।
বিবৃতে বলা হয়, নড়াইলের ঘটনায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় কারাগারে রয়েছে ছাত্র আর অধ্যক্ষ নিরাপত্তার কারণে এ-বাড়ি ও-বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে নিজেকে রক্ষা করছেন। তাঁকে পদচ্যুত করে আরেকজন শিক্ষককে দায়িত্ব দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে।#
পার্সটুডে/আবদুর রহমান খান/আশরাফুর রহমান/২৯
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।