সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২২ ১৮:১১ Asia/Dhaka
  • পরিবেশগত ছাড়পত্রের আবেদন করেনি এমন ট্যানারি বন্ধের সিদ্ধান্ত

সাভারের চামড়াশিল্প নগরীর যেসব কারখানা কখনো পরিবেশগত ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করেনি এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনা (কমপ্লায়েন্স) নিশ্চিত করার সম্ভাবনা নেই, সেসব ট্যানারি বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। গতকাল জাতীয় সংসদ ভবনে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়।   

বৈঠকে পরিবেশ মন্ত্রণালয় ছাড়াও শিল্প মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

সভায় উল্লেখ করা হয়, সাভারের চামড়াশিল্প নগরীতে দৈনিক ৪০ হাজার ঘনমিটার বর্জ্য উৎপাদিত হয়। সেখানে ২৫ হাজার ঘনমিটার বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সক্ষমতা আছে। কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ব্যবস্থা নেই। গত বছরের আগস্টে দূষণের জন্য শিল্পনগরী আপাতত বন্ধ রাখার সুপারিশ করেছিল সংসদীয় কমিটি। কিন্তু তা কার্যকর হয়নি। এরপরও দূষণ বন্ধে একাধিকবার সুপারিশ করেছিল কমিটি। এ বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে এবার বৈঠকে শিল্প এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও সচিবকে সংসদীয় কমিটির বৈঠকে অংশ নেওয়ার আমন্ত্রণ জানানো হয়।

বৈঠক শেষে সাবের হোসেন চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ট্যানারি সাভারে স্থানান্তরের উদ্দেশ্য ছিল দূষণ রোধ করা। কিন্তু এখন সাভারের ধলেশ্বরী মৃতপ্রায়। চামড়া শিল্প নগরীতে কঠিন বর্জ্য পরিশোধনের কোনো ব্যবস্থা নেই। শিল্প এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয় তাদের ব্যর্থতা স্বীকার করেছে। সাবের হোসেন চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, সবার সম্মতিতে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে।

'বৈঠকে আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত হয়েছে আগামী মাসে ট্যানারি কারখানাগুলোকে তিনটি ভাগে ভাগ করে একটি তালিকা চূড়ান্ত করা হবে। একটি ভাগে থাকবে যেসব প্রতিষ্ঠান নিজেরা বর্জ্য শোধনাগার তৈরি করেছে, আরেকটি ভাগে থাকবে যেসব প্রতিষ্ঠান কখনোই পরিবেশ ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করেনি এবং যাদের কমপ্লায়েন্ট হওয়ার সম্ভাবনা নেই। বাকী প্রতিষ্ঠানগুলো থাকবে তৃতীয় ভাগে।'

সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, দ্বিতীয় ভাগে যেসব প্রতিষ্ঠান থাকবে সেগুলো দ্রুত বন্ধ করে দেওয়া হবে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এসব প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিল করবে। তাদের সব সুবিধা বাতিল করা হবে। তৃতীয়ভাগে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোকে কমপ্লায়েন্ট হওয়ার জন্য ছয় মাসের সময় দেওয়া হবে। এ ছাড়া বর্জ্য পরিশোধনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা ছাড়া কিভাবে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে, এর জন্য দায়ীদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। 

আবু নাসের খান

এ প্রসঙ্গে 'পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন' পবা'র চেয়ারম্যান আবু নাসের খান সংসদীয় কমিটির সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে রেডিও তেহরানকে বলেন, চামড়া রপ্তানির জন্য আন্তর্জাতিক বাজার হারাবার ঝুঁকি থেকে বাঁচতে হলে হলে ট্যানারীগুলিকে পরিবেশগত বাধ্যবাধকতা মেনে চলতে হবে এবং প্রতিটি কারখানাকে নিজস্ব বর্জ্য শোধনাগার স্থাপন করতে  হবে। একই সাথে সরকারকে কেন্দ্রীয়ভাবে মান নিয়ন্ত্রণ লাবরেটরি এবং কঠিন বর্জ্য শোধনাগার অবিলম্বে স্থাপন করতে হবে।

দু'মাস আগে সাভারের চামড়া শিল্প নগরী পরিদর্শন শেষে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেছেন, 'অপরিশোধিত তরল বর্জ্য নদীতে অপসারণ প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বক্তব্যে তারা সন্তুষ্ট হতে পারেনি। তিনি বিশেষভাবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রতি নির্দেশ দেন যেন রেশনিংয়ের মাধ্যমে ২৫ হাজার কিউবিক মিটার অর্থাৎ সক্ষমতার অধিক তরল বর্জ্য যেন কোনোভাবেই উৎপন্ন না হয় সেটি নিশ্চিত করতে হবে।

এ সময় চামড়া শিল্প নগরীর কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার (সিইটিপি) পরিচালনার দায়িত্বে থাকা সিনিয়র প্রসেস ইঞ্জিনিয়ার সঞ্জয় ঠাকুর নদী কমিশনকে জানান  সিইটিপি থেকে কোনো অপরিশোধিত তরল বর্জ্য নদীতে অপসারণ করা হয় না।

তবে এই কর্মকর্তার এই দাবি ভিত্তিহীন উল্লেখ করে সভায় উপস্থিত পরিবেশ অধিদপ্তরের (ঢাকা অঞ্চল) উপ-পরিচালক জহিরুল ইসলাম তালুকদার কমিশনকে জানান, সিইটিপির আউটলেটের পানিতে যে পরিমাণ দ্রবীভূত অক্সিজেন থাকার কথা দাবি করা হচ্ছে, পরিবেশ অধিদপ্তরের ল্যাবে পরীক্ষায় এর মাত্রা স্ট্যান্ডার্ড মানের চেয়ে অনেক কম পাওয়া গেছে। এ ছাড়াও, বিভিন্ন প্যারামিটারে এর মান পরীক্ষা করে দুষনের মাত্রা নির্দিষ্ট মাত্রার চেয়ে বেশি পেয়েছেন। এ সময় উভয়পক্ষের উপস্থাপিত সিইটিপির তরল পরীক্ষার ফলাফলেও গরমিল দেখা গেছে।#

পার্সটুডে/আবদুর রহমান খান/আশরাফুর রহমান/২৮

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ