মার্চ ১৮, ২০২৩ ১৮:২১ Asia/Dhaka

আল্লাহর ঘরের মেহমান হয়ে পবিত্র হজ করতে যাওয়ার নিয়ত করা অনেকেই এবার প্রাক নিবন্ধন থেকে নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। আবার অনেকে হজ করতে না গিয়ে ওমরায় যেতে উৎসাহিত হচ্ছেন বর্তমান পরিস্থিতির কারণে। ক্ষোভ প্রকাশ করছেন মুসল্লীরা। কারণ চলতি বছর সরকারি-বেসরকারি উভয় প্যাকেজেই গত বছরের চেয়ে খরচ বেড়েছে প্রায় দেড় লাখ টাকা।

২০২২ সালে হজের সর্বনিম্ন প্যাকেজ ছিল ৫ লাখ ২২ হাজার ৭৪৪ টাকা। চলতি বছর হজে যেতে নিবন্ধন শুরু হয় গত ৮ ফেব্রুয়ারি। ২৩ ফেব্রুয়ারি নিবন্ধনের শেষ সময় থাকলেও তা বাড়িয়ে ২৮ ফেব্রুয়ারি করা হয়। এই সময়ের মধ্যে কোটার বিপরীতে কম সংখ্যক হজযাত্রী নিবন্ধিত হওয়ায় ফের ৭ মার্চ পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়। এর পরও কোটার অর্ধেক যাত্রী নিবন্ধন না করায় ফের ১৬ মার্চ পর্যন্ত সময় বাড়ায় মন্ত্রণালয়। কোটা পূরণ না হওয়া আগামী ২১ মার্চ পর্যন্ত চতুর্থ দফা সময় বাড়ানো হয়েছে।

হজ প্যাকেজের মূল্য কমাতে রিট করা হয় হাইকোর্টে। সেখানে বাংলাদেশ বিমান ও সৌদি এয়ারলাইন্স ছাড়াও যেকোনো এয়ারলাইন্সে টিকিট কেটে হজে যাওয়ার নির্দেশনা চাওয়া হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ও সৌদি এয়ারলাইন্স ছাড়া অন্য কোনো বিমানে হজ যাত্রী যাওয়ার সুযোগ না রাখা ও হজযাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ৬০ হাজার টাকা খরচ বেশি নেওয়ার ঘটনাকে অমানবিক বলে মন্তব্য করেন হাইকোর্ট। এছাড়া ধর্ম মন্ত্রণালয়কে একটি অথর্ব মন্ত্রণালয় বলেও মূল্যায়ন করেন আদালত। এ সময় হজের খরচ বাড়ার বিষয় নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন হাইকোর্ট।

এদিকে, বিমান ভাড়া কমানোসহ হজ প্যাকেজ থেকে সব ধরনের ভ্যাট-ট্যাক্স প্রত্যাহার এবং ভর্তুকি দিয়ে হজযাত্রীদের খরচ সাড়ে চার লাখ টাকায় নিচে আনার আহ্বান জানিয়েছে ইসলামী মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম পরিষদ। ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধনও করেছে সংগঠনটি।

ইসলামী মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম পরিষদ সভাপতি শহিদুল ইসলাম কবির বলেছেন, ২০ মার্চের মধ্যে যদি এ বিষয়ে সন্তোষজনক সিদ্ধান্ত নেয়া না হয়, তবে আগামী ২২ মার্চ প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দেবে তারা।

এত কিছুর পরেও হজের প্যাকেজমূল্য কমাতে অপারগতার কথাই জানালেন ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মতিউল ইসলাম। কিন্তু হজ্জ এজেন্সীজ অব বাংলাদেশ হাবের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মাওলানা ইয়াকুব শরাফতী মনে করেন বিশেষজ্ঞদের সহযোগিতায় হজের বিমান ভাড়া নির্ধারণ করা হলে এই সংকটে র সৃষ্টি হতো না।

হজের ভাড়া বৃদ্ধির সাত কারণ জানিয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের দেয়া প্রতিবেদনে মুদ্রার বিনিময় হার বৃদ্ধির তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাপকভাবে ডলার ও রিয়ালের বিনিময় হার বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২২ সালে হজের সময় ডলারের বিনিময় হার ছিল ৮৫ টাকা ১০ পয়সা এবং এ বছর তা নির্ধারণ করা হয়েছে ১০৬ টাকা। যা গত বছরের থেকে ২৪ দশমিক ৫৬ শতাংশ বেশি। যার ফলে বিমানের ভাড়া বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমান হজের সর্বমোট ভাড়া ১ লাখ ৯৭ হাজার ৭৯৭ টাকা। এর মধ্যে মূল ভাড়া ১ লাখ ৮৩ হাজার ৯১০ টাকা (১৭৩৫ ডলার) এবং ট্যাক্স ১১ হাজার ২৩৭ টাকা। প্রতিবেদনে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বিমানের জ্বালানি তেলের মূল্য গত বছরের তুলনায় প্রায় ১৯ শতাংশ বৃদ্ধি পাওয়ায় স্বভাবতই বিমানের ভাড়া বৃদ্ধি পেয়েছে।

কিন্তু এই যুক্তির বিরোধিতা করেছেন এভিয়েশন খাত বিশেষজ্ঞ ও  দ্য মনিটর সম্পাদক ওয়াহিদুল হক। তিনি বলেন, জ্বালানির দাম বৃদ্ধি অন্যান্য দেশেও হয়েছে, সেসব দেশের এয়ারলাইন্সের ভাড়া এত বাড়ানো হয়নি।#

পার্সটুডে/বাদশাহ রহমান/আশরাফুর রহমান/১৮

ট্যাগ