১০ বছর পরে জামায়াতে ইসলামীর আনুষ্ঠানিক সমাবেশ
সন্ত্রাস-নাশকতা নয়, জামায়াত ইসলামী শান্তিতে বিশ্বাসী: ডা. তাহের
জামায়াত ইসলামী নিজে থেকে কোনো সংঘাত, সংঘর্ষের ঘটনা ঘটায় না। জামায়াত সন্ত্রাস, নাশকতা, হামলা, বিশৃঙ্খলা, সংঘর্ষে বিশ্বাস করে না। জামায়াত ইসলামী শান্তিতে বিশ্বাসী। সেভাবে তারা দল গঠন করেছে। এমন মন্তব্য করেছেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের।
আজ (শনিবার) রাজধানী ঢাকায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে এক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। দীর্ঘ ১০ বছর পরে তিন দফা দাবিতে এ সমাবেশের আয়োজন করে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতে ইসলামী।
জামায়াতে ইসলামীর এই শীর্ষস্থানীয় নেতা বলেন, শান্তির সুবাতাস ছড়াতে কর্মীদের তৈরীর মাধ্যমে দল গঠন করেছে। বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামী দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে তৃতীয় দল দাবি করে তিনি বিএনপি, আওয়ামী লীগসহ অন্যদের জামায়াত সম্পর্কে জানার অনুরোধ করেন।
দলটির কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, বাংলাদেশকে সোনার দেশ গড়তে অনেকেই চেয়েছিলেন। কিন্তু সেই লোকের অভাব থাকায় যোগ্য মানুষ তৈরি করতে ছাত্র সংগঠন গড়েছিল জামায়াত ইসলামী। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, সেই সংগঠনের কারো বিরুদ্ধে কি ইভটিজিং, মাদকের কোন অভিযোগ কেউ দিতে পারবেন? তিনি বলেন, সেই সংগঠনের তরুণরা দেশের এখন স্মার্ট প্রজন্ম।
সমাবেশের অনুমতি দেওয়ায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, নির্বাচন হচ্ছে সবার জন্য লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করা। গণতন্ত্র মানে নির্বাচন। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না উল্লেখ করে ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, আওয়ামী লীগের লজ্জা থাকা উচিত। কারণ লজ্জা হলো ঈমানের অঙ্গ। যেটা তাদের নেই।
আগামী নির্বাচনে কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে দেয়ার দাবি জানিয়ে অবিলম্বে গ্রেফতাকৃত নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবি জানান ডা. তাহের। নইলে পরিস্থিতি বেসামাল হওয়ারও ইঙ্গিত দেন তিনি।
একই সাথে চলতি মাসের মধ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম সহনীয় পর্যায়ে আনার আহ্বান করেন তিনি।
ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের অভিযাগ করে বলেন, আওয়ামী লীগের স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমান তার তিন বছরের মধ্যে দেশের গণতন্ত্র হত্যা করেছিলেন। তাই এদের হাতে কখনো গণতন্ত্র ঠিক থাকে না।
আওয়ামী লীগ কুত্তার মাথায় টুপি পড়িয়েছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, এরা মানুষের ওপর জুলুম করে, অধিকার কেড়ে নেয়। ১৩ সালে সমাবেশ করেছিলাম, আবার ১০ বছর পর আবার অনুমতি দিয়েছেন, কিন্তু প্রাচীর মধ্যে আটকে রেখেছেন। আমরা চেয়ে ছিলাম রাজপথে সমাবেশ করবো। তা আপনারা করতে দেননি।
এর পর জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত নায়েবে আমির অধ্যাপক মজিবুর রহমানের পাঠানো লিখিত বক্তব্য শোনানো হয়।
জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম বলেন, জামায়াত ইসলামীকে সব সময় সন্ত্রাসী দল হিসেবে প্রচার করে সরকার। কিন্তু জামায়াত ইসলামী একটি সুশৃঙ্খল দল। জামায়াত ইসলামী জাতীয় সংসদ প্রতিনিধিত্ব করেছে, অথচ সেই দলের নেতাকর্মীদের আপনারা সন্ত্রাসী বলে থাকেন, এটা অন্যায়।
বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামীর প্রচার সম্পাদক মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, জামায়াতের নিবন্ধন সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন। কোনো অজু হাতে অনিবন্ধিত দল বলা হয়? প্রশ্ন রাখেন তিনি।
বক্তৃতাকালে ফাঁসি হওয়া নেতাদের স্মরণ করে বক্তব্যে জামায়াত ইসলামীর নেতারা বলেন, দেশের প্রতিটি শিক্ষা প্রাঙ্গণে তাদের প্রবেশ নিশ্চিত করতে হবে। সকল রাজবন্দী নেতাসহ আলেম ওলামাদের মুক্তি দিতে হবে। আগামী নির্বাচন নির্দলীয় সরকারের অধীনে দিতে হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালের করতে হবে। জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন ফিরে দিতে হবে। তাদের দলীয় প্রতীক, মানুষের ইনসাফের প্রতীক দাড়িপাল্লা ফিরে দেয়ারও দাবি জানান বক্তারা। সমাবেশ শেষ ছাত্রশিবিরেরর পক্ষ থেকে দায়িত্বরত পুলিশ ও সাংবাদিকদের ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয়।
প্রায় এক দশক পর ঢাকায় সমাবেশ করার অনুমতি পায় জামায়াতে ইসলাম। পুলিশের অনুমতি নিয়ে দলটি সর্বশেষ সমাবেশ করেছিল ২০১৩ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি।
তিনটি শর্তে জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখাকে ঢাকার ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশনের মিলনায়তনে সমাবেশের মৌখিক অনুমতি দেয়া হয়। এসব শর্তের মধ্যে রয়েছে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা যাবে না, যানজট সৃষ্টি করা যাবে না এবং মিলনায়তনের ভেতরেই সমাবেশ করতে হবে।
প্রথম দফায় গত ৫ জুন সমাবেশ করতে চাইলেও সে অনুমতি মেলেনি পুলিশের তরফ থেকে। তারিখ পরিবর্তন করে ১০ জুন বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেটে সমাবেশের অনুমতি চায় জামায়াতে ইসলামী। তবে পুলিশ সেখানে অনুমতি না দিয়ে ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউটে সমাবেশের অনুমতি দেয়।#
পার্সটুডে/বাদশাহ রহমান/আশরাফুর রহমান/১০