মৌসুমের শেষ দিকেও কমছে না ইলিশের দাম, ব্যবসায়ীরা জানালেন ৩ কারণ
(last modified Tue, 12 Sep 2023 11:42:23 GMT )
সেপ্টেম্বর ১২, ২০২৩ ১৭:৪২ Asia/Dhaka

বাংলাদেশে পদ্মার ইলিশের স্বাদ আর গন্ধের খ্যাতি সর্বত্রই। প্রতি বছর জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর মাসে দেশে ইলিশের প্রচুর জোগান থাকে। ফলে বাজারে দামও কম থাকে।

সারা বছর ইলিশের দাম নিম্ন মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের নাগালের বাইরে থাকলেও এ সময়ে তা সাধ্যের মধ্যে চলে আসে। কিন্তু এ বছর ইলিশের আকালে দাম এখনো বেশ চড়া। ফলে মৌসুম শেষ হতে চললেও দাম এখনো মধ্যবিত্তেরও নাগালের বাইরে। আর নিম্নবিত্তরা ইলিশের কথা চিন্তাও করতে পারছে না।

মাছ ব্যবসায় সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তিন কারণে এবার ইলিশের আকাল চলছে। প্রথমত ইলিশ ঝাঁক ধরে চলাফেরা করে। তারা ডিম দেওয়ার জন্যই সাধারণত নদীতে আসে। কিন্তু নদীর মোহনায় অনেক বেশি চর পড়ায় ইলিশের ঝাঁক ঢুকতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এতে ইলিশ নদীতে না ঢুকে সাগরেই ফিরে যাচ্ছে।

দ্বিতীয়ত: নদীদূষণ। এখন আমাদের নদীর পানি নানা দূষণে আক্রান্ত। কলকারখানাসহ নানা ধরনের বর্জ্যে পানি দূষিত হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে পলিথিনসহ নানা অপচনশীল দ্রব্যাদি নদীর পানিতে ঘুরপাক খাচ্ছে। কিন্তু ইলিশ মাছ অত্যন্ত সংবেদনশীল। তারা দূষিত নদীতে আসতে চায় না।

তৃতীয়ত: জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব পড়েছে আমাদের দেশেও। এর ফলে পানির লবণাক্ততা বাড়ছে। উষ্ণ হচ্ছে তাপমাত্রা। যার ফলে ইলিশের প্রজনন মৌসুমও পরিবর্তন হচ্ছে। এতে আগে জুলাই মাস থেকে ইলিশ ধরা পড়লেও এখন আর এই সময়ে মাছ নদীতেই আসছে না।

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের নদী কেন্দ্র, চাঁদপুরের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. আমিরুল ইসলাম মনে করেন, মৌসুম কিন্তু এখনো শেষ হয়ে যায়নি। তাই বলা যাচ্ছে না, ইলিশ কম। তবে এ বছর রেইনফল দেরিতে হয়েছে। এর কারণ হিসেবে জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি কারণ হিসেবে ধরা হচ্ছে।

তবে নদীতে বেশি ইলিশ ধরা না পড়লেও সাগরে মোটামুটি ধরা পড়ছে। কিন্তু নদীর ইলিশ সুস্বাদু হওয়ায় ভোক্তাদের কাছে এ ইলিশের চাহিদা বেশি। চাহিদার কারণে অনেক মাছ ব্যবসায়ীই সাগরের ইলিশকে নদীর বলে চড়া দাম হাঁকছেন। এক কেজি বা এর একটু বেশি ওজনের ইলিশ এখন ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা অন্যান্য বছরের এ সময় ১০০০ থেকে ১২০০ টাকার মধ্যে থাকত।

রাজধানীর বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এক কেজি ওজনের ইলিশের দাম এখন ১৫০০ টাকা, দেড় কেজি ২০০০ থেকে ২২০০ টাকা। ছোট ইলিশের মধ্যে ৮০০ গ্রামের ইলিশের দাম ১৩০০ থেকে ১৪০০ টাকা, ৭০০ গ্রাম ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা, ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রামের ইলিশ ৭০০ থেকে ৯০০ টাকা এবং ৩০০ থেকে ৪০০ গ্রামের ইলিশের কেজি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে।

বাজারের ক্রেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, প্রাকৃতিক উৎস থেকে পাওয়া মাছের কেন এত দাম হবে? এ মাছে চাষের খরচ নেই। নেই ফিড বা মেডিসিনের। তার পরও নদী বা সমুদ্র থেকে জাল টেনে ধরে আনা ইলিশের দাম মাংস থেকেও অনেক বেশি।

মৎস্য অধিদপ্তর সূত্র জানায়, পৃথিবীর দুই-তৃতীয়াংশের অধিক ইলিশ উৎপাদনের মাধ্যমে বাংলাদেশ ইলিশের দেশ হিসেবে বিশেষভাবে পরিচিতি লাভ করেছে। ‘বাংলাদেশ ইলিশ’ শীর্ষক ভৌগোলিক নিবন্ধন সনদ (জিআই সনদ) প্রাপ্তিতে নিজস্ব পরিচয় নিয়ে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের ইলিশ সমাদৃত। বাংলাদেশের মোট উৎপাদিত মাছের ১২ শতাংশ আসে শুধু ইলিশ থেকে, যা দেশের জিডিপির এক শতাংশের অধিক। দেশের সাত লাখ লোক প্রত্যক্ষভাবে এবং ২৫ লাখ লোক পরোক্ষভাবে ইলিশ আহরণ, বিক্রয় ও বিপণনসহ বিভিন্ন কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত। #

পার্সটুডে/বাদশা রহমান/আশরাফুর রহমান/১২

ট্যাগ