জানুয়ারি ২৪, ২০২৪ ১৬:১৭ Asia/Dhaka

বাংলাদেশে এবার আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। সরকারি গুদামেও রয়েছে চালের পর্যাপ্ত মজুত। বাজারেও পণ্যটির কোনো ঘাটতি নেই। তারপরও ভরা মৌসুমে মিল মালিকদের কারসাজিতে অস্থির চালের বাজার। গেল দুই সপ্তাহ ধরে মিল পর্যায় থেকে ৫০ কেজির বস্তাপ্রতি ৩০০ টাকা দাম বাড়িয়ে চাল বিক্রি করা হচ্ছে। ফলে রাজধানীসহ সারা দেশের পাইকারি বাজারে হু হু করে বেড়েছে দাম।

প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারেও। পরিস্থিতি এমন- গরিবের মোটা চাল কিনতে কেজিপ্রতি ৫৬ টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে। সরু চাল বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ৮৫ টাকায়। ফলে মূল্য নিয়ন্ত্রণে খোদ খাদ্যমন্ত্রী কঠোর নির্দেশ দিলেও বাজারে এক প্রকার দায়সারা তদারকি করছে কর্তৃপক্ষ। এতে চাল নিয়ে মিলারদের চালবাজিতে ধরাশায়ী হচ্ছেন ভোক্তারা।

এদিকে সংসদ নির্বাচনের পর হঠাৎ করে চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় বাজার তদারকি শুরু করেছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। তবে রাজধানীর বাজার ঘুরে ট্রেড লাইসেন্স না থাকা, বেশি দামে চাল বিক্রি ও মূল্যতালিকা না থাকাসহ সুনির্দিষ্ট নানা অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলেও দৃশ্যমান কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব কুল প্রদীপ চাকমার নেতৃত্বে একটি টিম রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান অব্যাহত রেখেছে।

এদিকে চালের দাম ক্রমাগত বাড়তে থাকায় চালের মোকাম ও আটো রাইস মিলে অভিযান চালিয়েছে ভোক্তা অধিকার, কৃষি বিপনন ও খাদ্য অধিদপ্তর।

কুষ্টিয়া খাজা নগরে চালের মোকামে অভিযান চালিয়েছে জেলা প্রশাসন। চালের বস্তায় ওজন কম থাকায় গোল্ডেন রাইস মিলকে পঞ্চাশ হাজার টাকা এবং দেশ এগ্রো ফুড রাইস মিলকে পঁচিশ হাজার টাকা জরিমানা করেছে খাদ্য অধিদপ্তরের আভিযানিক দল।

এদিকে, শেরপুরে চালের দাম ক্রমাগত বাড়তে থাকায়, চাল কলে যৌথ অভিযান চালিয়েছে ভোক্তা অধিকার, কৃষি বিপনন ও খাদ্য অধিদপ্তর। অভিযানে শ্রী দূর্গা অটো রাইস মিলকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। পাশাপাশি প্রাথমিকভাবে একাধিক ব্যবসায়ীদের সতর্ক করা হয়েছে। বাজার নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত এই অভিযান চলমান থাকবে বলে জানান খাদ্য অধিপ্তরের কর্মকর্তারা।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ তথ্যমতে মধ্য জানুয়ারি পর্যন্ত দেশে মোট ১৬ লাখ ৫৮ হাজার ৬২৪ টন খাদ্যশস্য মজুত আছে। এর মধ্যে চাল ১৪ লাখ ৩৫ হাজার ৩৪৮ টন,গম ২ লাখ ২২ হাজার ৪৪ টন ও ধান ১৬ হাজার ৯০০ টন। মন্ত্রণালয় বলছে দেশে খাদ্যশস্যের মজুত পর্যাপ্ত রয়েছে।

এ বিষয়ে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেছেন, মিলাররা সব সময় সুযোগের অপেক্ষায় থাকেন। ধান কাটার মৌসুম এলেই তারা চালের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়ান। এবারও সেটাই হয়েছে। এবার আমন ধানের চাল বাজারে এসেছে, তারপরও দাম কমছে না। তাই মূল্য কারসাজিতে জড়িতদের কঠোরভাবে দমন করতে হবে। মূল্য নিয়ন্ত্রণে এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে। তা না হলে বাজারে চাল কিনতে ক্রেতার ভোগান্তি বাড়বে। তবে কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুস শহীদ বলেছেন, চালের মজুতদার ও সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে সরকার সজাগ ও সতর্ক। এ বিষয়ে সরকার শক্ত অবস্থানে রয়েছে। চালের দাম যেন বৃদ্ধি না পায়, সে বিষয়ে বিশেষ নজরদারি থাকবে। কোনো দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেয়া হবে না বলেও জানান কৃষিমন্ত্রী আব্দুস শহীদ।#

পার্সটুডে/বাদশা রহমান/আশরাফুর রহমান/২৪

ট্যাগ