বইয়ের পাতা উল্টে পড়ার মজাই আলাদা: একুশে গ্রন্থমেলা উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী
-
একুশে গ্রন্থমেলা উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ (বুধবার) বিকেলে বাংলা একাডেমিতে মাসব্যাপী অমর একুশের গ্রন্থমেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছেন। একইসঙ্গে তিনি চার দিনব্যাপী ‘আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলন ২০১৭’ উদ্বোধন করেন।
উদ্বোধনী বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'একুশের গ্রন্থমেলা আন্তর্জাতিক সাহিত্য অনুষ্ঠান। আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলন ও এই গ্রন্থমেলা বিশ্বব্যাপী পরিচিত।'
বিদেশি অতিথিদের বাংলা বক্তৃতা, কবিতার অনুবাদ শোনানোয় তিনি উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বলেন, অনুবাদের মধ্য দিয়ে ভাষা ও সংস্কৃতির আদান-প্রদানের সুযোগ হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা বইপ্রেমী তারা অপেক্ষায় থাকেন কখন আমাদের এই বইমেলা শুরু হবে। এ বইমেলার মধ্য দিয়ে যারা সাহিত্যচর্চা করেন তাদের বই প্রকাশ হয়। এটা লেখক, প্রকাশক ও পাঠকদের বিরাট মিলনমেলা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিপথে যাওয়া ছেলেমেয়েরা সাহিত্য ও সংস্কৃতির চর্চার মধ্য দিয়ে সুপথে ফিরে আসবে বলে বিশ্বাস করি। বই দিয়ে ছেলেমেয়েদের বিপথে যাওয়া থেকে উদ্ধার করা যায়।’
তিনি বলেন, এখন ডিজিটাল মাধ্যামে বই পড়ার অনেক সুযোগ হয়েছে তার পরেও বইয়ের পাতা উল্টে পড়ার মজাই আলাদা। এ কারণেই আমি চাই প্রতিবছর আরো নতুন নতুন বই ছাপা হোক এবং বর্তমান প্রজন্মের পাঠাভ্যাস গড়ে উঠুক।
শেখ হাসিনা বলেন, শিক্ষার্থীদের বই পড়তে হবে। পরিবারগুলো তাদের শিশুদের বইয়ের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়ার মধ্য দিয়ে তার বিকাশে সহযোগিতা করে।
তিনি নিজেও তার পরিবারের সদস্যদের জন্য ছোট থেকেই বই পড়ার চর্চা তৈরির পরিবেশ কীভাবে গড়ে তোলেন সেই বর্ণনা দেন।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর হাতে বাংলা একাডেমি প্রকাশিত মীর মশাররফ হোসেনের অমর সৃষ্টি ‘বিষাদ সিন্ধু’র অনুবাদ ‘ওসেন অব সরো’ এবং ‘হান্ড্রেড পোয়েমস ফ্রম বাংলাদেশ’ বই দুটি তুলে দেয়া হয়। সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।
প্রধানমন্ত্রী ‘বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০১৬’ বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন। মেলা উদ্বোধনের পর প্রধানমন্ত্রী বইমেলার স্টলগুলো ঘুরে দেখেন এবং লেখক-প্রকাশকদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন।
১৯৫৫ সালে যাত্রা শুরু করে বাংলা একাডেমি। এরপরে ১৯৭২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি চিত্ত রঞ্জন সাহা সর্বপ্রথম গ্রন্থমেলা শুরু করেন। যা ১৯৮৪ সালে ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’ নামে প্রকাশ পায়। এরপর থেকেই বাঙ্গালীর প্রাণের মেলা হিসেবে এটি স্বীকৃতি লাভ করে।
এবার একাডেমি চত্বরে ৮০টি প্রতিষ্ঠানকে ১১৪টি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ৩২৯টি প্রতিষ্ঠানকে ৫৪৯টি ইউনিটসহ মোট ৪০৯টি প্রতিষ্ঠানকে ৬৬৩টি ইউনিট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে বাংলা একাডেমিসহ ১৪টি প্রকাশনা সংস্থাকে মোট ৬ হাজার বর্গফুট আয়তনের ১৫টি প্যাভিলিয়ন দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে একাডেমির প্যাভিলিয়ন রয়েছে দুটি।
এ ছাড়া ১০০ লিটল ম্যাগাজিনকে বর্ধমান হাউসের দক্ষিণ পাশে লিটল ম্যাগাজিন কর্নারে স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। মেলায় এবারই প্রথম গুগল ম্যাপের সাহায্যে মেলার যেকোনো স্টল খুঁজে বের করার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শিশু কর্নারকে এবারও বেশ আকর্ষণীয় করে সাজানো হয়েছে। শিশুদের এ চত্বরটিতে প্রবেশের জন্য আলাদা ফটক রাখা হয়েছে। মাসব্যাপী গ্রন্থমেলায় এবারও শুক্র ও শনিবার থাকছে ‘শিশু প্রহর’।
মেলার আয়োজক বাংলা একাডেমি থেকে জানানো হয়, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কথা মাথায় রেখে এবারই প্রথমবারের মতো স্টলের ওপরে টিনের ছাউনি দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া শিশু কর্নারে মাতৃদুগ্ধ সেবাকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে।
আয়োজকেরা জানান, গ্রন্থমেলা ১ থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন বেলা ৩টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। ছুটির দিন বেলা ১১টা থেকে রাত ৮টা এবং একুশে ফেব্রুয়ারি সকাল ৮টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত মেলা চলবে।#
পার্সটুডে/আবদুর রহমান খান/আশরাফুর রহমান/১