‘পাসপোর্টের সঙ্গে নাগরিকত্ব থাকা না থাকার কোনো সম্পর্ক নেই’
বাংলাদেশ পাসপোর্ট অধিদফতরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাসুদ রেজওয়ান বলেছেন, পাসপোর্টের সঙ্গে নাগরিকত্ব থাকা না থাকার কোনো সম্পর্ক নেই। বিদেশে অবস্থানকারী যেকোনো বাংলাদেশি পাসপোর্ট না থাকলেও দেশে ফিরতে পারেন।
আজ (বৃহস্পতিবার) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আগারগাঁওয়ে পাসপোর্ট অধিদফতরের কনফারেন্স হলে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন। ব্রিটেনে অবস্থানকারী বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পাসপোর্ট বিষয়ে এই ব্রিফিংয়ের আয়োজন করা হয়।
পাসপোর্ট অধিদফতরের মহাপরিচালক বলেন, ‘তারেক রহমানের এখন কোনো পাসপোর্ট নাই। তার কাছে যে পাসপোর্ট ছিল সেটা ২০১৪ সালে উনি জমা দিয়েছেন। এরপর নতুন করে পাসপোর্টের জন্য আর কোনো আবেদন তিনি করেননি। পাসপোর্ট ছাড়াই তিনি যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন। তবে কীভাবে সেখানে অবস্থান করছেন সেটা যুক্তরাজ্যের সরকার জানেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘তারেক রহমান ২০০৮ সালে বাংলাদেশ ত্যাগ করেন। তখন তার পাসপোর্ট ছিল হাতে লেখা, মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট ছিল না। ২০১০ সালে মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ২০১৪ সালে তিনি ওই পাসপোর্ট সারেন্ডার করেন। এখন নতুন পাসপোর্ট নিতে হলে তার ন্যাশনাল আইডি কার্ড লাগবে। ন্যাশনাল আইডি কার্ড তার নেই। এটা নিতে হলে অবশ্যই দেশে আসতে হবে।’
পাসপোর্ট হারিয়ে গেলে বা মেয়াদোত্তীর্ণ হলেও যেকোনো বাংলাদেশি দেশে ফিরতে পারবেন জানিয়ে মাসুদ রেজওয়ান বলেন, ‘তারেক রহমান দেশে আসতে চাইলে বাংলাদেশ এম্বাসির মাধ্যমে তাকে ট্র্যাভেল পাস নিতে হবে। এটা স্বেচ্ছায় নিতে হবে। জোর করে দেওয়া হবে না। আর না চাইলে সেটা তার ব্যাপার। তবে সরকার তাকে আনতে চাইলে কীভাবে আনবে এটা সরকারের ও আইনের ব্যাপার।’
তিনি আরও জানান, ‘তারেক রহমান সাজাপ্রাপ্ত আসামি। ১৯৭৬ সালের পাসপোর্ট আইন অনুযায়ী, কোনো মামলায় সাজার মেয়াদ দুই বছরের বেশি হলে আসামিকে পাসপোর্ট দেয়া হয় না। আমরাও দেবো না। তবে কোনো আসামি সাজার আগেই পাসপোর্ট নিয়ে থাকলে তা ফেরত নেয়া হয় না। তবে ওই আসামিকে দেশ ত্যাগ করতে দেওয়া হয় না।’
গত শনিবার লন্ডনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্মানে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ আয়োজিত সংবর্ধনা সভায় শাহরিয়ার আলম বলেছিলেন, ‘২০১২ সালে তারেক জিয়া তার বাংলাদেশি পাসপোর্ট লন্ডনস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনে জমা দিয়ে তার বাংলাদেশি নাগরিকত্ব সারেন্ডার করেছেন।
এ বক্তব্যের পর লন্ডনে অবস্থানরত তারেক রহমান প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ারকে আইনি নোটিশ পাঠান। ওই নোটিশে প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্য মিথ্যা, বানোয়াট বলে উল্লেখ করেন। নোটিশ পাওয়ার ১০ দিনের মধ্যে শাহরিয়ার আলম জাতির কাছে বা তাঁর কাছে ক্ষমা না চাইলে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
এছাড়া, গত (মঙ্গলবার) বেলা সোয়া ১১ টার দিকে নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, “তারেক রহমান যুক্তরাজ্যে সাময়িকভাবে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন এবং তা পেয়েছেন। তাকে দেশের আইন অনুযায়ী পাসপোর্ট জমা রেখে ট্রাভেল পারমিট দেয়া হয়েছে। দেশে ফিরতে চাইলে পাসপোর্ট ফেরত পাবেন। কিন্তু তার পাসপোর্ট বাংলাদেশ হাইকমিশনে পাঠানোর কথা নয়।”
তিনি বলেন, “বর্তমান বাংলাদেশ সরকারের অধীনে তারেক রহমানের জীবন নিরাপদ নয়। তাই বিশ্বের অসংখ্য বরেণ্য রাজনীতিবিদ, সরকারবিরোধী বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মতোই সাময়িকভাবে বিদেশে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন এবং সঙ্গত কারণেই তা পেয়েছেন। কাজেই তারেক রহমান জন্মসূত্রে বাংলাদেশের নাগরিক ছিলেন, আছেন এবং থাকবেন।”#
পার্সটুডে/আশরাফুর রহমান/২৬