ড. ইউনূসের প্ররোচনায় পদ্মাসেতুর টাকা বন্ধ করে বিশ্বব্যাংক: শেখ হাসিনা
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পদ্মাসেতুতে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে তার পরিবারের সদস্যদের হয়রানি করা হয়েছে।আজ (রোববার) দুপুর ১২টায় মুন্সিগঞ্জের মাওয়ায় পদ্মা সেতুর নামফলক উন্মোচন শেষে সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
পদ্মাসেতু প্রকল্পে অর্থায়ন বন্ধে ষড়যন্ত্র করায় নোবেল জয়ী ড. ইউনূসের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যারা গরীবের সুদের টাকায় বড়লোক হয় তাদের আবার কিসের দেশপ্রেম। তাঁদের দেশপ্রেম থাকতে পারে না। দেশপ্রেম থাকলে দেশের উন্নয়ন বিরোধী সিদ্ধান্ত নিতে পারত না।
শেখ হাসিনা ক্ষোভের সাথে বলেন, ড. ইউনূসের প্ররোচনায় বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু প্রকল্পের টাকা বন্ধ করে দেয়। পদ্মাসেতু প্রকল্প বন্ধ করে দিতে দুর্নীতির অভিযোগ তোলা হয়। দুনীতির অভিযোগ তুলে আমার পরিবারের সদস্যদেরও হয়রানি করা হয়। অনেকের ধারণা ছিল বিশ্বব্যাংক ছাড়া পদ্মা সেতু হবে না।
শেখ হাসিনা বলেন, প্রথমে পদ্মাসেতুর কাজ আমি শুরু করেছিলাম। কিন্তু বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় এসে কাজ বন্ধ করে দেয়। পরে ফের ক্ষমতায় এসে কাজ শুরু করি। পদ্মাসেতুর ৬০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে, যা খুবই গৌরবের।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকাল ১১টায় মুন্সীগঞ্জের মাওয়ায় পৌঁছান এবং মাওয়া গোলচত্বরে পদ্মা সেতুর নামফলক এবং রেল প্রকল্পসহ চারটি নতুন প্রকল্পের উদ্বোধন করেন ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফর উপলক্ষে পদ্মাপাড়ের তিন জেলা মাদারীপুর, মুন্সীগঞ্জ ও শরীয়তপুরে উৎসবের আমেজ সৃষ্টি হয়েছে। বিকেলে প্রধানমন্ত্রী মাদারীপুরের শিবচরে ইলিয়াস আলী ঘাটে দলীয় জনসভায় বক্তব্য দেবার কথা রয়েছে।
এই সেতু নির্মাণ সম্পন্ন হলে রাজধানী ঢাকাসহ সমগ্র দেশের সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হবে। এই সেতু নির্মাণের ফলে দেশের বাণিজ্য, উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক কার্যক্রম বিশেষকরে দক্ষিণাঞ্চলের ১৯টি জেলার প্রায় ৬ কোটি মানুষের আর্থনৈতিক জীবনযাত্রায় ব্যাপক অগ্রগতি অর্জিত হবে বলে বিশেষজ্ঞরা আশা করছেন।
সরকার ৩০ হাজার কোটি টাকার নিজস্ব তহবিলে দেশের সর্ববৃহৎ ‘পদ্মাসেতু’ নির্মাণ করছে। মূল সেতু নির্মাণ, নদী শাসন, দুটি সংযোগ সড়ক ও অবকাঠামো নির্মাণসহ ৫ ভাগে সম্পন্ন হচ্ছে পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ।
কংক্রীট ও ইস্পাত কাঠামোয় তৈরি দুই স্তরের পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে চলবে মোটরচালিত যানবাহন আর নীচ দিয়ে চলবে রেল। এই সেতুপথে একাধিক লিফটসহ দুটি প্লাটফর্ম, একটি মেইন লাইন ও দুটি লুপ লাইন নির্মাণ করা হবে।
এই সেতুতে থাকবে মোট ৪২টি পিলার। এগুলোর প্রতিটি ৬টি পাইলের ওপর দন্ডায়মান থাকবে। পিলারগুলোর ওপরে বসানো হবে ইস্পাতের স্প্যান। সেতুতে মোট ৪১টি স্প্যান বসবে। ইতোমধ্যে জাজিরা পয়েন্টে ৫টি এবং মাওয়া পয়েন্টে ১টি স্প্যান বসানো হয়েছে। আরো ৫টি স্প্যান বসানোর কাজ চলছে।
প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে। এখন পর্যন্ত যে অগ্রগতি তাতে নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করা অসম্ভব। এ অবস্থায় নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ কোম্পানি তিনবার মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে। প্রস্তাবে প্রকল্পের মেয়াদ দুই বছর বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। তবে নানা ধরনের ঝুঁকির কথা বিবেচনায় রেখে আরও এক বছর সময় বেশি চাওয়া হয়েছে।#
পার্সটুডে/আবদুর রহমান খান/আশরাফুর রহমান/১৪