মরে গেলেও আমরা নির্বাচন বর্জন করব না: ড. কামাল হোসেন
(last modified Mon, 17 Dec 2018 13:43:56 GMT )
ডিসেম্বর ১৭, ২০১৮ ১৯:৪৩ Asia/Dhaka
  • বক্তব্য রাখছেন ড. কামাল হোসেন
    বক্তব্য রাখছেন ড. কামাল হোসেন

বাংলাদেশের জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ও গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেছেন,  ‘সরকার ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেও নির্বাচন থেকে আমাদের সরাতে পারবে না। মরে গেলেও আমরা নির্বাচন বর্জন করব না। আমি যদি লাশও হয়ে যাই আমার আঙুল এসে ভোট দিবে। '

আজ (সোমবার) আগারগাঁও নির্বাচন কমিশন (ইসি) ভবনে ইসির সঙ্গে আড়াই ঘণ্টা বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন। ড. কামাল বলেন, ইলেকশন হতে হবে। তারা (আওয়ামী লীগ) যদি মনে করে, এসব জঘন্য ধরনের আক্রমণ করলে আবেগে আমরা নির্বাচন করব না। এটা আমরা করব না। আমার লাশও নির্বাচন বর্জনের কথা বলবে না।'

তিনি বলেন,  আমার তো ৫৫ বছরের অভিজ্ঞতা আছে। বঙ্গবন্ধুর নির্বাচনী এজেন্ট ছিলাম ৭০-এ। তখন থেকে এখন সব নির্বাচনেই ভালো-মন্দ দেখেছি। কিন্তু এ অবস্থা কোনো দিন দেখি নাই। যারা প্রার্থী, আমরা তাদের লিখিত তালিকা দিয়েছি। বেশ কিছু কেস যেখানে সময়-স্থানের ছবি দিয়েছি। গুলিবিদ্ধ ব্যারিস্টার খোকন, রোমানার ছবি দিয়েছি। একজন দুই চোখ হারিয়েছেন, সেই মহিলার ছবি দিয়েছি। আ স ম আবদুর রবের ভাঙা গাড়ির ছবিও আমরা দিয়েছি।

তিনি দাবি করেন, 'এসব ঘটনার কিছু কিছুতে সিইসি বিব্রত হয়েছেন। বিব্রতবোধ করা যথেষ্ট নয়। কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হয়। আমরা তাদের বলেছি- এখনই আপনারা ইনকোয়ারি চান, একদিনের মধ্যে রিপোর্ট নেন, পদক্ষেপ নেন- যাতে বুঝতে পারি নির্বাচন কমিশন দেশকে মুক্ত করতে চায়, যাতে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের ন্যূনতম পরিবেশ আমরা পাই।'

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ এই নেতা বলেন, এক দলের পোস্টার ছাড়া অন্য কোনো দলের পোস্টার দেখা যায় না। এটা আমি জীবনে দেখিনি। শুধু এক দলের পোস্টার থাকে, অন্য দল মাঠে নামতে পারে না। আমি যতদিন বেঁচে থাকি এ কথাগুলো বলে যাব। আপনাদের সামনে বলব, মানুষের সামনে বলব। প্রতিকার দাবি করব। মানুষের ভোটাধিকারের ক্ষমতার কথা বলব। লাখ লাখ শহীদ সেই ক্ষমতা দিয়ে গেছেন, সেটা থেকে যেন জনগণ বঞ্চিত না হয়। এখন যে প্রক্রিয়া চলছে তাতে বঞ্চিত করার প্রক্রিয়া অব্যাহত। এটি দ্রুত বন্ধ করতে হবে। ইসি সেই ক্ষমতা রাখে।

তিনি বলেন, ৩০ তারিখের পর ইনকোয়ারির কোনো অর্থ থাকবে না। একদিনের মধ্যে রিপোর্ট চেয়ে পরশুর মধ্যে পদক্ষেপ নেয়া উচিত, সেটা আমরা মনে করি। সংবিধান অনুযায়ী ইসির ক্ষমতা আছে, কিন্তু উনারা প্রয়োগ করছেন না।

এসময় সেনাবাহিনী সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে আ স ম রব বলেন, আজ থেকেই আমরা সেনাবাহিনী মোতায়েনের কথা বলেছি।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নুরুল হুদার সভাপতিত্বে বৈঠকে অন্যান্য কমিশনার ছাড়াও নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ উপস্থিত ছিলেন।

ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে বৈঠকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ও ড. মঈন খান, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু এবং গণস্থাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে দুপুরে ২টায় নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে বসেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা। ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচারণায় বাধা ও নেতাকর্মীদের গ্রেফতার, তল্লাশির নামে তাদের বাসাবাড়িতে তাণ্ডব এবং ক্ষমতাসীনদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিষয়ে ইসিতে লিখিত অভিযোগ করেন ঐক্যফ্রন্টের নেতারা।

লিখিত অভিযোগে ঢাকা মহানগর, চাঁদপুর, কুমিল্লা, জামালপুর, ঝিনাইদহ, ভোলা, চট্টগ্রাম, শেরপুর, ফরিদপুর, নেত্রকোনা, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, ময়মনসিংহ, ঠাকুরগাঁও, নোয়াখালী, রাজশাহী, যশোর, বাগেরহাট, পটুয়াখালী, নরসিংদী, নাটোর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, জয়পুরহাট, মেহেরপুর, রংপুর, পাবনা, সাতক্ষীরা, ফেনী, সিরাজগঞ্জ ও হবিগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলার বিএনপি নেতাকর্মী ও প্রার্থীদের প্রচারণায় বাধা ও হামলা করার কথা বলা হয়েছে।#

পার্সটুডে/আশরাফুর রহমান/১৭

 

ট্যাগ