বাংলাদেশের ১০ জেলায় বন্যা, পদ্মায় ফেরী চলাচল বিঘ্নিত
(last modified Fri, 12 Jul 2019 10:06:40 GMT )
জুলাই ১২, ২০১৯ ১৬:০৬ Asia/Dhaka
  • লালমনিরহাটে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি
    লালমনিরহাটে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি

টানা বৃষ্টিপাত ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বাংলাদেশের উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নদনদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বন্যা দেখা দিয়েছে।ইতোমধ্যে দেশের অন্তত ১০ জেলায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। জেলাগুলো হলো- লালমনিরহাট, নিলফামারি, গাইবান্ধা, নেত্রকোনা, সিলেটের সুনামগঞ্জ, বগুড়া, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান এবং শেরপুর।

এদিকে, ‘বন্যার পূর্ব প্রস্তুতি’ নিয়ে আজ সকালে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আন্তঃমন্ত্রনালয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সমন্বয় কমিটির এক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সভা শেষে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান বলেছেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে টানা বর্ষণের পাশাপাশি উজান থেকে প্রবল পাহাড়ি স্রোত নেমে আসার ফলে বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এজন্য ১০ জেলায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতির আশঙ্কা রয়েছে।

প্রতিমন্ত্রী জানান, মানিকগঞ্জ ও জামালপুরে নদীভাঙন দেখা দিয়েছে। লালমনিরহাটেও তিস্তায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। তবে এসব মোকাবিলায় পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় কাজ করছে।

বৈঠক করছেন প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান

নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত

পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদ সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। শুক্রবার সকাল ৬টায় ডালিয়া পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ২৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। উজানের এ ঢল সামাল দিতে তিস্তা ব্যারেজের ৪৪টি জলকপাট খুলে রাখা হয়েছে। তিস্তার পানি বৃদ্ধিতে নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার শৌলমারী বানপাড়ায় গ্রাম রক্ষা বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে।

এদিকে নীলফামারী জেলার ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলা ও উপজেলার প্রায় ১৫টি চরের গ্রাম হাঁটু থেকে কোমর পানিতে তলিয়ে যেতে শুরু করেছে। এতে প্রায় ১০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

ডিমলা উপজেলার পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রভাষক আব্দুল লতিফ খান জানান, গত দুই দিনের চেয়ে শুক্রবার উজানের ঢলের গতি অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে এলাকার নিচু স্থানে নদীর পানি প্রবেশ করেছে। চরের গ্রামগুলোর ঘরবাড়িতেও পানি প্রবেশ করেছে। ইতোমধ্যে তার এলাকার ১ হাজার ১৪০ পরিবারের বসতবাড়িতে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। রাস্তার ওপর দিয়ে নদীর পানি প্রবাহিত হওয়ায় এলাকাবাসী বালুর বস্তা দিয়ে পানি ঠেকানোর চেষ্টা করছে।

সিলেট বিভাগের সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। শুক্রবার সকাল পর্যন্ত সুনামগঞ্জের সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ৯৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তাছাড়া সরকারি হিসাবে বন্যায় সুনামগঞ্জের প্রায় ১৩ হাজার ১০০ পরিবার বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে।

কয়েকদিনের টানা বৃষ্টি আর পাহাড়ী ঢলের কারণে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলায়  পাঁচটি ইউনিয়নের শতাধিক গ্রামের বন্যা পরিস্থিত ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।

সাত দিন ধরে জেলা শহর সাথে উপজেলার সড়কসহ অভ্যন্তরীণ সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় উপজেলার ৭২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকেছে। ২০টি বেশি হাটবাজার পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে।

অপরদিকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে ও ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর জেলার সকল মসজিদে বিশেষ মোনাজাতের জন্য ইসলামিক ফাউন্ডেশন ও অন্যান্য ধর্মালম্বীদের উপাসলনায়ে বিশেষ প্রার্থনার অনুরোধ করেছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ।

পাহাড়ে বন্যা

ওদিকে, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও টানা বর্ষণে পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি দীঘিনালার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে কয়েকশ পরিবার। পানিতে ভেসে গেছে শত শত পুকুরের মাছ। নষ্ট হয়েছে জমির ফসল। দীঘিনালা উপজেলার কবাখালী, ছোট মেরুং বাজার, সোবাহানপুর ও বেতছড়িসহ বেশকিছু এলাকা কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে।

দীঘিনালা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. কাউছার আলম সরকার জানান, উপজেলার ১২টি আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে ক্ষতিগ্রস্ত আড়াইশ' পরিবার। আশ্রিতদের মাঝে সেনাবাহিনী ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে রান্না করা কাবার বিতরণ করা হয়েছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত অনেকেই তাদের স্বজন বাড়িতে উঠেছেন।

এদিকে মেরুং এলাকার সড়ক ও বেইলি ব্রিজ পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় দীঘিনালার সঙ্গে পাশের জেলা রাঙ্গামাটির লংগদুর সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।

দুই রোহিঙ্গা শিশুর মৃত্যু

কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ভারি বর্ষণে পাহাড়ি ঢলের পানিতে ডুবে দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। তারা আপন ভাই বলে জানিয়েছে পুলিশ।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের বালুখালীর হাকিম পাড়া ১৪ নম্বর ক্যাম্পে এ ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলো- উখিয়ার বালুখালী হাকিম পাড়া ক্যাম্প ১৪-এর ১৬ নম্বর ব্লকের বাসিন্দা আব্দুস সালামের ছেলে আনোয়ার সাদেক (৭) ও আনোয়ার ফয়সাল (৬)।

পাটুরিয়া

পদ্মায় ফেরী চলাচল বিঘ্নিত

পদ্মায় পানি বৃদ্ধির সঙ্গে বেড়েছে তীব্র স্রোত। ফলে দেশের গুরুত্বপূর্ণ দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে ফেরী চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে। তীব্র স্রোতের কারণে ফেরিগুলোর নদী পার হতে আগের তুলনায় দ্বিগুণ সময় লাগছে।

শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে দৌলতদিয়া ফেরি ঘাটের জিরো পয়েন্ট থেকে দৌলতদিয়া-খুলনা মহাসড়কের বাংলাদেশ হ্যাচারি পর্যন্ত সড়কে ছোট-বড় প্রায় ৪ শতাধিক যানবাহন পারাপারের অপেক্ষায় আটকে থাকার খবর পাওয়া গেছে।   

আবহাওয়া পূর্বাভাস

আজ সকাল ৯ টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকায় দেশের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারী ধরণের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সাথে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারী ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে।

আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে এই বৃষ্টি আরও কয়েকদিন অব্যাহত থাকার আশঙ্কা রয়েছে। তাছাড়া, অতি ভারী বৃষ্টির কারণে চট্টগ্রাম বিভাগের পাহাড়ী এলাকায় কোথাও কোথাও ভূমিধসের সম্ভাবনা রয়েছে।#

 

পার্সটুডে/আবদুর রহমান খান/আশরাফুর রহমান/১২

 

ট্যাগ