বাংলাদেশে উত্তরাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি; পাহাড় ধসে ও বজ্রপাতে নিহত ১১
বাংলাদেশে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার মাঝে আজ বিভিন্ন জেলায় বজ্রপাতে নয়জন এবং পাহাড় ধসে দু’জনের মৃত্যূ হয়েছে।
শনিবার সকালে রাঙ্গামাটির কাপ্তাইয়ে পাহাড় ধসে দুইজন পথচারী নিহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন-রাউজানের নোয়াপাড়ার অতল বড়ুয়া ও কারীগর পাড়ার সুজয়া অং মারমা। চন্দ্রঘোনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আশ্রাফ উদ্দিন জানান, শনিবার সকালে রাইখালী ইউনিয়নের কারিগরপাড়ায় হঠাৎ একটি চলন্ত সিএনজি অটোরিকশা ও পথচারীর উপর পাহাড় ধসে পড়ে। এসময় সিএনজি অটোরিকশাটি দ্রুত পার হয়ে গেলেও দুজন পথচারী সড়কে মাটি চাপা পড়েন। ঘটনার পর ফায়ার সার্ভিস এসে মাটিচাপা পড়া দু’জনের লাশ উদ্ধার করে।
এদিকে, পাবনার বেড়ায় পাট ধোয়ার সময় বজ্রপাতে মারা গেছেন বাবা-ছেলেসহ চারজন। আর সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে মাছ ধরতে গিয়ে বজ্রপাতে পিতা-পুত্রের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া, শনিবার (১৩ জুলাই) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নেত্রকোণার কলমাকান্দা উপজেলায় গরু চরাতে মাঠে যাওয়ার পথে বজ্রপাতে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। আজ দুপুরে ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার বড়বিলে মাছ ধরার সময় বজ্রপাতে গারো যুবক চৈইত কোচ (২২) মারা যায় হএবং তার ভাই মনু দগ্ধ হয়। শনিবার (১৩ জুলাই) দুপুর ৩টার দিকে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় ধান রোপনের সময় বজ্রপাতে দুরুল হোদা (৫৫) নামে এক কৃষক মারা গেছেন।
উত্তরের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি
ওদিকে, উত্তরের জেলার বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। বিপদসীমার ৫০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে তিস্তার পানি। আজ সকাল ৬টায় দেশের বৃহত্তম সেচপ্রকল্প তিস্তা ব্যারেজ ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫৩ দশমিক ৪ সেন্টিমিটর। যা বিপদসীমার ৫০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন, সীমান্তের ওপারে তিস্তার পানি বিপদসীমা অতিক্রম করায় ভারতের গজল ডোবা ব্যারেজের গেট খুলে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে ব্যাপক হারে পানি আসছে। এতে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়ে লালমনিরহাটে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তিস্তায় দেখা দিয়েছে ভয়াবহ ভাঙন। গত দু’দিনে তিস্তার ভাঙনে শতাধিক পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়েছে। এছাড়া পানির তোড়ে বাঁধ ভেঙে শহরে ঢুকছে প্রবল স্রোত।
শুক্রবার রাতে পানির তোড়ে লালমনিরহাট জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী তালেব মোড় এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে হাতীবান্ধা শহরে বন্যার পানি প্রবেশ করছে। বন্যায় প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। ফলে বন্যা পরিস্থিতির চরম অবনতি দেখা দিয়েছে।
এছাড়া যমুনা, ও করতোয়া নদীর পানি বিপদসীমা ছুঁই ছুঁই করছে। ফলে সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি, সাঘাটা এবং সদর উপজেলায় নদী তীরবর্তী ও বিভিন্ন চরাঞ্চলের নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। ওইসব এলাকার বিভিন্ন ফসলী জমি ও রাস্তা-ঘাট তলিয়ে গেছে। অব্যাহত পানি বৃদ্ধির ফলে চরাঞ্চলের নিচু এলাকাগুলো তলিয়ে যাওয়ায় সেখানকার যোগাযোগ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
বগুড়ার সারিয়াকান্দির নিকট যমুনা ও বাঙালি নদী পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। বন্যার পানির তীব্র স্রোতের কারণে চালুয়াবাড়ি ইউনিয়নের ১৪০টি পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়েছে।পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, শনিবার দুপুরে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে ও বাঙালি নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় উপজেলার কাজলা,কর্ণিবাড়ি,বোহাইল, চালুয়াবাড়ি, চন্দনবাইশা, হাটশেরপুর, কুতুবপুর, সারিয়াকান্দি সদর, কামালপুর ইউনিয়নের চরাঞ্চল ও যমুনার তীরবর্তী এলাকা বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। ইতেআমধ্যেউ ৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১টি মাদ্রাসা, ১টি হাইস্কুলে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। বন্যায় চরাঞ্চলের কৃষকের আউশ, পাট, রোপা আমন, বীজতলা, শাকসবজি তলিয়ে গেছে।
পাহাড়ে বন্যার দুর্ভোগ
ওদিকে চট্টগ্রামের রাউজানে অতিবর্ষণে সৃষ্ট পাহাড়ি ঢলে ডাবুয়া খাল ও সর্তা খালের বাঁধ ভেঙ্গে প্লাবিত হয়েছে জনবসতি। চট্টগ্রাম-রাঙ্গামাটি সড়কের উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে ঢলের পানি। বাঁধ ভাঙ্গনের ফলে উপজেলার নোয়াজিসপুর, চিকদাইর, ডাবুয়া ইউনিয়ন ও পৌর এলাকার পশ্চিম সুলতানপুরে কয়েক হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।
এ ছাড়া, টানা ৮ দিনের বৃষ্টিতে পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়িতে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। প্রশাসনের সহযোগিতায় দূর্গতদের নেয়া হয়েছে আশ্রয় কেন্দ্রে। পাহাড় ধস ও সড়কে পানি ওঠায় খাগড়াছড়ির সঙ্গে রাঙ্গামাটির সড়ক যোগাযোগ এখনও বিচ্ছিন রয়েছে।
কন্ট্রেল রুম খুলেছে পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়
সারাদেশের বন্যা পরিস্থিতির সার্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ ও তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ লক্ষ্যে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে একটি কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে। সচিবালয়স্থ ৬নং ভবনের ৫ম তলায ৪২৫ নম্বর রুমে স্থাপিত কন্ট্রোল রুমের ফোন নম্বর ০২৯৫৭০০২৮।
এ ছাড়াও মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন পানি উন্নয়ন বোর্ডের ‘বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের টোল ফ্রি ১০৯০ নাম্বারে ফোন করার পর ৫ প্রেস করে বন্যার পূর্বাভাস সংক্রান্ত তথ্য জানা যাবে।#
পার্সটুডে/আব্দুর রহমান খান/বাবুল আখতার/১৩
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।