বাংলাদেশে ২৩টি জেলার বিভিন্ন অঞ্চল প্লাবিত; আরো নতুন এলাকায় বন্যার আশঙ্কা
(last modified Tue, 16 Jul 2019 10:04:03 GMT )
জুলাই ১৬, ২০১৯ ১৬:০৪ Asia/Dhaka
  • বাংলাদেশে ২৩টি জেলার বিভিন্ন অঞ্চল প্লাবিত; আরো নতুন এলাকায় বন্যার আশঙ্কা

সর্বকালের রেকর্ড ভঙ্গ করেছে যমুনা নদীর পানির উচ্চতা। আজ মঙ্গলবার সকালে জামালপুরের বাহাদুরাবাদ ঘাট এলাকার যমুনার পানি বিপদসীমার ১৩৭ সেন্টিমিটারে ওপর দিয়ে প্রবাহিত হবার তথ্য রেকর্ড করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

১৯৮৮ সালের বন্যায় যমুনার সবোচ্চ রেকর্ড ছিল ১২১ সেন্টিমিটার আর ২০১৭ সালে এটা  ছিল  ১৩৪ সেন্টিমিটার। এদিকে ভারি বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে উত্তরের জনপদে বন্যা পরিস্থিতি মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। উজানে ভারতে প্রচুর বৃষ্টিপাতের কারনে বাংলাদেশে নেমে আসা পাহাড়ী  ঢলে ফুসে উঠছে উত্তর  ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নদ-নদী। ব্রহ্মপুত্র-যমুনা অববাহিকা প্লাবনে ভাসিয়ে দিয়ে বন্যা এখন বিস্তৃত হচ্ছে দেশের মধ্যাঞ্চলেও।প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। কোন কোন জেলায় তীব্র হয়ে উঠছে নদীভাঙন।

উত্তরাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি

ইতিমধ্যে দেশের অন্তত ২৩টি জেলার বিভিন্ন অঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছে লাখো মানুষ। বাড়িঘরে পানিতে ডুবে যাওয়ায় বন্যাকবলিত এলাকার মানুষ তাদের পরিবার-পরিজন আর গবাদি পশু নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন নিকটবর্তী উঁচু বাঁধে।  অনেকই  ঠাঁই  নিয়েছেন আশ্রয়কেন্দ্র ও স্কুল-কলেজ বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভবনে।

বন্যা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে যমুনা তীরবর্তী জামালপুর জেলার ইসলামপুর ও দেওয়ানগঞ্জ উপজেলায়। দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়, বাসভবন, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কার্যালয়সহ সব সরকারী  অফিস এখন বন্যায়  ছয়লাব। এরইমধ্যে আঞ্চলিক সড়কগুলোতে পানি উঠায় সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

পানিবৃদ্ধি
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা সতর্কীকরন ও পূর্বভৃস কেন্দ্র জানিয়েছে, মঙ্গলবার সকাল থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র-যমুনা এবং গঙ্গা-পদ্মা নদীসমূহের পানির উচ্চতা  বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে।

বাংলাদেশ ও ভারতের আবহাওয়া বিভাগ তাদের পূর্বাভাসে বলেছে, বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং এর সংলগ্ন ভারতের আসাম ও মেঘালয় প্রদেশসমূহের বিস্তীর্ণ এলাকায় আগামী ২৪ ঘণ্টায় মাঝারি থেকে ভারী এবং কোথাও কোথাও অতি ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া, দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল সংলগ্ন ভারতের বিহার এবং নেপালে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এর ফলে কুড়িগ্রাম, জামালপুর, গাইবান্ধা, বগুড়া ও সিরাজগঞ্জ জেলায় বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটতে পারে। অপরদিকে নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ ও সিলেট জেলায় বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল বা সার্বিক অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

কুড়িগ্রামে বন্যার চিত্র

পানি উন্নয়ন বোর্ডের পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী ৩০ থেকে ৪০ ঘণ্টার মধ্যে দেশের ২০ থেকে ২২টি জেলায় বন্যা ছড়িয়ে পড়তে পারে। বুধবারের মধ্যে এসব জেলার বন্যা পরিস্থিতি আশঙ্কাজনকভাবে অবনতি হতে পারে  বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

বন্যাজনিত রোগ-ব্যাধী

এদিকে, দেশের বন্যা আক্রান্ত জেলাগুলিতে ডায়রিয়া, শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহ (আরটিআই), চোখের প্রদাহ ও চর্মরোগসহ নানা রোগব্যাধি ছড়িয়ে পড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় বিভিন্ন রোগে ৬৭২ জন আক্রান্ত ও একজনের মৃত্যু হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরে হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম  জানিয়েছে, স্বাস্থ্য পরিস্থিতি মেআতাবেলায় বর্তমানে ১৬ জেলায় ১, ৫৪৩টি মেডিকেল টিম কাজ করছে।
দুর্যোগ মন্ত্রীর আশ্বাস  

বাংলাদেশের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে, তবে এতে শঙ্কার কিছু নেই বলে আশ্বস্ত করেছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান। আজ (মঙ্গলবার) সকালে রাজধানীতে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি একথা জানান।

গবাদি পশুকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে

দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘টানা বর্ষণ অব্যাহত থাকায় পনেরটি নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে। বৃষ্টি আরও বাড়বে, ব্রহ্মপুত্রের ভয়ানক অবস্থা। তাই বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। তবে এ নিয়ে আমরা চিন্তিত নই। পর্যাপ্ত খাবার মজুদ আছে। প্রত্যেক জেলায় পর্যাপ্ত ত্রাণ সামগ্রী দেওয়া আছে।

প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘বজ্রপাতে মৃত্যুর ঘটনা বাড়ছে। তাই বজ্রপাতপ্রবণ এলাকায় বজ্রপাতনিরোধক টাওয়ার বসানো হবে। যাতে হতাহতের সংখ্যা কমিয়ে আনা যায়।’

জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) সঙ্গে বৈঠক শেষে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার  বলেন, ‘বন্যা পরিস্থিতি যাই হোক না কেন, তা  মোকাবিলা করতে আমরা প্রস্তুত। সারাদেশে পর্যাপ্ত খাদ্য মজুদ আছে।’

পার্সটুডে/ আব্দুর রহমান খান/বাবুল আখতার/১৬

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

 

 

 

ট্যাগ