সারা দেশে বন্যা পরিস্থিতি: ত্রাণ না পাওয়ার অভিযোগ করছেন পানিবন্দি মানুষ
(last modified Thu, 18 Jul 2019 13:20:56 GMT )
জুলাই ১৮, ২০১৯ ১৯:২০ Asia/Dhaka

যমুনা, পদ্মা ও পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদে পানিবৃদ্ধির ফলে দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলের জেলাগুলিতে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটেছে। প্রবল স্রোতে সড়ক ভেঙ্গে যাওয়া ও জলমগ্নহয়ে পড়ার কারনে কোনো কোনো জেলায় সড়ক ও রেল যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। দশদিন ধরে বন্যা পরিস্থিতি বিরাজ করলেও অনেক স্থানে এখনো ত্রাণ না পাবার অভিযোগ করছেন পানিবন্দি অনেকে।

বন্যাকবলিত চিলমারী উপজেলা চেয়ারম্যান শওকত আলী সরকার স্বীকার করেছেন, বন্যায় ক্ষয়-ক্ষতির পরিমান আরো বেড়েছে। নদীভাংগন তীব্র হয়েছে।  যতটা সাহায্য প্রয়োজন তা পাওয়া যায়নি।

এদিকে আবহাওয়ার পূর্বাভাষে জানানো হয়েছে মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের উপর মোটামুটি সক্রিয় থাকায় আগামী ২ থেকে ৩ দিন দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা কম থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে আগামী রোববার থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে বজ্রসহ বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বৃদ্ধি পেতে পারে। ফলে এখনই  বর্ষা-বন্যাজনিত  দুর্যোগের অবসান হচ্ছে না।

কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির অপরিবর্তিত রয়েছে। ব্রহ্মপুত্র ও ধরলা নদীর পানি স্থিতিশীল হলেও তীব্র ভাঙনের ফলে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। রৌমারীর বন্দরের এলাকায় এলজিইডি’র সড়ক ভেঙে যাওয়ায় গোটা উপজেলা এখন পানিবন্দী। এমন পরিস্থিতিতে জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে ত্রাণ তৎপরতা শুরু হলেও বেসরকারি পর্যায়ের সংগঠনগুলো এগিয়ে না আসায় বানভাসিরা চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছে। গত এক সপ্তাহ ধরে বাড়ীতে আটকে পরা মানুষগুলো জ্বালানি  সংকটের কারণে রান্না-বান্না করতে পারছে না।

গাইবান্ধায় ব্রহ্মপুত্র ও ঘাঘট নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হয়েছে। এতে গাইবান্ধা পৌর এলাকাসহ চারটি উপজেলার নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দী মানুষ এবং বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রিত বন্যার্ত মানুষেরা দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। গাইবান্ধা পৌর এলাকায় ২০টি আশ্রয় কেন্দ্রে সাড়ে ৪ হাজার বন্যার্ত মানুষ আশ্রয় গ্রহণ করেছে। এদিকে গত দু’দিনদিনে সদর উপজেলার খোলাহাটী ইউনিয়নের গোদারহাট এলাকার সোহাগ (৫) বন্যার পানিতে ডুবে ও সাঘাটার কুন্ডুপাড়ায় উজ্জল কুমার (১৫) সর্প দর্শনে মারা যায়।

গাইবান্ধা শহরের সংলগ্ন বাধের বেশকিছু অংশ ভেঙে যাওযায় বৃহস্পতিবার গাইবান্ধা শহরের বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়েছে। শহরের অধিকাংশ এলাকার বসতবাড়িতে পানি উঠায় পানিবন্দী মানুষদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

এদিকে চরাঞ্চলের পানিবন্দি মানুষদের খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি, স্যানিটেশনসহ বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছে। বিশেষ করে গবাদিপশু যেগুলো চরাঞ্চলে আটকা পড়েছে সেগুলো যানবাহনের অভাবে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া যাচ্ছে না। এছাড়া গবাদি পশুর খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। 

সান্তাহার রেলওয়ে সুত্রে জানাযায়, গত বুধবার ভোর রাতে গাইবান্ধা- বোনারপাড়ার মধ্যর্বতী বাদিয়াখালি নামকস্থানে রেললাইন দুই থেকে তিন ফুট পানীর নীচে তলিয়ে যায়। এতে রেললাইন ভেঙ্গে গিয়ে রেল যোগযোগ বিছিন্ন হয়ে পরেছে। ফলে সান্তাহার জংশন ষ্টেশন থেকে আদমদীঘি, নশরৎপুর, তালোড়া, কাহালু, বগুড়া,গাবতলি,পীরগাছা,বামনডাঙ্গা,গাইবান্ধা, বেনারপাড়া, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম দিনাজপুর মধ্যে চলাচলকারী সকল প্রকার ট্রেন চলাচল দুদিন যাবৎ বন্ধ রয়েছে। এতে যাত্রী সাধারণ চরম দুর্ভোগে পড়েছে।

তবে এখন থেকে ডাউন ট্রেনগুলো গাইবান্ধা রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত এবং আপ ট্রেনগুলো বোনারপাড়া পর্যন্ত চলাচল করছে। এ ছাড়া আন্তনগর লালমনি এক্সপ্রেস ও রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেন দু’টি বিকল্পপথে রংপুর-পার্বতীপুর-সান্তাহার হয়ে ঢাকায় চলাচল করছে।

এদিকে, শত বছরের রেকর্ড ভেঙে বগুড়ায় যমুনা নদীর পানি বিপদসীমার ১২৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বৃহষ্পতিবার দুপুরে এই তথ্য জানিয়ে বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা বলেছেন , দ্রুত গতিতে এই পানি বৃদ্ধির ফলে যে কোন মুহুর্তে বণ্যা পরিস্থিতি গুরুতর রূপ নিতে পারে।
বগুড়া জেলা প্রশাসনের প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ি সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনট উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নের ১০২টি গ্রাম পুরোপুরি প্লাবিত হয়েছে। মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ৮২ হাজার । বাস্তুচ্যুৎ হয়ে ২ হাজার পরিবার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে। এ ছাড়া আরো ২০ হাজার পরিবার সরে গেছে নিরাপদ আশ্রয়ে।  জেলা শিক্ষা দপ্তর জানিয়েছে , বন্যায় তিন উপজেলার ৬৪টি প্রাথমিক ও ১১টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষনা করা হয়েছে ।

তবে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বলেছেন বন্যায় ক্ষয়কতির পরিমান জেলা প্রশাসনের হিসেবের চেয়ে অনেক বেশি। তাদের মতে অন্তত লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়েছেন। দুর্গত এলাকায় মানুষ শুকনা খাবার খেয়ে দিন কাটাচ্ছে। বিশুদ্ধ খাবার পানি, জ্বালানি ও গবাদি পশুখাদ্যের চরম সংকটে দিশেহারা অবস্থা তাদের। প্রয়োজনের তুলনায় সরকারি ত্রাণ তৎপরতা খুবই অপ্রতুল বলেও অভিযোগ দুর্গত মানুষের ।

অপরদেকে গাইবান্ধা-সুন্দরগঞ্জ সড়কের কদমের তল থেকে ফকিরপাড়া পর্যন্ত এবং গাইবান্ধা-ফুলছড়ি-সাঘাটা সড়ক, গাইবান্ধা-বালাসীঘাট সড়ক, গাইবান্ধা-বোনারপাড়া সড়ক এখন হাঁটু পানিতে নিমজ্জিত। ফলে সড়কগুলোতে সকল প্রকার যানবাহন ও পথচারিদের চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড সুত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদসীমার ১৫০ সেন্টিমিটার এবং ঘাঘট নদীর পানি ৯৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় আরও নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদে পানিবৃদ্ধির ফলে শেরপুরে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটেছে। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের পুরাতন ভাঙণ অংশ দিয়ে বন্যার পানি দ্রুতবেগে প্রবেশ করায় চরাঞ্চলের নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। গত ২৪ ঘন্টায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানি শেরপুর ফেরিঘাট পয়েন্টে ১ মিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমা ছুইঁ ছুঁই করছে। এতে শেরপুর-জামালপুর মহাসড়কের পোড়ার দোকান কজওয়ের (ডাইভারশন) ওপর দিয়ে প্রবলবেগে বন্যার পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এই সড়কে ঝুঁকি নিয়ে যানবাহন চলাচল করলেও যেকোন সময় শেরপুর থেকে জামালপুর হয়ে রাজধানী ঢাকা ও উত্তরাঞ্চলের সাথে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হতে পারে।

শেরপুরের ঝিনাইগাতীতে ঢলের পানিতে ডুবে মামুন মিয়া (১২) নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে।  বৃহস্পতিবার দুপুরে বাড়ীর পাশে ঢলের পানিতে ভাসমান মামুনের লাশ উদ্ধার করা হয়। এ নিয়ে ঝিনাইগাতী উপজেলায় গত ১ সপ্তাহে ঢলের পানিতে ডুবে নারী ও শিশুসহ ৩জনের মৃত্যু হলো।

টাঙ্গাইলে যমুনা নদীর পানি অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৯১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদীতে পানি বেড়ে যাওয়ায় বুধবার রাত ১১টা পর্যন্ত টাঙ্গাইলের ২২টি ইউনিয়নের ১০১টি গ্রাম বন্যা কবলিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসন।

টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিজ্ঞান শাখার উপ-সহকারী প্রকৌশলী রেজাউল করিম জানান, ভারী বর্ষণ এবং উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে যমুনা, পুংলী, ঝিনাই, বংশাই ও ধলেশ্বরীর নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে।#

পার্সটুডে/ আব্দুর রহমান খান/বাবুল আখতার/১৮

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

 

 

 

ট্যাগ