‘প্রিয়া সাহা প্রধানমন্ত্রীকে টেনে এনেছেন, তবে সরকার রয়েসয়ে এগোতে চায়’
(last modified Mon, 22 Jul 2019 08:16:17 GMT )
জুলাই ২২, ২০১৯ ১৪:১৬ Asia/Dhaka
  • ওবায়দুল কাদের
    ওবায়দুল কাদের

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে অভিযোগকারী হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ নেত্রী প্রিয়া সাহার বক্তব্যের পেছনে কারও হাত আছে কিনা সেটি খতিয়ে দেখবে সরকার। তবে, প্রিয়া সাহার বিষয়ে সরকার রয়েসয়ে এগোতে চায় বলে তিনি জানান।

সমসাময়িক বিষয় নিয়ে আজ (সোমবার) সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘প্রিয়া সাহার বিষয়ে আমরা রয়েসয়ে এগোতে চাই। মশা মারতে আমরা কামান দাগাতে চাই না। তবে বিষয়টি আমরা তুচ্ছ মনে করছি না।’

তিনি আরো বলেন, ‘প্রিয়া সাহা কার প্ররোচণায় এ মিথ্যা অভিযোগ করেছেন, তার গভীরে আমরা যাব। অবাক হওয়ার বিষয় হলো, প্রিয়া সাহা তাঁর মিথ্যা বক্তব্যের ব্যাপারে অটল রয়েছেন। তিনি প্রধানমন্ত্রীকে টেনে এনেছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী কখনো তিন কোটি ৭০ লাখ গুমের তথ্য দেননি।’

ট্রাম্পের কাছে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগ করেন প্রিয়া সাহা

গত ১৭ জুলাই হোয়াইট হাউসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে প্রিয়া সাহা বলেন, ‘আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি। এখানে (বাংলাদেশে) প্রায় ৩৭ মিলিয়ন (তিন কোটি ৭০ লাখ) হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ডিসঅ্যাপেয়ার (নিখোঁজ) হয়ে গেছে। দয়া করে আমাদের সাহায্য করুন। আমরা আমাদের দেশে থাকতে চাই। এখনো সেখানে (বাংলাদেশে) ১৮ মিলিয়ন (এক কোটি ৮০ লাখ) সংখ্যালঘু মানুষ রয়েছে। আমার অনুরোধ, দয়া করে আমাদের সাহায্য করুন। আমরা আমাদের দেশ ছাড়তে চাই না। শুধু আমাদের (বাংলাদেশে) থাকতে সাহায্য করুন। আমি আমার বাড়ি হারিয়েছি। তারা আমার বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে। তারা আমার জমি কেড়ে নিয়েছে। কিন্তু কোনো বিচার হয়নি।’

এ নিয়ে বিভিন্ন মহলে সমালোচনার ঝড় উঠলে প্রিয়া সাহা গতকাল (রোববার) এক ভিডিও বার্তায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে নালিশের ব্যাখ্যা এবং ঘটনার পর নিজেরসহ পরিবারের নিরাপত্তাহীনতার বিষয় তুলে ধরেন। ভিডিওতে সংখ্যাগত তথ্যের বিষয়ে প্রিয়া সাহা জানান, তিন কোটি ৭০ লাখ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টানের নিখোঁজ হওয়ার যে তথ্য তিনি ট্রাম্পকে দিয়েছেন, তা সরকারি পরিসংখ্যান থেকেই নেয়া।

এ সময় তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের পরিসংখ্যান বইয়ের (২০০১ সালের) ধর্মীয় সংখ্যালঘু যে চ্যাপ্টার রয়েছে এবং সরকারি সেনসাস রিপোর্টে থেকে এ সংখ্যা পাওয়া যায়। দেশভাগের সঙ্গে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ ছিল ২৯.৭ ভাগ। এখন তা কমে ৯.৭ ভাগ। দেশের মানুষ এখন ১৮০ মিলিয়নের মতো। সে অনুযায়ী সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জনসংখ্যা বাড়লে আমার দেওয়া সংখ্যাটা মিলে যায়। ’

তিনি আরও বলেন, ‘সরকারের ওই পরিসংখ্যানের ওপর ভিত্তি করেই অধ্যাপক আবুল বারকাত ২০১১ সালে একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। যা ওই সময় গণমাধ্যমেও আসে। সেই প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, প্রতিদিন ৬৩২ জন হিন্দু দেশ ছাড়ছেন। আমি স্যারের সাথে সরাসরি কাজ করেছিলাম বলে বিষয়টা সম্পর্কে অবহিত। ‘

এক প্রশ্নের জবাবে প্রিয়া সাহা সংখ্যালঘু নির্যাতন বিষয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তার অনুপ্রেরণা হিসেবে দাবি করেন। তিনি জানান, ২০০১ সালের নির্বাচনের পর যখন সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন চলছিল, তখন বাংলাদেশের তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারাবিশ্ব ঘুরেছেন সংখ্যালঘুদের রক্ষায়।

প্রিয়া সাহা আরও বলেন, ‘আমি তাঁর কথায় অনুপ্রাণিত হয়ে, তাঁর কথা অনুসরণে কথা বলেছি। এবং যেকোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে যেকোনো জায়গায় কথা বলা যায়, আমি তাঁর কাছে শিখেছি।’

হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রিয়া সাহার যুক্তরাষ্ট্র সফরের বিষয়ে সংগঠনের কেউ জানেন না বলেও অবহিত করেন ভিডিওটিতে#

 

পার্সটুডে/আশরাফুর রহমান/২২