বাংলাদেশে বন্যায় ১২ দিনে ৮৭ জনের মৃত্যু, জামালপুরের অবস্থা শোচনীয়
(last modified Wed, 24 Jul 2019 14:51:37 GMT )
জুলাই ২৪, ২০১৯ ২০:৫১ Asia/Dhaka
  • বগুড়ায় বন্যার্তদের দুর্ভোগ
    বগুড়ায় বন্যার্তদের দুর্ভোগ

বাংলাদেশে চলতি বর্ষা মওসুমে বন্যার কারণে গত ১২ দিনে ৮৭ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমারজেন্সি অপারেশন সেন্টার। এদের মধ্যে জামালপুর জেলায় ২৯ জন,  গাইবান্ধা ১৫ জন, নেত্রকোনায় ১৩ জন এবং টাঙ্গাইল ও সুনামগঞ্জ জেলায় পাঁচজন করে মারা গেছে।

লালমনিরহাট, নীলফামারী, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, কুড়িগ্রাম, শেরপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া এবং ফরিদপুর জেলা থেকেও মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এসব মৃত্যুর বেশিরভাগ হয়েছে পানিতে ডুবে। এছাড়া বন্যা কবলিত এলাকায় সাপের কামড়, বজ্রপাত এবং ডায়েরিয়ায় ভুগেও মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

এদিকে, পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় পদ্মা এবং ঢাকার চারপাশের নদীসহ উত্তরাঞ্চলের বড় নদীগুলোর পানি বাড়তে থাকবে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের পর্যবেক্ষণে থাকা দশ নদীর পানি আজ সকাল থেকে বেড়েই চলেছে।

ইতোমধ্যেই বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে সুনামগঞ্জের সুরমা, শেরপুর-সিলেট জেলার সীমান্তে কুশিয়ারা, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তিতাস, চাঁদপুরের মেঘনা, কুড়িগ্রামের ধরলা, গাইবান্ধার ঘাঘট, চক-রহিমপুরে করতোয়া, চিলমারী ও নুনখাওয়ায়  ব্রহ্মপুত্র, ফুলছড়ি, বাহাদুরাবাদ, সারিয়াকান্দি, কাজিপুর, সিরাজগঞ্জ ও আরিচায় যমুনা, বাঘাবাড়িতে আত্রাই, টাংগাইলের এলাশিনে ধলেশ্বরী, জামালপুরে পুরনো ব্রহ্মপুত্র, গোয়ালন্দে, ভাগ্যকূলে ও সুরেশ্বরে পদ্মা নদীর পানি।

আজ সকালে এসব নদীতে পানি সর্বোচ্চ ১ থেকে ১৩০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হবার কথা রেকর্ড করা হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘গত কয়েকদিনে দেশের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও গতকাল থেকে মধ্যাঞ্চলের কিছু এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। ঢাকার আশেপাশের কয়েকটি এলাকায় বানের জল বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও ঢাকায় বন্যা পরিস্থিতি কোনো প্রভাব ফেলবে না বলেই ধারণা করছি।’

তিনি বলেন, গতকাল থেকে ভারতের আসাম এবং পশ্চিম বাংলার উত্তরাংশে ভারী বৃষ্টি হওয়ায় তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র নদীর অববাহিকায় বন্যার পানি বাড়তে পারে। সেক্ষেত্রে ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর ও সিলেট অঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উত্তরাংশের হাওর অঞ্চলেও বানের পানি বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এর মধ্যে যদি বাংলাদেশেও বৃষ্টি হয় তাহলে দেশের দুই-তৃতীয়াংশ এলাকা বানের পানি তলিয়ে যেতে পারে।

জামালপুরে বন্যা

এদিকে, বন্যা পরিস্থিতির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলির মধ্যে জামালপুরের অবস্থা বেশ শোচনীয় বলে জানা গেছে। এখন পর্যন্ত এই জেলার ৭০টির মতো ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ২৬ হাজার হেক্টর ফসলী জমি এবং ৪ লাখ ৫০ হাজার গবাদি পশু। ১১২০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বন্যায় জেলার ১৩ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত ও পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে। ফলে, খাবারের অভাব, বিশুদ্ধ পানি এবং গো-খাদ্যের চরম সংকট দেখা দিয়েছে। এছাড়াও এই জেলায় বন্যা কবলিত হয়ে এখন পর্যন্ত ২৯ জন মানুষ মারা গেছে।

গাইবান্ধা জেলাতেও প্রায় চারশ গ্রাম বানের জলে তলিয়ে গেছে। বেসরকারী হিসেবে, জেলাটিতে পাঁচ লাখের বেশি মানুষ এখনও পানিবন্দি হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এছাড়া বন্যায় ডুবে গেছে ১১ হাজার ৯২৮ হেক্টর ফসলি জমি, ভেসে গেছে ৬ হাজার ২শ’ ৯০ টি পুকুরের মাছ। চলতি বন্যায় জেলার ২ হাজার ৫৫ মেট্রিক টন মাছ ও ১ কোটি ১১ লক্ষ পোনা ভেসে গেছে। যার বাজার মূল্য ২৮ কোটি ৪৮ লাখ টাকা বলে জানা গেছে।

বন্যার পানি একদফা নেমে যাওয়ার পর আবারও নীলফামারী জেলায় তিস্তা নদীর বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। এতে নতুন করে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ডিমলা উপজেলার প্রায় ১৫ হাজার মানুষ। পানি নেমে যাওয়ার পর আশ্রয় কেন্দ্র থেকে যেসব মানুষ ঘরে ফিরে এসেছিল, দ্বিতীয় দফার বন্যায় তারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। উজানের ঢলে তিস্তার পানি ক্রমশ বাড়তে থাকায় নতুন করে আশ্রয় কেন্দ্রের দিকে ছুটছে বানভাসি মানুষ।

লালমনিরহাট-কুড়িগ্রাম জেলা থেকেও বন্যা পরিস্থিতির একই অবনতির খবর পাওয়া গেছে।#

পার্সটুডে/আবদুর রহমান খান/আশরাফুর রহমান/২৪

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ