আবরার হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ: রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রতিক্রিয়া
বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)-এর আবাসিক হলে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের নির্যাতনে নিহত শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তার নিজ গ্রাম কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী উপজেলার রায়ডাঙ্গা কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। সেখানে ফাহাদের তৃতীয় জানাজায় অংশ নেন প্রায় সহস্রাধিক মানুষ। জানাজা শেষ হওয়া মাত্রই বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী রাস্তায় নেমে আসেন এবং আবরার ফাহাদ হত্যায় জড়িত সবাইকে দ্রুত গ্রেপ্তারসহ ফাঁসির দাবি জানান।
বুয়েটের শেরে বাংলা হলের আবাসিক ছাত্র ফাহাদকে গত রোববার সন্ধ্যায় বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা ডেকে নিয়ে হলের একটি কক্ষে প্রচণ্ডভাবে লাঠিপেটা করে এবং তাকে মৃত অবস্থায় বুয়েটের সিঁড়িতে ফেলে রাখে।
বর্বরোচিত এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে বুয়েটের শিক্ষার্থীরা আজ দ্বিতীয় দিনের মতো ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ অব্যাহত রাখে। এসময় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা আবরারের খুনিদের ফাঁসি, জড়িতদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার এবং ফাহাদের পরিবারকে মামলার খরচ ও ক্ষতিপূরণসহ সাত দফা দাবি ঘোষণা করেছে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অনির্দিষ্টকালের জন্য ভর্তি ও একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করেছে শিক্ষার্থীরা।
এছাড়া, মঙ্গলবার দুপুরে বুয়েট শহীদ মিনারের পাদদেশে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি বন্ধের দাবি জানিয়েছে।
এসময় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. একেএম মাসুদ রানা শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘বাবা-মা শিক্ষার্থীদের আমাদের হাতে তুলে দিয়ে গেছেন। কিন্তু আমরা দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছি। আমরা শিক্ষার্থীদের সব দাবির সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করছি।’
ওদিকে, আজ দুপুরে ফাহাদের গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে। গায়েবানা জানাযা শেষে একটি বিশাল বিক্ষোভ মিছিল ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে। এতে অংশ নিয়ে ঢাবি কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের ভিপি নুরুল হক নুরু শিক্ষাঙ্গনে ছাক্রলীগের দৌরাত্ম্য প্রতিহত করার জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হবার আহ্বান জানান।
ছাত্রলীগ কর্তৃক বুয়েট ছাত্র আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যায় তীব্র নিন্দা জানিয়ে দু’দিনের প্রতিবাদ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি’র ছাত্র সংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী, আবরার হত্যার প্রতিবাদে আগামীকাল (বুধবার) দেশব্যাপী সকল জেলা, মহানগর ও বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে এবং আগামী ১০ অক্টোবর বৃহস্পতিবার দেশব্যাপী সকল থানা, পৌর ও কলেজসমূহে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।
ইতোমধ্যে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ১৯ জনকে আসামি করে সোমবার সন্ধ্যার পর চকবাজার থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন নিহত আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ্।
এদিকে বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের হত্যাকাণ্ডের ঘটনার প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সহ-সভাপতিসহ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা কমিটির ১১ জন নেতাকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বুয়েটের ছাত্র ফাহাদকে হত্যার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের দলবাজ লোকদের বিরুদ্ধে মামলা করার দাবি জানান।
আজ সকালে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে রিজভী সাংবাদিকদের বলেন, সরকারি ছাত্র সংগঠন হবার কারণে ক্যাম্পাসে নানাবিধ অপরাধ করলেও পার পেয়ে যায়। তাই ছাত্রলীগ বারবার এ জাতীয় অপরাধ করছে। তারা এখন চাপাতি লীগ ও সন্ত্রাসী লীগে পরিণত হয়েছে।
রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের সমালোচনার জবাবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দাবি করেছেন, ছাত্রলীগের যারা অপরাধী, তাদের শাস্তি দেয়া হয়েছে। ছাত্রলীগের বা যুবলীগের গুটিকয়েক নেতাকর্মী অপরাধ করবে সে জন্য গোটা সংগঠন দায়ী নয়।
মঙ্গলবার দুপুরে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, দেশে যে উন্নয়ন হয়েছে তা এমন ছোটখাটো কিছু ঘটনায় ম্লান করা যাবে না।
তবে, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক আজ বলেছেন, বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ড অত্যন্ত দুঃখজনক ও মর্মান্তিক। জড়িতদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে এবং তাদের উপযুক্ত শাস্তিই দেয়া হবে।#
পার্সটুডে/আবদুর রহমান খান/আশরাফুর রহমান/৮
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।