১৫ অক্টোবরের মধ্যে বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে আল্টিমেটাম
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যার প্রতিবাদে আন্দোলনকারী সাধারণ শিক্ষার্থীরা ১৫ অক্টোবরের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটিতে রাজনৈতিক কার্যক্রমসহ সব ছাত্র সংগঠন স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধকরণসহ নতুন করে ১০ দফা দাবি উত্থাপন করেছেন।
আজ (বুধবার) বেলা সোয়া ১১টার দিকে বুয়েটের শহীদ মিনার চত্বরে সংবাদ সম্মেলন করে এ দাবি তুলে ধরেন শিক্ষার্থীরা। দাবিগুলো হলো-
১. সিসিটিভির ফুটেজ ও জিজ্ঞাসাবাদ থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে শনাক্তকারী খুনিদের প্রত্যেকের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। ২. সিসিটিভি ফুটেজ থেকে শনাক্তকারী সবাইকে আসছে ১১ অক্টোবর বিকেল ৫টার মধ্যে স্থায়ী বহিষ্কার করতে হবে। ৩. মামলা চলাকালীন খরচ এবং ফাহাদের পরিবারের সব ক্ষতিপূরণ প্রশাসনকে বহন করতে হবে। এই মর্মে অফিসিয়াল নোটিশ ১১ তারিখ বিকেল ৫টার মধ্যে দিতে হবে। ৪. দায়ের করা মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্বল্পতম সময়ের মধ্যে নিষ্পত্তি করার জন্য প্রশাসনকে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। ৬. বুয়েটে সব ধরনের রাজনৈতিক কার্যক্রমসহ সব ছাত্র সংগঠন নিষিদ্ধ করতে হবে। ৭. বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য কেন ৩০ ঘণ্টা অতিবাহিত হলেও ঘটনাস্থলে এসে উপস্থিত হননি; ৩৮ ঘন্টা পর উপস্থিত হয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিরুদ্ধাচরণ করেন। বুধবার দুপুর ২টার মধ্যে ভিসি সশরীরে ক্যাম্পাসে এসে জবাবদিহিতা করতে হবে। ৮. আবাসিক হলগুলোতে র্যাগিংয়ের নামে ভিন্ন মতাবলম্বীদের ওপর সব প্রকার শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন বন্ধ করতে হবে। এর সঙ্গে জড়িত সবার ছাত্রত্ব বাতিল করতে হবে। ৯. নিরাপত্তার স্বার্থে সবগুলো হলের প্রত্যেক ফ্লোরে সিসি ক্যামেরার ব্যবস্থা করতে হবে। ১০. শেরেবাংলা হল প্রভোস্টকে ১১ অক্টোবর বিকেল ৫টার মধ্যে প্রত্যাহার করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয় দাবিগুলো না মানা পর্যন্ত বুয়েটের সব একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। সংবাদ সম্মেলন শেষে সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বুয়েট ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করেন।
‘যে রাজনীতি ছাত্রদের জন্য ক্ষতিকর তার দরকার নেই’
এদিকে, ছাত্রলীগের নেতাদের মারধরে নিহত বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন তাঁর বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেছেন, যে রাজনীতি ছাত্রদের জন্য ক্ষতিকর সে রাজনীতি তো আমাদের দরকার নেই। রাজনীতি হওয়া দরকার ছাত্রদের কল্যাণে।
আজ আবরার হত্যার বিচার দাবিতে এক মৌন মিছিল শেষে বক্তৃতায় শফিকুল ইসলাম এসব কথা বলেন।
ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মারধরে নিহত বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে আজ সকালে বুয়েট ক্যাম্পাসে মৌন মিছিল করেছে আবরার ফাহাদের বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
সকাল ১০টার দিকে ‘তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক কৌশল পরিবার’ ব্যানারে পলাশী থেকে মিছিল বের করে তারা। মিছিল শেষে বুয়েট ক্যাম্পাসের শহীদ মিনারের পাদদেশে এসে সেখানে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগ দেয় ওই শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
সেখানে অধ্যাপক ড. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আবরার ফাহাদ হত্যার খুনিদের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই। আমার জানা মতে, এই ধরনের বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটা কোনো ধরনের নির্যাতনের লিখিত অভিযোগ পাইনি আমরা। লিখিত অভিযোগ পেলে আমরা আগে থেকে সতর্ক হতে পারি কিংবা এসব ঘটনার বিষয়ে আমরা পদক্ষেপ নিতে পারি।’
‘বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা শিক্ষক ও ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ চাই। কারণ আগে আমরা দেখতাম ছাত্রদল কিংবা ছাত্র ইউনিয়নের নেতারা একই রুমে ঘুমাত। কিন্তু এখনকার পরিস্থিতি আপনারা জানেন। এই রাজনীতি কোনো শিক্ষার্থীর কল্যাণে আসে না। বরং ক্ষতি করে। তাহলে যে রাজনীতি ছাত্রদের জন্য ক্ষতিকর সে রাজনীতি তো আমাদের দরকার নেই। রাজনীতি হওয়া দরকার ছাত্রদের কল্যাণে।’
রোববার রাতে বুয়েটের শেরেবাংলা হলে আবরার ফাহাদকে তাঁর কক্ষ থেকে ডেকে নিয়ে মারধর করেন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। গভীর রাতে হলের সিঁড়িতে তাঁর লাশ পাওয়া যায়। ঘটনার পরের দিন সোমবার চকবাজার থানায় হত্যা মামলা করেন আবরার ফাহাদের বাবা। মেধাবী শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের বাড়ি কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলায়।
এদিকে আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় এ পর্যন্ত মোট ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। ঘটনার তদন্তের দায়িত্ব পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগকে দেওয়া হয়েছে।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল, সহ-সভাপতি মুহতাসিম ফুয়াদ, সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান রবিন, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অনিক সরকার, ক্রীড়া সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন, সাহিত্য সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনির, উপ-সমাজকল্যাণ সম্পাদক ইফতি মোশাররফ সকাল, উপদপ্তর সম্পাদক মুজতবা রাফিদ, দুই সদস্য মুনতাসির আল জেমি ও এহতেশামুল রাব্বি তানিম এবং শামসুল আরেফিন রাফাত, মনিরুজ্জামান মনির ও মো. আকাশ হোসেন।#
পার্সটুডে/আশরাফুর রহমান/৯
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।