রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিথ্যাচার করছে মিয়ানমার, বাংলাদেশের নিন্দা ও প্রতিবাদ
নিজ দেশের নাগরিক রোহিঙ্গাদের নিয়ে একের পর এক মিথ্যাচারে লিপ্ত মিয়ানমার। তাদের সেনাবাহিনীর নিধন অভিযানে রাখাইন থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন নিয়ে কূটচাল, তাদের নাগরিক অধিকারসহ নানা ইস্যুতে বিভ্রান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করছে দেশটি। এর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ।
পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা কেন স্বেচ্ছায় নিজদেশে ফিরতে আগ্রহী হচ্ছে না, তার সঠিক কারণগুলো সমাধানে মিয়ানমারকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে বলেছে বাংলাদেশ। বুধবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে মিথ্যাচার বন্ধ করে, মিয়ানমার সরকারকে তাদের প্রতিশ্রুতি পূরণে মনোযোগী হতে হবে। মিয়ানমারের আন্তর্জাতিক সহযোগিতাবিষয়ক মন্ত্রী উ কিয়াও তিনের সাম্প্রতিক মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিবৃতি দিয়েছে।
বৃহস্পতিবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠান শেষে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন জানান, বাংলাদেশ থেকে ৪৬ জন রোহিঙ্গাকে ফেরত নেয়া হয়েছে বলে মিয়ানমার যে দাবি করেছে, তার কোনো সত্যতা নেই। তারা নিজেদের সীমান্তে অবস্থানকারী রোহিঙ্গাদেরও ভেতরে ঢুকতে দিচ্ছে না।
'রোহিঙ্গা ইস্যুতে কূটনৈতিক খেলা খেলছে মিয়ানমার'
রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের বিষয়ে মিয়ানমার সরকারের সদিচ্ছা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশ্লেষকরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে কূটনৈতিক খেলা খেলছে মিয়ানমার। রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়ার মতো পরিবেশ তারা তৈরি করেনি। এজন্য আসিয়ান বা জাতিসংঘকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। আর বাংলাদেশকেও সতর্ক থাকতে হবে।
সাম্প্রতিক ন্যাম সম্মেলনে উ কিয়াও তিন অভিযোগ করেন, ধর্মীয় নিপীড়ন, জাতিগত নির্মূল অভিযান ও গণহত্যার মতো শব্দ ব্যবহার করে রোহিঙ্গা সংকটকে বাংলাদেশ ভিন্নভাবে চিত্রায়িত করছে। আর রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব বঞ্চিত করার কারণ হিসেবে মিয়ানমার ওই জনগোষ্ঠীকে বাংলাদেশ থেকে যাওয়া অবৈধ অভিবাসী বলে দাবি করে। দেশটির দাবি, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় রোহিঙ্গারা পালিয়ে মিয়ানমারে গিয়েছিল। যাকে ভিত্তিহীন বলেছে বাংলাদেশ।
বিবৃতিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, নিজেদের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা সংকটে বাংলাদেশকে জড়ানোর চেষ্টা থেকে মিয়ানমারকে বিরত থাকতে হবে। এছাড়া সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সমন্বিত সহযোগিতা কলাকৌশলে বাংলাদেশের প্রস্তাবে মিয়ানমারকে ইতিবাচকভাবে সাড়া দিতে হবে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আরসার কোনো তৎপরতা নেই বলে মিয়ানমারকে নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ সরকার।
মিয়ানমারে জাতিগত দাঙ্গা ও সামরিক জান্তা সরকারের নির্যাতনে প্রাণ বাঁচাতে দেশ ছাড়ে রোহিঙ্গারা। ১৯৭৮ সালে শুরু হয় বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ। ২০১৭ সাল পর্যন্ত আশ্রয় নেয় প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গা। ২০১৭ সালে আবারও শুরু হয় জাতিগত নিধনযজ্ঞ। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর, নতুন করে পালিয়ে আসে আরও ৭ লাখের বেশি রোহিঙ্গা।#
পার্সটুডে/শামস মণ্ডল/আশরাফুর রহমান/১
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।