রোহিঙ্গা সংকট
মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলার শুনানি ১০ ডিসেম্বর, চীনের ভূমিকা চায় বাংলাদেশ
রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গাম্বিয়ার দায়ের করা মামলার শুনানির জন্য ১০ ডিসেম্বর থেকে ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে প্রথম ধাপে ১০ ডিসেম্বর শুনানি করবে গাম্বিয়া। আর ১১ ডিসেম্বর শুনানি করবে মিয়ানমার। দ্বিতীয় ধাপে দুই দেশই শুনানিতে অংশগ্রহণ করবে। আর এই শুনানি সরাসরি প্রচার হবে।
আফ্রিকার মুসলিম রাষ্ট্র গাম্বিয়া গত ১১ নভেম্বর রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যা এবং জেনোসাইড কনভেনশন ভঙ্গের অভিযোগে আইসিজে'তে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করে।
মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১৬ সাল থেকে পরিকল্পিতভাবে রোহিঙ্গাদের নিধনের জন্য অভিযান পরিচালনা করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। আর ২০১৭ সোল থেকে ক্লিয়ারেন্স অপারেশনের নামে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালায় মিয়ানমার। যারা এই গণহত্যার সাথে জড়িত, ট্রাইব্যুনালে তাদের শাস্তির দাবি করা হয়েছে মামলায়।
তবে, রোহিঙ্গা গণহত্যা নিয়ে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে দায়ের করা আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের তদন্তকে প্রত্যাখ্যান করেছে দেশটি। মামলা বিষয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মিয়ানমার সরকারের সরকারের মুখপাত্র বলেছেন, রোহিঙ্গা বিষয়ে আন্তর্জাতিক আদালতের তদন্ত আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী হয়নি। রোহিঙ্গাদের সাথে কোনো অন্যায় হলে তার তদন্ত করবে মিয়ানমারের নিজস্ব তদন্ত কমিটি।
চীনের সহযোগিতা আবশ্যক
এদিকে, মিয়নমারে নির্যানের মুখে পালিয়ে আসা এগারো লক্ষ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। তাদের ফিরিয়ে নিতে নানা টালবাহানা করছে মিয়ানমার। বাংলাদেশের এ সমস্যাটির সমাধান খুঁজতে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নানা দেনদরবার করছে।
তবে দেশের নিরাপত্তা ও কূটনৈতক বিশ্লেষকরা বলছেন, এ সংকট থেকে রেহাই পাবার জন্য জাপান, ভারতের মতো বন্ধু রাষ্ট্রকেও শক্ত পদক্ষেপ নেয়ার জন্য রাজি করাতে হবে। সর্বোপরি চীনের সমর্থন ছাড়া রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সম্ভব নয়।
গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবের আনুষ্ঠিত এক সেমিনারে এমন বক্তব্যই উঠে এসেছে।
অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, ইন্টারন্যারশনাল কোর্ট অব জাস্টিস এবং ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্টের সাম্প্রতিক পদক্ষেপ রোহিঙ্গা সংকট সমাধান ত্বরান্বিত করবে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে আইসিসি ও আইসিজের পদক্ষেপের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। বাংলাদেশ সেক্ষেত্রে এগিয়েই আছে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমারের সাথে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ঠিক রেখেই রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে আগ্রহী সরকার।
অনুষ্ঠানে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী শমসের মোবিন চৌধুরী বলেছেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে চীনের ভূমিকার জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।
তবে, বাংলাদেশের সাবেক একজন সেনা কর্মকর্তা মেজর (অব.) এমদাদ স্পষ্ট করেই বলেছেন, যতদিন মিয়ানমারকে চীন শক্তি জোগাবে ততদিন রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সম্ভব নয়।
ফের বাংলাদেশকে দোষারোপ
ওদিকে, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় ব্যর্থতার জন্য আবারও বাংলাদেশকে দায়ী করেছে মিয়ানমার।
মিয়ানমারের অনলাইন দ্য ইরাবতীতে প্রকাশিত এক রিপোর্টে জানা যায়, মিয়ানমার সরকারের মুখপাত্র ইউ জো হতাই অভিযোগ করেছে, রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশ সহযোগিতা করছে না। তাদের সহযোগিতা ছাড়া মানবিক সঙ্কটের শুধু আরো অবনতিই হবে। বাংলাদেশ শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়েছে। তারা যদি প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করতে না পারে তাহলে এর জন্য দায়ী থাকবে বাংলাদেশ। এক্ষেত্রে মিয়ানমারের বিচার করার মধ্য দিয়ে সমস্যার সমাধান হবে না।
তিনি গণমাধ্যমকে বলেছেন, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে এবং অবরোধ আরোপের আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ। তাদের এমন আচরণ করা উচিত হয় নি। বাংলাদেশ একটি অনুচিত কাজ করেছে।#
পার্সটুডে/আবদুর রহমান খান/আশরাফুর রহমান/১৯
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।