বাংলাদেশে সড়ক আইনের ব্যাপারে শ্রমিকদের আপত্তি: বিভিন্ন মহলের প্রতিক্রিয়া
https://parstoday.ir/bn/news/bangladesh-i75602
নিরাপদ সড়কের দাবিতে দেশব্যাপী আন্দোলনের পরিপ্রক্ষিতে গতবছর অক্টোবর মাসে জাতীয় সংসদে পাস হয় ‘সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮’। এর গেজেট জারি করা হলেও তার কার্যকারিতা ঝুলে ছিল দীর্ঘদিন। অতঃপর গত ১ নভেম্বর থেকে এটি কার্যকর করা হয়।
(last modified 2025-07-09T12:00:31+00:00 )
ডিসেম্বর ০১, ২০১৯ ১৫:১৪ Asia/Dhaka
  • বাংলাদেশে সড়ক আইনের ব্যাপারে শ্রমিকদের আপত্তি: বিভিন্ন মহলের প্রতিক্রিয়া

নিরাপদ সড়কের দাবিতে দেশব্যাপী আন্দোলনের পরিপ্রক্ষিতে গতবছর অক্টোবর মাসে জাতীয় সংসদে পাস হয় ‘সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮’। এর গেজেট জারি করা হলেও তার কার্যকারিতা ঝুলে ছিল দীর্ঘদিন। অতঃপর গত ১ নভেম্বর থেকে এটি কার্যকর করা হয়।

বিভিন্ন মহল এ আইনটিকে স্বাগত জানালেও পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা এর প্রতিবাদ জানিয়ে পরিবহন ধর্মঘট ডেকে জনদুর্ভোগ বাড়িয়ে দেয়। এ প্রেক্ষিতে সরকার চাপের মুখে নতিস্বীকার করে এবং আন্দোলনকারী শ্রমিক ও মালিক পক্ষের সাথে একটি সমঝোতায় উপনীত হয়। এ সমঝোতা অনুযায়ী গাড়ীর কাগজপত্র ও চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স হালনাগাদ করণের জন্য আগামী জুন মাস পর্যন্ত সময় বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের মিটিংয়ে আশ্বাস দেয়া হয়েছে সড়ক দুর্ঘটনায় শাস্তি কমানো বা চালক আটক হলে জামিনের বিধান সংক্রান্ত প্রস্তাবের ব্যাপারে আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হবে। 

ইতোমধ্যে নভেম্বর মাস জুড়ে জেলায় জেলায় ট্রাফিক সপ্তাহ পালন ও জনসচেতনতামূলক কর্মসূচি পালন ও পুলিশকে নতুন আইন বিষয়ক প্রশিক্ষণ প্রদান শেষে গতকাল থেকে ট্রাফিক আইন ভঙ্গের বর্ধিত হারের জরিমানা আদায় করা হচ্ছে।

আইন কার্যকর করার ব্যাপারে শ্রমিকদের আপত্তি ও আন্দোলন প্রসঙ্গে সিপিবি কেন্দ্রীয় নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, এ নিয়ে শ্রমিকদের সঠিকভাবে বোঝানো হয়নি। বরং তাদেরকে উসকানি দেয়া হয়েছে।

ইলিয়াস কাঞ্চন

এ প্রসঙ্গে, নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন জানান, চাপের মুখে নতুন আইন বাস্তবায়নে নতিস্বীকার করলে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরবে না।

সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল  জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, পরিবহন খাতে মানুষকে জিম্মি করে যারা ফায়দা নিতে চান, তারাই সড়ক পরিবহন আইনের বিরোধিতা করছেন। 

ইলিয়াস কাঞ্চন জানান, সড়কে নৈরাজ্য-অনিয়মের বিরুদ্ধে কথা বলার কারণেই, তাকে হুমকি দেয়া হচ্ছে ছড়ানো হচ্ছে বিভ্রান্তি। তবে, কোনো হুমকিতেই নিরাপদ সড়কের আন্দোলন থেকে সরে যাবেন না।

উল্লেখ্য, সড়ক দুর্ঘটনায় স্ত্রীকে হারিয়ে নিরাপদ সড়ক আন্দোলন শুরু করেছিলেন রূপালী পর্দার নায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন। সমব্যথী সহকর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ নিয়ে গড়ে তোলেন ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ সংগঠন। গতকাল ছিল এ সংগঠনের  ২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। এ আন্দেআলনের স্বীকৃতি হিসেবে সরকার তাকে একুশে পদকে ভূষিত করেছেন।

মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী

ওদিকে, সড়ক নিরাপত্তা ও যাত্রীদের কল্যাণে নিবেদিত অপর একটি সংগঠন ‘বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি’ নতুন সড়ক আইনের সুফল পেতে নয় দফা সুপারিশ পেশ করেছে।

নতুন সড়ক আইন বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ প্রসঙ্গে জাতীয় প্রেস ক্লাবে গতকাল এক  আলোচনা সভায় যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, আইন প্রয়োগে সময়ক্ষেপন করায় সড়কে বিশৃঙ্খলা আগের অবস্থাতেই আছে।

মোজাম্মেল হক চৌধুরী দাবি করেন,  যেসব সার্জেন্ট সড়ক পরিবহন আইন বাস্তবায়নের জন্য পদক্ষেপ নেবেন তাদের দুর্নীতিমুক্ত রাখার জন্য সিসিটিভি পদ্ধতিতে প্রসিকিউশন ব্যবস্থা চালু করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, নতুন আইনটি বাস্তবায়নে আইনশৃংখলা বাহিনী ও পরিবহন শ্রমিকদের মধ্যে আন্তরিক সহযোগিতার মনোভাব প্রয়োজন।

আইনে কী আছে

‘সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮’ অনুযায়ী ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালালে ৬ মাসের কারাদণ্ড বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয়দণ্ডের বিধান কার্যকর করা হবে। আইনে বলা হয়েছে, অন্তত: অষ্টম শ্রেণি পাস না করলে লাইসেন্স পাবেন না চালকরা। জাল ড্রাইভিং লাইসেন্স ব্যবহারের জন্য দুই বছরের কারাদণ্ড ও জরিমানা ৩ লাখ টাকা

আইনে সাধারণ চালকের বয়স আগের মতোই কমপক্ষে ১৮ বছর এবং পেশাদার চালকদের বয়স হতে হবে কমপক্ষে ২১ বছর। 

গাড়ীর ফিটনেস হালনাগাদ না থাকলে এক বছরের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা জরিমানা করা হবে। গাড়ি চালানোর সময় মোবাইল মোবাইল ফোন ব্যবহার করলে এক মাসের কারাদণ্ড ও ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে।

দুর্ঘটনার জন্য দণ্ডবিধি অনুযায়ী তিন রকমের বিধান রয়েছে। মানুষ হত্যা হলে ৩০২ ধারা অনুযায়ী মৃত্যুদণ্ডের সাজা হবে। খুন না হলে ৩০৪ ধারা অনুযায়ী যাবজ্জীবন। বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালিয়ে মৃত্যু ঘটালে ৩০৪ (বি) ধারা অনুযায়ী তিন বছরের কারাদণ্ড হবে। দুই গাড়ি পাল্লা দিয়ে দুর্ঘটনা ঘটালে তিন বছরের কারাদণ্ড বা ২৫ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড দেওয়া হবে। দুর্ঘটনায় না পড়লেও বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালানোর জন্য আইনে সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ড অথবা ২ লাখ টাকা জরিমানার প্রস্তাব করা হয়েছে আইনে।

নারী, শিশু, প্রতিবন্ধী ও বয়ঃজ্যেষ্ঠ যাত্রীর জন্য সংরক্ষিত আসনে অন্য কোনো যাত্রী বসলে এক মাসের কারাদণ্ড বা ৫ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড দেওয়া হবে।

তাছাড়া, মদপান করে বা নেশাজতীয় দ্রব্য খেয়ে গাড়ি চালালে, সহকারীকে দিয়ে গাড়ি চালালে, উল্টো দিকে গাড়ি চালালে, নির্ধারিত স্থান ছাড়া অন্য স্থানে গাড়ি থামিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি, চালকছাড়া মোটরসাইকেল একজনের বেশি সহযাত্রী উঠালে, মোটরসাইকেলের চালক ও সহযাত্রীর হেলমেট না থাকলে, ছাদে যাত্রী বা পণ্য বহন, সড়ক বা ফুটপাতে গাড়ি সারানোর নামে যানবাহন রেখে পথচারীদের চলাচলে বাধা সৃষ্টি, ফুটপাতের ওপর দিয়ে কোনো মোটরযান চলাচল করলে সর্বোচ্চ তিন মাস কারাদণ্ড বা ৩৫ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড প্রস্তাব করা হয়েছে।#

 

পার্সটুডে/আবদুর রহমান খান/আশরাফুর রহমান/১

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।