স্থল নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে ‘আম্পান’: সবচেয়ে বেশি ক্ষতি উপকূলীয় অঞ্চলে
বাংলাদেশের সুন্দরবন ও আশেপাশের উপকূলীয় জেলাগুলোতে রাতভর তাণ্ডব চালিয়ে ঘূর্ণিঝড় ‘আম্পান’ সকাল নাগদ দুর্বল হয়ে স্থল নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এটি উত্তর দিকে আগ্রসর হয়ে যশোর, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া পার হয়ে দুপুর নাগাদ পাবনা অঞ্চলে অস্থান করছিল। ঘূর্ণিঝড়টি আরো উত্তর-পূর্ব দিকে এগিয়ে বিকেল নাগাদ ময়মনসিংহ অঞ্চল অতিক্রম করে ভারতের মেঘালয় রাজ্যে গিয়ে স্তিমিত হয়ে যাবে বলে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় আম্পান গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় সুন্দরবনসহ বাংলাদেশের উপকূলে প্রবল বেগে আছড়ে পড়ে। দুপুর নাগাদ প্রাপ্ত খবরে জানা যায়, ঘূর্ণিঝড়ে বিভিন্ন জেলায় অন্তত: ১৩ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এদের মধ্যে শাহ আলম নামের একজন ঘূর্ণিঝড় সতর্কীকরণ ভলান্টিয়ার মারা গেছেন উপকূলীয় জেলা কলাপাড়ায়।
ইতোমধ্যে মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
তবে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে আজ সকালেও বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টি ও দমকা বাতাস বইছিল। বিকেল নাগাদ মেঘ কেটে গিয়ে ঢাকার আকাশে হালকা সূর্যালোকও দেখা গেছে।
এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, আম্পানের আঘাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সুন্দরবন সংলগ্ন খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরার উপকূলীয় অঞ্চল। বিধ্বস্ত হয়েছে কাঁচা ঘরবাড়ি। উপড়ে পড়েছে গাছপালা। বিভিন্ন স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে সমুদ্রের লোনা পানিতে প্লাবিত হয়েছে শতাধিক গ্রাম। ভেসে গেছে অর্থকরি মাছের চাষের ঘের।
দূর্যোগ কবলিত উপজেলার ইউএনও ও কৃষি কর্মকর্তারা ইতোমধ্যে সরেজমিনে খোঁজ-খবর নিয়ে সার্বিক ক্ষয়ক্ষতির বিবরণ সংগ্রহের কাজে লেগে পড়েছেন।

বিদ্যুৎ বিপর্যয়
ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে উপকূলীয় এলাকায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে প্রায় ৫১ লাখ গ্রাহক। বুধবার সন্ধ্যা থেকেই ঝড়ো আবহাওয়ায় বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কোথাও গাছ পড়ে তার ছিঁড়েছে, কোথাও বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে। নিরাপত্তার জন্য বিতরণ লাইনে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে অধিকাংশ এলাকায়। এছাড়া ঝড়ো হাওয়া ও বৃষ্টির কারণে দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘ্নিত হয়েছে।
আমবাগান বিধ্বস্ত
ঘূর্ণিঝড় আম্পানের তাণ্ডবে রাজশাহীর বাগানগুলোর ২০ শতাংশেরও বেশি আম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারনা করেছে রাজশাহী জেলা প্রশাসন। বিস্তারিত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ পরে জানা যাবে।
বৃহস্পতিবার সকালে জেলা প্রশাসক হামিদুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, জেলায় আম-লিচু ছাড়াও বোরো ধান, পানসহ অন্যান্য কৃষি ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গ্রামাঞ্চলের কিছু বাড়িঘর ভেঙে পড়ার খবরও পেয়েছি।#
পার্সটুডে/আবদুর রহমান খান/আশরাফুর রহমান/২১
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।