বন্যায় জনদুর্ভোগ চরমে: আগস্টের মাঝামাঝি উন্নতি হতে পারে-আবহবিদরা
(last modified Tue, 04 Aug 2020 14:48:07 GMT )
আগস্ট ০৪, ২০২০ ২০:৪৮ Asia/Dhaka

বাংলাদেশের বিদ্যমান বন্যা পরিস্থিতি আগস্টের মাঝামাঝি নাগাদ উন্নতি হবে বলে আশা করছেন আবহবিদরা। তবে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে এ মাসের শেষ নাগাদ ফের স্বল্পমেয়াদি বন্যার সৃষ্টি হতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে। আগস্ট মাসের দীর্ঘমেয়াদি আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এ তথ্য জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

পূর্বাভাসে বলা হয়েছে,আগস্টে বাংলাদেশে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এ মাসে বঙ্গোপসাগরে এক থেকে দুটি বর্ষাকালীন লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে যার মধ্যে একটি বর্ষাকালীন নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে। ফলে সাগর ফুঁসে থাকলে  নদ-নদীর পানি কমতে সময় নেবে।

এদিকে উত্তরের জেলাগুলিতে কোথাও কোথাও পানি কমলেও এখনো আশ্রয়হীন মানুষেরা ঘরে ফিরতে পারছে না।  বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত  বাড়ীর আঙ্গিনা থেকে আবর্জনা ময়লা পানি পুরোপুরি শুকানোর পর ভাঙা বাড়ি-ঘর মেরামত করে বসবাসের উপযোগী করতে আরো সপ্তাহখানেক অপেক্ষা করতে হবে।

বন্যায় জনদুর্ভোগ চরমে (ফাইল ফটো)

অপরদিকে,দেশের মধ্যাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি এখনো অপরিবর্তিত থাকায় জনদুর্ভোগ চরমে  পৌঁছেছে। আশ্রয়,রান্নার ব্যবস্থা,খাদ্য ও পানীয় জলের সংকট তীব্র। কোনো প্রকার ত্রাণ না পাবার অভিযোগ করেছেন অনেকেই।

বগুড়ার বন্যাকবলিত এলাকার মানুষের দুর্দশার কথা রেডিও তেহানকে  জানিয়েছেন স্থানীয় সাংবাদিক মহসীন আলী রাজু। 

ইতোমধ্যে গত দু’দিনে বন্যাকবলিত এলাকায় পানিতে ডুবে মারা গেছে অন্তত: এগারোটি শিশু। টাঙ্গাইল,পটুয়াখালী,কুমিল্লা,ব্রাহ্মণবাড়িয়া,ঢাকা ও শেরপুরে এসব শিশু  মারা গেছে।

বাংলাদেশের কৃষিমন্ত্রী ড. মো.আব্দুর রাজ্জাক

ওদিকে,কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক আজ জানিয়েছেন,চলমান বন্যার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে আছে। বন্যায় কৃষকের ক্ষতি পোষাতে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের অতিদ্রুত বন্যাপ্লাবিত এলাকায় সরেজমিন পরিদর্শনের মাধ্যমে মাঠপরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ কার্যক্রম নিবিড়ভাবে তদারকি ও মনিটরিংয়ের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। 

পদ্মা-যমুনা  বিপদসীমার উপরে বইছে

পদ্মায় পানির তীব্র স্রোত  ও বৈরী আবহাওয়ার কারণে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে  কাঁঠালবাড়ী-শিমুলিয়া নৌরুটে লঞ্চ ও স্পিডবোট চলাচল বন্ধ রয়েছে।

যমুনা নদীর পানি সিরাজগঞ্জ শহর পয়েন্টে গত ২দিন সামান্য বৃদ্ধি পেলেও আজ মঙ্গলবার সকালে ৯ সেন্টিমিটার কমেছে। তবে এখনও বিপৎসীমার ৩১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

ফলে সিরাজগঞ্জের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। এখনো পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে জেলার প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ।দীর্ঘস্থায়ী বন্যার কারণে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন তারা। সংকট দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও শুকনো খাবারের।

মুন্সীগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও দুর্ভোগ কমেনি। মাওয়া পয়েন্টে পদ্মা নদী বিপৎসীমার ৪০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে  প্রবাহিত হচ্ছে। মঙ্গলবার (৪ আগস্ট) সকাল ৬টায় মুন্সীগঞ্জের পদ্মা নদীর ভাগ্যকূল পয়েন্টে ৬.৭৬ মিটার উচ্চতায় পানি প্রবাহিত হচ্ছে। যা বিপৎসীমার ৪৬ সেন্টিমিটার ওপরে।

গোপালগঞ্জ

ওদিকে, গোপালগঞ্জে প্রতিদিনই নতুন নতুন এলাকা বন্যার পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। আগে গোপালগঞ্জ সদর,কাশিয়ানী ও মুকসুদপুর উপজেলার ১৫টি গ্রামের বাসিন্দারা পানিবন্দি ছিল।এর সাথে নতুন করে যোগ হয়েছে কোটালীপাড়া উপজেলার কলাবাড়ি ইউনিয়নের শিমুলবাড়ি,কাফুলাবাড়ি এবং রামনগর,কলাবাড়ি ও বৈকণ্ঠপুর গ্রাম।

এ নিয়ে জেলার ২০টি গ্রামের অন্তত তিন হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। ৫শ’ পরিবার উচুঁ এলাকার বিভিন্ন স্কুলে ও রাস্তার পাশে কুড়েঘর বানিয়ে সেখানে আশ্রয় নিয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড বলেছে,মধুমতি নদীতে পানি এখনো বিপৎসীমার ৪০সেন্টিমিটার এবং মধুমতি বিলরুট চ্যানেলে ১০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গতকাল মধুমতি নদীতে পানি বিপৎসীমার ৩৮ সেন্টিমিটার এবং মধুমতি বিলরুট চ্যানেলে ১০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছিল।

জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে দুর্গতদের সাহায্যের জন্য ৩শ’ মেট্রিক টন চাল, গো-খাদ্য ও শুকনা খাবার এবং ৬ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।

মাদারীপুর

মাদারীপুরের আড়িয়াল খাঁ নদীর লঞ্চঘাট এলাকার শহর রক্ষা বাঁধের ৪০ মিটার এলাকা শনিবার বিকেল ৪টার দিকে নদীতে বিলীন হয়ে যায়। ফলে ভাঙনের হুমকির মুখে রয়েছে মাদারীপুর শহরের শত শত স্থাপনা। ভাঙন প্রতিরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে ফেলা হচ্ছে বালুর বস্তা।

স্থানী সূত্রে জানা গেছে,মাদারীপুরের আড়িয়াল খাঁ নদীর শহর রক্ষা বাঁধের লঞ্চঘাট এলাকার ওয়াক ওয়ের ৪০ মিটার এলাকা ঈদের দিন শনিবার বিকেল ৪টার দিকে হঠাৎ করে নদীতে বিলীন হয়ে যায়। এর ফলে ভাঙনের ঝুঁকিতে হুমকির মুখে রয়েছে মাদারীপুর শহরের শত শত বসতবাড়ি। আতঙ্কে রয়েছে শহরবাসী।

নদীর পাড়ের বহু মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে মালামাল নিয় অন্যত্র চলে গেছে। লঞ্চঘাটের উত্তর পাশে সবুজবাগ এলাকার আরও একটি নদীতে গোসলের ঘাটে ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। যে কোনো মুহূর্তে নদীতে বিলীন হয়ে যেতে পারে শহর রক্ষা বাঁধ,ওয়াক ওয়ে এবং গোসলের ঘাঁটটি।#

পার্সটুডে/আবদুর রহমান খান/গাজী আবদুর রশীদ/৪

 

ট্যাগ