সরকার স্বাধীনতার চেতনা ও সংবিধানের পবিত্রতাকে লঙ্ঘন করছে: অভিযোগ ফখরুলের
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আজ অভিযোগ করেছেন, ক্ষমতাসীন সরকার প্রতিনিয়তই স্বাধীনতার চেতনা এবং সংবিধানের পবিত্রতাকে লঙ্ঘন করছে, অপমান করছে।
আজ শুক্রবার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ বাতিলের দাবীতে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মহাসচিব এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, এই আইনের নগ্ন শিকার হচ্ছেন সাংবাদিক, শিক্ষক, ছাত্র, ব্যবসায়ীসহ অজস্র নাগরিক। তিনি অবিলম্বে এদের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদ মানুষের চিন্তা-চেতনা, মত প্রকাশ ও বিবেকের স্বাধীনতাকে মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধ ও শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয়েছিল। কিন্তু সেই মৌলিক অধিকার, চিন্তা চেতনার অধিকার, মতপ্রকাশ ও বিবেকের স্বাধীনতাকে বৈষম্যমূলকভাবে প্রয়োগের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত অপমান করা হচ্ছে।
মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’র তথ্য উদ্ধৃত করে বিএনপি মহাসচিব জানান, ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ১৫৩ জন নাগরিকের বিরুদ্ধে মামলা করে তাদের হয়রানি করা হয়েছে। প্রায় সবগুলো মামলার একই রকম অভিযোগ হলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মত প্রকাশের জন্য তথাকথিত সম্মানহানি বা রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করা। এসব অভিযোগ বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে সরকারি দলের লুটেরাদের বিরুদ্ধে কথা বলা, রাজনৈতিক মত প্রকাশ করা , সরকারের ভ্রান্ত নীতি ও কাজের সমালোচনা করা – এসব কারণে মামলা করা হয়েছে। মামলার ভয়ে আজ জাতির কণ্ঠ রুদ্ধ। বিবেকের স্বাধীনতা শৃঙ্খলিত যা সংবিধান লঙ্ঘনের শামিল।
তিনি বলেন, জানুয়ারি, ২০২০ সাল থেকে জুন ২০২০ সাল পর্যন্ত ১২ জন সাংবাদিক ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার হয়েছেন। ইতোমধ্যেই সংবাদপত্র- সম্পাদক পরিষদ তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮’র জন্য সাংবাদিকরা স্বাধীনভাবে লিখতে পারছেন না। দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো এই কালো আইন বাতিলের দাবি তুলেছে। বিএনপি শুরু থেকেই বলে এসেছে এই আইন কালো আইন। এই আইন সংবিধান বিরোধী এবং এই আইন জনগণের কণ্ঠ রোধ করার জন্য সরকারের হাতিয়ার। সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য এই আইন করেছে।
মানবাধিকার সংস্থার তথ্য উদ্ধৃত করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ২০১৮ সালের ৯ অক্টোবর থেকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন (ডিএসএ) কার্যকর রয়েছে। আর্টিকেল ১৯-এর হিসাব অনুযায়ী, ২০২০ সালের ২২ জুন পর্যন্ত মোট মামলা হয়েছে ১০৮ টি। এই সব মামলায় মোট আসামি ২০৪ জন। তাদের মধ্যে সাংবাদিক ৪৪ জন, আর অন্যান্য পেশায় কর্মরত ও সাধারণ মানুষ ১৬০ জন। এই হিসেবে প্রায় ২৫ ভাগ আসামিই হলেন সাংবাদিক। এরমধ্যে মধ্যে জানুয়ারি মাসে ১০, ফেব্রুয়ারিতে ৯, মার্চে ১৩, এপ্রিলে ২৪, মে-তে ৩১ এবং জুন মাসের ২২ তারিখ পর্যন্ত ২১টি মামলা হয়েছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে। আর্টিকেল ১৯ অনুযায়ী, ২০১৯ সালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে ৬৩টি। ২০১৮ সালে ডিএসএ এবং আইসিটি অ্যাক্ট মিলিয়ে মামলা হয়েছে ৭১টি।
তুলনামূলক বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১৯ সালে এক বছরে মোট মামলা হয়েছে ৬৩টি। আর সেখানে চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসেই মামলা হয়েছে তার চেয়ে বেশি, ১০৮টি।
ফখরুল বলেন, ঢাকায় অবস্থিত বাংলাদেশে একটি মাত্র সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনালের হিসাব অনুযায়ী, এই বছরের মার্চ পর্যন্ত ডিজিটাল আইনে মামলা হয়েছে মোট ৩২৭টি। ২০১৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৫৫০টির মতো মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। বিচারাধীন মামলা আছে এ পর্যন্ত মোট এক হাজার ৯৫৫টি। এরমধ্যে থানায় দায়ের করা এক হাজার ৬৬৮টি এবং আদালতে ২৮৭টি। ৫৫টি মামলা হাইকোর্টের নির্দেশে স্থগিত আছে।
বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের আশ্বস্ত করে বলেন, ভবিষ্যতে তার দল ক্ষমতায় আসলে মানুষের অধিকার খর্ব করে এমন কোন আইন বাস্তবায়ন করা হবে না। #
পার্সটুডে/আব্দুর রহমান খান/রেজওয়ান হোসেন/১৪