অক্টোবর ২১, ২০২০ ১৬:২২ Asia/Dhaka
  • ট্রাকে করে ২৫ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি শুরু করেছে টিসিবি
    ট্রাকে করে ২৫ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি শুরু করেছে টিসিবি

বাংলাদেশে আলুর অস্বাভাবিক দর বৃদ্ধির মধ্যে ক্রেতাদের চাহিদা পূরণে আজ (বুধবার) থেকে ঢাকা শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ট্রাকে করে ২৫ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি শুরু করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত বিপণন প্রতিষ্ঠান টিসিবি। জনপ্রতি ২ কেজি করে ২৫ টাকা কেজির আলু বিক্রি করা হচ্ছে। একই সাথে পেঁয়াজ, ভোজ্যতেল, চিনি, মশুর ডাল নির্ধারিত সাশ্রয়ী মূল্যে বিক্রয় করা হচ্ছে টিসিবি’র ট্র্যাকে করে।

বাজারে আলুর দাম অস্বাভবিকভাবে বেড়ে যাওয়ার পর গত ৭ অক্টোবর কৃষি বিপণন অধিদপ্তর কোল্ড স্টোরেজ পর্যায়ে প্রতি কেজি আলু ২৩ টাকা, পাইকারীতে ২৫ টাকা এবং খুচরায় দাম ৩০ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছিল। কিন্তু সেই দামে কেউ আলু বিক্রি করছিল না। এক কেজি আলু কিনতে খরচ হচ্ছিল ৫০ টাকা।

এ অবস্থায়, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় গতকাল আলু ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সভা করে আলুর দাম পুনঃনির্ধারণ করে দেয়। সে অনুযায়ী, খুচরা বাজারে এক কেজি আলুর দাম কেজি প্রতি ৩৫ টাকা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। এছাড়া কোল্ড স্টোরেজ পর্যায়ে প্রতি কেজি আলু ২৭ টাকা এবং পাইকারিতে ৩০ টাকা কেজি বেঁধে দিয়ে মঙ্গলবার দাম পুনঃনির্ধারণ করে দিয়েছে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর।

নতুন দর বেঁধে দিয়ে এ দামে যাতে সব পর্যায়ে আলু বিক্রি হয় তা নিশ্চিত করতে ডেপুটি কমিশনারদের (ডিসি) প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সভা থেকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।

আলু উৎপাদনে বিশ্বে সপ্তম স্থানে অবস্থান করছে বাংলাদেশ

ব্যবসায়ীদের প্রতিবাদ

এদিকে, দাম নিয়ন্ত্রণের অজুহাতে বাজারে মোবাইল কোর্টের অভিযানের প্রতিবাদে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের আলু ব্যবসায়ীরা গতকাল মঙ্গলবার দোকান বন্ধ রাখে। ব্যবসায়ীরা জানান, কয়েক দিন ধরেই অভিযানের নামে তাদেরকে নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। এমনকি নানা অজুহাতে তাদের জরিমানাও করা হয়েছে। এর প্রতিবাদেই তারা পাইকারী বাজারে আলু বিক্রি বন্ধ রেখেছেন।

কারওয়ান বাজারের আলু ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, পাইকারি বাজারে আলু ৪২ থেকে ৪৩ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। এই আলুই খুচরা বাজারে ৫০-৫৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে। কথায় কথায় অভিযানের নামে আমাদেরকে হয়রানি করা হচ্ছে। তারা জানান, র‌্যাব-পুলিশ দিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। এটা আমরা বুঝলেও সরকার বুঝতে চাচ্ছে না।

এ প্রসঙ্গে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের উপপরিচালক মঞ্জুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার জানান, সরকারের নির্দেশনা বিভিন্ন জেলার আলুর গুদামের মালিক, পাইকারি ব্যবসায়ী ও খুচরা বিক্রেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ব্যবসা বন্ধ রাখার মতো কোনো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি বরং দাম স্থিতিশীল রাখতে তাদের বিভিন্ন নির্দেশনাসহ পরামর্শ দেয়া হয়েছে। আর যাদের জরিমানা করা হয়েছে তারা মূলত ক্রয় রশিদসহ আইন অনুযায়ী কাগজপত্র দেখাতে পারেনি।

উৎপাদন ও চাহিদা

আলু বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ ফসল। সাধারণত ধান ও গমের পরই আলুর স্থান। বর্তমান চাষের জমির পরিমাণ ও ফলনের হিসেবে ধানের পরই আলুর স্থান। বর্তমানে আলু উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে সপ্তম স্থানে অবস্থান করছে।  

বাংলাদেশে প্রতিবছর আলু উৎপাদন বাড়ছে। স্বাধীনতার পরে আলু উৎপাদন ১১ গুণের বেশি বেড়েছে। অধিক জনসংখ্যার জন্য খাবারের যে চাপ তা অনেকটা মেটাচ্ছে আলু। বর্তমানে দেশের চাহিদা মিটিয়ে আলু রপ্তানিও হচ্ছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী দেশে ৪০ লাখ টন আলুর চাহিদার বিপরীতে গড়ে প্রায় ৮০ লাখ টন আলু উৎপাদিত হচ্ছে।

কৃষি তথ্য পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ১৯৬৯-৭০ সালে আলু উৎপাদন ছিল ৮ দশমিক ৯১ লাখ মেট্রিক টন। ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে তা বেড়ে হয়েছে ৯৬ দশমিক ৫৫ লাখ মেট্রিক টন। বর্তমানে ৪ দশমিক ৭১ লাখ হেক্টর জমিতে আলু উৎপাদন করা হচ্ছে। তবে আলু উৎপাদনের জমি কমলেও উৎপাদন বেড়ছে।

আমাদের দেশে উৎপাদিত সব জাতের এবং সব আকারের আলুই আমদানিকারক দেশের কাছে সমানভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া এবং শ্রীলংকায় গ্রানুলা জাতের আলুর কদর বেশি। সাম্প্রতিককালে মালয়েশিয়ায় ডায়মন্ট ও কার্ডিনাল জাতের আলু রপ্তানি করা হয়েছে। ১০০ গ্রাম থেকে ১৫০ গ্রাম ওজন এবং ৪০-৬০ মি.মি আকারের উজ্জ্বল রঙ ও ভাসাভাসা চোখ (shallow eyed tuber) ও অধিক সুপ্তকাল (Longer dormancy) বিশিষ্ট মসৃণ ত্বকের আলু রপ্তানির জন্য বেশি উপযোগী। আর আলু রপ্তানির সবচেয়ে উপযুক্ত সময় হচ্ছে নতুন আলু আসার পর ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ মাস। বাংলাদেশের কৃষি পঞ্জিকা অনুযায়ী নভেম্বর থেকে আলুর চাষ শুরু হয়।#

পার্সটুডে/আবদুর রহমান খান/আশরাফুর রহমান/২১

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ