রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে প্রশাসনের উদ্বেগ: ক্যাম্প পরিদর্শনে তুর্কি রাষ্ট্রদূত
কক্সবাজারের টেকনাফে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের গুলিতে আজ ( বৃহস্পতিবার) সকালে আব্দুস সুকুর (৩৫) নামে এক যুবক নিহত হয়েছে। আজ সকাল এগারোটার দিকে নয়াপাড়া ২৬ নং ক্যাম্পের পাশে সুকুরেদ বাড়ীর আঙ্গিনায় এ হত্যকাণ্ড ঘটে।
নিহতের চাচা আবুল হাসিম জানান, জাকির হোসেন নামের ডাকাত সর্দারের নেতৃত্বে ৭/৮ জন সশস্ত্র লোক আব্দুস সুকুরকে তার ঘর থেকে টেনে-হিঁচড়ে বার করে এবং বাড়ির আঙ্গিনায় নিয়ে পরপর তিনটি গুলে করে। বাড়ির অন্যদের বন্দুকের মুখে হত্যার ভয় দেখিয়ে তারা দ্রুত চলে যায়। গুলির শব্দে সেখানে ছুটে আসে ক্যাম্পের দায়িত্বে থাকা আর্মড পুলিশ ব্যাটেলিয়ন এবং স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পের একাধিক সূত্র জানায়, ক্যাম্প এলাকায় গড়ে ওঠা দোকানপাট থেকে চাঁদা আদায়, মিয়ানমার থেকে নিয়ে আসা ইয়াবা ও নানা প্রকার মাদক বাণিজ্য, অস্ত্র বানিজ্য এবং আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে প্রায়ই সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বেশিরভাগ ক্যাম্পে একাধিক সন্ত্রাসী গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। গত মাসে এরকম সংঘর্ষের ঘটনায় নিহত হয়েছে ৭জন, আহত হয়েছে অন্তত শতাধিক ।
এদিকে, বুধবার বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে ভার্চুয়াল সভায় ভোটার তালিকায় রোহিঙ্গাদের অন্তর্ভুক্তি ঠেকাতে এবং তাদের অবাধ চলাচল বন্ধ করাসহ ১৪টি সুপারিশ প্রণয়ন করা হয়েছে। এসব সুপারিশের মধ্যে অন্যতম হল- রোহিঙ্গাদের কেউ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি হলে তাদেরকে আগামী নির্বাচনগুলোতে অযোগ্য ঘোষণা করা, পার্বত্য এলাকায় ভোটার হতে গ্রাম কারবারি বা হেডম্যানের প্রত্যয়ন বাধ্যতামূলক করা ও রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তর করা।
ওই সভায় জন্ম নিবন্ধন, নাগরিক সনদ, ওয়ারিশ সনদসহ বিভিন্ন সনদ দেওয়ার ক্ষেত্রে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। রোহিঙ্গাদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তির ঘটনায় জড়িত জনপ্রতিনিধি, কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ভোটার তালিকা আইন, ২০০৯ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার কথাও স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়। বৈঠক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। বৈঠকে অন্যান্য সুপারিশের মধ্যে আছে- নির্বাচন কমিশন ঘোষিত ৩২টি বিশেষ এলাকার কাগজপত্র আরও কঠোরভাবে যাচাই-বাছাই করতে হবে। প্রয়োজনে এসব কাগজপত্র প্রত্যয়ন করে নিতে হবে। দুর্গম এলাকায় ভোটার করার ক্ষেত্রে স্থানীয় গ্রাম কারবারি বা হেডম্যানের প্রত্যয়ন নিতে হবে।
এ বিষয়ে সভার সভাপতি ও নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, একজনকে ভোটার করার ক্ষেত্রে যেসব কাগজপত্র বা ডকুমেন্ট নেয়া হয় তার প্রায় সবই স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও বিভিন্ন সংস্থা দিয়ে থাকে। আমরা জনপ্রতিনিধিদের বোঝানোর চেষ্টা করেছি, তারা যেন সঠিক ব্যক্তিকে নিরপেক্ষভাবে সনদ দেন। রোহিঙ্গাদের নাগরিক বা অন্য সনদ না দেন সেসব বিষয়েও সতর্ক হবার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে, বাংলাদেশে নিযুক্ত তুরস্কের রাষ্ট্রদূত মুস্তাফা ওসমান তুরান রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ সরকারকে তার দেশের পক্ষ থেকে সহায়তা অব্যাহত রাখার কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
কক্সবাজারে অবস্থিত শরণার্থী শিবিরগুলোতে ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ। সেখানে তুরস্ক সরকারের মানবাধিবকার সংস্থাগুলোর কার্যক্রম দেখতে দু'দিনের সফরে কক্সবাজারে যান তুরস্কের রাষ্ট্রদূত।
ঢাকাস্থ তুর্কি দূতাবাস জানিয়েছে, ২০১৭ সাল থেকে রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে প্রয়োজনীয় মানবিক সহায়তা প্রদানের জন্য প্রথম দিকে যেসব দেশ সেখানে তাদের উপস্থিতি নিশ্চিত করেছিল, তুরস্ক তাদের মধ্যে অন্যতম।#
পার্সটুডে/আবদুর রহমান খান/এনএম/৫
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।