ইরানের হামলায় ইসরাইলে অর্থনীতি ও কৌশলগত খাতে চরম বিপর্যয়
-
ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ধ্বংসস্তূপে ইসরাইলের মূল অর্থনৈতিক খাত
গাজা যুদ্ধ এবং বিশেষত ইরানের ‘ট্রু প্রমিজ-৩’ অভিযান ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরাইলের অর্থনৈতিক ও কৌশলগত খাতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সাতটি কৌশলগত কোম্পানি ও অর্থনৈতিক খাত এই যুদ্ধের ফলে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
আল জাজিরার বরাত দিয়ে পার্সটুডে জানিয়েছে, ইসরাইল শুধু সামরিক সংকটই নয়, তার ইতিহাসের সবচেয়ে কঠিন অর্থনৈতিক সংকটও পার করছে। ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ইসরাইলি কোম্পানি ও বৃহৎ অর্থনৈতিক খাতগুলো ক্রমবর্ধমান চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। এর মধ্যে রয়েছে কার্যক্রম স্থগিত, বিদেশি বিনিয়োগের পতন, শেয়ারের মূল্য হ্রাস এবং পর্যটন, প্রযুক্তি ও জ্বালানির মতো কৌশলগত খাতগুলোর অচলাবস্থা।
ইরানের মেহর নিউজ এজেন্সি জানিয়েছে, আল জাজিরা তার প্রতিবেদনে ইসরাইলের সাতটি কোম্পানি ও অর্থনৈতিক খাতের ক্ষয়ক্ষতি বিশ্লেষণ করেছে, যার বেশিরভাগই ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ফলে হয়েছে।
১. বাজান পেট্রোকেমিক্যাল কোম্পানি
বাজান গ্রুপ ইসরাইলের বৃহত্তম তেল শোধনাগার কোম্পানি, যার সদর দপ্তর হাইফায় অবস্থিত। এটি ইসরাইলের তেল শোধন ও পেট্রোকেমিক্যাল শিল্পের মূল স্তম্ভ। ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় এই কোম্পানির শোধনাগারগুলো ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং এর কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, হামলায় তেল শোধনাগার কোম্পানিতে বিশাল বিস্ফোরণ ঘটেছে।
২. শেভরন কোম্পানি
শেভরন কোম্পানি ভূমধ্যসাগরে অবস্থিত তামার ও লেভিয়াথান গ্যাসক্ষেত্র পরিচালনা করে। লেভিয়াথান ইসরাইলের সবচেয়ে বড় গ্যাস রপ্তানিকারক, যা দেশটির ৪০% গ্যাস উৎপাদন করে। ইরানের ‘ট্রু প্রমিজ-৩’ অপারেশনে লেভিয়াথান গ্যাসক্ষেত্র ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইসরাইলের জ্বালানি মন্ত্রণালয় ও ব্লুমবার্গ নিউজ এজেন্সি এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।
৩. ইন্টেল (ক্রিয়াত গাট)
ইসরাইলের ক্রিয়াত গাটে অবস্থিত ইন্টেলের কারখানায় হাজারো কর্মী নিয়োজিত। গাজা যুদ্ধের সময় এই কোম্পানি তার ১৫% কর্মী হারিয়েছে, যারা ইসরাইলি সেনাবাহিনীর রিজার্ভ সদস্য ছিল এবং যুদ্ধে যোগ দেয়।
৪. এল আল এয়ারলাইন্স
ইরানের বিরুদ্ধে ইসরাইলি হামলার পর, এল আল এয়ারলাইন্সের সব ফ্লাইট বাতিল করা হয় এবং বেন গুরিয়ন বিমানবন্দর বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলে কোম্পানির শেয়ারের মূল্য ৩.৫% কমে যায়।
৫. বেজেক গ্রুপ
এই গ্রুপ ইসরাইলের বৃহত্তম টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি, যা সম্পূর্ণ যোগাযোগ সেবা প্রদান করে। গাজা যুদ্ধে এই কোম্পানির ২০২৪ সালে ১৪.৫ মিলিয়ন ডলার ক্ষতি হয়েছে। এছাড়াও, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এটি বারবার সাইবার হামলার শিকার হয়েছে। ২০২৩ সালে ইসরাইলি স্টক এক্সচেঞ্জে নিবন্ধিত কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে ৩,৩৮০টি সাইবার হামলা হয়েছে, যা ইসরাইলকে ৩.২ বিলিয়ন ডলার ক্ষতির মুখে ফেলেছে
৬. উদীয়মান প্রযুক্তি খাত
গাজা যুদ্ধ ও আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ হ্রাসের কারণে ইসরাইলের উদীয়মান প্রযুক্তি খাত গত বছর নজিরবিহীন সংকটে পড়েছে। বিদেশি বিনিয়োগ প্রায় শূন্যে নেমে এসেছে, যার ফলে অনেক কোম্পানি বন্ধ হয়ে গেছে বা তাদের কার্যক্রম ব্যাপকভাবে কমিয়ে দিয়েছে।
যেমন—
স্পাইক কোম্পানি (কৃষি প্রযুক্তি খাতে সক্রিয়) ৫ মিলিয়ন ডলার তহবিল শেষ করে আরও ৪ মিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করতে ব্যর্থ হওয়ায় বন্ধ হয়ে যায়।
জিস্ট এমডি ৬.৫ মিলিয়ন ডলার তহবিল পেয়েও বাজার ও বিনিয়োগের অভাবে বন্ধ হয়ে যায়।
৭. পর্যটন খাত
অক্টোবর ২০২৩ থেকে গাজা যুদ্ধ শুরুর পর ইসরাইলের পর্যটন খাতের আয় ৯০% কমে গেছে এবং ৩.৪ বিলিয়ন ডলার ক্ষতি হয়েছে। ইসরাইলের পর্যটন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, যুদ্ধের পর থেকে ইসরাইলে পর্যটকের সংখ্যা ব্যাপক হ্রাস পেয়েছে।
বিমান চলাচল বন্ধ এবং অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা পর্যটন খাতের পতনের মূল কারণ। ইসরাইলি হোটেল মালিকদের মতে, কিছু এলাকায় হোটেলের অকুপেন্সি মাত্র ১০%-এ নেমে এসেছে, যেখানে আগে এটি ৮০% ছিল।
ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরুর পর ইসরাইলের আকাশসীমা সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায় এবং হাজারো ইসরাইলি নাগরিক সাইপ্রাসের উদ্দেশ্যে নৌকায় করে পালিয়ে যায়।#
পার্সটুডে/এমএআর/২৬