করোনাকালে সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজ: না পাওয়ার অভিযোগ অনেকের
বাংলাদেশে করোনা পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক ও সামাজিক সংকট মোকাবিলায় সরকার ১লক্ষ ১১ হাজার কোটি টাকার ২০টি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে ক’য়েকমাস আগে। কিন্তু সময় বাড়িয়েও লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকও বিতরণ করা যায় নি।
তাই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য ব্যাংকগুলোকে ৩০শে নভেম্বর পর্যন্ত আবারো সময় বাড়িয়ে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে,প্রণোদনা পাকেজ বস্তবায়নের জন্য ব্যাংকগুলোকে ৩১শে আগস্ট পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু ওই সময় পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৯ শতাংশ ঋণ বিতরণ করেছিল ব্যাংকগুলো। এর মধ্যে বিদেশি ব্যাংকসহ প্রায় ২৪টি ব্যাংক এক টাকাও ঋণ বিতরণ করে নি।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে,ছোট ঋণ বিতরণে ব্যাংকগুলোর পরিচালন ব্যয় বেশি হওয়ার অজুহাতে ব্যাংকগুলো তাই ছোট ঋণ বিতরণে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। ব্যাংকগুলো যেন ছোট উদ্যোক্তাদের ঋণ দিতে বাধ্য হয় সেজন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংককে আরও কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
করোনাকালীন আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজ সম্পর্কে নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ী কাজী গোলাম হোসেন জানান,ব্যাংকের শর্ত মেনে অনেক মাঝারি শিল্প প্রতষ্ঠান সহজ শর্তে ঋণ গ্রহণ করেছেন। তবে,তিনি নিজে বাড়তি ঋণের বোঝা নিতে রাজি হন নি।
ওদিকে পোশাক শ্রমিক নেতারা জানিয়েছেন,তারা করোনাকালীন এ প্রণোদনার কোনো সুযোগ সুবিধা পান নি।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ শ্রম অধিকার ফোরামের আহবায়ক আবুল হোসাইন রেডিও তেহরানকে বলেন,করোনাকালে উল্টো পোশাক শ্রমিকদের চাকুরিচ্যুতি হয়েছে, বেতন কর্তন হয়েছে,কারখানা কন্ধ হয়েছে এবং বকেয়া বেতন চেয়ে আন্দোলনে করার দায়ে মামলার হয়রানিতে পড়েছেন।
ওদিকে, চিকিৎসক,নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী যারা করোনা চিকিৎসা কাজে সরাসরি নিয়োজিত তাদের জন্য ১০০ কোটি টাকার একটি প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। বলা হয়েছে,২ মাসের মূল বেতনের সমান সম্মানী পাবেন তারা। তবে এ প্যাকেজ থেকে থেকে কেউ কোনো টাকা পান নি।
তাছাড়া,নিম্নআয়ের পেশাজীবী,কৃষক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য রয়েছে ৩ হাজার কোটি টাকার তহবিল। এ পর্যন্ত ২৬৬ কোটি টাকা বিতরণ হয়েছে। তবে কতজন কৃষক বা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এ ঋণ পেয়েছেন সে তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংক অর্থ বিভাগকে জানাতে পারে নি।
করোনাভাইরাসের কারণে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার করতে সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের মধ্যে সবচেয়ে বড় হলো ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প ও সেবা খাত। এসব প্রতিষ্ঠানের জন্য শুরুর দিকে ৩০ হাজার কোটি টাকা চলতি মূলধন ঘোষণা দেয়া হলেও শেষ পর্যন্ত তা দাঁড়িয়েছে ৩৩ হাজার কোটি টাকায়।এ প্যাকেজের আওতায় ৯ শতাংশ সুদের মধ্যে ৪.৫ শতাংশ ঋণগ্রহীতা প্রতিষ্ঠান দেবে,বাকিটা বহন করবে সরকার। গত ৪ঠা মে থেকে এই প্যাকেজ বাস্তবায়ন শুরু হয়।
প্রণোদনা প্যাকেজের মধ্যে ২০ হাজার কোটি টাকার দ্বিতীয় বৃহত্তম প্যাকেজটি ঘোষণা করা হয়েছে ক্ষুদ্র (কুটিরশিল্পসহ) ও মাঝারি শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর চলতি মূলধন সরবরাহ করার জন্য। এর সুদহারও ৯ শতাংশ,তবে গ্রাহকদের সুদের ভাগ ৪ শতাংশ। বাকি ৫ শতাংশের বহন করবে সরকার।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ১৫ই আগস্ট পর্যন্ত তথ্য হচ্ছে,৬ হাজার ২০০ প্রতিষ্ঠান ঋণ পেয়েছে ১ হাজার ৮৭২ কোটি টাকা।
এদিকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ২০২০ সালের এপ্রিল-মে মাসে স্থগিতকৃত ঋণের আংশিক সুদ মওকুফ বাবদ সরকারের ভর্তুকি হিসেবে একটি প্যাকেজ রয়েছে ২ হাজার কোটি টাকার। এ পর্যন্ত ৪৭টি আবেদন জমা পড়লেও কেউ টাকা পায় নি।
ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি আবুল কাসেম খান গণমাধ্যমকে বলেছেন, করোনার কারণে অনেকেই উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছে,সবাই খরচ সমন্বয়ের চেষ্টা করছে। এ কারণে বড়দের আরো সহায়তা লাগবে। আর এসএমই খাত ও ক্ষুদ্রদের জন্য যে প্রণোদনা দেয়া হয়েছে,তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না। এ জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংককে তদারকি বাড়াতে হবে।#
পার্সটুডে/আবদুর রহমান খান/গাজী আবদুর রশীদ/১৭