করোনায় বিপর্যস্ত শিক্ষাব্যবস্থা: বড় পরিকল্পনা গ্রহণের পরামর্শ শিক্ষাবিদদের
করোনা মহামারির কারণে লন্ডভন্ড বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা। দেশে গত মার্চ মাসের গোড়ার দিকে করোনা রোগী শনাক্ত হবার পর ১৭ মার্চ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ রয়েছে। কয়েক ধাপে বাড়ানোর পর ছুটি আগামী ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত আবারও বাড়ানো হয়েছে।
দেশে প্রাক-প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক পর্যন্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা চার কোটির ওপরে। উচ্চ মাধ্যমিকে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৩০ লাখ। আর উচ্চশিক্ষায় মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৪১ লাখ।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীর পড়াশোনা বিঘ্নিত হচ্ছে। গত বছরের প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি সমাপনী পরীক্ষা এবং জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে।
তাছাড়া, করোনার কারণে গত বছরের উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) পরীক্ষাও অনুষ্ঠিত হয় নি। সংসদের আসন্ন অধিবেশনে শুরুর দিকেই আইনের সংশোধন করে সর্বোচ্চ ২৮ জানুয়ারির মধ্যে উচ্চমাধ্যমিক (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষার্থীদের মূল্যায়নের ফল ঘোষণার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
ইতোমধ্যে বিদ্যালয়ে বার্ষিক পরীক্ষা ছাড়াই শিক্ষার্থীদের ওপরের শ্রেণিতে উত্তীর্ণ করে দেওয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ রেডিও তেহরানকে বলেন, করোনার কারণে শিক্ষ্যাব্যবস্থায় যে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে তা কাটিয়ে উঠতে সরকারকে বড় রকম পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। বিশ্বিদ্যালয়সহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কার্যকর পাঠদানের ব্যবস্থা করতে হবে।
অনুরূপ মতামত ব্যক্ত করে সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মহম্মদ ইনসান আলী রেডিও তেহরানকে বলেন, শিক্ষাব্যবস্থার বিপর্যয় রোধে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদেরও কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে।
ঝরে পড়ছে শিক্ষার্থী
আগেই ধারনা করা হয়েছিল, করোনায় একটা বড়সংখ্যক ছেলেমেয়ে শিক্ষা থেকে ঝরে পড়তে পারে। করোনাভাইরাসের অভিঘাতে শহর ছেড়ে গ্রামে চলে গেছে অনেক পরিবার। আবার কেউ কেউ খরচ বাঁচাতে তাদের সন্তানদের সরকারি স্কুলে দিয়েছে।
অনলাইনে ক্লাস: ইনটারনেট সংকট
করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবে গত মার্চ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় মূলত অনলাইন ক্লাসের ওপর নির্ভরশীল হয়ে যায় পড়ালেখা।
প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের জন্য টেলিভিশনে ক্লাস প্রচার হলেও সম্প্রতি ব্র্যাকের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ৫৬ শতাংশ শিক্ষার্থীই টেলিভিশন ক্লাসে অংশ নেয় নি। যারা অংশ নিচ্ছে না তাদের ৭১ শতাংশই বলছে বাড়িতে টিভি, ডিস সংযোগ বা ইন্টারনেট নেই।
এ ছাড়া, ইন্টারনেটের দুর্বল গতির কারণে নিয়মিত ক্লাস করাই দুরূহ হয়ে পড়েছে। রাজধানী ঢাকাসহ বড় শহরের শিক্ষার্থীরা কোনোরকমে এই ক্লাস চালিয়ে নিতে পারলেও অন্যান্য জায়গায় তা সম্ভব হচ্ছে না। অনেকেই বারবার চেষ্টা করেও ইন্টারনেটে যুক্ত হতে পারছে না। আবার অনেকের ক্লাস মাঝপথে কেটে যাচ্ছে। আর বেশিরভাগ শিক্ষার্থীরই অনলাইন ক্লাসে যুক্ত হওয়ার অপেক্ষায় থাকতে থাকতে ক্লাসই শেষ হয়ে যাচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, ‘করোনা শুরু হওয়ার পর অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশেও ইন্টারনেটের চাহিদা হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে। আগে মোবাইল ফোন অপারেটররা ইন্টারনেট সেবাকে ব্যবসা হিসেবে গুরুত্বের সঙ্গে নেয় নি। এ জন্য প্রয়োজনীয় স্পেকট্রামও সংগ্রহ করে নি তারা। প্রয়োজনীয় অবকাঠামোও গড়ে ওঠে নি। তবে এ বিষয়ে সম্প্রতি নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ফোর-জি নেটওয়ার্ক বাড়ানো হচ্ছে। আশা করা হচ্ছে আগামী ২৬ মার্চের আগেই পরিস্থিতির উন্নতি হবে।’#
পার্সটুডে/আবদুর রহমান খান/গাজী আবদুর রশীদ/১৬
- বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।