জামুকা'র সভায় জিয়ার রাষ্ট্রীয় খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্ত: বিএনপির প্রতিক্রিয়া
(last modified Wed, 10 Feb 2021 10:58:54 GMT )
ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২১ ১৬:৫৮ Asia/Dhaka

বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রায় ৫০ বছর পর মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মুক্তিযুদ্ধে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে প্রাপ্ত খেতাব ‘বীর উত্তম’ বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা)।

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের মদদদাতা উল্লেখ করে জিয়াউর রহমানের  এ রাষ্ট্রীয়  খেতাব বাতিল করা হয়েছে।  মঙ্গলবার (৯ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর স্কাউট ভবনে আয়োজিত দিনব্যাপী জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) ৭২তম সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। এ সিদ্ধান্ত এখন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে জামুকা। এরপর মন্ত্রণালয় গেজেট আকারে তা  প্রকাশ করবে।

পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় স্মরণীয় ব্যক্তিদের তালিকা থেকে খন্দকার মোশতাকের নামও বাদ দেয়া হবে। একই সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি শরিফুল হক ডালিম, নূর চৌধুরী, রাশেদ চৌধুরী ও মোসলেহ উদ্দিনের রাষ্ট্রীয় খেতাবও বাতিলের সুপারিশ করা হয়েছে।

জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের  সভাপতি  ইশতিয়াক আজিজ উলফাত

এ প্রসঙ্গে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের  সভাপতি  ইশতিয়াক আজিজ উলফাত রেডিও তেহরানকে বলেন,  মুক্তিযুদ্ধে কার কত্টা  অবদান সে ইতিহাস মুছে ফেলা যাবে না। বঙ্গবন্ধু বা জিয়াউর রহমানকে তাদের যোগ্য সন্মান দিতেই হবে। একাত্তর  আর পঁচাত্তরকে এক করে গুলিয়ে দেখলে চলবে না। আত্মস্বীকৃত খুনিদের সাথে জিয়াউর রহমানের নাম জড়িয়ে কতিপয় চাটুকার কি করেছে তাতে ইতিহাসের কিছু আসে যায় না। 

জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি  জানিয়েছেন, এ ব্যাপারে তারা অবশ্যই প্রতিবাদ জানাবেন। জিয়াউর রহমানের মুক্তিযুদ্ধের খেতাব নিয়ে এমন সিদ্ধান্তের সাথে দেশের প্রধানমন্ত্রী একমত হতে পারেন  না  বলেও  উল্লেখ করেন  উলফাত আজিজ। উল্লেখ্য, পদাধিকার বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের  প্রধান উপদেষ্টা।

ওদিকে, জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের গতকালের  সভায় বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের আরও যে মদদদাতা রয়েছেন, তাদের চিহ্নিত করতে তিন সদস্যের একটি কমিটিও করা হয়েছে। কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে চট্টগ্রাম-১ আসনের সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে। অন্য দুই সদস্য হলেন সাবেক নৌমন্ত্রী শাজাহান খান ও উপাধ্যক্ষ ড. মো. আব্দুস শহীদ।

জামুকার সদস্য শাজাহান খান এমপি

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও জামুকার সদস্য শাজাহান খান এমপি বলেন, বঙ্গবন্ধুর খুনিদের খেতাব বাতিলের বিষয়টি সভার আলোচ্যসূচিতে না থাকলেও ৩০ জন মুক্তিযোদ্ধার সনদ যাচাই-বাছাই ও বাতিল-সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনার সময় বিষয়টি উত্থাপিত হয়। তখন এ নিয়ে দীর্ঘ আলোচনার পর জিয়াউর রহমানসহ সবার খেতাব ও রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয় জামুকা।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক

জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের সিদ্ধান্তের বিষয়ে  মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক গণমাধ্যমকে বলেছেন, জিয়াউর রহমান সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন। সংবিধানের মূলনীতি বাতিল করেছেন। মুক্তিযোদ্ধা হয়েও স্বাধীনতাবিরোধী লোকজনকে নিয়ে মন্ত্রিসভা গঠন করেছেন। বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের দেশত্যাগে সহায়তা করেছেন এবং গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন করেছেন।

এতবছর পরে এসে  হঠাৎ এখন কেন জিয়াউর রহমানের রাষ্ট্রীয় খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্ত নিতে হলো—এমন প্রশ্নের জবাবে  মন্ত্রী বলেন, ‘নিয়ম হচ্ছে, যারা মারা যায় তাদের বিরুদ্ধে কিছু করা (ব্যবস্থা) যায় না। সে জন্য জিয়াউর রহমান, খন্দকার মোশতাক, মাহবুবুল আলম চাষীর বিরুদ্ধে এত দিন কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় নি। এ রকম আরও যারা রয়েছে, তাদের বিষয়েও জামুকার বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। এদের সকলের পদক, সুযোগ-সুবিধা বাতিল করা হবে। আপাতত জিয়াউর রহমান, খন্দকার মোশতাক ও মাহবুবুল আলম চাষীর বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তাদের হয়তো মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বাদ দেওয়া যাবে না, কিন্তু খেতাব বাদ যাবে, অপরাধের জন্য শাস্তি পাবে।’#

পার্সটুডে/আবদুর রহমান খান/গাজী আবদুর রশীদ/১০

  • বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ