ঢাকায় করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে আশপাশের সাত জেলায় ৭ দিনের লকডাউন: বিশ্লেষক প্রতিক্রিয়া
(last modified Tue, 22 Jun 2021 10:46:10 GMT )
জুন ২২, ২০২১ ১৬:৪৬ Asia/Dhaka

বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে মরিয়া হয়ে সরকার এবার ঢাকাকে বিচ্ছিন্ন রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ পদক্ষেপের অংশ হিসেবে ইতিমধ্যে রাজধানীর আশপাশের সাত জেলায় আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে একসপ্তাহব্যাপী “লকডাউন” কার্যকর করা হয়েছে।

এ বিষয়ে গতকাল সচিবালয়ে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম জানিয়েছেন, ‘কয়েক দিন ধরে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকাকে অন্য জেলা থেকে “ একটু কাট-অফ” (বিচ্ছিন্ন) রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ঢাকার সঙ্গে প্রায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হলে এমনিতেই চলাচল কমে যাবে। প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে তাই ৩০ জুন পর্যন্ত ঢাকার নিকটবর্তী  সাত জেলাকে লকডাউনর আওতায়  আনা হয়েছে। লকডাউনের আওতাধিন জেলাগুলো হলো-নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, শরীয়তপুর, রাজবাড়ি, গাজীপুর ও গোপালগঞ্জ।

সরকারী সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এসব জেলার ওপর দিয়ে  ঢাকা থেকে বা ঢাকামুখী দূরপাল্লার বাস চলবে না। দূরের যাত্রার ট্রেন চললেও এই সাত জেলায় থামবে না। ঢাকা থেকে যাত্রীবাহী নৌযানও চলবে না। ফলে, এই সময়ে লোকজন যাতায়াত করতে পারবে না। তবে, জরুরি সেবা ও পণ্য পরিবহ এই নিষেধাজ্ঞার বাইরে থাকবে।

করোনা মোকাবেলায় ঢাকাকে বিচ্ছিন্ন করার এ  সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে চকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস প্লাটফর্ম ফর পিপলস হেলথ। সংগঠনের আহবায়ক প্রফেসর ডাক্তার রশিদ-ই-মাহবুব  রেডিও তেহরানকে বলেন, লকডাউন শক্তভাবে  কার্যকর করার সাথে সাথে ঢাকায় এবং অধিক আক্রান্ত জেলায় চিকিৎসা সুযোগও বাড়াতে হবে যাতে  পরিস্থিতির আরো  অবনতি হলে  তা সামাল দেওয়া যায়। তাছাড়া টিকাদান কর্মসুচী দ্রুত বাস্তবায়ন করতে করতে হবে।

ঢাকার সঙ্গে অন্যান্য জেলার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রাখার সিদ্ধান্ত সঠিক হয়েছে উল্লেখ করে  জনস্বাস্থ্যবিদ ডাক্তার  মুশতাক হোসেন গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘যেসব জেলায় শনাক্তের হার ১০ শতাংশের বেশি, সেখানেও যাতায়াত নিয়ন্ত্রণে রাখা দরকার। আগামী ঈদের সময় সংক্রমণ আরও বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি আছে। সে জন্য ঈদের আগে সারা দেশে শনাক্তের হার ১০-এর নিচে রাখতে হবে।

এবারের লকডাউন কার্যকর করতে আজ সকাল থেকেই ঢাকার সাথে সংযোগকারী সবগুলো মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে তল্লাশিচৌকি বসিয়েছে পুলিশ। দূরপাল্লার গণপরিবহন সহ কোনো যানবাহনই চলাচল করতে দেওয়া হচ্ছে না। উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় হাইওয়ে ও থানা–পুলিশ আলাদাভাবে চেকপোস্ট বসিয়ে যানবাহনের গতিরোধ করছে। যানবাহনগুলো পুলিশ ঘুরিয়ে ফেরত পাঠিয়ে দিচ্ছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন কর্মস্থানে যাওয়া মানুষ। পরে বাস থেকে নেমে কেউ হেঁটে কেউবা রিকশায় উঠে গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা দেন।

মাওনা হাইওয়ে থানার ওসি কামাল হোসেন বলেন, ‘ময়মনসিংহের দিক থেকে কোনো যানবাহন গাজীপুরে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। এ ছাড়া কাউকে বের হতেও দেওয়া হচ্ছে না। মহাসড়কে পুলিশের চেকপোস্ট বাসানো হয়েছে।’

এদিকে, করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় কঠোর লকডাউনের মধ্যেও আজ মঙ্গলবার সকালে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ও রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া নৌপথে ফেরিতে যাত্রীবাহী যানবাহন পারাপার করা হয়। দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে ছেড়ে আসা এসব যানবাহন যাত্রী নিয়ে ঢাকার দিকে রওনা হয়।

ঘাটসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ভাষ্য, গতকাল সোমবার রাতে রওনা হওয়া যাত্রীবাহী বাসগুলো আজ ভোরে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় এসে আটকা পড়ে। যাত্রীদের ভোগান্তির কথা বিবেচনা করে এসব বাস পারাপার করা হয়। এদিকে, মাত্র ১৫ ঘণ্টার নোটিশে আকস্মিক ঢাকাকে বিচ্ছিন্ন কমরা সিদ্ধান্ত কার্যকর হবার ফলে মঙ্গলবার (২২ জুন) সকালে শিমুলিয়া ফেরী পথের উভয়  পাড়ে বিপাকে পড়তে হয়েছে যাত্রীসাধারণকে। বিআইডব্লিউটিসি জানিয়েছে, বহরের ১৬ ফেরির মধ্যে চলাচল করছে ১২টি। এসব ফেরিতে জরুরি পরিসেবায় পণ্যবাহী ট্রাক ও অ্যাম্বুলেন্সসহ ছোট যান পারাপার করা হচ্ছে। তবে লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকায় ফেরিতে করেই গাদাগাদি করে পার হতে হচ্ছে যাত্রীদের।

মাওয়া ঘাট থেকেও রাজধানীতে যাওয়ার যানবাহন না থাকায় দীর্ঘ অপেক্ষায় থেকে বৃষ্টিতে দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে ঢাকামুখী যাত্রীদের। এ ছাড়া , মাওয়া ঘাটে যানবাহনের চাপ ঠেকাতে সিরাজদিখান, শ্রীনগর ও শিমুলিয়ার হিলশা মোড়ে পুলিশের চেকপোস্ট বসানো হয়েছে।#

পার্সটুডে/ আব্দুর রহমান খান/  বাবুল আখতার/২২

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।