বাংলাদেশে করোনার ভয়াবহ পরিস্থিতি: ছড়িয়ে পড়ছে গ্রামে, সকল জেলায় আইসিইউ স্থাপনের দাবি
(last modified Mon, 05 Jul 2021 13:50:12 GMT )
জুলাই ০৫, ২০২১ ১৯:৫০ Asia/Dhaka

ব্যাংলাদেশে করোনা (কোভিড-১৯) অতিমারি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। কঠোর লকডাউনের মধ্যেও মৃত্যু এবং সংক্রমন বাড়ছে দ্রুত গতিতে । গত এক সপ্তাহ ধরে প্রায় প্রতিদিনই মৃত্যু এবং সংক্রমনের নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হচ্ছে।

সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, মহামারি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে আরও ১৬৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এটা একদিনে মৃত্যুর সর্বোচ্চ রেকর্ড। গতকাল মৃত্যুর এ  রেকর্ড ছিল ১৫৩। এ সময় করোনা ও উপসর্গ নিয়ে  ঢাকার বাইরে একদিনে মারা গেছেন ১৪৮ জন, যা এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক - ৫১ জন মারা গেছেন  খুলনা বিভাগে।

এদিকে করোনা শনাক্তের ক্ষেত্রেও রেকর্ড করেছে বাংলাদেশ। আজ সোমবার সকাল আটটা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে ৯,৯৬৪ জনের দেহে এই ভাইরাসের সংক্রমণ  শনাক্ত হয়েছে। নমুনা পরীক্ষার তুলনায় শনাক্তের হার  ২৯ দশমিক ৩০ শতাংশ। করোনায় মৃত্যু এবং সংক্রমণের দ্রুত অবনতি প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন করোনাভাইরাসে সংক্রমিত রোগীদের ৫০ শতাংশের বেশি গ্রাম থেকে আসা। এসব রোগীরা দেরী করে হাসপাতালে আসছেন যখন তাদের বাঁচানো অসম্ভব হয়ে পড়ে।  

আজ (সোমবার) সকালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুষ্ঠিত এক সভা শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম এসব কথা বলেন।

আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, ‘আমরা গতকাল রোববার ৪৫টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা ও চিকিৎসকদের সঙ্গে দীর্ঘ তিন ঘণ্টার বেশি কথা বলেছি। তাঁরা বলেছেন, রোগীর অধিকাংশের বেশি গ্রামের। রোগীরা হাসপাতালে আসছেন রোগে আক্রান্ত হওয়ার বেশ পরে, যখন পরিস্থিতি অনেক খারাপ হয়ে পড়ছে।’

মহাপরিচালক আরও বলেন, এখন বর্ষার মৌসুম। অনেকেই করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হলেও সাধারণ সর্দি–জ্বর বা কাশিতে আক্রান্ত বলে ধরে নিচ্ছেন। পরীক্ষা করাচ্ছেন না বা চিকিৎসকের পরামর্শ নিচ্ছেন না। তিনি আরও বলেন, ‘মাঠপর্যায়ের স্বাস্থ্যকর্মীদের গ্রামে গ্রামে মাইকিং করার পরামর্শ দিয়েছি। বাড়ি বাড়ি রোগীর খোঁজ রাখতে বলেছি।’

তবে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞগণ বলছেন, শুরু থেকেই করোনাকে গুরুত্ব না দেওয়া, পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্ধ না করা এবং দায়িত্বশীল মহল থেকে আত্মতৃপ্তির মনোভাব করোনা পরস্থিতির মারাত্মক অবনতির  জন্য দায়ী। 

এ প্রসঙ্গে সাবেক স্বাস্থ্য মন্ত্রী ডঃ খন্দকার মোশাররফ হোসেন আজ এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, করোনা মহামারি মোকাবেলায় ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে বর্তমান সরকারের উচিত জনগণের কাছে ক্ষমা চেয়ে ক্ষমতা থেকে পদত্যাগ করা।

সাবেক স্বাস্থ্য মন্ত্রী ডঃ খন্দকার মোশাররফ হোসেন

ওদিকে, সরকারের জোট সঙ্গী জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এবং সংসদে বিরোধী দলীয় উপনেতা জি এম কাদের আজ (সোমবার) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলেছেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ব্যর্থতায় ভয়াবহ ভবিষ্যতের দিকে করোনা পরিস্থিতি। তাই যত দ্রুত সম্ভব সকল জেলায় আইসিইউ স্থাপন এবং পর্যাপ্ত অক্সিজেন সহায়তা নিশ্চিত করতে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।

গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলেছে, ‘রোগী বাড়লে অক্সিজেন সরবরাহ চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে’। পরিস্থিতি আরো খারাপ হলে, আইসিইউ-এর জন্য হাহাকার উঠবে। শংকাজনক হারে বেড়ে যেতে পারে মৃত্যুর হার।

গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেন,  অতিমারি করোনার সংক্রমণ লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। সেই সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে আইসিইউ’র চাহিদা। কিন্তু দেশের ৩৫ জেলায় এখনো আইসিইউ নেই। অথচ, এক বছর আগে প্রধানমন্ত্রী সকল জেলায় আইসিইউ স্থাপনের নির্দেশ দিয়েছিলেন। সকল জেলায় আইসিইউ স্থাপনে ব্যর্থ হয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।#

পার্সটুডে/ আব্দুর রহমান খান/ বাবুল আখতার/৫

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। 

 

ট্যাগ